somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাটকীয় ম্যাচে ২ উইকেটে বাংলাদেশের জয়, আশা জেগে রইলো কোয়ার্টার ফাইনালের

১২ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চরম নাটকীয়তা। মাত্র ২২৫ রান তাড়া করতে গিয়ে সহজে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। তিন উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ১৫৫ রান। মাঝপথে হোচট খেয়ে ম্যাচ চলে যায় ইংল্যান্ডের হাতে। ১৬৯ রানে তারা তুলে নেয় ৮ উইকেট। আবার নাটকীয়তা। একদম হারতে বসা সেই ম্যাচ ২ উইকেটে জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ।
২২৫ রানের জবাবে খেলতে নেমে বাংলাদেশের প্রথম দুই ব্যাটসম্যান তামিম ও ইমরুল অবিচ্ছিন্ন ছিল ৫২ রান পর্যন্ত। ২৬ বল মোকাবেলায় ৩৮ রান করে টিম বেসনান-এর এর বলে বোল্ড হয়ে যায় তামিম ইকবাল। এরপর দলীয় ৭০ রানের মাথায় এন্ডারসনের ছুড়ে মারা বল ডাইরেক্ট উইকেট ভেঙ্গে দিলে রান আউট হয়ে যান জুনায়েদ। ১২ বল খেলে তিনি করেছেন ১২ রান। এই পর্যন্ত সকল ব্যাটসম্যানদের দেখে মনে হয়েছে যেন ৩০০ রান তাড়া করে খেলছে তারা। ২২৫ রানের জবাবে আরো একটু দেখে খেলতে পারতেন। রান তোলার গড় অনেক ভাল থাকলেও ব্যাটসম্যানদের বেশ আক্রমনাত্মক দেখা গেছে। কিন্তু এরপর যেঠা ঘটলো তা বেশ দুশ্চিন্তায় ফেলে দিল সমর্থকদের। এমনকি ক্যাপ্টেন সাকিবকেউ। পরের ওভারেই রকিবুল পরিস্কার বোল্ড হয়ে গেলেন শাহজাদের বলে। মাত্র দুটি বল খেলেছেন তিনি। করতে পারেন নি কোন রান। বাংলাদেশ পরিণত হয় ৭৩/৩ এ। এই ছোট্ট বিপদ থেকে উদ্ধার করেন প্রথম থেকেই ব্যাট করতে নামা ইমরুল কায়েস আর অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ৭৩ রান থেকে এরা টেনে নিয়ে যান ১৫৫ পর্যন্ত। ৮৩ রানের জুটি গড়েন এরা। ব্যাক্তিগত ৬০ রান করে আরেকটি রান আউটের শিকার হন ইমরুল। তিনি বাংলাদেশ ইনিংস মেরামত করতে গিয়ে খেলেছেন ১০০টি বল। এরপর ভরসা ছিল সাকিব। কিন্তু তখনও খেলায় জয়ের আশা নিয়েই ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু দলীয় ১৬২ রানের মাথায় সাকিব (৩২ রান) সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড আউট হলে ম্যাচ হেলে পড়ে ইংল্যান্ডের দিকে। পরের দৃশ্যগুলো যারা দেখেছেন তারা শুধুই হতাশ হয়েছেন। বলেছেন আর জেতা সম্ভব নয়। স্টেডিয়াম ছেড়েছেন অনেক দর্শক। টিভি বন্ধ করে দিয়েছেন কেউ কেউ। ১৬৬ রানের মাথায় আউট হন দুজন ব্যাটসম্যান মুশফিক রহিম(৬) ও নাইম ইসলাম(০)। চালকের আসন হারিয়ে বাংলাদেশ দাড়ায় ১৬৬/৭। এখানেই শেষ নয় ১৬৯ রানের মাথায় তুলে ছক্কা মারতে গিয়ে ধরা পড়েন রাজ্জাক(১)। বাংলাদেশের খেলা শেষ। হাতে মাত্র দুই ইউকেট। পাড়ি দিতে হবে ৫৭ রানের লম্বা পথ। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আর শফিউল ইসলাম সাধন করেছেন সেই অসাধ্য। ফলাফল বাংলাদেশ দুই উইকেটে জয়ী। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দুই ম্যাচ জয়ের নায়ক হয়ে থাকলেন শফিউল। গতকাল ২৪ বলে করেছেন ২৪ রান। আমার বিশ্বাস এই ২৪ রান তার জীবনের সেরা ইনিংস হয়ে থাকবে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এই শফিউল ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন। মাহমুদুল্লাহ পুরো দায়িত্ব নিয়ে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছেন। তিনিও অপরাজিত ২১।
