somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতিশোধ অথবা একটি অপরাধের গল্প।

১৪ ই জুন, ২০১১ বিকাল ৪:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাম হাতে বইটা ধরে ডান হাত দিয়ে টাকা বের করে দোকানিকে দিতে যাবে,এমন সময় ক্রাচটা পরে গেল ডান বগলের নিচ থেকে। চারপাশে তাকিয়ে কেমন যেন একটা অসুস্থতা অনুভব করল অন্তু। কেমন একটা হীন্মন্যতাবোধ চেপে ধরলো যেন । নীলক্ষেতের এই ফুটপাতে বইয়ের দোকানগুলোতে যত মানুষ আছে, অন্তুর মনে হল সবাই আড়চোখে তাকিয়ে দেখছে ওকে। আর মনে মনে পরিতৃপ্তির হাসি হেসে বলছে,দেখ আমাদের, আমরা তোমার মত নই,আমাদের দুটি পা ই আছে, আমরা সবল, আমাদের হাটতে ক্রাচ লাগেনা।অন্তু জানে, শহরের এই ব্যস্ততায় কেঊ তাকিয়ে নেই তার দিকে। কিন্তু তবুও ওর হীন্মন্যতাটুকু কাটেনা।

ক্রাচটা পড়ে আছে রাস্তায়। কি করবে তা নিয়ে সামান্য দুটানায় পড়ে গেল অন্তু। আগে ক্রাচ তুলবে ,নাকি টাকাটা দিবে দোকানিকে? ক্রাচটা উঠানো দরকার ,কিন্তু এতে পঙ্গুত্বটাকে বেশি পাত্তা দেওয়া হয়ে যায়,আবার এক পায়ে দাঁড়িয়ে ঝুকে টাক দেওয়ার সময় যদি হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাই, তাহলেতো লোক হাসবে আবার। ক্রাচটাই আগে উঠানো দরকার , ভাবল অন্তু।তুলতে যাবে এমন সময় পাশ থেকে একটা মেয়ে এসে নিজ থেকেই ক্রাচটা তুলে অন্তুরা হাতে দিল। মেয়েটার দিকে একটা নার্ভাস মার্কা হাসি দিল ও,দোকানিকে টাকা দিয়ে ঘুরেই চলতে শুরু করলো ,এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে কেমন আস্বস্তি হচ্ছে।

কিছু দূর গিয়েই ও বুঝতে পারলো,মেয়েটা আসছে ওর পিছু পিছু। হঠাতি মনে পড়লো ধন্যবাদ দেওয়া হয়নি মেয়েটাকে। মেয়েটা কেমন দেখাও হয়নি তখন।পাশ ফিরে দেখবে এখন একটু! পেছনে ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখলো অন্তু মেয়েটাকে। বিকেলের হাল্কা রোদে নীল সালোয়ার কামিজ পড়া মেয়েটাকে অদ্ভুত সুন্দর বলে মনে হল অন্তুর কাছে। কিন্তু মেয়েটা ওর পিছু পিছু আসছে কেন? বিপদে পড়েছে? সাহায্য চায়? নাকি গ্রাম থেকে মেয়েটিকে ফুসলিয়ে নিয়ে এসেছে ওর বয়ফ্রেন্ড? এমন বোকা মেয়ে বলেতো মনে হচ্ছেনা । শহুরে চালাক মেয়েদের মতইতো আচরন। তবে ইদানিং শহুরে মেয়েরাই সবচেয়ে বড় ভুল গুলো করছে।
নাকি কৌতুহলে তার পিছু পিছু আসছে। তার মত সুদর্শন এক যুবকের ডান পা কেন কেটে বাদ দিতে হল সেই কৌতুহল। আজকাল মানুষের কৌতুহল আবার নিষ্ঠুরতার সীমা অতিক্রম করেছে। এই সেদিনই তো চাচাত ভাইয়ের বিয়েতে এক আহ্লাদি মেয়ে নাকি সুরে সবার সামনে বলে উঠলো, এমা , আপনার কি মজা, এক পা দিয়ে হাটেন! কেমনে হল এমন?
কি নিষ্ঠুর রসিকতা।
এটা নাকি স্মার্টনেস! যা মনে আসে তাই বলে ফেলা!
অনেকে আবার কিছুই বলে না । আড়চোখে তাকায় আর ঈশারায় একে অন্যকে দেখায়! অনেক আতেল আবার একটু বেশি সহানুভুতিশীল, আগ বাড়িয়ে আহ,উহ করে। অসহ্য।
কিন্তু এই মেয়েটা পিছু আসছে কেন? ডেকে জিজ্ঞেস করবে নাকি? আবার ভাবল,না থাক ।মেয়েটা হয়তো আমার পিছু আসছে না, আমিই মেয়েটার আগে আগে যাচ্ছি!

