somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হযরত সুলাইমান (আ.)

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুলাইমান (আ.) ছিলেন দাউদ (আ.)-এর সুযোগ্য সন্তান।

মহান রাব্বুল আলামীন আল-কুরআনে বলেন, “আমি দাউদ ও সুলাইমানকে জ্ঞান দান করলাম এবং তারা বললো, সেই আল্লাহর শোকর যিনি তাঁর বহু মু’মিন বান্দার ওপর আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। আর দাউদের উত্তরাধিকারী হলো সুলাইমান এবং সে বললো, লোকেরা আমাকে শেখানো হয়েছে পাখিদের ভাষা এবং আমাকে দেয়া হয়েছে সব রকমের জিনিস। অবশ্যই এটি আল্লাহর সুস্পষ্ট অনুগ্রহ। সুলাইমানের জন্য জিন মানুষ ও পাখিদের সৈন্য সমবেত করা হয়েছিল এবং তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা হতো।

(একবার সে তাদের সাথে চলছিল) এমন সময় যখন তারা সবাই পিঁপড়ের উপত্যকায় পৌঁছল তখন একটি পিঁপড়ে বললো, “হে পিঁপড়েরা তোমাদের গর্তে ঢুকে পড়ো। যেন এমন না হয় যে সুলাইমান ও তার সৈন্যরা তোমাদের পিষে ফেলবে এবং তারা তা টেরও পাবে না। সুলাইমান তাদের কথায় মৃদু হাসল এবং বললো, “হে আমার রব! আমাকে নিয়ন্ত্রণে রাখো। আমি যেন তোমার এ অনুগ্রহের শোকর আদায় করতে থাকি যা তুমি আমার প্রতি ও আমার পিতামাতার প্রতি করেছো এবং এমন সৎকাজ করি যা তুমি পছন্দ করো এবং নিজ অনুগ্রহে আমাকে তোমার সৎকর্মশীল বান্দাদের দলভুক্ত করো।”

(আর একবার) সুলাইমান পাখিদের খোঁজ-খবর নিল এবং বললো, কি ব্যাপার, আমি অমুক হুদহুদ পাখিটিকে দেখছি না যে, সে কি কোথাও অদৃশ্য হয়ে গেছে? আমি তাকে কঠিন শাস্তি দেব অথবা জবাই করে ফেলবো, নয়তো তাকে আমার কাছে যুক্তি সঙ্গত কারণ দর্শাতে হবে।”

কিছুক্ষণ অতিবাহিত না হতেই সে এসে (হুদহুদ) বললো, “আমি এমন সব তথ্য লাভ করেছি যা আপনি জানেন না। আমি সাবা সম্পর্কে নিশ্চিত সংবাদ নিয়ে এসেছি। আমি সেখানে এক মহিলাকে সে জাতির শাসকরূপে দেখেছি, তাকে সব রকম সাজসরঞ্জাম দান করা হয়েছে এবং তার সিংহাসন খুবই জমকালো। আমি তাকে ও তার জাতিকে আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যের সামনে সিজদা করতে দেখেছি।”

শয়তান তাদের কার্যাবলী তাদের জন্য শোভন করে দিয়েছে এবং তাদের সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করে দিয়েছে? এ কারণে তারা সোজা পথ পায় না। যাতে তারা সেই আল্লাহকে সিজদা না করে, যিনি আকাশ ও পৃথিবীর গোপন জিনিসসমূহ বের করেন এবং তিনি সেইসব কিছু জানেন যা তোমরা গোপন করো ও প্রকাশ করো। আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ইবাদাতের হকদার নয় তিনি মহান আরশের মালিক।

সুলাইমান বললো, “এখনই আমি দেখছি তুমি সত্য বলছো অথবা মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত। আমার এ পত্র নিয়ে যাও এবং এটি তাদের প্রতি নিক্ষেপ করো, তারপর সরে থেকে দেখো তাদের মধ্যে কি প্রতিক্রিয়া হয়।” রানী বললো “হে দরবারীরা। আমার প্রতি একটি বড় গুরুত্বপূর্ণ পত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। তা সুলাইমানের পক্ষ থেকে এবং আল্লাহ রহমানুর রহিমের নামে শুরু করা হয়েছে। বিষয়বস্তু হচ্ছে “আমার অবাধ্য হয়ো না এবং মুসলিম হয়ে আমার কাছে হাজির হয়ে যাও।” (পত্র শুনিয়ে) রাণী বললো, “হে জাতীয় নেতৃবৃন্দ। আমার উদ্ভূত সমস্যায় তোমরা পরামর্শ দাও। তোমাদের বাদ দিয়ে তো আমি কোনো বিষয়ের ফায়সালা করি না। তারা জবাব দিল, “আমরা শক্তিশালী ও যোদ্ধা জাতি। তবে সিদ্ধান্ত আপনার হাতে, আপনি নিজেই ভেবে দেখুন আপনার কি আদেশ দেয়া উচিত। রাণী বললো, কোনো বাদশাহ যখন কোনো দেশে ঢুকে পড়ে তখন তাকে বিপর্যস্ত করে এবং সেখানকার মর্যাদাশীলদের লাঞ্ছিত করে। এ রকম কাজ করাই তাদের রীতি। আমি তাদের কাছে একটি উপঢৌকন পাঠাচ্ছি তারপর দেখছি আমার দূত কি জবাব নিয়ে ফেরে।”

