somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিংবদন্তী অমর সুরস্রষ্টা সত্য সাহা

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শ্রুতিমধুর গানের অনন্য স্রষ্টা, বাংলা চলচ্চিত্রের গানের বরপুত্র, ভালবাসাময় সত্য সাহা ১৯৯৯ সালের ২৭ জানুয়ারি চলে গিয়েছিলেন না ফেরার দেশে। আজো তার অমর সৃষ্টি ভান্ডার দিয়ে মোহিত করে পৌছে গেছেন নবযুগের নতুন মানুষের কাছে। বাংলা চলচ্চিত্রের অসাধারণ শ্রুতিমধুর সব সঙ্গীতের মাধ্যমে অমর হয়ে আছেন।

কিংবদন্তী এ সুরকারের জন্ম হাটহাজারী উপজেলার নন্দীরহাট গ্রামে ১৯৩৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর। বাবা প্রসন্ন কুমার সাহা ছিলেন জমিদার। সত্য সাহার একমাত্র ভাই প্রেম বিনয় ভূষণ সাহা আর বোনের নাম রাজনন্দিনী। তিনি এন্টান্স পাস করেন নারায়ণগঞ্জ রামকৃষ্ণ স্কুল থেকে ১৯৪৮ সালে। ১৯৫২ সালে কোলকাতা বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে পাস করেন বি, এ।

তিনি ছিলেন একাধারে গায়ক, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক। তবে সবচেয়ে বড় গুণ ও পরিচয় ছিল তাঁর-সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে। সত্য সাহা সেই বিরল সঙ্গীতকারকদের একজন যিনি সফল সুরকার এবং সার্থক সঙ্গীত পরিচালক। এর নেপথ্যে তাঁর শিল্পগত সচেতনতা কাজ করে গেছে যা তিনি অর্জন করেছিলেন রাজনৈতিক প্রগতিশীলতার চর্চা থেকে। একই সূত্রে তিনি সংযুক্ত হয়েছিলেন কলকাতায় ভারতীয় গণনাট্য সংঘ এবং দেশভাগের পর চট্টগ্রামে গঠিত প্রান্তিকের সঙ্গে। এসব দিনগুলিতে তিনি সরাসরি সান্নিধ্যে এসেছিলেন সঙ্গীত জগতের অনেক দিকপালের, যাঁদের মধ্যে জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র, সলিল চৌধুরী, হেমাঙ্গ বিশ্বাস, কলিম শরাফী, অচিন্ত্য লাল চক্রবর্তী, মলয়ঘোষ দস্তিদার, হরিপ্রসন্ন পালের নাম উল্লেখযোগ্য।

তিনি সুর করেছেন অচিন্ত্য চক্রবর্তীর লেখা জাগরণমূলক অনেক গানের। যার মধ্যে অবিস্মরণীয় ‘চাটগাঁইয়া নওজোয়ান আঁরা হিন্দু মুসলমান’। সত্য সাহার ক্যারিয়ারের শুরু ১৯৫০ এর দশকে কলকাতায় সহকারী সঙ্গীত পরিচালক রূপে। সেখানে বেশ কিছু ছবিতে তিনি কাজ করেন। পরে চলে আসেন নিজের শহর চট্টগ্রামে। ঢাকায় এফডিসি প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি সেখানে চলে যান। সংযুক্ত হন চলচ্চিত্র শিল্পে। প্রথমে গায়ক হিসেবে ১৯৬১ সালে মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘তোমার আমার’ ছবির মাধ্যমে। তাঁর এই অভিষেক ঘটে ওস্তাদ কাদের জামেরীর হাত ধরে। ওস্তাদজী ছিলেন ‘তোমার আমার’ ছবির সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক। এই ছবির অসাধারণ সব গান আজ কালজয়ী। যেমন- মাহামুদুন্নবীর গাওয়া ‘সেলাম পৃথিবী তোমাকে সেলাম’। জহুরী ওস্তাদজী সেদিন রত্ন চিনতে ভুল করেন নি। এরপর তিনি গান করেন সোনার কাজল, জোয়ার এলো, দুই দিগন্ত প্রভৃতি ছবিতে খান আতাউর রহমানের রচনা ও পরিচালনায়। সত্য সাহার প্রকৃত আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৬৪ সালে ‘সুতরাং’ ছবির সঙ্গীত পরিচালনার মধ্য দিয়ে।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ‘সুতরাং’ একটি মাইলস্টোন। নায়ক পরিচালক সুভাষ দত্ত, সঙ্গীতকার সত্য সাহা, অভিনয়Image result for সুতরাং শিল্পী কবরী, বেবী জামান, কণ্ঠশিল্পী আলেয়া শরাফীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরো অনেক শিল্পী কলাকুশলীর অভিষেক হয় এই ছবির মধ্য দিয়ে। ‘সুতরাং’ ছবির অবিস্মরণীয় পাঁচটি গান সত্য সাহার জীবন সিঁড়ির প্রথম ধাপটিকে পোক্ত করে দেয় যে সিঁড়ি বেয়ে তিনি ক্রমাগত উঠে গেছেন শীর্ষে। জীবনের শেষ সুরারোপিত ছবি ‘অজান্তে’র জন্যে তিনি রাষ্ট্রীয় পুরস্কার অর্জন করেন। প্রথম কাজে বাজীমাতের দৃষ্টান্ত নিতান্ত স্বল্প।

