somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ কবিতার জাদুকরী সঙ্গীত - অরকেনি ইস্টভান

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টেলিফোন বুথটি দাঁড়িয়ে ছিল গ্রান্ড বুলেভার্ডে। লোকেদের দৈনন্দিন কাজকর্মের প্রয়োজন অনুযায়ী এটার দরজা নিয়মিত বিরতিতে খোলা ও বন্ধ হতো। তারা তাদের মাঝারি ধরনের বিষয়আশয়গুলো সারতো যেমন: বিদুৎ কোম্পানীতে ফোন করা, রাত্রি কাটানোর জন্য চুক্তি করা, বন্ধুদের কাছে আকস্মিক ধার চাওয়া, অথবা প্রিয় কাউকে ইর্ষান্বিত হয়ে জ্বালানো এই রকম নানাবিধ বিষয়। একদিন একজন বয়স্ক মহিলা ফোনটি হাতে রেখে ফোনের উপর ঝুঁকে পড়ে কাঁদছিলো। তবে এমন ঘটনা কমই ঘটতো।
তারপর এক রোদ্রময় গ্রীস্মের বিকেলে, একজন কবি বুথে ঢুকলেন। ফোন তুলে তার সম্পাদকের কাছে ডায়াল করলেন। ‘আমি শেষের চার লাইন পেয়েছি,’ তিনি ঘোষণা করলেন।
এরপরে এক প্রস্থ ময়লা কাগজ বের করে সেখান থেকে চার লাইন কবিতা পড়লেন।
‘কেমন যেন বিষণœ’ সম্পাদক বললেন। ‘এটা আবার লিখুন। অবশ্যই চেষ্টা করবেন লাইনগুলো যেন আনন্দময় হয়।’
কবি তাকে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে চাইলেন, কিন্তু ব্যর্থ হলেন। রিসিভারটি ক্রেডলে রেখে দিয়ে বুথ ত্যাগ করেলেন।
কিছুক্ষণ কেউ এলো না, ফোন বুথটি খালি পড়ে রইল। শেষে একজন মহিলা এটার দিকে এগিয়ে এলেন। বোঝা যায় তিনি তার সোনালী দিনগুলো পার করে এসেছেন। ব্যতিক্রমধর্মী স্পন্দনশীল শরীরের গড়ন ও বিশাল স্তনের অধিকারী ছিলেন তিনি। পরনে ছিল লতাগুল্মের ছবিসহকারে হালকা সুতির কাপড়। তিনি ফোন বুথের দরজা খোলার চেষ্টা করলেন।
অনেক কষ্টের পর দরজা খুলল। প্রথম দিকে তো খুলতেই চাচ্ছিল না। কিন্তু পরে যখন খুলল, এমন প্রচন্ডভাবে তেড়ে এলো যে মহিলাটি চরকির মতো ঘুরে পথের পাশে পড়ে গেলেন। তিনি যখন আবার চেষ্টা করলেন, দরজাটি যে কাজ করল তাকে সবচেয়ে ভাল বর্ণনা করা যেতে পারে লাথি মারার সাথে। মহিলা ধাক্কা খেয়ে সংলগ্ন ডাক বাক্সটির উপর পড়ে গেলন।
বাস স্টেশনের অপেক্ষারত লোকজন চারপাশে ভিড় করে। ব্রিফকেস হাতে একটি লোক, যাকে এই ভিড়ের মধ্যে খুব সহজেই আলাদা করা যায়, দরজা খোলার চেষ্টা করলো। কিন্তু এটা তাকে এতো জোড়ে ধাক্কা দিল যে ফুটপাথে সে চিৎ হয়ে পড়ে গেল।
ইতিমধ্যে বেশ ভিড় জমে উঠেছে বুথটাকে ঘিরে। এরা বুথ, পোষ্ট অফিস এবং লতাগুল্মের ছবিসহকারে ছাপা কাপড় পরিহিত মহিলাকে নিয়ে নানা মন্তব্য করছিল। কিছু লোক হলফ করে বলল যে দরজাটিতে হাই ভোল্টেজ চলে এসেছে। আবার কেউ কেউ বলল যে লতাগুল্মের ছবিওলা কাপড় পরিহিত এই স্থুল মহিলাটি অবশ্যই কোন না কোনভাবে দুষ্কর্মের সাথে জড়িত, অবশ্যই বুথ থেকে পয়সা চুরি করার চেষ্টা করছিল এবং হাতে নাতে ধরা পড়েছে।
কিছুক্ষণ ধরে ফোন বুথটি এদের বিভ্রান্তিকর অভিযোগ শুনল, তারপর ঘুরে রকোজি সড়ক ধরে হেলেদুলে হাঁটতে শুরু করে। যখন এটা কোণের দিকটায় পৌঁছুলো তখনই লাল বাতিটা জ্বলে উঠলো, তাই থামতে হল এবং অপেক্ষা করতে থাকলো।
লোকজন এটাকে চলে যেতে দেখলো, তবে কেউ কিছু বলল না। পৃথিবীর এই অংশে কোন কিছুই উত্তেজনা তৈরি করতে পারে যদি না স্বাভাবিক কিছু ঘটে। এরই মধ্যে বাস চলে এলে মানুষজন এর পেটের ভেতর ঢুকে পড়ে, এবং ফোন বুথটি আবার রকোজি সড়ক ধরে হেলেদুলে হাঁটতে শুরু করে।