যখন সে (রাণীর দূত) সুলাইমানের কাছে পৌঁছালো সে বললো, “তোমরা কি অর্থ দিয়ে আমাকে সাহায্য করতে চাও? আল্লাহ আমাকে যা কিছু দিয়েছেন তা তোমাদের যা কিছু দিয়েছেন তার চেয়ে অনেক বেশি। তোমাদের উপঢৌকন নিয়ে তোমরাই খুশি থাকো। (হে দূত) ফিরে যাও নিজের প্রেরণকারীদের কাছে আমি তাদের বিরুদ্ধে এমন সেনাদল নিয়ে আসবো যাদের তারা মোকাবিলা করতে পারবে না এবং আমি তাদের এমন লাঞ্ছিত করে সেখান থেকে বিতাড়িত করবো যে, তারা ধিকৃত ও অপমানিত হবে।”

সুলাইমান বললো, “হে সভাসদগণ! তারা অনুগত হয়ে আমার কাছে আসার আগে তোমাদের মধ্যে কে তার সিংহাসন আমার কাছে নিয়ে আসতে পারে? এক বিশালাকায় জিন বললো, “আপনি নিজের জায়গা ছেড়ে ওঠার আগেই আমি তা এনে দেব। আমি এ শক্তি রাখি এবং আমি বিশ্বস্ত।

কিতাবের জ্ঞান সম্পন্ন অপর ব্যক্তি বললো, “আমি আপনার চোখের পলক ফেলার আগেই আপনাকে তা এনে দিচ্ছি। যখন সুলাইমান সেই সিংহাসন নিজের কাছে রক্ষিত দেখতে পেল অমনি সে চিৎকার করে উঠলো, “এ আমার রবের অনুগ্রহ, আমি শোকর গুজারি করি। না শোকরী করি। তা তিনি পরীক্ষা করতে চান। আর যে ব্যক্তি শোকর গুজারী করে তার শোকর তার নিজের জন্যই উপকারী। অন্যথায় কেউ অকৃতজ্ঞ হলে, আমার রব কারো ধার ধারেন না এবং তিনি আপন সত্তায় আপনি মহীয়ান।

সুলাইমান বললো, “সে চিনতে না পারে এমনভাবে সিংহাসনটি তার সামনে রেখে দাও, দেখি সে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছে যায় কিনা অথবা যারা সঠিক পথ পায় না তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়। রাণী যখন হাজির হলো, তাকে বলা হলো, তোমার সিংহাসন কি এ রূপই? সে বলতে লাগলো। “এ তো যেন সেটিই। আমরা তো আগেই জেনেছিলাম এবং আমরা আনুগত্যের শির নত করে দিয়েছিলাম। (অথবা আমরা তো মুসলিম হয়ে গিয়েছিলাম)।”

আল্লাহর পরিবর্তে যেসব উপাস্যের সে পূজা করতো তাদের পূজাই তাকে ঈমান আনা থেকে ঠেকিয়ে রেখেছিল। কারণ সে ছিল একটি কাফের জাতির অন্তর্ভুক্ত।

তাকে বলা হলো, প্রাসাদের মধ্যে প্রবেশ করো। যেই সে দেখলো মনে করলো বুঝি কোনো জলাধার এবং নামার জন্য নিজের পায়ের নিম্নাংশের বস্ত্র উঠিয়ে নিল। সুলাইমান বললো, “এতো কাঁচের মসৃণ মেঝে।” এ কথায় সে বলে উঠলো “হে আমার রব। (আজ পর্যন্ত) আমি নিজের ওপর বড়ই জুলুম করে এসেছি এবং এখন আমি সুলাইমানের সাথে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের আনুগত্য গ্রহণ করছি।” (সূরা নামল-১৫-৪৪)।