১৯৭১ সালে সত্য সাহা কোলকাতার স্বাধীন বাংলা শিল্পী সংসদে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। জহির রায়হানের উদ্যোগে লিবারেশন ওয়ার ফিল্মস নামে চারটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মিত হয় একাত্তরে। দুটি পরিচালনা করেন জহির রায়হান নিজে,‘স্টপ জেনোসাইড’ ও ‘এস্টেট ইজ বর্ণ’। অন্য দুটি আলমগীর কবিরের পরিচালনায় ‘লিবারেশন ফাইটার্স’ ও বাবুল চৌধুরীর পরিচালনায় ‘ইনোসেন্ট মিলিয়নস’। চারটি ছবিই বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। চারটি ছবিরই সংগীত পরিচালনা করেন সত্য সাহা।

সত্য সাহার মেলোডির যাদুতে চলচ্চিত্রের বাইরে প্রচুর আধুনিক গানও সমানভাবে শ্রোতাদৃত। স্বভাবতই সেসব গানও আজ কালজয়ী। চলচ্চিত্র ও আধুনিকে তাঁর সাথে সুন্দর রসায়ন ঘটতো সৈয়দ শামসুল হক ও গাজী মাযহারুল আনোয়ারের বাণীতে। গীতিকার গাজী মাযহারুল আনোয়ারকে আবিষ্কারের কৃতিত্বও সত্য সাহার। বাংলাদেশের গানে সত্য সাহা মাযহারুল আনোয়ার অবিস্মরণীয় এক জুটি।

কবিতায় সুরারোপ সত্য সাহার আরেকটি সুকৃতি। শামসুর রাহমানের অনন্যসুন্দর কবিতা ‘মা’- এ সত্য সাহার সুপ্রয়োগিত সুর রফিকুল আলমের কণ্ঠে বাংলাগানের একটি সেরা নিদর্শন। আলমগীর কবিরের ‘সূর্যকন্যা’ ছবিতে ফজল শাহাবুদ্দীনের কাব্যধর্মী কথা আমি যে আঁধারে বন্দিনী ও চেনা চেনা লাগে সত্য সাহার অসাধারণ সুরে বাংলা ও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রগীতির দুটি শ্রেষ্ঠ উদাহরণ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও শ্যামল মিত্রের কণ্ঠে। সত্য সাহার সংগীতের মূল ভিত্তি মেলোডি। এই অসাধারণ শ্রুতি মাধুর্যের গুণেই তাঁর সুরারোপিত প্রতিটি গান কর্ণ থেকে সহজেই মর্মে পৌঁছে যেতে এবং স্থায়িত্ব পেতে সক্ষম হয়েছে। সুরের সব কটি স্বর ও পর্দা যথার্থরূপে অধীত থাকলেই কেবল তা সম্ভব। লোকসংগীতেও ছিল তাঁর ঈর্ষণীয় দখল।

২০১৩ সালে তাঁকে দেয়া হয় মরণোত্তর ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’।

সত্যসাহা সুরারোপিত স্বর্ণালী গান

চেনা চেনা লাগে ( ছবি: সূর্যকন্যা, গীতিকার: ফজলে শাহাবুদ্দিন, শিল্পী: শ্যামল মিত্র), দু:খ আমার বাসর রাতের ( ছবি: জননী, গীতিকার: রফিক–উজ–জামান, শিল্পী: সাবিনা ইয়াসমিন), চিঠি দিও প্রতিদিন (অ্যালবাম:Image result for satto saha অনুরোধ, শিল্পী: সাবিনা ইয়াসমিন),