শুরু থেকেই বাংলাদেশ খেলেছে পজিটিভ ক্রিকেট। টাইগারদের চোখে-মুখে ছিল জয়ের নেশা। টসে জিতে ইংল্যান্ডকে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানিয়ে সাকিব যে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তার প্রমান দেন বোলাররা। স্পিন সহায়ক পিসে বাংলাদেশের সব বোলারই ভূমিকা রাখেন ইংলিশদের ইনিংস ছোট রাখতে। ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা কোনভাবেই ইনিংসটিকে টেনে নিয়ে যেতে পারেন নি ২২৫ এর উপরে। থ্রট করেন ৬৭ আর মরগান তোলেন ৬৩ রান। ইংল্যান্ড অল আউট হয়েছে ইনিংসের দুইবল বাকি থাকতেই। সব বোলারই যেমন উইকেট নিয়েছেন তেমনি থামিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন রানের চাকা। সাকিব নিজেকেসহ মোট ৬জন বোলার কাজে লাগিয়েছেন। মজার ব্যাপার হলো সবাই পেয়েছেন উইকেট। রাজ্জাক, সাকিব ও নাইম পেয়েছেন দুটি করে। আর শফিউল, রুবেল ও মাহমুদুল্লাহ পেয়েছেন একটি করে। একমাত্র মাহমুদুল্লাহ ওভার প্রতি দিয়েছেন ৬ রান করে। বাকি সবাই এদিক দিয়েও বেশ সফল হয়েছেন।
শুরু খেলা দেখে মনে হয়েছে যেন জিততেই মাঠে নেমেছে বাংলাদেশী খেলোয়াড়রা। দর্শকদের প্রত্যাশাও তেমন। সমর্থনও। বোলার দোড় শুরু করলেই শুরু হচ্ছে এমন উচ্ছাস যেন উইকেট ফেলে দিয়েছে। গত ম্যাচের করুণ পরাজয়ের দুঃসহ স্মৃতি যেন একদম মুছে গিয়েছে মন থেকে। খেলোয়াড়রাও মাঠে লড়লেন টাইগার রূপেই। মনেই হয়নি প্রতিপক্ষ ক্রিকেটের জন্মদাতা ইংল্যান্ড। এরকম পজিটিভ খেলা আর মনের জোরই বাংলাদেশকে এই অবস্থানে এনেছে। নিয়েই যাবে আরো অনেক দূর এ কথা বলা যায়। বাংলাদেশ এখন ইংল্যান্ড বা যেকোন দলকে হারালে তা অঘটন বলার সুযোগ থাকে না। কারণ যে কোন দিন যে কোন দলকে হারানোর ক্ষমতা টাইগারদের আছে। তাই গ্রুপ অব ডেথ-এ কঠিন হিসেব নিকেশের মধ্যে পড়ে থাকলেও বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার আশা জিইয়ে রেখেছে।
বাকী দুটি ম্যাচ নেদারল্যান্ড আর সাউথ আফ্রিকার সঙ্গে। দুটিই যদি জিততে পারে তাহলে তো কথাই নেই, তৃতীয় পজিশন নিয়ে খেলবে কোয়ার্টার ফাইনাল। আর একটি জিতলেও থাকছে সুযোগ। সেক্ষেত্রে তাকিয়ে থাকতে হবে অন্যান্য দলের জয়-পরাজয়ের দিকে। এমনিতেই ইংল্যান্ড ভারতের সাথে টাই করে জটিল করে ফেলেছে গ্রুপের হিসেব নিকেশ। এখন পর্যন্ত ৪ ম্যাচ খেলে ভারত তিনটিতে জয় এবং একটি টাই করে ৭ পয়েন্ট নিয়ে রয়েছে এই গ্রুপে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। বাকি খেলা দুটি। সাউথ আফ্রিকা আর ওয়েষ্ট ইন্ডিজের সাথে। ভারত এ দুটি খেলা জিতলেই বাংলাদেশের জন্য ভাল। ওয়েষ্ট ইন্ডিজ এখন পর্যন্ত খেলেছে ৪ ম্যাচ। তিনটি জয় আর একটি পরাজয়ে তাদের পয়েন্ট ৬। আছে গ্রুপের দ্বিতীয় অবস্থানে। বাকি দুটি ম্যাচে তাদের রয়েছে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি। ১৭ মার্চ খেলবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। এই ম্যাচে যে দল হারবে আমাদের টপকাতে হবে সেই দলের পয়েন্ট।