লম্বা একটা বিরতির পর আবার বই পড়া শুরু করলাম। কিন্তু কি দিয়ে শুরু করব, এটা অনেক বড় প্রশ্ন। উত্তর খুঁজতে তাই বিভিন্ন সময় পাওয়া পরামর্শের পাতাগুলোতে একটু চোখ বুলিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলাম।
গত মাসে TRT (Turkish Radio and Television Corporation) মিডিয়া বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রহমান চাকির স্যরের সাথে কথা বলার সময় তিনি একটা ছোট বইয়ের তালিকা করে দিয়েছিলেন। বললেন এগুলো পড়। তো সেখান থেকেই বেছে নেয়া দস্তয়ভস্কির ‘ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট’।
যেকোন বই থেকেই সাধারণত জ্ঞান, মানসিক প্রশান্তি, জীবনবোধের শিক্ষা পাওয়া যায়। তবে কিছু কিছু বই জীবন দর্শন পরিবর্তন করার মত ক্ষমতা রাখে। তার মাঝে ফিওদোর দস্তয়ভস্কির ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট অন্যতম। এই বইটিকে বিশ্বের সেরা ১০টি বইয়ের একটি বলা হয়। ফিওদোর দস্তয়েভ্স্কি তার এই বইয়ে তৎকালীন বৈষম্যের শিকার একটি সামজের চিত্র নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছেন।
গল্পের প্রধান চরিত্রে থাকা রাসকলনিকভ একজন আইন পড়ুয়া ছাত্র। টাকার অভাবে তার লেখাপড়া বন্ধ প্রায়। এর সাথে আবার কয়েক মাসের বাড়ি ভাড়া বাকি। এই অর্থহীনতাই তার খুনি হওয়ার কারণ হয়ে দাড়ায়। তবে তার বিচক্ষণতার কারণে পুলিশ খুনের কোন প্রমাণ পায়না। কিন্তু রাসকলনিকভ খুনের পড়ে অনুসূচনায় ভুগতে শুরু করেন এবং সব কথা তার প্রেমিকা সোফিয়াকে খুলে বলার সিদ্ধান্ত নেন। সোফিয়া তাকে তার কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্ত করতে বললে রাসকলনিকভ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেণ। এদিকে সোফিয়া তার ফিরে আসার অপেক্ষা করতে থাকে।
গল্পের কাহিনী মূলত এই খুনকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। তবে এই গল্পের মূল আলোচ্য বিষয় তৎকালীন সামাজিক পরিবেশ। লেখক তার সুনিপন শব্দে বলে গেলেন শ্রেণি বৈষম্যের এক সমাজ ব্যাবস্থার কথা। যেখানে ক্ষুধা মানুষকে খুনি বানায়। অর্থাভাবে পতিতা হতে হয়। ভাইয়ের একটা ব্যাবস্থা হবার আশায় বোন যেখানে ধনীর ঘরের দাসী হতে বাধ্য হয়। রাস্তায় বেরলে যেখানে বড়লোকের ঘোড়ার গাড়ি থেকে চাবুকের আঘাত পেতে হয়। তবে এসকল কিছুর মাঝেও জীবন থেমে থাকে না। আর ভালোবাসারা বেঁচে থাকে আশায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১:০৩