
পোষ্ট এর প্রথম ছবিটি আজকের রাত ১,৫৫ তে বিডি জবস সাইট থেকে নেওয়া । ২৭ টি বিভাগে সর্বমোট চাকুরীর বিজ্ঞাপনের সংখ্যা মাত্র ৫৫৮ । আবার এর মধ্যে আসলেই কতগুলো একটিভ সেটাও একটি বিষয়।
স্বাভাবিক সময়ে শুধুমাত্র মার্কেটিং ও সেলস ডিপার্টমেন্ট এই দুইশ এর অধিক চাকুরী থাকতো । এই অবস্থায় অবশ্য এর চেয়ে বেশী কিছু আশা করাটাও যায়না।
কত মানুষ এরই মধ্যে চাকরী হারিয়েছে আর যারা অফিসিয়ালি কোন নোটিশ পায়নি তারা ভয়ে ভয়ে আছে অফিস খুললে কি হবে । বেতন তো অনেকেই পাবেন না আগামী মাসে। অফিসেরই বা কি দোষ তারতো বেতন দেওয়ার সামর্থ্য থাকা লাগবে ।
লকডাউন এ আছি পুরোপুরি দেড় মাসও হয়নি । আরও কতদিন থাকতে হবে কোন আইডিয়া নেই কারও । সবাই হয়তো মার্চ মাসের বেতন পেয়েছে তাই এপ্রিল মাসটা কোনোরকম কেটে যাচ্ছে কিন্তু মে মাসেতো ম্যাক্সিমাম মানুষ বেতন পাবেনা তারা কিভাবে চলবে পরের দিন গুলো? তাঁর উপর রোজা । ঈদে নতুন জামা কাপরের কথা বাদ দিলাম সেটা ছাড়াও চলবে কিন্তু রোজার মধ্যে কিছু অতিরিক্ত খাবার লাগে ।যেখানে প্রতিদিন খাবার মত পর্যাপ্ত খাবারের অভাব সেখানে রোজার জন্য বাড়তি কিছু তো অসম্ভব । অনেকে হয়তো রোজা পেয়েও খুশী কারন রোজার মধ্যে ভালো কিছু খেতে না পারলেও রোজা রেখে এক বেলা খাওয়ার খরচ কমবে অন্তত।
লকডাউন এ বাসায় থাকার কারনে সবার ক্ষুধা লাগে বার বার। কিন্তু সবাই কি ক্ষুধা লাগলেই খেতে পাচ্ছে ? অন্তত এক বাটি মুড়ি কিংবা কিছু ভাত ? আর বার বার খাওয়া তো দুরের কথা । ঘরে স্টক থাকলেও কেউ হয়তো চিন্তা করছে কম খাই শেষ হলে আবার পাবো কই তাঁর ঠিক নেই ।
আর যাদের আছে তারা খায় আবার ফেসবুকে আজকে এটা কালকে ওটা রান্না করা খাবারের ছবি। এই কাজ তাঁদের। লকডাউন তাঁদের জন্য উৎসব। আরও ৬ মাস কর্মহীন থাকলেও এদের কোন সমস্যা নেই । আমি ব্যক্তিগত ভাবে অনুরোধ করবো তাঁদেরকে আর যাই করুন অন্তত নিজেদের খাবারের ছবি গুলো ফেসবুকে দিয়েন না । ফেসবুকে আপনার পরিচিতদের অনেকেই দেখবেন ভেতরে ভেতরে খাবারের কষ্ট করছে । লকডাউনে আপনার উৎসব দেখে তাঁদের দীর্ঘশ্বাস আর ক্ষুধার কষ্ট বাড়াবেন না প্লিজ ।
বাংলাদেশে এখন মোট জনগোষ্ঠীর বিশাল একটা অংশ হচ্ছে মধ্যবিত্ত । এদের মধ্যে বেশীরভাগ চাকুরীজীবী । অনেক পরিবার শুধুমাত্র কর্তার বেতনের টাকায় চলে । তাঁর মধ্যে বাসাভাড়া, সংসার খরচ আবার বাচ্চা থাকলে তাঁর পড়াশোনা ও যাতায়াত খরচ ।
লকডাউন উঠে গেলে চাকরী হারানো এই বিশাল জনগোষ্ঠীর কি হবে । অনেকেরই গ্রামের বাড়ীতেও সেটেল হবার মত সুযোগ নেই । এক মাস দুই মাস তিন মাস কতদিন এর ওর সাহায্য নিয়ে চলবে ? আর এই শ্রেণীর মানুষ কারও কাছে সাহায্য চাইতেও পারেনা ।
করোনার ভয়ে সবার বাসায় কাজের বুয়া বাদ দিয়ে দিয়েছে। যারা পারবে পরবর্তী সময়ে আবার বুয়া রাখবে কিন্তু অনেক মানুষ আর রাখতে পারবেনা । সেখানেও ওইসব বুয়ার পরিবারে তাঁর রোজগার বন্ধ ।
গার্মেন্টস শ্রমিকের অনেকে চাকরী পাবেন না আর। হয়তো তারা অন্য কোন ছোট কাজ বের করে নিতে পারবেন । তাঁদের জন্য কাজ পাওয়া মধ্যবিত্তদের মত অতটা কঠিন না। কিন্তু ততদিন তারা কিভাবে বাচবেন ?
