somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুশীল ধর্ষকদের কাছে নষ্টা অথবা পতিতা আমার মা বোনরা ।

১২ ই মে, ২০১৪ রাত ৮:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্থানঃ মৌচাক মার্কেট
সালঃ ২০০৬
সময়ঃ বিকাল ৪ টা


বি এফ শাহিন কলেজের ড্রেস পড়া তিনটি মেয়ে মার্কেটে আইসক্রিম খায় আর ঘুরে। মার্কেট থেকে বের হলেই দেখবেন আমড়া ওয়ালা আমড়া বিক্রি করতেছে। ( এখন করে কিনা জানিন।) তো মেয়ে গুলো মার্কেট থেকে বের হয়ে আমড়া ওয়ালার সামনে দাঁড়ালো । ঠিক একই সময়ে কয়েকটা পথভ্রষ্ট ছেলে আমড়া কিনার ভান ধরে মেয়ে গুলোর পাশে গিয়ে এমন ভাবে দাঁড়ালো দেখেই মনে হবে ইচ্ছা করেই সে মেয়ে গুলোর সাথে গা ঘেঁষে দাঁড়ায়ছে । মেয়ে গুলো বুঝতে পেরে সেখান থেকে তাড়াতাড়ি চলে গেল আর ছেলে গুলো কুত্তার মতো ঘেউ ঘেউ করে হেসে উঠলো।

আমি-তখন ইন্টার এক্সাম দিয়ে ভার্সিটি ভর্তি কোচিং করছিলাম। আমি একা এবং ছোট থাকায় খুব খারাপ লাগা স্বত্বেও কিছু করতে পারছিলামনা। তবে আমার কয়েকজন ফ্রেন্ড থাকলে খবর ছিলো।

স্থানঃ মাস্কাট প্লাজা উত্তরা, ঢাকা ,
সালঃ ২০০৮
সময়ঃ বিকাল ৫ টা


আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ম বর্ষ শেষ করে ২য় বর্ষে উঠেছি। আমাদের একটা ফ্রেন্ড সার্কেল ছিলো। এক ফ্রেন্ডের গ রিলেশন হওয়া উপলক্ষে ( নতুন প্রেম আর কি ? )আমাদের পুরা সার্কেলকে ইনভাইট করে আমাদের ফ্রেন্ডটি । আমাদের একজন মেয়ে ফ্রেন্ড ছিলো। নাম বলছিনা। সে বোরকা পড়তো। প্লান ছিলো সবাই উত্তরায় আসবো । ওখানে মিট করে সবাইকে খাওয়াবে আমাদের ফ্রেন্ডটা।( যে নতুন প্রেমে পড়েছে সে)

আড্ডা খাওয়া দাওয়া শেষে বাসায় ফেরা উদ্দেশ্যে সি এন জি দেখছিলাম। আমি আমার ফ্রেন্ড জোবায়ের যে পথে আসব সে পথে আমাদের বোরকা পড়া বন্ধুটিরও বাসা । প্লান ছিলো তাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আমরা আমাদের বাসায় চলে আসবো । আমি সি এন জি ঠিক করতে ব্যস্ত । আমার ফ্রেন্ডরা রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে ওয়েট করছে। এমন সময় কয়েকজন বকাটের কিছু শব্দ স্পষ্ট কানে এসে লাগল ।

“ মালটা দেখছিস । কড়া একেবারে।” পেছনে ফিরে তাকালাম আমার ফ্রেন্ডকে ইঙ্গিত করছে। আশে পাশে তাকালাম অন্য কোন মেয়ে নেই । একা হওয়ার কারণে মৌচাক যা করতে পারিনাই তা করার ইচ্ছা ছিলো । তাও আবার প্রিয় বন্ধুর দিকে বাজে ইঙ্গিত করছে। ভার্সিটি ২য় বর্ষ । বয়সটা কেমন ভাবেন। বাঁচি আর মরি আর ওদের পিটতামই।

গিয়ে ভদ্র ভাবে জিজ্ঞেস করলাম ভাই কিছু বলছেন?
ওরাঃ কই নাতো !
আমিঃ কি যেনো শুনলাম কড়া মাল না কি বলছে? আপনাদের কেউ বলছে নাকি ?
ওরাঃ ধুর ভাই আমরা কেন হব।
আমিঃ ডাইরেক্ট অস্বীকার করাতে কিছু বলতে পারছিলামনা। ওদের উস্কানি দেওয়ার জন্য বললাম ভাগ্য ভালো আপনাদের মধ্যে কেউ না। কুকুরটাকে যদি আমি দেখতাম এমন পিটা পিটতাম যে বাবার নাম ভুলে যেত। ( ইউনিভার্সিটির ২য় বর্ষের পোলাপান যে ভাষায় কথা বলে আর কি )
ওরা: মনে হয় একটু ভয় পাইল । না ভাই আমরা না । অন্য কেউ হয়তো বলছে।

স্থানঃ ঢাকার কাওরান বাজার। এটি এন বাংলার অফিসের সামনে।
সালঃ ২০১৪ ।
টাইমঃ সন্ধ্যা ৬ টা।


