মধ্যবিত্ত ঘরে জন্মানো মেয়ে গুলো কালে-ভদ্রে জন্মের সাথে কিছুটা খুশি সাথে করে নিয়ে আসে পরিবারে।আদরে আদরে বেড়ে ওঠে বাবা-মায়ের হাত ধরে।
হাটা থেকে শুরু করে স্কুলে যাওয়া,সময়টা ছিল শুধু এগোনোর।
দেখতে দেখতে বয়স ১২.
স্বাধীনতার মাঠে এক এক করে কাটা তারের বেড়ার খুটি পড়তে থাকে।ফ্যামিলি থেকে অনেক কিছুতেই শুনতে হয় 'এটা করো না,ওইটা মেয়েদের করতে নেই,এভাবে মেয়েরা চলে কখনো!,কবে শিখবা!'
ঠিক এ ধরনের ই হাজারো কাটা তারের খুটি।যা এক এক করে আলাদা করতে শুরু করে তার স্বাধীন চলার পথকে।
এভাবেই বয়স ১৬.
ষোড়শী বালিকা বাধা নিষেধ এর পথ এড়িয়ে চলার রুটিনে হঠাৎ করেই পা দিয়ে বসে কখনো কখনো ফ্যামিলির লাল কালি দেওয়া প্রেম নামক শব্দে।কখনো তা এগোয়,আবার কখনো তা পথেই হারিয়ে যায়,কাগজে লেখা হয়ে বাতাসের ভেলায়।
বয়স কিছুটা বাড়ে।
নারী তখন কুড়িতে পা দেয়।আর সাথে করে নিয়ে আসে বাবা-মায়ের ঝুড়িতে হাজারও চিন্তার খোরাক।বড় হয়ে গেল মেয়ে,ভাল একটা ছেলে দেখে তাকে তুলে দিতে হবে,ছেলে ভাল হবে তো?টাকা তো অনেক জোগাড় করতে হবে।
এভাবেই অনেক চিন্তা।
পরিবারের কাছে যেন মেয়ে তখন বোঝা।
যাই হোক,দিনক্ষণ আর সঠিক পাত্র দেখে ব্যাটে-বলে মিলিয়ে বিদায় দেয় ধুমধাম করে মেয়েকে।
চলে এলো সে নতুন ঘরে,অজানা কারো অধীনে।
কারো কারো আবার এখানেই শেষ হয়ে যায় এগোনোর গল্পটা।কারো আবার অন্য ভাবেই গড়ে ওঠে গল্পের শাখা-প্রশাখা।
বেশ ভালবাসাই দেয় স্বামী নামের মানুষটি।এটা না চাইতেই ওটাও নিয়ে আসে প্রায় প্রতিদিন ই।ষোল আনা হতে খুব একটা বাকী থাকে না যখন,বাধা টা তখন ই অনুমেয় হয়।
ঠিক যেভাবে ইচ্ছে হয় সেভাবে আর ভালবাসায় মননিবেশ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে মন দিতে হয় সংসারের কাজে।সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত কথার চেয়ে হাড়ি-পাতিলের আওয়াজ ই বেশি শোনা যায় তার আশেপাশে।
এভাবেই এক সময় ঘর আলো করে আসে ভবিষ্যতের নাড়িছেঁড়া ধন।সময় সুযোগ পাওয়া গেলে একে একে বছর ঘুরতে ঘুরতে আরও কয়েকজনের আগমন ঘটে যায়।
মেয়ে থেকে মা বনে যাওয়া মানুষটি হয়ে যায় রাজ্যের ব্যস্ত।
সারা সংসার সামলাতে গিয়ে সে বেমালুম ভুলেই যায় যে নিজেও একটা মানুষ!
বাড়তে থাকে বয়স,রান্না ঘরের কালির ভীড়েও একদিন লক্ষ করা যায় যে হাতে গোনা কিছু চুল কালো থেকে সাদায় পরিণত হচ্ছে।কিন্তু সেদিকে খেয়াল দেওয়ার সময় কই!
ততদিনে তো সে বিবাহ যোগ্য সন্তানের মা।
কিন্তু ঘরে বাঁধে ঝামেলা।সন্তানের বাবা বেজায় রেগে যায় সন্তানের অন্য কোথাও পছন্দ আছে শুনে।আর সব দোষ চাপায় মায়ের ঘাড়েই।
কিছু বলতে না পারা মধ্যবিত্ত ঘরের সেই মেয়েটি আজ মা।এবার ও কিছু বলতে পারে না,মন খারাপ করে রান্নাঘরে চলে যায়।
রান্নাঘরে বসেই হঠাৎ ভাবনার সাগরে ডুব দেয় এই ভেবে যে,
এক সময় সে ও কুমারী ছিল,তার ও কৈশোর ছিল,শৈশব ছিল।দুরন্তপনা তার ও শখ ছিল।
ভাবনার দুয়ারে তালা লাগে ছোট্ট কোন শিশুর মুখে নানী কিংবা দাদী ডাক শুনে!
হাসি দিয়ে পুরু আর পুরোনো চশমার ফাক দিয়ে কাপা কাপা হাত বাড়িয়ে কোলে তুলে নেয় তার আদরের নাতি/নাতনীকে।
আর ভাবে,
ইশ,কি ভালই না ছিল সেই ছোটবেলা!!!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:৪৫