somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ম্যুভি রিভিউ: 'জোনাকি'

২৮ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চলচ্চিত্র: জোনাকি
পরিচালক: আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্ত
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান: ম্যাজিক আওয়ার ফিল্মস
মুক্তি: ২০১৮
এখন দেখতে পারেন: নেটফ্লিক্স-এ

প্রথমেই বলে নিই, জোনাকি চলচ্চিত্রটি যারা সিনেমা প্রচন্ড ভালোবাসেন ও নিজেদের মধ্যে ধারণ করেন, তাদেরই সবচেয়ে বেশি ভালোলাগার কথা। খুব বেশি গভীরে না গেলে এই ছবি প্রচন্ড একঘেয়ে ও অতন্ত্য ধীরগতির, অন্ততঃপক্ষে এইসময়ের ১৫ সেকেন্ড ভিডিওর দুনিয়ায়। এছাড়াও যারা ফোটোগ্রাফি খুব পছন্দ করেন, তাদের জন্য সুখবর হলো, এই সুরিলিয়েস্টিক চলচ্চিত্রের প্রতিটি শটেই পাবেন নান্দিনকতা।



আমি নিজে কোনোরকম সিনেমাবোদ্ধা নই, আমার যা ভালো লেগেছে, তা-ই আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাচ্ছি। যারা চলচ্চিত্র ভালোবাসেন, তাঁরা আমার সাথে একমত হতেই পারেন যে, জোনাকি সিনেমাটি বাংলা চলচ্চিত্রের এক অনন্য মাইলফলক হয়ে থাকার বেশিরভাগ উপকরণে সমৃদ্ধ। ছবিটির প্রায় প্রতিটি ধারণা নিখুঁত। একবারে দেখে আমি ছবিটি বুঝিনাই, অবশ্যই দ্বিতীয়বার দেখতে হয়েছিল। আদিত্যের গল্প বলার ধরণ ও অসাধারণ কম্পোজিশানই এর মূল কারণ এবং যেহেতু তিনি খুব অল্প বয়সেই পারফর্মিং আর্টের দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন, ছবিটির প্রতিটি ফ্রেমে এর উপস্থিতি দর্শক টের পাবেন। এছাড়া দর্শক মাঝে মাঝেই নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন গল্পের টাইমলাইনের মাঝে।



আদিত্য বিভিন্ন শটে অসাধারণ শব্দ সাজেশানের মাধ্যমে অন্ততঃ এতটুকু দয়া করেছেন যেন দর্শকদের গল্পের টাইমলাইনের ধারণা কিছুটা হলেও পরিষ্কার হয় (নতুন ও পুরাতন দিনের প্লেনের আওয়াজ, স্টিমার এর হর্ন, বর্তমান সময়ের মাইকে নির্বাচনী বক্তৃতা, সিনেমার ডায়ালগ, গাড়িঘোড়ার আওয়াজ, যুদ্ধের আওয়াজ, গানের লিরিক, ইত্যাদি)। সবচেয়ে ভালো লেগেছে প্রতিটি শটের কম্পোজিশন, এবং আমি বলবো, ফ্রেমিং এর এক অসাধারণ উদাহরণ, এই জোনাকি। এখানেই শেষ নয়, এমনকি একই সিনে দুটি চরিত্রের রঙিন ও সাদাকালো অবস্থান বলে দেয় যে, কতটা সূক্ষ্ম চিন্তার প্রয়োগ ঘটিয়েছেন আদিত্য সম্পাদনার টেবিলে। বাদ যায়নি রুল অভ থার্ডস এর অসাধারণ ব্যবহারও। ছবিটির প্রতিটি শট তথ্যসূত্রে ভরপুর, যাতে দর্শক, খেই হারিয়ে না ফেলেন এবং পরিচালকও গল্প বলার ধরণকে ঠিক রাখতে পারেন।

