বাংলা সন সৃষ্টি হয়েছে হিজরি সন থেকে
রাজদরবার চলছিলে সম্রাট আকবরের ফরমান মোতাবেক। ভালোই চলছিলো সবকিছু। সমস্যা ছিলো না কোনো। ছিলো না কোনো অভিযোগ। প্রশ্নবিদ্ধ ছিলো কেবল রাজার খাজনা আদায়ের হিসাব সংরক্ষণের বিষয়টি।গড়মিল ছিলো হিসাব সংরক্ষণের সময় ও সংখ্যা নিয়ে। সংখ্যা মিলতো কিন্তু সময় মিলতো না। একেক জনের হিসাব সংরক্ষিত হতো একেক সময় হিসেবে। সম্রাট আকবর রাজজ্যোতিষী আমীর ফতেহ উল্লাহ সিরাজীকে নির্দেশ দিলেন, এই সমস্যার সমাধান চাই আমি। সুষ্ঠু সমাধান। ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি মোতাবেক ৯৬৩ হিজরির ২৮ রবিউস সানি তারিখে সম্রাট জালালুদ্দিন আকবর শাহ সিংহাসনে আসিন হন। সম্রাটের এই ক্ষমতা গ্রহণের স্মৃতিকে চিরভাস্কর করে রাখার উদ্দেশ্যে রাজজ্যোতিষী ফতেহ উল্লাহ সিরাজী ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ এপ্রিলকে পহেলা তারিখ নির্ধারণ করে খাজনা আদায় এবং এর যাবতীয় হিসাব-নিকাশ সংরক্ষণের উপযোগী করে হিজরি ৯৬৩ সনের সাথে পরবর্তী সৌরমাস ও বছরের সংখ্যা যোগ করে নতুন একটি ফসলি সন প্রবর্তন করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে এই সন সৌরমাস হিসেবে গণনা হতো। পরর্বতীতে রাজজ্যোতিষী ফতেহ উল্লাহ প্রবর্তিত এই ফসলি সনই বাংলা সন বা বঙ্গাব্দের রুপান্তিত হয়। সুতরাং এই কথার মাঝে কোনো প্রকার কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই যে, বাংলা সনের সৃষ্টিতে হিজরি সনের অংশ গ্রহণগত ভূমিকাই মূল।
ইতিহাসও এই কথাই বলে, চলুন একটু দেখি উইকিপিডিয়াতে কি লেখা রয়েছে এই সম্পর্কে। ‘ভারতে ইসলামি শাসনামলে হিজরি পঞ্জিকা অনুসারেই সকল কাজকর্ম পরিচালিত হতো। মূল হিজরি পঞ্জিকা চান্দ্র মাসের উপর নির্ভরশীল। চান্দ্র বৎসর সৌর বৎসরর চেয়ে ১১/১২ দিন কম হয়। কারণ সৌর বৎসর ৩৬৫ দিন, আর চান্দ্র বৎসর ৩৫৪ দিন। একারণে চান্দ্র বৎসরে ঋতুগুলি ঠিক থাকে না। আর চাষাবাদ ও এজাতীয় অনেক কাজ ঋতুনির্ভর। এজন্য ভারতের মোগল সম্রাট আকবারের সময়ে প্রচলিত হিজরি চান্দ্র পঞ্জিকাকে সৌর পঞ্জিকায় রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সম্রাট আকবর ইরান থেকে আগত বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ আমির ফতুল্লাহ শিরাজীকে হিজরি চান্দ্র বর্ষপঞ্জীকে সৌর বর্ষপঞ্জীতে রূপান্তরিত করার দায়িত্ব প্রদান করেন। ওমর ফতুল্লাহ্ শিরাজির সুপারিশে পারস্যে প্রচলিত সৌর বর্ষপঞ্জীর অনুকরণে ৯৯২ হিজরি মোতাবেক ১৫৮৪ খৃস্টাব্দে সম্রাট আকবার হিজরি সৌর বর্ষপঞ্জীর প্রচলন করেন। তবে তিনি ঊনত্রিশ বছর পূর্বে তার সিংহাসন আরোহনের বছর থেকে এ পঞ্জিকা প্রচলনের নির্দেশ দেন। এজন্য ৯৬৩ হিজরি সাল থেকে বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হয়। ইতোপূর্বে বঙ্গে প্রচলিত শকাব্দ বা শক বর্ষপঞ্চির প্রথম মাস ছিল চৈত্র মাস। কিন্তু ৯৬৩ হিজরি সালের মুহাররাম মাস ছিল বাংলা বৈশাখ মাস, এজন্য বৈশাখ মাসকেই বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস এবং ১লা বৈশাখকে নববর্ষ ধরা হয়।‘ [সূত্র : bn.wikipedia.org/wiki/বাংলা_সন]