যারা রিকশা চালায়, দিন মজুর, শ্রমিক কিংবা বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসার সাথে জড়িত তারাও হয়তো যখন লকডাউন খুলবে কোন না কোন কাজ জোগাড় করে নিতে পারবেন । কিন্তু সেই পর্যন্ত বাচবেন তো তারা ? আর যাদের কাছে থেকে তাঁদের ইনকাম তাদেরই তো পকেটে টাকা থাকবেনা ।
এমন আরও কত পেশার মানুষ আছেন । কয়জনের কথা বলবো ?
সরকারী ত্রান ব্যক্তিগত উদ্যোগের ত্রান চোর বাটপাড়দের পাড়ি দিয়ে কয়জনের ঘরে সেটি পৌছাচ্ছে ? এইযে চোর বাটপাড় ভাইরা আপনাদেরকে বলছি, বেঁচে থাকলে চুরি করার আরও অনেক সুযোগ পাবেন । এই মহামারীর সময়ে অন্তত কিছুটা বিবেক বোধ জাগ্রত করুন নিজের ভেতরে।
সুকান্ত ভট্টাচার্য এর ভাষায় বলি
----
হে মহাজীবন, আর এ কাব্য নয়
এবার কঠিন, কঠোর গদ্যে আনো,
পদ-লালিত্য-ঝঙ্কার মুছে যাক,
গদ্যের কড়া হাতুড়িকে আজ হানো ।
প্রয়োজন নেই, কবিতার স্নিগ্ধতা,
কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী-গদ্যময়:
পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি ।
--------
আসলেই এখন আর কাব্য কবিতা ভালো লাগেনা । পূর্ণিমা চাঁদকে এখন ঝলসানো রুটিই মনে হয় । কবিতাকে দিয়েছি ছুটি ।
করোনা নিয়ে কারও মৃত্যু বা অন্যকিছু দেখে যতটুকু না কষ্ট লাগে তাঁর চেয়ে বেশী কষ্ট লাগে অভাবী আর না খেতে পাওয়া মানুষগুলোকে দেখলে ।

উপরের ছবিটি প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া । এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম ছবিটির দিকে ।
তিনি মিরপুরে যাবেন। কিন্তু রিকশা ভাড়া না থাকায় ফুটপাতে বসে ছিলেন। পরে একজন তাঁকে রিকশা ভাড়া করে দিলে তিনি গন্তব্য যেতে পারেন। এভাবেই যেন আমরা একে অপরের কাছে ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেই ।
অভাব দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে কিন্তু ভালোবাসা যেন জানালা দিয়ে না পালায় । ভালোবাসা থাকুক অমলিন । ভালোবাসা দিয়ে বাধা থাকুক পরিবারের মানুষগুলো আর ভালোবেসে যার যতটুকু সম্ভব যেভাবে সম্ভব পরিচিত মানুষগুলোকে সাহায্য করুন আর যা হোক অন্তত না খেয়ে যেন কাউকে না থাকতে হয় । আপনার এ সাহায্যের বদলে দেখবেন সৃষ্টিকর্তাও আপনাকে কোন না কোন ভাবে সাহায্য করেছেন ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:২৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