আমার মন বলে তুমি আসবে ( ছবি: আনার কলি, গীতিকার: গাজী মাজহারুল আনোয়ার, শিল্পী: রুনা লায়লা), রূপালী নদীরে (গীতিকার:আনিসুল হক চৌধুরী, শিল্পী: আবদুল আলীম), বন্ধু হতে চেয়ে তোমার (গীতিকার: রফিক–উজ–জামান, শিল্পী: সুবীর নন্দী), আকাশের হাতে আছে ( : আয়না ও অবশিষ্ট, গীতিকার: গাজী মাজহারুল আনোয়ার, শিল্পী :আনজুমান আরা বেগম), তুমি কি দেখেছ কভু (ছবি: এতটুকু আশা, গীতিকার: ড. মো: মনিরুজ্জামান, শিল্পী: আবদুল জব্বার), এমন মজা হয় না (ছবি:সুতরাং, গীতিকার: সৈয়দ শামসুল হক), মা গো মা, ওগো মা (ছবি: সমাধি, শিল্পী: মো: খুরশিদ আলম, গীতিকার: গাজী মাজহারুল আনোয়ার), পরানে দোলা দিলো (ছবি: সুতরাং. গীতিকার: সৈয়দ শামসুল হক, শিল্পী: ফেরদৌস রহমান), গাঙ বাঁকা জানি ( ছবি: সুতরাং, গীতিকার: সৈয়দ শামসুল হক, শিল্পী: মোস্তাফা জামান আব্বাসী ও ফেরদৌসী রহমান), তোমার পরশে জীবন আমার ( গীতিকার: গাজী মাজহারুল আনোয়ার, শিল্পী: সুবীর নন্দী/ সাবিনা ইয়াসমিন), ভাবি যেন লাজুকলতা ( ছবি: আবির্ভাব, শিল্পী: সত্যসাহা), আমি নিজের মনে নিজেই যেন ( ছবি: আবির্ভাব, শিল্পী: খন্দকার ফারুক আহমেদ), নীল আকাশের নিচে আমি (ছবি: নীল আকাশের নিচে, গীতিকার: গাজী মাজহারুল আনোয়ার, শিল্পী: খন্দাকার ফারুক আহমেদ), হেসে খেলে জীবনটা (ছবি: নীল আকাশের নিচে, গীতিকার: গাজী মাজহারুল আনোয়ার, শিল্পী: মো: আলী সিদ্দিকী), গান হয়ে এলে ( ছবি: নীল আকাশের নিচে গীতিকার: গাজী মাজহারুল আনোয়ার, শিল্পী: ফেরদৌসী রহমান), কখনও আমার মাকে (গীতিকার: কবি শামসুর রাহমান, শিল্পী: মো: রফিকুল আলম), ভালোবাসা এমন একটি ( শিল্পী: মো: রফিকুল আলম), এক নদীরই উজানভাটি (ছবি: উজান ভাটি, শিল্পী: মো: রফিকুল আলম ও আবিদা সুলতানা), তোমরা যারা আজ আমাদের ভাবছে মানুষ কিনা ( ছবি: লালুভুলু, গীতিকার: মাসুদ করিম, শিল্পী: মো: খুরশিদ আলম), ধীরে ধীরে চল ঘোড়া ( ছবি: শাপমুক্তি,শিল্পী: মো: খুরশিদ আলম), যার ছায়া পড়েছে ( ছবি: আয়না ও অবশিষ্ট,শিল্পী: ফেরদৌসী রহমান), সাতটি রঙের মাঝে আমি ( ছবি: আবির্ভাব, শিল্পী: আনজুমান আরা বেগম), এই পৃথিবীর পরে ( ছবি: আলোর মিছিল, গীতিকার: মোস্তাফিজুর রহমান শিল্পী: সাবিনা ইয়াসমিন), তুমি, তুমি বড় ভাগ্যবতী ( ছবি: প্রতিনিধি, শিল্পী: রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমিন)।

সৃজনশীল ক্ষণজন্মা মানুষের কি মৃত্যু হয়? শ্রুতিমধুরতার কারণে তিনি বেঁচে থাকবেন গানে গানে, প্রতিটি শ্রোতার কানে কানে।