সর্বোচ্চ আত্মশক্তিতে বলিয়ান ছিল এটা। বুথটি যেতে যেতে নিজেকে দোকানে সাজানো পণ্য দর্শনে নিযুক্ত করলো, পরে এক ফুল বিক্রেতার সামনে গিয়ে দাড়াল। কিছু লোক ভাবলো তারা এটাকে দেখেছে বইয়ের দোকানে প্রবেশমুখে, তবে তারা অন্যকাউকে ভেবে ভুল করে থাকতেও পারে। যা হোক, এক ঢোক ব্রান্ডি খাওয়ার জন্য এটা পথের ধারে ছোট পাবের কাছে দাঁড়াল, এরপর সোজা দানিয়ুবের দিকে হাঁটতে শুরু করে ও দানিয়ুব পার হয়ে মার্গারেট দ্বীপে চলে এল। দ্বীপে একটা মঠের ধ্বংসাবসের পাশে আরেকটি ফোন বুথকে দেখতে পেল। এটাকে অতিক্রম করে গেল, তারপর কি মনে করে ঘুরে দাড়াল, রাস্তা পার হয়ে এল অসংলগ্নভাবে, কিন্তু সংকোচহীনভাবে অন্য বুথটির দিকে চোখ রেখে। পরে যখন সূর্য ডুবে গেল, গোলাপের জঙ্গল অভিমুখে যাত্র শুরু করলো, কিছু গোলাপ পদপিষ্ট হল।
আমাদের জানার কোন উপায় নেই যে ঐ রাতে মঠের ধ্বংসাবশেষের পাশে কোন গোপন তথ্য জানাজানি হয়েছিল কি-না, কারন হিসাবে কেবল এটুকুই বলা যায় যে ঐ দ্বীপে সরকারি আলোর ব্যবস্থা ছিল অপযার্প্ত। যাই ঘটে থাকুক, যারা খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠে তারা দেখে বিস্মিত হল যে মঠ-ধ্বংসাবশেষের সামনের বুথটি টকটকে লাল গোলাপে আচ্ছাদিত, আর সারাদিন ধরে এটা ভুল নম্বর দিতে থাকল। অন্য ফোন বুথটি কোন রকম চিহ্ন না রেখেই উধাও হয়ে গিয়েছিল।
দিনের আলো ফোটার আগেই দ্বীপ ত্যাগ করে চলে এল বুদায়। জিল্লার্ট পাহাড়ের উপর উঠে, পথ খুঁজে বের করল হার্মাসতার পাহাড়ের শীর্ষে আরোহনের রাস্তার, ওখানে যেতে হয় পাহাড় ও উপত্যকার মাঝখান দিয়ে। এরপর পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে মহাসড়কের দিকে যাত্রা করে, তারপর থেকে বুথটিকে আর কখনো বুদাপেস্টে দেখা যায় নি।
শহরের সীমার বাইরে যেতে হলে হিউভোসভোলগি জায়গাটার সর্বশেষ বাড়িগুলো অতিক্রম করে যেতে হয়, তবে এখানেই নাগিকোভাস্কির পাশে রয়েছে বন্য ফুলের তৃণভূমি। জায়গাটা খুব বেশি বড় নয়, একটা ছোট বাচ্চা এক নিঃশ্বাসে এটা অতিক্রম করতে পারে। বড় বড় গাছের আড়ালে মনে হয় যেন জায়গাটা লুকিয়ে রয়েছে যেভাবে পার্বত্য হ্রদ থাকে। এটা এতটাই ছোট যে এমনকি কেউ ওখানে একটা কাস্তে নিয়ে যাওয়াও প্রয়োজন বোধ করে না। তাই গ্রীষ্মের অর্ধেক যেতে না যেতেই এখানকার ফুলগাছ, ঘাস ও আগাছা বেড়ে কোমরের উচ্চতায় চলে আসে। এখানেই ফোন বুথটি তার আবাস তৈরি করল।
রবিবারে যেসব লোকেরা বেড়াতে বের হয়ে এটার পাশ কেটে যায়, তারা বুথটিকে দেখে খুব আনন্দিত হয়। বুথটি তাদের ভেতর এমন কাউকে নিয়ে এক বাস্তবিক ঠাট্্রার বোধ জাগ্রত করে যে খুব দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ে, অথবা তাদের বাসায় ফোন করার কথা মনে পড়ে এবং বলতে চায় যে বাসায় ফেলে আসা চাবি যেন বিছানা নিচে রাখা হয়। তীর্যকভাবে দাঁড়িয়ে থাকা বুথে তারা প্রবেশ করার সময় যখন নরম মেঝেতে ডুবে যায় তখন বাইরের ফুল গাছের প্রাসারিত কান্ড তাদের গায়ে ঝুঁকে পড়ে। তারা হুক থেকে রিসিভার তুলে নেয়।
ফোনটি অবশ্য তাদের কোন সংযোগ দেয় না। পরিবর্তে তারা কবিতার চার লাইন শুনতে পায় যার ধ্বনি এতটাই কোমল যে মনে হয় যেন নীরবে কোন ভায়োলিনের সুর বেজে চলেছে। যদিও ফোনটি তাদের ফেলে দেয়া কয়েন ফেরৎ দেয় না তবে এ নিয়ে কেউ কখনো অভিযোগ করে নি।

অনুবাদ - খোরশেদ শাহীন
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×