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের আরেকটি ম্যাচ আগামি ২০ মার্চ ভারতের বিপক্ষে। এই দুটি ম্যাচ ওয়েস্ট ইন্ডিজ হেরে গেলে আর বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডের সাথে জয়লাভ করলে বাংলাদেশ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ উভয় দলের পয়েণ্ট হবে ৬। সমান পয়েণ্ট সমান জয়। এক্ষেত্রে বিবেচনা হবে নেট রান রেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজ রান রেটে এখন আমাদের চেয়ে এগিয়ে। তবে দুটি ম্যাচের যে কোন একটি যদি একটু বড় ব্যবধানে হারে আর আমরা যদি নেদারল্যান্ডকে কিছুটা বড় ব্যবধানে হারাতে পারি তাহলে এগিয়ে যাবো আমরা।
আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ যদি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিতে যায় তাহলে আমাদের থাকছে সুবর্ণ সুযোগ। কারণ ইংল্যান্ডের জন্য বাকি আছে ওই একটি ম্যাচই। দুটি ম্যাচ জিতে একটি টাই করে তাদের পয়েন্ট মাত্র ৫। নেদারল্যান্ডকে হারালেই হয়ে আমাদের পয়েন্ট হয়ে যাবে ৬। ইংল্যান্ডকে পেছনে ফেলে সহজেই আমরা ঢুকে যাবো কোয়ার্টার ফাইনালে। সুতরাং দেশবাসীর কাছে আমার আবেদন আসুন আমরা বাংলাদেশের জন্য যেমন প্রার্থনা করি তেমনি প্রার্থনা করি ওয়েষ্ট ইন্ডিজের জন্য। ভাবছেন এ কেমন কথা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ আমাদের এমন এক হার হারালো, যার জন্য আমাদের মাথা হেট হয়ে গেল। মাত্র ৫৮ রানে অল আউট করে দীর্ঘদিন বাদে লজ্জায় ডুবালো আমাদের ক্রিকেট। যাদের গাড়িতে আমরা ঢিল পর্যন্ত মারলাম তাদের জন্য দোয়া করতে হবে। হ্যা আমাদের স্বার্থেই। আগামি ১৪ মার্চ সর্বোচ্চ উজাড় করে দিয়ে নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে আমাদের জিততে হবে। এই অর্জনের পরই আমাদের তাকিয়ে থাকতে হবে ১৭ মার্চের দিকে। ওই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইংল্যান্ডকে হারালেই আমরা কোয়ার্টার ফাইনালে।
এই গ্রুপের আরেক শক্তিশালী দল সাউথ আফ্রিকা এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচ খেলে ২টি জিতেছে, হেরেছে একটি। ৪ পয়েন্ট নিয়ে তাদের অবস্থান চতুর্থ। ৪ম্যাচ খেলে ২ জয় আর ২ পরাজয় মিলিয়ে আমাদের পয়েন্টও ৪। নেট রান রেটে পিছিয়ে থাকায় আমাদের অবস্থান পঞ্চম। আয়ারল্যান্ড ৪ ম্যাচ খেলে একটি জয়ে ২ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ অবস্থানে। আর চার ম্যাচ খেলে কোন জয় পায়নি নেদারল্যান্ড। তাদের অবস্থান সপ্তম
[email protected]
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×