এ ক টি, দু টি ও তি ন টি জুটি : বাং লা দে শে র জ য়
তারিক আল আজিজ
জীবনে সফলতা পেতেও নাকি জুটির অনেক বড় ভূমিকা থাকে। অনেক বড় বড় মনীষীদের বড় হবার পেছনে উৎসাহের যোগান দিয়েছেন অর্ধাঙ্গী স্ত্রী’রা। সফলতার নেয়ামক হিসেবে উঠে এসেছে স্বামী-স্ত্রীর সফল জুটির কথা। সিনেমাতেও সফল হতে জুটির খোঁজে থাকেন পরিচালকেরা। উত্তম-সুচিত্রা জুটির ছবি দেখে আমরা এখনো নষ্টালজিক হই।
জুটি দরকার ক্রিকেটেও। বড় ইনিংস গড়তে, বড় ইনিংস তাড়া করে জয় পেতে; সবখানেই দরকার দুই ব্যাটসম্যানের চমৎকার বোঝাপড়ায় গড়ে ওঠা জুটি।
আজ বাংলাদেশ জয় পেলো। অবিস্মরণীয় নিঃসন্দেহে। ক্রিড়ামোদী বাংলাদেশের দর্শকরা অনেকদিন এই দিনকে ভুলবেন না। বলা উচিৎ, ভুলতে পারবে না।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এই বিজয়ে একটি তলিয়ে দেখি একটি, দুটি ও তিনটি জুটি। যে তিন জুটি’র কল্যাণে বাংলাদেশ তৃতীয়বারের মত ভারত বধ করলো।
তামিম-অমি
ম’ এ মিল রাখতে জহুরুলকে অমি লিখলাম। আবার অমি লিখতে ‘আমি’ অর্থাৎ আমার বা কাছের মনে হচ্ছে। সাকিব, মুশফিকের মারকুটে ব্যাটিং এই ম্যাচকে বিজয় বন্দরে নিয়ে গেলেও ভীতটা গড়ে দেয় তামিম-অমি জুটি।
ইনিংসের পঞ্চম ওভারে আউট ওপেনার নাজিমুদ্দিন। হয়তো আকাশে উঠাতে চেয়েছিলেন বলকে। কিন্তু বলটা যখন নামলো, তখন ফিল্ডারের তালুতে জায়গা নিয়েছে। নামলেন জহুরুল ইসলাম। যার ডাক নাম অমি।
১১৩ রানের জুটি। তামিম-অমি দুজনেই সমানে সমানে খেললেন। লম্বা অমির মাঝে মাঝে ফিল্ডারের মাথার ওপর দিয়ে উঠানোর চেষ্টা ভালো লেগেছে। একটা ছয় ঠিকই মেরেছেন। সাথে চারটি চার। ৫৩ করেছেন ৬৮ বল খেলে। আউট হন নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশত পূরণ করে। অমি আউট হবার সাথে সাথে জুটি ভেঙ্গে যায়। ততক্ষণে এ জুটি ১৫ থেকে দলের রান নিয়ে গেছেন ১২৮ এ।
তামিম খেলেছেন একটু রয়ে সয়েই। ইনিংসে ছয়টা চার মেরেছেন। তামিমকে আগের চেয়ে বেশ দায়িত্বশীল মনে হয়েছে। ৯৯ বলে করেছেন ৭০ রান। শেষকালে একটু ক্লান্ত মনে হয়েছে। হয়তো সঙ্গী অমি চলে যাওয়ায়। দলের ইনিংসকে ঠিকই পোক্ত করে আউট হয়েছেন।
নাসির-সাকিব
ভারতের বড় বড় খেলোয়াড়দের সামনে নাসির একটা বাচ্চা ছেলে। কি বয়সে বা কি স্বাস্থে। সেই নাসির কিন্তু আজকের ম্যাচের অনেকটা জায়গা জুড়ে। নাসির নেমেছেন অমি আউট হবার পরেই। অধিনায়ক মুশফিক নাসিরকে টু ডাউনে নামিয়ে পাকা মাথার পরিচয় দিয়েছেন।
এই নাসিরকে নিয়ে ক’টা কথা বলতেই হয়। বাঙ্গালী মাত্রই আবেগী, এ কথা এই ছেলেকে দেখলে ভুলে যেতে হয়। চার মারছেন, চমৎকার পুল করছেন; কিন্তু ওই একই ভাবলেশহীন মুখ। তার শরিরী ভাষায় পেশাদারিত্ব ঠিকরে পরে। সাকিবের সাথে জুটি বেঁধে করেছেন ৬৮ রান।
