somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিভাবে নামাজের মাধূর্য আস্বাদন করা যায় পর্ব – ৪

২৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ১১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





আবেগ-অনভূতির সর্বোচ্চ শিখর:
আজ আমরা আরো গভীরে প্রবেশ করব; এখন পর্যন্ত আমরা একাগ্র হয়েছি, যা উচ্চারণ করি
তা অর্থ বুঝে করি, এবং দুই ধরনের আবেগ নিয়ে নামাজে আল্লাহর সামনে দাঁড়াই, আর আজকে
আরো এক ধরনের আবেগ নিয়ে কথা বলবো । এই আবেগ নিয়ে নামাজে দাড়ালে আমাদের নামাজকে
খুব কম সময়ের নামাজ বলে মনে হবে, কিন্তু নামাজ শেষ করে ঘড়ি দেখলে মনে হবে, “আরে! এত
তাড়াতাড়ি ১০ মিনিট পার হয়ে গেছে?” কিংবা ১৫ মিনিট বা ২০ মিনিট ( ইনশা-আল্লাহ)। যে ব্যক্তি
নামাজে এই আবেগটা প্রয়োগ করতে শুরু করবে তার ইচ্ছা হবে এই নামাজ যেনো কখনো শেষ
না হয়|এটি এমন একটি আবেগ যা সম্পর্কে ইবনে কায়য়্যিম বলেন, “যার জন্যে প্রতিযোগীরা
প্রতিযোগিতা করে….এটা হল আত্মার জন্য পুষ্টি আর চোখের জন্য শীতলতা।” তিনি আরো
বলেন, “যদি হৃদয় থেকে এই অনুভুতি বের হয়ে যায়, এটা অনেকটা এমন যেমন প্রাণ ছাড়া শরীর।”
এই আবেগ কোনটি জানেন? এটা হলো ভালোবাসা ।
কিছু কিছু মানুষের আল্লাহর সাথে সম্পর্ক শুধু তাঁর আদেশ আর নিষেধ এর মাঝেই সীমাবদ্ধ, যাতে
সে জাহান্নাম থেকে বাঁচা যায়। অবশ্যই আমাদের আদেশ, নিষেধ মেনে চলতে হবে, কিন্তু এটা শুধু
ভয় আর আশা নিয়ে নয়, বরং আল্লাহ তায়ালার প্রতি পরম ভক্তি ও ভালোবাসা নিয়ে করতে হবে।
আল্লাহতায়ালা কোরআনে বলেন:
‘…..অচিরে আল্লাহ এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে|’
সচারচর দেখা যায় যখন মানুষ তার পছন্দের মানুষের কাছে আসে, হৃদয়ে চাঞ্চল্যতা আসে,
আন্তরিকতা আসে। কিন্তু আল্লাহর সাথে দেখা করার সময়, নামাজে আমরা বিন্দুমাত্রও এই
আবেগ অনুভব করিনা। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন:
যখন আমরা নামাজের জন্য হাত উপরে তুলি তখন সেখানে আল্লাহর জন্য আকুলতা থাকা উচিত,
ভালোবাসা ও আন্তরিকতায় আমাদের হৃদয় পূর্ণ থাকা উচিত কারণ আমরা এখন আল্লাহর সাথে
“ইয়া আল্লাহ, তোমার সাথে মিলিত হবার আকুলতা আমার হৃদয়ে স্থাপন করে দাও।”( নাসাঈ, হাকিম)
ইবনে আল কায়য়িম তাঁর ‘তারিখ আল-হিজরাতাঈন’ নামক বইতে বলেন আল্লাহতায়ালা তাঁর
রাসুলদের এবং তাঁর মুমিন বান্দাদের ভালোবাসেন, এবং রাসূলগণ এবং মুমিনরাও তাঁকে
ভালোবাসেন এবং তাদের কাছে আল্লাহতায়ালার চেয়ে বেশী প্রিয় আর কিছু নেই। পিতামাতার
প্রতি ভালোবাসার মাধুর্য এক ধরনের, সন্তানের প্রতি ভালোবাসাও আরেক রকম, কিন্তু
আল্লাহ তায়ালার প্রতি ভালোবাসা অন্যসব কিছুর তুলনায় বেশী মাধুর্যময়| নবী(সা:) বলেছেন:
“ যে ব্যক্তি তিনটি গুনকে একত্রে সংযুক্ত করতে পারবে সে ঈমানের প্রকৃত মজা পাবে…” প্রথম
যে জিনিসটি তিনি(সা:) উল্লেখ করেন সেটা হল যে: “..আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তার কাছে সবকিছুর
চেয়ে বেশী প্রিয় হতে হবে…”
ইবনে আল-কায়য়িম বলেন, “যেহেতু ‘কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়’[সুরা আস-শুরা ৪২:১১] সেহেতু
তাকে ভালোবাসার অনুরূপও আর কিছুই হতে পারেনা|”যদি আপনি এই ভালোবাসার গভীরতা ও
মাধূর্য একবার অনুভব করতে পারেন, তাহলে আপনার আর নামাজ ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করবে না।
আমি এই ভালোবাসা অনুভব করতে চাই; কিন্তু কিভাবে?