- কি বই কিনলেন? হঠাত পেছন থেকে জিজ্ঞেস করলো মেয়েটা।
উত্তর দেওয়া উচিত।এম্নিতেই আগে ধন্যবাদ জানানো হয়নি।
- ইস্তাম্বুল.........অরহান পামু্কের। জবাব দিল অন্তু। পড়েছেন?
- না , আসলে আমি আপনার পিছু পিছু আসছিলাম...কথা বলার জন্য।ইতস্তত করে বল্লো মেয়েটি।
মাথার ভেতর কেমন যেন চাপ অনুভব করলো অন্তু। একটু কঠিন ভাবে জিজ্ঞাসা করলো-
- পা কেমনে কাটা গেল জানতেচান তো?
হকচকিয়ে গেল মেয়েটা । এত তাড়াতাড়ি মনে হয় আশা করেনি। অনেক কথাবার্তার পর রসিয়ে শুনতে চেয়েছিল বোধহয়।
- না আসলে তা নয়,বইটার নাম জান্তেই আপনার পিছু পিছু আসছিলাম।
- অবিশ্বাস্য, অবাক হয়ে গেল অন্তু। তখন দোকানে জিজ্ঞেস করলেই পারতেন!
- করবো ভেবেছিলাম ,কিন্তু আপনি এত দ্রুত চলে এলেন!
নিজেকে একটু ছোট ছোট লাগলো অন্তুর , কেমন কঠিন কথা বলে ফেল্লো। আসলে শারীরিক অসুস্থতা মনকেও অসুস্থ করে দেয়।
- এখন জেনেছেন তো। হাসল অন্তু। আবার বলল, পরেছেন ?
- হ্যা।
- কেমন লাগলো?
- দাঁড়িয়ে বলবো ? চলুন না বসি কোথাও।ওই পাশের কফি হাউজটাতেই চলুন।
একটু দ্বিধা হয় অন্তুর । বসবে কি? ভাল লাগছে মেয়েটার সাথে কথা বলে! বসতে ইচ্ছা করছে।
- চলুন।
প্রায় খালিই বলা চলে কফি হাউজটা। কোনার দিকে একটা টেবিলে বসে পড়ে ওরা।
-আমি কনি। মেয়েটি বলে।
- অন্তু।
- অন্তু...প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিই আপনার কাছে।
- কেন ? অবাক হয় অন্তু।
-আসলে ইস্তাবুল বইটি আমি পড়িনি। ইস্তাবুল কেন আসলে আমি কোন বইই পরিনি।
-তাহলে বললেন যে?
-মিথ্যে বলেছি , না বললে আপনি বসতে চাইতেন না যে।
কি বলবে অন্তু? তার রাগ করা উচিত কিন্তু রাগতে পারছেনা । মনে মচ্ছে এই সুন্দরি মেয়েটা এই অপরাধটুকু করতেই পারে।
- ঠিক আছে,না হই বললেন একটু মিথ্যে। কারও তেমন ক্ষতি তো হয়নি।
- আসলে আমি এপর্যন্ত যা বলেছি তার সবই মিথ্যে।