সাকিবকে নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। আজকে বল হাতে সাফল্য না পাওয়ায় ব্যাট হাতে পুশিয়ে দিতে মুখিয়ে ছিলেন। দেখার মতো ছয় মারলেন। সকিব ৪৯ রান করে ভারত অধিনায়ক ধোনীর ‘কুইক ষ্ট্যাম্পিং’ এর স্বীকার হন। জুটিটা ভেঙ্গে যায়। সাকিব ৪৯ করেন মাত্র ৩১ বলে।
খেলার মেজাজ বুঝে পেশাদারী মনোভাব নিয়ে নাসির-সাকিবের জুটি জয়ের আত্মবিশ্বাস এনে দিয়েছে।
নাসির-মুশফিক
জুটি ভেঙ্গে গেলেও ভাঙ্গেননি নাসির। তিনি অধিনায়ক মুশফিককে নিয়ে আরেকটি জুটি গড়েন।
মুশফিককে নিয়ে গত বিশ্বকাপের আগে সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন বলেছিলেন, ছোট মুশফিকই কিন্তু বড় বড় ছক্কা মারে। কথাটা শতভাগ সত্যি। এইতো ক’দিন আগে ছয় মেরে টি-টোয়েন্টিতে হারিয়ে দিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। আজ তো ছক্কার ফুলঝুড়ি ছোটালেন।
দলের রান তখন ২২৪। মুশফিক আসেন। প্রথমে স্বভাবসুলভ কয়েকটা বল একটু দেখে খেলেন। এরপরে শুরু হয় আকাশে ভাসিয়ে সীমানা পার করার চেষ্টা। মুশফিক ছয় মারেন তিনটি। এর মাঝে ইরফান পাঠানের করা ৪৮ তম ওভারেই খেলার মোড় ঘুরে যায়। পরপর প্রথম দুই বলে দুই ছক্কা। ছোট মুশফিকের বড় মার। ইরফানের ওভার শেষে তাই দরকার ১২ বলে ১৬ রান।
৪৯ ওভারে মুশফিক প্রথম বলে চার আর পরের বলে ছয় মারেন। খেলা একেবারে বাংলাদেশের পকেটে। ঠিক জয় থেকে দুই রান দূরে থাকতে তুলে মারতে গিয়ে আউট নাসির। জুটি ভেঙ্গে যায়। কিন্তু যা হওয়া দরকার তা হয়েই গেছে। তখনো বাকি ৭ বল। এই জুটিতে আসে ঝড়ো গতির ৬৪ রান।
আবারো নাসিরের কথা বলা দরকার। নাসির শুধু একটি নয়, দুই জুটি গড়ার কারিগর। ‘নাসির’ আরবী শব্দ। অর্থ সাহায্যকারী। দুই জুটি গড়তে ভূমিকা রেখে তিনি নামকে স্বার্থক করেছেন।
শচীন স্মরণ
তাঁর কথা না লিখলে বড় অপরাধ হবে নিঃসন্দেহে। দীর্ঘ এক বছর অপেক্ষার পর শতকের শতক করে বিশ্ববাসীকে আরেকবার জানিয়ে দিলেন ‘আমি শচীন’। ১১৪ করতে আজ ১৪৭ বল খেলেছেন। একটু বেশিই হয়তো। তাতে কি আসে যায়। শচীনের শতকের শতক বানাতে দুই-একটা ম্যাচ বিসর্জনেও কিছু এসে যায় না। আবেগ নয়, আমার কাছে এটাই সত্যি। আজ পর্যন্ত শচীনই তো ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন।
ধন্য হলো ঢাকার মাঠ, ধন্য হলো বাংলাদেশ।
গুডলাক বাংলাদেশ
আসুন সবাই শুভ্রদেবের গাওয়া গানটা গাই। শিল্পী আসিফের ‘বেশ বেশ সাবাশ বাংলাদেশ’ও গাওয়া যেতে পারে।
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১:০২