আপনি কি সত্যিই এই ভালোবাসা অনুভব করতে চান? তাহলে নিজেকেই জিগ্যেস করুন- কেন আপনি
আল্লাহকে ভালোবাসতে চান? কারণ এটা জেনে রাখেন যে মানুষ মূলত ভালোবাসে তিনটি কারণের
যেকোনো একটির(অথবা কমবেশি মাত্রায় তিনটির জন্যই) জন্য:
১. তাদের সৌন্দর্যের জন্য;
২. তাদের মান-সম্মান বা উচ্চমর্যাদার জন্য;
৩. অথবা তারা আপনার জন্য ভালো কিছু করেছে এই জন্য;
আরও এটা জেনে রাখেন যে আল্লাহতায়ালা এই তিনটি গুনেই অন্য সবার চেয়ে অনেক অনেক উপরে।
সৌন্দর্য সবসময়ই আমাদের হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়। এটা অনেকটা আমাদের ফিতরাত (যা প্রাকৃতিকভাবে
থাকে)এর মতো। আলী ইবনে আবি তালিব (রাদি-আল্লাহু আনহু) নবী(সা:)সম্পর্কে বলেন যে “তাকে দেখে
মনে হত তাঁর মুখ থেকে সূর্যের কিরণ বের হচ্ছে।” জাবির(রা:) বলেন: “রাসূলুল্লাহ(সা:) পূর্নিমার চাঁদের
চেয়েও সুশ্রী, সুন্দর এবং উজ্জ্বল ছিলেন।” (তিরমিজী) আল্লাহতায়ালা তাঁর সকল নবী রাসূলগনকে
অসাধারণ সৌন্দর্য দান করেছিলেন যাতে মানুষ তাঁদের প্রতি প্রাকৃতিকভাবেই আকৃষ্ট হয়।
আর সৌন্দর্য শুধু মানুষের মুখের মাঝেই সীমাবদ্ধ না, সৌন্দর্য সকল সৃষ্টিজগতের মাঝেই ছড়িয়ে রয়েছে
এবং প্রায়ই তা আমাদের মুগ্ধ করে। আমাদের করে বাকহারা এবং সাথে সাথে আমাদের দেয় এক স্বর্গীয়
শান্তির অনুভুতি। পূর্ণিমা রাতের শান্ত চাঁদের আলো, পাহাড় বয়ে নেমে আসা স্বচ্ছ পানির ঝর্না, কিংবা
সমুদ্র পাড়ের রক্তিম সূর্যাস্ত…ইত্যাদির সামনে এলে কেমন যেনো একটা গভীর অনুভুতি আমাদের মাঝে
বয়ে যায় যা খুবই পবিত্র, আমাদের করে তোলে মোহিত, মুগ্ধ। অবশ্য আজকাল শহরের যান্ত্রিকতা আর
রুক্ষতা অবশ্য আমাদের এই পবিত্র অনুভুতি গুলোকেও মলিন করে দিয়েছে।
আর আল্লাহতায়ালা হলেন সেই সত্তা যিনি এইসব সৌন্দর্যকে সৃষ্টি করেছেন, সাজিয়েছেন,
সৌন্দর্যমন্ডিত করেছেন। তাহলে আল্লাহর নিজের সৌন্দর্য কোন পর্যায়ের হতে পারে? ইবনে আল-
কায়য়িম বলেন, “আর আল্লাহতায়ালার সৌন্দর্য উপলব্ধি করার জন্যে এটা জানা থাকাই যথেষ্ঠ যে
এই জীবন এবং এর পরের জীবনের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সকল সৌন্দর্য তাঁরই সৃষ্টি, তাহলে তাদের
সৃষ্টিকর্তা কতটা সুন্দর হতে পারেন?”