(সংকলন- কাজী চপল)শ্রুতিমধুর গানের অনন্য স্রষ্টা, বাংলা চলচ্চিত্রের গানের বরপুত্র, ভালবাসাময় সত্য সাহা ১৯৯৯ সালের ২৭ জানুয়ারি চলে গিয়েছিলেন না ফেরার দেশে। আজো তার অমর সৃষ্টি ভান্ডার দিয়ে মোহিত করে পৌছে গেছেন নবযুগের নতুন মানুষের কাছে। বাংলা চলচ্চিত্রের অসাধারণ শ্রুতিমধুর সব সঙ্গীতের মাধ্যমে অমর হয়ে আছেন।

কিংবদন্তী এ সুরকারের জন্ম হাটহাজারী উপজেলার নন্দীরহাট গ্রামে ১৯৩৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর। বাবা প্রসন্ন কুমার সাহা ছিলেন জমিদার। সত্য সাহার একমাত্র ভাই প্রেম বিনয় ভূষণ সাহা আর বোনের নাম রাজনন্দিনী। তিনি এন্টান্স পাস করেন নারায়ণগঞ্জ রামকৃষ্ণ স্কুল থেকে ১৯৪৮ সালে। ১৯৫২ সালে কোলকাতা বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে পাস করেন বি, এ।

তিনি ছিলেন একাধারে গায়ক, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক। তবে সবচেয়ে বড় গুণ ও পরিচয় ছিল তাঁর-সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে। সত্য সাহা সেই বিরল সঙ্গীতকারকদের একজন যিনি সফল সুরকার এবং সার্থক সঙ্গীত পরিচালক। এর নেপথ্যে তাঁর শিল্পগত সচেতনতা কাজ করে গেছে যা তিনি অর্জন করেছিলেন রাজনৈতিক প্রগতিশীলতার চর্চা থেকে। একই সূত্রে তিনি সংযুক্ত হয়েছিলেন কলকাতায় ভারতীয় গণনাট্য সংঘ এবং দেশভাগের পর চট্টগ্রামে গঠিত প্রান্তিকের সঙ্গে। এসব দিনগুলিতে তিনি সরাসরি সান্নিধ্যে এসেছিলেন সঙ্গীত জগতের অনেক দিকপালের, যাঁদের মধ্যে জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র, সলিল চৌধুরী, হেমাঙ্গ বিশ্বাস, কলিম শরাফী, অচিন্ত্য লাল চক্রবর্তী, মলয়ঘোষ দস্তিদার, হরিপ্রসন্ন পালের নাম উল্লেখযোগ্য।

তিনি সুর করেছেন অচিন্ত্য চক্রবর্তীর লেখা জাগরণমূলক অনেক গানের। যার মধ্যে অবিস্মরণীয় ‘চাটগাঁইয়া নওজোয়ান আঁরা হিন্দু মুসলমান’। সত্য সাহার ক্যারিয়ারের শুরু ১৯৫০ এর দশকে কলকাতায় সহকারী সঙ্গীত পরিচালক রূপে। সেখানে বেশ কিছু ছবিতে তিনি কাজ করেন। পরে চলে আসেন নিজের শহর চট্টগ্রামে। ঢাকায় এফডিসি প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি সেখানে চলে যান। সংযুক্ত হন চলচ্চিত্র শিল্পে। প্রথমে গায়ক হিসেবে ১৯৬১ সালে মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘তোমার আমার’ ছবির মাধ্যমে। তাঁর এই অভিষেক ঘটে ওস্তাদ কাদের জামেরীর হাত ধরে। ওস্তাদজী ছিলেন ‘তোমার আমার’ ছবির সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক। এই ছবির অসাধারণ সব গান আজ কালজয়ী। যেমন- মাহামুদুন্নবীর গাওয়া ‘সেলাম পৃথিবী তোমাকে সেলাম’। জহুরী ওস্তাদজী সেদিন রত্ন চিনতে ভুল করেন নি। এরপর তিনি গান করেন সোনার কাজল, জোয়ার এলো, দুই দিগন্ত প্রভৃতি ছবিতে খান আতাউর রহমানের রচনা ও পরিচালনায়। সত্য সাহার প্রকৃত আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৬৪ সালে ‘সুতরাং’ ছবির সঙ্গীত পরিচালনার মধ্য দিয়ে।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ‘সুতরাং’ একটি মাইলস্টোন। নায়ক পরিচালক সুভাষ দত্ত, সঙ্গীতকার সত্য সাহা, অভিনয়Image result for সুতরাং শিল্পী কবরী, বেবী জামান, কণ্ঠশিল্পী আলেয়া শরাফীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরো অনেক শিল্পী কলাকুশলীর অভিষেক হয় এই ছবির মধ্য দিয়ে। ‘সুতরাং’ ছবির অবিস্মরণীয় পাঁচটি গান সত্য সাহার জীবন সিঁড়ির প্রথম ধাপটিকে পোক্ত করে দেয় যে সিঁড়ি বেয়ে তিনি ক্রমাগত উঠে গেছেন শীর্ষে। জীবনের শেষ সুরারোপিত ছবি ‘অজান্তে’র জন্যে তিনি রাষ্ট্রীয় পুরস্কার অর্জন করেন। প্রথম কাজে বাজীমাতের দৃষ্টান্ত নিতান্ত স্বল্প।