সূরা নামল ছাড়াও আল কুরআনের আরও বেশ কিছু সূরায় সুলাইমান (আ.) -এর ব্যাপক বর্ণনা এসেছে যেমন সূরা আম্বিয়ার ৭৮ থেকে ৮২ আয়াত। সূরা বাকারার-১০২ আয়াত, সূরা সাবার-১২ থেকে ১৪ আয়াত। সূরা সোয়াদ-৩১ থেকে ৪০, আম্বিয়া ৭৮ থেকে ৮২ আয়াতে। তোমরা এই আয়াতগুলো একটু পড়ে নিও। ইহুদি এবং খ্রিস্টানরা হযরত সুলাইমান (আ.) সম্পর্কে অনেক আজে বাজে কথা বলে এবং তাদের গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করে। কিন্তু মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআনে বার বার বলেছেন, “সুলাইমান ছিল উত্তম বান্দা এবং আমার প্রতি নির্ভরশীল। মহান আল্লাহ তাকে খুব ভালোবাসতেন।

পশু, পাখি, জ্বিন, পাহাড়-পর্বত, বাতাস তাঁর নিয়ন্ত্রণে ছিল। তিনি এসব কিছুর ভাষা বুঝতেন, আর এরা সবাই তাঁর অনুগত ছিল।

ছোটোবেলা থেকেই সুলাইমান (আ.) অত্যন্ত প্রজ্ঞাবান ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “বনী ইসরাইল বংশে দু’জন মহিলা ছিল। তাদের সাথে তাদের দু’টি শিশু সন্তানও ছিল। হঠাৎ একদিন একটি বাঘ এসে একজনের শিশুটি নিয়ে গেল। তখন বাকি শিশুটি উভয় মহিলা দাবি করতে লাগলো। একজন আর একজনকে বলতে লাগলো বাঘে তোমার শিশুটিই নিয়েছে। অতঃপর উভয় মহিলা হযরত দাউদের নিকট এ বিরোধ মীমাংসার জন্য বিচার প্রার্থী হলো। একজন মহিলা ছিল বয়স্কা, অপরজন অল্প বয়স্কা। বয়স্কা মহিলার কথা বিশ্বাস করে দাউদ (আ.) শিশুর ব্যাপারে বয়স্কা মহিলাটির পক্ষে রায় দিলেন। মহিলা দু’জন আদালত কক্ষ হতে বের হয়ে সুলাইমানের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। অল্প বয়স্ক মহিলাটি কাঁদছিল (কারণ সন্তানটি তারই ছিল)। সুলাইমান মামলার বিবরণ জানতে চাইলো। তারা তাঁকে মামলার বিবরণ শোনাল। তখন তিনি লোকজনকে বললেন, “তোমরা আমার কাছে একখানা ছোরা নিয়ে আস। আমি শিশুটি কেটে দ্বি-খণ্ডিত করে তাদের দু’জনের মধ্যে ভাগ করে দেব।” একথা শুনে কম বয়স্কা মহিলাটি বলে উঠলো, “না, এরূপ করবেন না। আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন। আমি মেনে নিচ্ছি শিশুটি তারই।” তখন সুলাইমান কম বয়স্কা মহিলার পক্ষেই রায় দিলেন।” (সহীহ আল বুখারী)

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:২২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঘরে ফেরার টান

লিখেছেন স্প্যানকড, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ ভোর ৬:৩১

ছবি নেট।

তুমি মানে
সমস্ত দিনের ক্লান্তি শেষে
নতুন করে বেঁচে থাকার নাম।

তুমি মানে
আড্ডা,কবিতা,গান
তুমি মানে দুঃখ মুছে
হেসে ওঠে প্রাণ।

তুমি মানে
বুক ভরা ভালোবাসা
পূর্ণ সমস্ত শূন্যস্থান।

তুমি মানে ভেঙ্গে ফেলা
রাতের নিস্তব্ধতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বজলুল হুদাকে জবাই করে হাসিনা : কর্নেল (অব.) এম এ হক

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:৫৯

মেজর বজলুল হুদাকে শেখ হাসিনা জবাই করেছিলেন।

(ছবি ডিলিট করা হলো)

শেখ মুজিবকে হত্যার অপরাধে ২৮শে জানুয়ারী ২০১০ এ মেজর (অব.) বজলুল হুদা সহ মোট ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। রাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মি. চুপ্পুর পক্ষ নিয়েছে বিএনপি-জামাত; কারণ কী?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬


বিএনপি গত ১৬ বছর আম্লিগের এগুচ্ছ কেশও ছিড়তে পারেনি অথচ যখন ছাত্ররা গণহত্যাকারীদের হটিয়েছে তখন কেন বিএনপি চু্প্পুর পক্ষ নিচ্ছে? অনেকেই বলছে সাংবিধানিক শুন্যতা সৃষ্টি হবে তার সংগে বিএনপিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×