আল্লাহতায়ালা সুন্দর, এ জন্যেই সৌন্দর্যের জন্য আকর্ষণ আমাদের ফিতরাত। আল্লাহতায়ালার একটি
নাম হল আল-জামীল (যিনি সবচেয়ে সুন্দর)। ইবনে আল-কায়য়্যিম বলেন, আল্লাহ তায়ালার সৌন্দর্য
এমন যে কেউ শুধু তা জেনে রাখতে পারেন, তা কল্পনা করার ক্ষমতা কারোরই নেই। এই মহাজগতের সকল
সৌন্দর্য একত্রেও তাঁর নিজের সৌন্দর্যের এক বিন্দুও নয়। ইবনে আল-কায়য়িম বলেন সুর্য কিরণের
যেমন সূর্যের সাথে তুলনা হয় না, ঠিক তেমন যদি সময় সৃষ্টির শুরু থেকে কেয়ামতের আগ পর্যন্ত সকল
কিছুর সৌন্দর্য একত্র করা হয়, তবুও তা আল্লাহর সৌন্দর্যের সাথে তুলনা করারো যোগ্য হবে না।
আল্লাহতায়ালা এত প্রবল সৌন্দর্যের অধিকারী যে এই জগতে আমাদের তা সহ্য করার ক্ষমতা নেই।
পবিত্র কোরআনে, আল্লাহ তায়ালা মুসা(আ:)এর অনুরোধ বর্ণনা করেন:
“তারপর মূসা যখন আমার প্রতিশ্রুত সময় অনুযায়ী এসে হাযির হলেন এবং তাঁর সাথে তার
পরওয়ারদেগার কথা বললেন, তখন তিনি বললেন, হে আমার প্রভু, তোমার দীদার আমাকে দাও, যেন
আমি তোমাকে দেখতে পাই। তিনি বললেন, ‘তুমি আমাকে দেখতে পাবে না, তবে তুমি পাহাড়ের দিকে
দেখতে থাক, সেটি যদি স্বস্থানে দঁড়িয়ে থাকে তবে তুমিও আমাকে দেখতে পাবে, তারপর যখন তার
পরওয়ারদগার পাহাড়ের উপর আপন জ্যোতির বিকিরণ ঘটালেন, সেটিকে বিধ্বস্ত করে দিলেন
এবং মূসা অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন…|” [আল আরাফ ৭:১৪৩]
পাথরের পাহাড়ও আল্লাহর সৌন্দর্যের সামান্য জ্যোতি বহন করতে পারেনি এবং বিধ্বস্ত হয়ে
গেছে, এবং এই ঘটনা দেখে মুসা(আ:) জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এ কারণেই হাশরের ময়দানে সবকিছু
আল্লাহর সৌন্দর্যে দীপ্তিময় হয়ে উঠবে। আমরা শুধু তাঁর সৌন্দর্যের কথা আলোচনাই করতে
পারি, কিন্তু তা অবলোকন করা আমাদের আয়ত্তের বাহিরে। এই বিশ্বজগতের এত সুন্দর, এত
মোহনীয় সব জায়গা, জিনিস, মানুষ অথবা তাদের সবার সৌন্দর্য একত্রেও একটি নির্দিষ্ট
গন্ডির মাঝেই সীমাবদ্ধ; আসল মহিমা আর সৌন্দর্যতো আল্লাহতায়ালার| আল্লাহতায়ালা
আর তখন শুধু বাকি রয়ে যাবে আপনার রবের মহিমা এবং সম্মান|[আর রাহমান ৫৫:২৭]
এসব কিছু ভেবেই, মহানবী(সা:) বলেছেন:
বান্দা যখন নামাজে দাঁড়ায় আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দার দিকে তাকান এবং যতক্ষণ সে নামাজে থাকে
ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি তাঁর মুখ ফেরান না| (তিরমিজী)
নামাজে দাঁড়িয়ে এই কথা মাথায় রাখবেন, এবং প্রার্থনা করবেন যেন আল্লাহ আপনাকে জান্নাতে তাঁকে
এই ভালোবাসাকে কি আরও উপরে নিয়ে যেতে চান? তাহলে সাথেই থাকুন|


চলেব...............................
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ১১:১৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×