somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুঃ শাওন, গুলতেকিন ও পাঠক সমাজ

২৯ শে জুলাই, ২০১২ বিকাল ৫:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১২ জুন বেলভ্যু হাসপাতালে প্রথম অস্ত্রোপচারের ৮দিন পর সুস্থ্য হয়ে বাসায় ফিরে আসার পর হুমায়ূন আহমেদকে কেন প্লাস্টিকের চেয়ারে বসানো হলেছিলো ? সেই চেয়ার থেকে তিনি কীভাবে পড়ে গেলেন, প্রচন্ড আঘাত পেলেন, সেলাই খুলে গেল এবং ইনফেকশন হলো ? কার অবহেলা, উদাসীনতা ছিলো ? চেয়ার থেকে পড়ে যাবার একদিন পর কেন তাকে জ্যামাইকা হাসপাতালে নেয়া হলো ?

চেয়ার থেকে পড়ার সাথে সাথেই তো প্রচন্ড আঘাত পেয়েছিলেন ? কেন তাকে সাথে সাথে হাসপাতালে নেয়া হলো না ? তিনি চেয়ার থেকে পড়ে গিয়েছিলেন ২০ জুন কিন্তু তাকে জ্যামাইকা হাসপাতালে নেয়া হয় ২১ জুন। কিন্তু কেন ? জ্যামাইকা হাসপাতালেইবা শাওন গেলেন না কেন ? মাজহার কেন হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে ঐ হাসপাতালে গেলেন? অবস্থা বেগতিক দেখে প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে হুমায়ূন আহমেদকে বেলভ্যু হাসপাতালে নেয়া হয় কেন ?


ওপরের লেখাটা আজ ফেসবুকে ঢুকে দেখি একজন লিখে রেখেছে। বেশ কয়েকজন লাইকও দিছে। নানান মাধ্যমে, নানান ভাষায় নানা জন হুমায়ূনের মৃত্যুতে নানান ধরনের লেখা প্রকাশ করে চলেছে। ওপরের লেখাটা দেখে আমারও শখ জাগল এইরকম একটি হটকেক বিষয়ের উপর কিছু লিখার।

প্রথমেই আমার নিজস্ব মনোভাব প্রকাশ করে নিই। ওপরের লিখাটা যারা সাপোর্ট করে তাদেরকে আমি হুমায়ুন প্রেমিক বা হুমায়ুনের লেখা প্রেমিক বলে মনে করিনা। আমি তাদেরকে হটকেক নিউজ-আইটেম বিশেষজ্ঞ বলে মনে করি। আমার মতামত জানার পরও বাকিটুকু পড়ার বাধ্যবাধকতা আমি আরোপ করতে চাইনা। ইচ্ছা করলে এখনই ব্যাক বাটনে চাপ দিতে পারেন।

অধিকাংশ হুমায়ূন ভক্তদের মত আমারও হুমায়ূনের সাথে সরাসরি কোন সাক্ষাৎ হয়নি। মৃত্যুর পর দেখার একটা সুযোগ তৈরী হলেও সে সুযোগ আর নিইনি। তবে এলাকার একটা প্রভাব অবশ্যই ছিলো। নেত্রকোনাকে অন্য বিষয়ে ময়মনসিংহের সাথে না মিলাতে চাইলেও হুমায়ূন প্রসঙ্গ আসলেই মনে হত "গ্রেটার ময়মনসিংহ না!"।
লেখার সাথে পরিচয় ক্লাস ৬/৭ এ। বড় বোনেরা হুমায়ূন পড়ত, ইমদাদুল হক মিলন পড়ত। তবে বেশি পছন্দ করত ইমদাদুল। ব্র্যাকের গনকেন্দ্র পাঠাগার থেকে আনা বই গুলো লুকিয়ে পড়ে ফেলতাম। পরে নিজেই পাঠাগারের সদস্য হয়ে যাই। আর আবিষ্কার করি হুমায়ুনকে। অত্যন্ত সহজ সরল ভাষায় লেখা বুদ্ধিমান লেখা।

পাঠক, রাগ করার কিছু নেই। আমি ধান ভান্তে শিবের গীত গাইছি না। ওটা এমনি এমনিই এসে যাচ্ছে। তবে আপনি ইচ্ছা করলে এসব স্কিপ করতে পারেন। কারন আপনার যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, আমারও তাই। হানড্রেড পারসেন্ট শিওর।

যাক, প্রথম কোন উপন্যাস পড়ে চোখ ছলছল করেছে [আমার আবেগের সর্বোচ্চ স্তর। দেহে শক্ত পিটুনি না পড়লে পোড়া চোখে আমার জল আসত না। ] কোন লেখা পড়ে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম, কোন লেখা পড়ে মনে হয়েছে ইশ, হুমায়ুনকে এখানে পেলে একটা সালাম দিয়ে নেয়া যেত, এসব লিখে পোস্ট বড় করার কোন মানে হয়না। কাজের কথায় আসি।