একটা গভীর দুঃখবোধ অন্তুকে চেপে ধরে। এই মেয়েটাকে সে অন্য রকম মনে করেছিল। একটু অন্যরকম। যে মেয়ে একজন পঙ্গু মানুষের ক্রাচ তুলে দেয়,তার কাছে পঙ্গুত্বের কারন জানতে না চেয়ে তার হাতের বইয়ের নাম জিজ্ঞেস করে। কিন্তু না । আসলে পৃথিবীর সব মানুষই এক রকম। সমান রকমের নিষ্ঠুর।
- আমার খোড়া হওয়ার কারন জানতে চানতো?
ক্লিস্ট হাসি হেসে জিজ্ঞেস করে অন্তু। কেমন একটা কষ্ট হচ্ছে ওর। এমন হচ্ছে কেন? সুন্দরী একটা মেয়ের সামনে ও অসহায় পঙ্গু বলে?
- এভাবে বলছেন কেন? আমিতো এখনো জানতে চাইনি এখনো।
- ওই হলো! আসলে এত বেশি বার বলতে হয়েছে। কেমন বিরক্ত হয়ে গেছি নিজের উপর।
- কি হয়েছিল খুলে বলবেন একটু?
- কেন বলবোনা?অনেক কেই তো বলেছি আগে। না হয় আপনিও শুনলেন।

আবার বলতে হবে, প্রস্তুতি নিল অন্তু। একবার বাইরে তাকিয়ে রোদের লুকোচুরি খেলা দেখলো । অপুর্ব একটা দৃশ্য ! একা থাকলে উপভোগ করা যেত, কিন্তু এখন নয়। এখন তার পা হারানোর কাহিনি বর্ননা করতে হবে রোমহর্ষক ভাবে। রসিয়ে রসিয়ে বলতে হবে কেন তার পা কেটে বাদ দিলেন ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তাররা। তাহলে শ্রোতা মজা পাবে। কোথাও থেমে গেলে আগ্রহের সাথে জানতে চাইবে, তারপর............
সবচে ভাল হয় যদি সে বলতে বলতে মুখ কঠিন করে ফেলে।নিজের অসহায় অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে চোখে নিয়ে আসে দুফুটা জল। তাহলে হয়তো শেষে কিছু সহানুভূতি মুলক কথাবার্তাও বলবে মেয়েটা। নিজে কতটা মনবিক সেটা প্রমান করার জন্য ঘটনায় জড়িতদের বলবে, পশু,হায়েনা...
কিন্তু এই সহানুভূতি অন্তু চায়না। তাই সিদ্ধান্ত নিল আর হীন্মন্যতাবোদ নয়। অপরিচিত এই মেয়ের অযাচিত সহানুভূতির দরকার নেই আমার, আর কাউকে সমবেদনা জানিয়ে ঠোট গোল করে অশ্রাব্য চু চু উচ্চারন করতে দেবনা আমি। এখন থেকে,এই মুহুর্ত্ব থেকেই।

- শুনুন তাহলে , বিরাট মজার ঘটনা...মনে হলেই হাসি পায়। যেন এখনো হাসি পাচ্ছে এমন ভাবে হাসল ও ।সেই হাসিতে যন্ত্রনার লেশমাত্র নেই। ততক্ষনে গোল হয়ে গেছে মেয়েটার চোখ,লক্ষ্য করে হাসি আরও বাড়ল অন্তুর।

অন্তু বলতে থাকে। বিস্ময়ে কেমন জানি অসহায় দেখায় মেয়েটিকে। সেই অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে অন্তুর মনে হয় অনুভূতিহীন মানুষের উপর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে এই মেয়েটার উপর কোন অন্যায় হচ্ছে না তো? ও কোন অপরাধ করছেনা তো?
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১১ বিকাল ৪:১১
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×