কয়েকদিন আগে মনিরা সুলতানা আপুর আমার কাছে চমৎকার একটা কবিতা পাঠের অনুভূতি অমরাবতী সম আনন্দের! লেখাটি পড়েছিলাম । আপুর লেখার মুল বিষয় ছিল কবিতা পড়ার আনন্দ । আমি সহ আমাদের আরও অনেক সহব্লগার সেখানে তাদের মনোভাব প্রকাশ করেছেন ।
সেই পোষ্টে মন্তব্য করতে গিয়ে আর্কিওপটেরিক্স ভাইয়া তো পুরো এক কবিতাই লিখে ফেলেছেন ও পোস্ট করেছেন আমার কাছে কবিতা
মনিরা আপু তার পোস্টের প্রতিমন্তব্যে আমাকে আমার লেখার আনন্দ নিয়ে লিখতে বলেছিলেন । লিখতে অনেক ভালোলাগে, আনন্দ লাগে তবে সেই অনুভূতি নিয়েও যে কিছু লেখা যায় তা তো মাথায়ই আসেনি । কিন্তু আপুর কথার সুত্র ধরে আজকে লিখেই ফেললাম আমার লেখার আনন্দ
কবিতা সহ গল্প, উপন্যাস, ফিচার যে কোন কিছু পড়াকে আমরা মনের খোরাক হিসেবে নিতে পারি । সাধারন ও সহজ কথায় বলতে পারি ভালো লাগে তাই পড়ি । তবে ভালোলাগা ছাড়াও কখনো আমরা শেখার জন্য জানার জন্যও পড়ি ।
কিন্তু আমরা কেন লিখি ? আমাদের কার কাছে লেখার আনন্দ কেমন, কতটুকু ? এখানে সবার ক্ষেত্রে যে কমন একটা বিষয় থাকবে সেটা হচ্ছে ভালোলাগা । যে কোন কাজ করার সময় যদি সেই বিষয়টি আমাদের ভালোলাগে, আমরা তাকে ভালোবাসি তখন কিন্তু সেই কাজের মান বা ফল অনেক বেশী ভালো হবে । আর যখন সেটা ভালো লাগবেনা তখন কাজটি হবে কোন রকম দায়সারা গোছের ।
কিন্তু লেখালেখি এমন একটি জিনিস সেটাকে আপনার ভালো লাগতেই হবে , ভালো বাসতেই হবে তা না হলে লেখা দায়সারা গোছের তো দূরের কথা লেখা আসবেই না ভেতর থেকে, অন্তত আমার ক্ষেত্রে না । পড়া কিন্তু আমাদের ভালো না লাগলেও কখনো কখনো পড়তে হয়, যেমন স্কুলের পড়ার কথাই যদি বলি কিংবা যখন আমার মতো আবোল তাবোল গোছের কোন লেখিকা তার কোন লেখা নিয়ে এলো তখন কিন্তু আপনি ভালো মানুষ হলে তার মন রক্ষার জন্য হলেও সেটা পড়বেন
যাই হোক, এবার আসি আমার লেখার আনন্দ নিয়ে ।
আমি প্রথম কবিতা লিখি আজ থেকে অনেক বছর আগে যখন এক কিশোরীর মনে সবে মাত্র এক কল্পনার রাজকুমারকে নিয়ে স্বপ্ন গুলো বাসা বাঁধতে শুরু করেছিল । তখন দু চারটি লেখা লিখে আর লিখিনি এবং সেই লেখাগুলো কাউকে দেখাইওনি ।
তখনকার সময়ে লেখা আমার কিশোর বেলার ভাবনায় তুমি
তারপর আরও অনেক বছর পর যখন আমার জীবনে কল্পনার সেই রাজকুমার বাস্তবে আসে এবং একবার হারিয়ে ফেলে তাকে আবার ফিরে পাই তখন তাকে আবার ফিরে পাওয়া নিয়ে লেখা আমার প্রথম পাঁচটি লাইন
বহুদিন ধরে বৃষ্টির দেখা না পেয়ে
মনের জমিন যখন ফেটে চৌচির
হঠাৎ কোন বিকেলে
মৃতপ্রায় এ মনকে জীবন ফিরিয়ে দিতে
এক পশলা বৃষ্টি যেন তুমি !