প্রথমেই বলি সবচেয়ে বিতর্কিত ইস্যু নিয়ে। শাওনকে বিয়ে করা। তাদের বয়সের ব্যবধান ছিলো অনেক। জানা সত্য। কিন্তু দুজনের কেউ এ ব্যপারে কোন অভিযোগ তুলেনি।
আমার নিজস্ব মতামত হল, ব্যক্তিগত জীবনে কেউ যদি কাউকে নিয়ে সুখি হতে চায় এবং তা করার জন্য আইনসম্মত পথ ব্যবহার করে তবে তা নিয়ে কথা বলার অধিকার কারোর নেই। তবে যেহেতু হুমায়ূনের প্রভাব সারা দেশে এতই বিশাল যে, এটা নিয়ে কথা হয়েছে, হচ্ছে, এবং হবে এটাই বাস্তবতা।
এক্ষেত্রে শাওনকে দায়ী করার মধ্যযুগীয় একটা প্রবনতা আমাদের দেশে বিদ্যমান। এখানে এরকম একটা ধারনা দেয়া হয় যেন শাওন মধ্যযুগীয় কোন ডাইনী, গুলতেকিনের সোনার সংসার ছাই করার জন্য হুমায়ুনকে তুকতাক করে বশ করে ফেলেছে। এটা আমাদের দেশেই সম্ভব। যদি হুমায়ূন বিশাল কোন শিল্পপতি হত, বড় কোন ফিল্ম-স্টার হত, বা বয়সে যুবক হত তাহলে মেনে নেয়া যেত যে শাওন হুমায়ূনের ধন-দৌলত, প্রভাব-প্রতিপত্তি, যৌবন দেখে মজে গেছে এবং গুলতেকিনের সোনার সংসারে সে আগুন দিয়েছে। কিন্তু ওসবের কিছুই হুমায়ূনের নেই।

আর হুমায়ূনও এমন কোন বাচ্চা ছেলে বা উঠতি যুবক না যে শাওন তাকে রূপ-যৌবন দেখিয়ে হাত করে নেবে।

হুমায়ূন গুলতেকিনকে যে পরিমান ভালোবাসতেন তা প্রকাশ পায় তার লেখাগুলোতেই। গুলতেকিনকে আমি সম্মান করি তার নারীসুলভ ব্যাক্তিত্বের জন্য। তিনি হুমায়ূনকে বলতে গেলে লেখক হয়ে ওঠার জন্য এক হাতে প্রেরণা দিয়ে গেছেন। কঠোর আর্থিক দুর্দিনে পাশে থেকেছেন। মোটকথা একজন আদর্শ সহধর্মিনি ছিলেন তিনি। আবার সেই তিনিই তার ভালোবাসার অপমান হতে দেননি। ব্যাক্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য অবলীলায় পাশ কাটাতে পেরেছেন ৩২ বছরের ভালোবাসার মানুষকে।

তবে এক্ষেত্রে আমরা পাঠক সমাজ একটু দ্বিধায় পরি। কাকে সাপোর্ট করব? একজনকে সাপোর্ট করতেই হবে। কাকে করব? শাওন নাকি গুলতেকিন? খালেদা নাকি হাসিনা? সাদ্দাম না বুশ?
কেন রে ভাই? গুলতেকিনের কাজ ভালো লাগলেই যে শাওন তোর ক্ষতি করেছে তা নিশ্চিত হলি কিভাবে? শাওনের পক্ষ নিয়েছিস বলেই গুলতেকিন যে তোর পাকা ধানে মই দিয়েছে তাওতো না।

আমার কথা হচ্ছে গুলতেকিনের ৩২ বছরের সংসার ভাঙ্গার জন্য কাউকে দায়ী করতে হলে হুমায়ূনকে করুন। তবে হুমায়ূনের লেখাতো আর সেই অপরাধ করেনি।

যারা এতদিন হুমায়ূনের লেখা দেখলে পাশ কাটিয়ে চলে যেতেন, অখাদ্য ভাবতেন, তারাই এখন এসব আজেবাজে লেখা লিখে বেড়াচ্ছেন। আমাদের ভাগ্য ভালো যে আমাদের বাংলা সাহিত্যের এমন একজনকে আমরা আমাদের সময়ে পেয়েছিলাম যার হাতে বাংলাদেশি বাংলা সাহিত্যের কাঠামো তৈরী হয়েছে। একটা উপন্যাস লিখতে যান, দেখবেন হুমায়ূন চলে আসছে আপনার উপন্যাসে। আমরা মিসির আলীর মত করে লজিক নিয়ে ভাবতে শিখেছি। আর হিমুর মত নিয়ম অস্বীকার করার সুখও আমরা পেতে শিখেছি।

হুমায়ূনকে ধন্যবাদ আমাদের এত কিছু উপহার দেবার জন্য।

[একান্তই ব্যক্তিগত মতামত।]
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×