১৯৭১ সালে সত্য সাহা কোলকাতার স্বাধীন বাংলা শিল্পী সংসদে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। জহির রায়হানের উদ্যোগে লিবারেশন ওয়ার ফিল্মস নামে চারটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মিত হয় একাত্তরে। দুটি পরিচালনা করেন জহির রায়হান নিজে,‘স্টপ জেনোসাইড’ ও ‘এস্টেট ইজ বর্ণ’। অন্য দুটি আলমগীর কবিরের পরিচালনায় ‘লিবারেশন ফাইটার্স’ ও বাবুল চৌধুরীর পরিচালনায় ‘ইনোসেন্ট মিলিয়নস’। চারটি ছবিই বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। চারটি ছবিরই সংগীত পরিচালনা করেন সত্য সাহা।

সত্য সাহার মেলোডির যাদুতে চলচ্চিত্রের বাইরে প্রচুর আধুনিক গানও সমানভাবে শ্রোতাদৃত। স্বভাবতই সেসব গানও আজ কালজয়ী। চলচ্চিত্র ও আধুনিকে তাঁর সাথে সুন্দর রসায়ন ঘটতো সৈয়দ শামসুল হক ও গাজী মাযহারুল আনোয়ারের বাণীতে। গীতিকার গাজী মাযহারুল আনোয়ারকে আবিষ্কারের কৃতিত্বও সত্য সাহার। বাংলাদেশের গানে সত্য সাহা মাযহারুল আনোয়ার অবিস্মরণীয় এক জুটি।

কবিতায় সুরারোপ সত্য সাহার আরেকটি সুকৃতি। শামসুর রাহমানের অনন্যসুন্দর কবিতা ‘মা’- এ সত্য সাহার সুপ্রয়োগিত সুর রফিকুল আলমের কণ্ঠে বাংলাগানের একটি সেরা নিদর্শন। আলমগীর কবিরের ‘সূর্যকন্যা’ ছবিতে ফজল শাহাবুদ্দীনের কাব্যধর্মী কথা আমি যে আঁধারে বন্দিনী ও চেনা চেনা লাগে সত্য সাহার অসাধারণ সুরে বাংলা ও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রগীতির দুটি শ্রেষ্ঠ উদাহরণ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও শ্যামল মিত্রের কণ্ঠে। সত্য সাহার সংগীতের মূল ভিত্তি মেলোডি। এই অসাধারণ শ্রুতি মাধুর্যের গুণেই তাঁর সুরারোপিত প্রতিটি গান কর্ণ থেকে সহজেই মর্মে পৌঁছে যেতে এবং স্থায়িত্ব পেতে সক্ষম হয়েছে। সুরের সব কটি স্বর ও পর্দা যথার্থরূপে অধীত থাকলেই কেবল তা সম্ভব। লোকসংগীতেও ছিল তাঁর ঈর্ষণীয় দখল।

২০১৩ সালে তাঁকে দেয়া হয় মরণোত্তর ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’।

সত্যসাহা সুরারোপিত স্বর্ণালী গান

চেনা চেনা লাগে ( ছবি: সূর্যকন্যা, গীতিকার: ফজলে শাহাবুদ্দিন, শিল্পী: শ্যামল মিত্র), দু:খ আমার বাসর রাতের ( ছবি: জননী, গীতিকার: রফিক–উজ–জামান, শিল্পী: সাবিনা ইয়াসমিন), চিঠি দিও প্রতিদিন (অ্যালবাম:Image result for satto saha অনুরোধ, শিল্পী: সাবিনা ইয়াসমিন),

