প্রিয়তমা, জানিনা তোমাকে কোন শব্দ দিয়ে সন্মধন করলে শত বছরের একাকীত্বকে দূর করে জড়িয়ে ধরবে আমাকে, আমার শ্যাম বর্ণের কাঁপালটিতে দুই পায়ের বৃদ্ধাম্নাগুলিতে ভর দিয়ে চুমু খাবে। আর শত বছর ধরে নির্ঘুম কাটানো চোখের নিচে পরা কালো দাগ গুলীর দিকে উদাস মনে তাকিয়ে থাকবে।
কেভিন কার্টারের সেই বিখ্যাত ছবিটির কথা মনে আছে তোমার? ছবিটিতে একটি বাচ্চার মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকা ক্ষুধার্ত শকুনকে কি নিপুণভাবেই না আলোকচিত্রে বন্দী করছিলেন তিনি। আমিও তোমার জন্য ঠিক সেভাবেই অপেক্ষা করেছিলাম হে প্রিয়তমা। তবে আমার আপেক্ষাটি ছিল ছবির সেই বাচ্চাটির মত। যে মাথা নিচু করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে নিজেকে প্রস্তুত করে রেখেছিল। কারণ জীবনের আর যেটুকু সময় আমার হাতে ছিল তার সবটুকুই তোমাকে দিয়ে যেতে চেয়েছিলাম আমি। ঋণের বোঝাটা আজকাল বড্ড ভারি লাগছে আমার কাছে।
প্রিয়তমা, আজ পর্যন্ত জীবন নামের উপন্যাস থেকে সামনে আসা সকল দুঃখ কষ্টের অনুচ্ছেদগুলো পড়ে শেষ করেছি আমি। এখন উপন্যাসের শেষ অংশে একান্ত মনে উপস্থিত হয়েছি। এখনে জীবনের প্রতি আগ্রহের মাত্রাটা একটু বেশিই অনুভব করছি কেন জানি। তাইতো শিতের সকালে সঙ্কোচ নিয়ে ধীর গতিতে উদীয়মান সূর্যের মত আমিও উদিত হচ্ছি বারবার। কারন হয়ত কাল কুয়াশার ষড়যন্ত্রে নাও দেখা হতে পারে আমাদের। আজ উদিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি ঠিকই কিন্তু আমাকে সভ্যতা, তার বানানো ঘড়ির চব্বিশটি ঘন্টা সাথে দিয়ে দিয়েছে। অল্প অপ্ল করে যা ক্ষয়ে যাচ্ছে।
প্রিয়তমা, তুমি হয়তবা জানতেও পারবেনা যে, আমি তোমাকে শোনানোর জন্য কয়েকশ গল্প আর কবিতা সংগ্রহ করে রেখেছিলাম। যার প্রত্যেকটিই ছিল জীবন থেকে নেয়া। যা সংগ্রহে ঘুরতে হয়েছে দেশ বিদেশের কত অজানা শহর। যা সাধনে আমাকে হারাতে হয়েছে আমার মায়ের ভালবাসা। অথচ বিপরীতে সেখান থেকে একত্রীত হয়েছে ভয়ের কিছু স্মৃতি। যারা আজও আমায় কুঁড়ে কুঁড়ে খায়।
আমি তোমাকে আদর করার সাধটা রেখেই হয়তবা এই মায়াভূবন ছাড়বো। তবে দ্বিধাহীনভাবে বলতে পারি, গ্রীষ্মের হঠাত বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা কোন দুরন্ত বালক যেভাবে বৃষ্টির একটি ফোঁটার পর আরেকটি ফোঁটা পরার ব্যাপারে দ্বিধাহীনতা প্রকাশ করতে পারে, আমিও ঠিক তেমনি ভাবে তোমার আসার ব্যাপারে সেই ভিজতে থাকা ছোট বলকের না ভাঙ্গা হৃদয় আর বিশ্বাস নিয়ে সর্বশেষ পর্যন্ত দ্বিধাহীনভাবে অপেক্ষা করেছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৭ ভোর ৪:০০