তারপর থেকে এখন পর্যন্ত যত কবিতা লিখেছি, লিখছি এবং লিখবো সব তাকে নিয়ে । আমার যখন যা মনে আসে আমি তাই নিয়েই লিখি তা সে প্রেম, ভালোবাসা, বিরহ যাই হোক সব তাকে নিয়েই । ব্লগে সবাই নিজের লেখা উৎসর্গ করে কিন্তু আমি এখনও কাউকে কোন লেখা উৎসর্গ করিনি এবং করবোও না কারন আমার সব কবিতা সব লেখা আমিযে মনে মনে তাকেই উৎসর্গ করে রেখেছি যে আমাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে, কবিতা লিখতে শিখিয়েছে, লিখতে শিখিয়েছে ।
তাই আমার কাছে কবিতা মানেই সে, আর কবিতা লেখার আনন্দ মানে তাকে ভালোবাসার আনন্দ ।
যখন তাকে নিয়ে কবিতা লিখি তখন আমার মনের মধ্যে এমন অনুভূতি হয় যেন আমি আমার হৃদয় দিয়ে তাকে জড়িয়ে আছি । যখন লেখার সময় এক একটি শব্দ নিয়ে ভাবাভাবি করি তখন মনে হয় যেন আমি তার পাশে বসেই তার সাথে কথা বলছি । আমার যখন মন খারাপ থাকে আমি কবিতা লিখি, তাকে মিস করলে লিখি, তার জন্য মনে প্রেম জাগলে লিখি, আনন্দ অনুভূত হলে লিখি, অভিমান হলে লিখি, রাগ হলে লিখি, তাই সে যেখানেই থাকুক সবসময়ই সে আছে আমার কাছে এমনটি অনুভব হয় আমার মনে শুধুমাত্র এই কবিতার জন্যই। আর লিখতে লিখতে বিষয়টি এখন এমন হয়ে গিয়েছে যে তাকে নিয়ে কোন ভাবনা হলেই তা লিখতে হবে ।
আমার কাছে মনের মতো একটি কবিতা মানে হৃদয়ের সমস্ত আবেগ অনুভূতি দিয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে তাকে ভালোবাসার আনন্দ । তাকে নিয়ে একটি কবিতা মানে আমার ভালোবাসার হৃদয় সমুদ্র থেকে এক ফোঁটা ভালোবাসা ।
আমি ভালোবাসি তাই লিখি, আমার লিখতে ভালোলাগে তাই লিখি । তাকে ভালোবাসি তাই ভালোবাসা ও বিরহের কবিতা লিখি, আর এসব ছাড়াও বাকী যা কিছু লিখি সেগুলোও কিন্তু ভালোলাগা ও ভালোবাসা থেকেই লিখি । সেটি হচ্ছে সামুকে এবং সামুতে আমার সহব্লগারদের প্রতি ভালোবাসা ।
কখনো ভাবিনি আমার নিজের মনের এই অনুভূতি নিয়ে লেখা কবিতা গুলো কেউ পড়বে, কেমন লাগলো জানাবে । মাঝে শুধুমাত্র দু একটি কবিতা ফেসবুকে পোস্ট করেছি । তবে ফেসবুক আমার ভালো লাগেনা এবং চালাইও না ফেসবুক । সবচেয়ে বড় কথা আমি ব্যক্তিগত জীবনে আমার আসে পাশের মানুষের সাথে আমার আবেগ অনুভূতি নিয়ে কথা বলিনা, বলা পছন্দ করিনা । ব্লগে আসা একদম হঠাৎ করে । কখনো ভাবিনি ব্লগে লিখবো আমি । তাকে যেমন প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছিলাম তেমন সামুকেও প্রথম দেখেই ভালোবেসে ফেলেছি । এখন এই দুই ভালোবাসা নিয়েই সামুতে আমার পথচলা ।
আর ব্লগে কেউ আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনেনা আমার ব্যক্তিজীবনের কেউও কথার ফুলঝুরি কে চিনেনা তাই আমার ব্লগ ভালো লাগে ।আমার বাস্তব একরকম আর লেখা আমার কল্পনা । বাস্তবের চাইতে কল্পনাই বেশী সুন্দর, যাকে নিজের মনের মতো করে সাজিয়ে নেওয়া যায় তাই কল্পনাকেই আমি বেশী ভালোবাসি ।
নিজের লেখার আনন্দ নিয়ে অনেক কথা বলে আপনাদের অনেক সময় নিয়ে নিলাম আপনারা চাইলে আপনাদের নিজেদের লেখার আনন্দ আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন । খুশী হবো আমার সহব্লগারদের লেখার আনন্দ অনুভূতি সম্পর্কে জানতে পারলে ।
লেখার আনন্দ নিয়ে লিখতে গিয়ে আসলেই কি লিখলাম ঠিক বুঝতে পারছিনা কারন আমি বরাবরই অনুভূতি প্রকাশে ব্যর্থ ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১২:০১