আমার মন বলে তুমি আসবে ( ছবি: আনার কলি, গীতিকার: গাজী মাজহারুল আনোয়ার, শিল্পী: রুনা লায়লা), রূপালী নদীরে (গীতিকার:আনিসুল হক চৌধুরী, শিল্পী: আবদুল আলীম), বন্ধু হতে চেয়ে তোমার (গীতিকার: রফিক–উজ–জামান, শিল্পী: সুবীর নন্দী), আকাশের হাতে আছে ( : আয়না ও অবশিষ্ট, গীতিকার: গাজী মাজহারুল আনোয়ার, শিল্পী :আনজুমান আরা বেগম), তুমি কি দেখেছ কভু (ছবি: এতটুকু আশা, গীতিকার: ড. মো: মনিরুজ্জামান, শিল্পী: আবদুল জব্বার), এমন মজা হয় না (ছবি:সুতরাং, গীতিকার: সৈয়দ শামসুল হক), মা গো মা, ওগো মা (ছবি: সমাধি, শিল্পী: মো: খুরশিদ আলম, গীতিকার: গাজী মাজহারুল আনোয়ার), পরানে দোলা দিলো (ছবি: সুতরাং. গীতিকার: সৈয়দ শামসুল হক, শিল্পী: ফেরদৌস রহমান), গাঙ বাঁকা জানি ( ছবি: সুতরাং, গীতিকার: সৈয়দ শামসুল হক, শিল্পী: মোস্তাফা জামান আব্বাসী ও ফেরদৌসী রহমান), তোমার পরশে জীবন আমার ( গীতিকার: গাজী মাজহারুল আনোয়ার, শিল্পী: সুবীর নন্দী/ সাবিনা ইয়াসমিন), ভাবি যেন লাজুকলতা ( ছবি: আবির্ভাব, শিল্পী: সত্যসাহা), আমি নিজের মনে নিজেই যেন ( ছবি: আবির্ভাব, শিল্পী: খন্দকার ফারুক আহমেদ), নীল আকাশের নিচে আমি (ছবি: নীল আকাশের নিচে, গীতিকার: গাজী মাজহারুল আনোয়ার, শিল্পী: খন্দাকার ফারুক আহমেদ), হেসে খেলে জীবনটা (ছবি: নীল আকাশের নিচে, গীতিকার: গাজী মাজহারুল আনোয়ার, শিল্পী: মো: আলী সিদ্দিকী), গান হয়ে এলে ( ছবি: নীল আকাশের নিচে গীতিকার: গাজী মাজহারুল আনোয়ার, শিল্পী: ফেরদৌসী রহমান), কখনও আমার মাকে (গীতিকার: কবি শামসুর রাহমান, শিল্পী: মো: রফিকুল আলম), ভালোবাসা এমন একটি ( শিল্পী: মো: রফিকুল আলম), এক নদীরই উজানভাটি (ছবি: উজান ভাটি, শিল্পী: মো: রফিকুল আলম ও আবিদা সুলতানা), তোমরা যারা আজ আমাদের ভাবছে মানুষ কিনা ( ছবি: লালুভুলু, গীতিকার: মাসুদ করিম, শিল্পী: মো: খুরশিদ আলম), ধীরে ধীরে চল ঘোড়া ( ছবি: শাপমুক্তি,শিল্পী: মো: খুরশিদ আলম), যার ছায়া পড়েছে ( ছবি: আয়না ও অবশিষ্ট,শিল্পী: ফেরদৌসী রহমান), সাতটি রঙের মাঝে আমি ( ছবি: আবির্ভাব, শিল্পী: আনজুমান আরা বেগম), এই পৃথিবীর পরে ( ছবি: আলোর মিছিল, গীতিকার: মোস্তাফিজুর রহমান শিল্পী: সাবিনা ইয়াসমিন), তুমি, তুমি বড় ভাগ্যবতী ( ছবি: প্রতিনিধি, শিল্পী: রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমিন)।

সৃজনশীল ক্ষণজন্মা মানুষের কি মৃত্যু হয়? শ্রুতিমধুরতার কারণে তিনি বেঁচে থাকবেন গানে গানে, প্রতিটি শ্রোতার কানে কানে।

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:০২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×