somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবার এস, যেখানেই থাকনা কেন, আবার এস

০৫ ই জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ থেকে প্রায় আটশত বছর আগে ঠিক এই শব্দগুলি দিয়েই জালালুদ্দিন মোহাম্মাদ রুমি আমাদেরকে এক অসাম্প্রদায়িক ভালোবাসার জগতে ডেকে গেছেন। যা মানুষ নিরন্তর ভাবে খুঁজে বেরিয়েছে আনন্তকাল। তাইত ইউরোপ আমেরিকা সহ সারা পৃথিবীতে সেই সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত সবচেয়ে আলোচিত কবি “জালালুদ্দিন মোহাম্মাদ রুমি”।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ভ্রমণে অংশ হিসেবে তার মাজার দেখার সুযোগ হয়েছিল আমার। সকাল দশটা নাগাদ আমাদের বহন করা দুটি বাস সেখানে গিয়ে পৌঁছল। সাথে একজন গাইড। প্রধান সড়কের পাশেই ঢোকার রাস্তা। একটু এগিয়ে গিয়েই সারি সারি কবর দেখতে পেলাম। গাইডকে জিজ্ঞাসা করতেই সে বলল, এই কবরগুলো রুমির অনুসারীদের। কবরগুলোতে গোলাপ সহ আরো কিছু অপরিচিত ফুলেরগাছ লাগান। কিছু লোক পরিচর্যার কাজ করছেন।



ভিতরে ঢুকতেই একটি পুরাতন ওজুর যায়গা। তার ডান দিকে ১৯ টি লাগোয়া ছোট ছোট ঘর। ঘরগুলোর কোনটিতে সেই সময়ের ব্যবহ্রত কাপড়চোপড় আবার কোনটিতে সোনার মোহর, অলংকার। তবে শেষ দিকের ঘরগুলোতে মানুষ আকৃতির কিছু ডামি বসান আছে। ডামিগুলো দিয়ে সেই সময়ের শিক্ষাব্যবস্থা ও সামাজিক অবস্থার একটা চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।



এর পাশেই রয়েছে রুমির মাজারটি। ওপরে নীল রঙের মারবেল পাথরের মিনার। উচ্চতায় সাভাবিক মিনারের চেয়ে কিছুটা ছোট। মিনারটি রুমির কবরের ঠিক ওপরে বাসানো। গাইড বললেন এই রকম মিনার পৃথিবীতে আর কোথাও দেখা যায়না। আমরা মাজারে ঢোকার জন্য এগিয়ে গেলাম। মাজারের পবিত্রতা রক্ষার্থে ঢোকার আগে “অন টাইম ইউস সু” পড়তে দেয়া হল। ঢুকেই হাতের ডান দিকে কবরের সারি। সবগুলোই তার অনুসারীদের। একেবারে শেষে উচু করে নীল রঙের গিলাফে মোড়ানো তার কবরটি। সেখানে দোয়া করার ব্যাবস্থা আছে। তবে ফ্লাস লাইটসহ ছবি তুলতে বারবার নিষেধ করছিলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। সেখানেও ছোট আকারের একটা যাদুঘরের মত দেখা গেল। সেখানে রয়েছে রুমির ব্যবহ্রত কুরআন শরিফ, তসবিহ ও পোশাক। তবে সেখানকার বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে একটি ছোট বাক্সে নবীজির দাড়ি মোবারক রাখা হয়েছে। এর পাশেই নামাজ পরার জন্য একটি স্থানকে কাঠের দেয়াল দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছে। মহিলা পুরুষ সকেলেই নামাজ পরে দোয়া করছেন সেখানে।

রুমি, কবি হলেও তাজাকিস্তান, আফগানিস্তান, কিরগিজিস্থান , তুরস্ক সহ অনেক দেশেই তাকে একজন ধর্মগুরু হিসেবে দেখা হয়। আমেরিকার বিখ্যাত কবি রবার্ট ব্লাই এর তত্ত্বাবধায়নে রুমির লেখাগুলি ১৯৭৬ সালে ২২ টি পৃথক খন্ডে আলাদা করে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। যা পরবর্তীতে আরো ২৩ টি ভাষায় অনূদিত হয় এবং পৃথিবীজুড়ে বইগুলোর ২০ লাখ কপি বিক্রি হয়েছে।



আমরা মাজার দেখে বের হলাম। বের হয়েই মাজারের ঠিক সাথেই দাঁড়িয়ে থাকা ওসমানীয় রীতিতে তৈরি করা মসজিদটি নজরে পরল। এটি কনিয়া শহরের সবচেয়ে বড় মসজিদ।
তবে আমাদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে তখন একটি জিনিস বাকি ছিল। রুমির “সেমা” নাচ। “সেমা” নাচের একটা আধ্যাত্মিক দিক রয়েছে। আর এটাকে ধরে রাখতেই কনিয়া সিটি কর্পোরেশন সেমা নাচ নিয়ে গবেষণার জন্য বিশাল লাইব্রেরি ও এর প্রদর্শনীর জন্য একটি কমপ্লেক্স ভবন তৈরি করে দিয়েছেন। সন্ধ্যা সাতটার দিকে শুরু হল এই বিশেষ ধরণের নাচ। মুগ্ধ হতে হল তাদের দেখে।
আমাদের শিডিউল অনুযায়ী ভ্রমণের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হল সোমা নাচের মাধ্যমেই। বাস আমাদের জন্য আপেক্ষা করছিল, কিন্তু রুমিযে সেই আট শত বছর আগে যে অসাম্প্রদায়িক একটা জগতের কথা জানিয়ে গিয়েছেন তা "আবার এস, কাফের, মাজুসি যা-ই হওনা কেনো, আবার এস" কবিতার লাইনের মাধ্যমে বার বার মনে পরছিল।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৫
৩টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×