somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লোপা এলেন, লোপা গেলেন-

৩১ শে মে, ২০০৭ সকাল ১১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিন্তু যাবার আগে জয় করতে পারলেন কি না, সেটা আমি বাদে অডিটরিয়মে উপস্থিত বাকি সব দর্শক শ্রোতারা জানেন।

আমি জানি না, কারণ বহু আগেই তিনি আমাকে জয় করে ফেলেছেন। অন্য সবাই যখন তাই ফুলগুলো বুকপকেটে লুকিয়ে এনেছিলো, যদি পছন্দ হয়, তবেই তাঁকে পরাবেন ভেবে, আমি তখন ঢাকঢোল সহ লাল গালিচা নিয়ে উপস্থিত সেখানে!
তুমি কেমন করে গান করো হে গুণী, আমি অবাক থাকতে পারি নি শুনে। বাকি সবার সাথে তাই প্রায়শই চেঁচিয়ে উঠেছি, আরেকবার হবে, ওয়ান মোর!

তো গাইলেন লোপামুদ্রা, পুরো শরীর আর মন দিয়ে, আমিও দেখলাম তাঁকে, শুনলাম মাত্র পনের গজ সামনে বসে। পনের গজ অনেক দূর ভাবছেন নাকি? উঁহু, ভুলে যাবেন না, ক্রিকেট পিচের দৈর্ঘ্যও মিনিমাম বাইশ গজ। তারই দু'প্রান্তে দাঁড়িয়ে দুই ব্যাটসম্যানের মধ্যে কতই না আন্ডারস্ট্যান্ডিং! পনের তার চেয়ে কম হলো না?!?

মেলবোর্ণের মূল শহর থেকে দূরে, কোন একটা খটোমটো নামের অডিটরিয়ামে দাঁড়িয়ে, তিনি সর্বমোট বিশ বা বাইশটি গান গাইলেন। গানের পছন্দগুলো এলোমেলো ছিল না। সেটা বুঝলাম যখন দর্শকদের নিজস্ব পছন্দ জানবার পরেও তিনি পুরোটা সময়েই তাঁর মত করে নিজের সিরিয়ালেই গান গাইলেন। এর ফলে যেটা হলো, সারাক্ষণই একটা উত্তেজনা ছিলো- এর পরে কোনটা গাইবেন!

পছন্দের প্রায় সব গানই গাইলেন, যাও পাখি, আমার দেশ, হল্লা রাজা...। অসাধারণ কিছু রবীন্দ্রসঙীতও গাইলেন তিনি- গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙামাটির পথ, আমারো পরাণ যাহা চায়...।
বেণীমাধব গাইলেন অনেক পরে। আর জানালেন, লোপামুদ্রা আর বেণীমাধব আলাদা কেউ নয়, একসময় লোকে লোপামুদ্রাকে চিনতো না, চিনতো বেণীমাধবকেই।
তবে নিজের গান বাছাই করতে গিয়ে পপুলারিটি দেখেন নি তিনি। বেশ কিছু স্বল্পপরিচিত গানও গেয়েছেন। যে কোন কনসার্ট বা এ জাতীয় অনুষ্ঠানে এ ব্যাপারটা একটু রিস্কি হয়ে দাঁড়ায়, শ্রোতাদের মনোযোগ হারানোর একটা আশংকা থাকে, কিন্তু লোপামুদ্রা দিব্যি উৎরে গেলেন!

বেশ মজা করতে পারেন তিনি। দর্শকদের সাথে কথা বলছিলেন গানের ফাঁকে ফাঁকে। পাশে দাঁড়িয়ে গীটার বাজানো ওঁর স্বামী জয় সরকারকে গান গাইবার অনুরোধ করতেই চটুল গলায় বলে উঠলেন, ''কেন বলুনতো? আমি একটু গান গেয়ে পেট চালাই, এটা আপনারা চান না বুঝি!''
তারচেয়ে জমলো যখন একজন প্রবীণ ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন, ' নজরুল গীতির কি অবস্থা?'' লোপা কাঁচুমাচু মুখ করে জানালেন, ' অবস্থা তো বেশি ভালো না!'' সবার সে কি হো হো হাসি!

দর্শকদের অনুরোধ ছিলো অনেক, সেকারণেই তার বেশিরভাগই গাইলেন না তিনি। এমনিতে এ রকম জায়গায় আমি চুপ মেরেই থাকি, তবু সেদিন জড়তা ভেঙে গলায় অনেকটুকু জোর এনে বেশ কয়েকবার জানান দিয়েছিলাম আমার পছন্দ- ' সহে না যাতনা' শুনতে চাই। তিনি সেটা শুনেওছিলেন, বুঝলাম যখন কথাটা পুনরাবৃত্তি করলেন, কিন্তু শেষমেষ লোপা গাইলেন না সেটা! যদিও শুধু এই গানটা শুনবার জন্যে কাজ বাদ দিয়ে দেড় ঘন্টা ড্রাইভ করে অনুষ্ঠানে এসেছিলাম বলা যায়!

প্রায় তিন ঘন্টার এক জাদুকরী মুগ্ধতার পরে অনুষ্ঠান শেষ হলো। কেন শেষ হলো, এই অনুযোগটা যে কার কাছে করবো বুঝতে পারছিলাম না!

লোপা নেমে এলেন মঞ্চ থেকে। অনেকেই এগিয়ে গিয়ে কথা বললেন তাঁর সাথে। সুন্দর হেসে জবাব দিলেন সবার কথার। আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো, কিন্তু স্বাভাবিক নিয়মে জড়তা কাটছিলো না।

তবু শেষমেষ এগিয়ে গেলাম। বেশ খানিকক্ষণ দোনমনার পরে শুধু বললাম, ''খুব ভাল লাগলো।'' তিনি হাসলেন। ''সহেনা যাতনা গাইলেন না কেন?'' শুধু এটুকুই বলতে পারলাম। তিনি বললেন, ''আসলে অনেকগুলো রবীন্দ্রসঙীতের অনুরোধ ছিলো, সব কি আর গাওয়া যায়! ''

''তা যায়না, কিন্তু এ গানটা আপনার চেয়ে ভাল আর কেউ গাইতে পারে না যে! '' নাহ, মুখ ফুটে বলতে পারি নি সেটা। মনে মনেই বললাম শুধু।
তার পর কয়েক সেকেন্ড বিরতির পরে 'ভাল থাকবেন' বলে চলে এলাম।

ঐ কয়েক সেকেন্ড কেউ কোন কথা বলি নি।
কেন বলি নি, সেটা নিয়ে আজ অনেকক্ষণ ভাবতেই মনে হলো, আসলে এরকমই হয়, দু'জন গ্রেট মানুষ এরকম সামনা সামনি এলে কথা হারিয়ে ফেলতেই পারে!
এ আর নতুন কি! :-))
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০০৭ সকাল ১১:২৯
১৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×