পুরো ছবিতে অল্প সংখ্যক ডায়ালগ ও বেশিরভাগ চরিত্র চিত্রায়নের মাধ্যমে দেখিয়েছেন আদিত্য। জোনাকির ভূমিকায় ৮১ বছর বয়সী লোলিতা চ্যাটার্জির অসাধারণ ব্যক্তিত্ত্ব ও তাঁর অসামান্য অভিনয় দর্শকদের বুঝতেই দেবে না যে, এই কি সেই ১৯ বছরের জোনাকি, নাকি ৮০ বছরের অশীতিপর বৃদ্ধা। যদিও গল্পটি একটি বিশেষ সময়ের কথা বলে এবং খুব বেশি জটিল নয়, আমার মনে হয়েছে, গল্পতে এর বেশি জটিলতা থাকলে তা দর্শকদের জন্য হয়ে উঠতে পারতো অবোধ্য। আদিত্যের নান্দনিক শট কম্পোজিশনের মাধ্যমে পারিবারিক সম্পর্ক, বিচ্ছেদ, দূরত্ব, ইত্যাদি দেখানোর প্রয়াস খুব ভালোভাবেই সফল বলে আমার মনে হয়েছে।



‘জোনাকি’ হল কোমাতে থাকাকালীন সময়ে এক বৃদ্ধার এবং পরিচালকের দুঃস্বপ্নের প্রতিফলন। এটি একজন ৮০ বছর বয়সী নারীর অসম্পূর্ণ জীবনের এবং চিন্তাভাবনার স্মৃতি, একটি অস্বীকৃত প্রেমের বেদনার গল্প। যিনি তাঁর জীবনের শেষ ক'টা সময়ে পুরোনো স্মৃতি হাতড়ে বেড়িয়ে খুঁজে চলেন অতৃপ্ত কিশোরীর বেদনাময় প্রেমের ইতিহাস। আদিত্যের গল্প বলার ঢঙে ছবিটির চরিত্র চিত্রায়ন অসামান্য রূপ পায়। এছাড়াও উনিশশো চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকে নির্মম পুরুষশাসিত সমাজের এক সুন্দর ছবি এঁকেছেন আদিত্য। যেখানে পশ্চিমা সংস্কৃতি আঁকড়ে থাকা পরিবারের ব্যাথা বেদনার গল্প অল্প কিছু দৃশ্যের মাধ্যমে চিত্রায়িত করেছেন পরিচালক। এছাড়াও বিধবা নারীকেন্দ্রিক পরিবারের কষ্টের কথাও এসেছে এই ছবিটিতে।

পুরো ছবিটিতে একটি বিষয়ই আমি খুঁজে পাইনি, তা হলো, প্রাকৃতিক আলোর উৎস। হয়তো আদিত্য চেয়েছিলেন বিষয়টিকে একটু ভিন্ন ধারার শিল্পের মাধ্যমে চিত্রায়িত করতে। সচরাচর সিনেমায় প্রচলিত ব্যাকরণের দিক থেকে চিন্তা না করলে, পুরো ছবির নান্দিনকতা আলোর উৎসের কারণে এতটুকুও কমে না।



সিনেমাটির পরিচালক, আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্ত ১৯৮৩ সালে ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। খুব অল্প বয়সেই তিনি পারফর্মিং আর্টের দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন। শৈশবকালে তিনি একজন সক্রিয় নাট্যকার ছিলেন। তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র 'লেবার অভ লাভ' (আসা যাওয়ার মাঝে) আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব সার্কিটে অসাধারণ গুঞ্জন তৈরি করেছিল। ফিল্মটি ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভাল ২০১৪, জিওরনেট দেগলি অটোরিতে প্রিমিয়ার হয়েছিল, যেখানে এটি সেরা ডেবিউ ফিল্মের জন্য ফেডিয়োরো জিতেছে। 'লেবার অভ লাভ' এর পর থেকে রটারড্যাম, বুশান, লন্ডন, তাল্লিন, মিউনিখ, মারাকেক, সাংহাই, আবু ধাবি এবং আইএফএফএলএ সহ ৭০ টিরও বেশি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়েছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে তিনি ১৩ টি পুরস্কার জিতেছেন। চলচ্চিত্রটি ভারতীয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার ২০১৫-তে সেরা ডেবিউ ফিল্মের জন্য মর্যাদাপূর্ণ গোল্ডেন লোটাস সহ আরও ২ টি পুরষ্কার জিতেছিল।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০২০ ভোর ৪:৪০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×