সি এন জি এর জন্য দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে। পরনে ৮-১০ টা মেয়ের মতো সলোয়ার কামিজ। একটার পর একটা সি এন জি থামানোর চেষ্টা করছে। হয়তো দরদাম হচ্ছেনা অথবা সি এন জি ওয়ালা গন্তব্যে স্থলে যেতে চাচ্ছেনা। এভাবে মেয়েটি সি এন জি খুঁজতে ব্যস্ত। ঠিক সেই মুহুর্তে একটা কুকুর এসে মেয়েটার পেছনের একটা স্পর্শকাতর জায়গায় হাত লাগিয়ে টিপ দিয়ে চলে গেলে। মেয়েটি অবাক হয়ে পেছনে ফিরে দেখে কুকুরটা হেটে অনেক দূর চলে গেছে। অপমানিত মেয়েটির চোখে পানি চলে আসলো। হয়তো কুত্তার চাপটা এতো জোরালো ছিলো যে মেয়েটা ব্যথা পেয়েছে। ব্যথায় হোক আর অপমানিত হয়ে হোক মেয়েটি তার গলায় যত জোর ছিলো সব দিয়ে চিৎকার দিয়ে বললো ঐ কুত্তার বাচ্চা দাঁড়া। চিৎকার শুনে আমি আর আমার ফ্রেন্ড মেয়েটির কাছে দৌড়ে গেলাম।

জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে আপু ?
মেয়েটা বললো ঐ বেয়াদবটা -------- কেঁদে দিছে।
মেয়েটির সাথে কথা কথা বলতে বলতেই কুত্তাটা গায়েব হয়ে গেছে।

আমরা তখন একটা টং দোকানে টুলে বসে চা সিগারেট খাচ্ছিলাম। মেয়েটিকে সান্তনা দিলাম। সি এন জি ঠিক করে দিলাম। যেখানে বসে ছিলাম সেখানে ফিরে আসার পর পাশ থেকে মাজ বয়সী একজন কূশিক্ষিত কূশীল বলে উঠলো এগুলোরে সাহায্য করে লাভ নাই। এরা পতিতা । এমন ভাবে ড্রেস পরছে ব্রেস্ট আর এস দেখা যায়। এভাবে ব্রেস্ট আর এস দেখালে তো যে কারো টিপ দিতে ইচ্ছা করবে।

ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম লোকটা আমার বাবার বয়সের । আমার সমান তার ছেলে মেয়ে থাকার কথা। কি বলবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না ।

অবাক হয়ে তার দিকে তাকাইয়া আছিলাম।

আমার বন্ধু রাকিব ছিলো খুব মেজাজি । বাবার বয়সী লোক দেখে আমি চুপ থাকলেও সে চুপ থাকেনি । সে বলেই ফেললো অই কুত্তার বাচ্চা তোর মায়া আছি নাকিরে ? যদি থাকে আমি চাই তোর মেয়েকে তোর সামনে অন্য কেউ এসে এভাবে টিপ মারুক । তর সাথে তর মেয়ে থাকলে আমিই চাপ দিয়ে দেখাইতাম তোকে নিশ্চয় তোর দেখতে খুব ভালো লাগত বলতি আমার মাইয়া নষ্টা পতিতা । চাপ খাইতেই পারে।

ছেলের বয়সী একজনের কাছ থেকে এভাবে গদাম খেয়ে স্থান ত্যাগ করলো জনৈক কূশীল।

উল্লেখিত ৩ টি ঘটনাই আমাদের শহর গুলোতে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও অহরহ ঘটছে। নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে আমার বোনরা। উল্লেখিত ঘটনা গুলোর মেয়ে গুলোর জায়গায় আপনার মেয়ে অথবা বো ন কে কল্পনা করুন। আমরা বাঙালি । আমাদের সমস্যা হলো আমরা যতক্ষণ নিজের উপর এসে না পড়ে ততক্ষণ প্রতিবাদ করিনা।

সবচেয়ে অবাক করা বিষয় কিছু মানুষ মেয়েটার দোষ দিয়ে কুকুরটার দোষ আড়াল করার চেষ্টা করে। বলে মেয়েটার দোষ আছে । মেয়েটা ওরকম ড্রেস পড়লো কেন? ইভ টিজিং মেয়েটার প্রাপ্য । পর্দা করলে এমনটা হতনা । আরো কত যুক্তি ।

মেয়েটার মা-বাবা আছে । মেয়েটা বড় হয়েছে । আমি অবাক হয়ে যাই এই সুশীল ধর্ষকদের কথা শুনে। আমার ফ্রেন্ডটা তো পর্দা করেছে তাকে নিয়ে নোংরা কমেন্ট পাস করার মানে কি ?

এরা আসলে সুশীল ধর্ষক । এদের মধ্য অনেকেই ইসলামের কথা বলে । বলে পর্দা করলে এমনটি হতো না। অথচ ইসলাম একটি পবিত্র ধর্ম । ইসলাম মেয়েদের পর্দা করার নির্দেশ দিয়েছে । কিন্তু কেউ যদি পর্দা না করে বা বোরকা না পরে তাহলে তার শরীরের কোন স্পর্শকাতর জায়গায় চাপ দিয়ে চলে যাওয়া, পর্দা না করার অপরাধে মেয়েটাকে নষ্টা পতিতা বলা !!!!! ইসলাম কি এসবের অনুমতি দেয়!!!!!

প্রিয় বাবা প্রিয় ভাই আপনি যেখানেই থাকুন কখনো যদি দেখেন কোন মেয়েকে কুকুর সমতুল্য কোন মানুষ কোথাও এভাবে অপমান করছে তবে সেখানে ই প্রতিবাদ করুন । ওদের পুলিশে ধরিয়ে দিন। না হলে অন্য কোন স্থানে আপনার মেয়ে আপনার বোনকেও একই অবস্থায় পড়তে হবে।

তাই এখনই প্রতিবাদ করুন। সময় গেলে কিন্তু সাধন হবেনা।


সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৪ রাত ১:৫৭
৩৪টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×