somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের মধুও কবিতা লিখতে পারে...

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাঙালি জাতির উপর মধু ভীষন ক্ষেপা। কথায় কথায় সে বলে উঠে "চোরের দেশ, চোরের জাতি, এখানে ধর্ম নিয়ে ব্যবাসা হয়, অধ্যাপকদের পুলিশে পেটায়, বুক ফুলিয়ে ভেজাল ওষুধ বিক্রি করা হয় "। জাতের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ জাত নাকি বাঙালি জাত। আবার দুনিয়ার সবচেয়ে প্রতিভাধর জাতও বাঙালি জাত। এ কারনেই তো যদু মধু কদু সবাই কবিতা লিখতে পারে। জেনেটিক একটা ব্যাপার আছেনা! মধুর ধারনা এ ব্যাপারটা রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে এসেছে। যদিও রবীন্দ্রনাথের সাথে তার রক্তের কোন সম্পর্ক নেই। তাতে কি! তাদের দুজনার মনের সম্পর্কই আসল। তার বন্ধুরা যখন টেকনোলজি নিয়ে ব্যাস্ত তখন সে ব্যস্ত সঞ্চয়িতা নিয়ে। এতে সে ভীষণ গর্বিত হয়।

মধু নিজেকে কবি হিসেবে পরিচয় দিতে পারলে খুব খুশী হয়। যদিও কেউ জানেনা যে তার এই জীবনে পড়া এক মাত্র কবিতার বই হলো "সঞ্চয়িতা"। আর কোন বাঙালি কবি আছে কিনা তা মধুর অগোচরে। জীবনানন্দ দাশকে তার বড্ড পাকা মনে হয়। তার ধারনা তার নিজের কবিতাগুলো জীবনানন্দ পড়লে ঈর্ষান্বিত হতেন।

মধুর লেখা কবিতার নমুনা......

ওগো প্রিয়া, তুমি দেখেছ কি?
দেখেছ কখনো
কিভাবে মাটির গভীরে এঁকে বেঁকে চলে লাভা
ঠিক তোমার হৃদয় মাঝে বেঁকে চলি আমি

চার লাইন লিখেই মধু চরমভাবে আত্মতৃপ্ত হয়। নিজের কাব্য প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বন্ধু কামালকে ফোন দেয়।
"দোস্ত তোর পরিচিত কোন প্রকাশক আছে?"
"ক্যান?"
"আগামী বইমেলায় একটা বই বের করতে চাই?"
"তোর বই তুই নিজেই ছাপা। নীলক্ষেত চইলা যা।"

কারো অপমান বা তিরস্কার মধুকে স্পর্শ করেনা। শানু নামের মেয়েটা তাকে নিয়ে যতই ঠাট্টা করুক মেয়েটাকে তার ভালোলাগে। শানুকে দেখলেই মধু মনে মনে বলে উঠে.....
"ওগো কালার করা চুলের রমনী
তোমায় দেখে
রক্তশুণ্য হয়ে যায় আমার সকল ধমনী"
আবারো নিজের কাব্য প্রতিভায় মুগ্ধ হয় সে.....

"শানু! দেখো একদিন আধুনিক কবিদের তালিকায় আমার নাম থাকবে সবার উপরে।"
শানু এক ভ্রু উঁচু করে বলে, "তাতো বটেই...."
"তবে একটা সমস্যা"
"কি সমস্যা?"
"আমার নামটা নিয়ে সমস্যা? আমার পুরা নাম সাগীর সরকার....ডাক নাম মধু। এমন নাম কবিদের মানায়না। আমার একটা কবি সুলভ নাম দাও তো।"
শানু অনেক ভেবেচিন্তে দুটা নাম বলে, "নীল মধু, সাগীর সাগর"
মধু হঠাৎ "ইউরেকা" বলে চিৎকার করে উঠে।
"আরে আমারতো মনেই ছিলনা যে মধু নামে একজন কবি ছিলেন।"
"কে তিনি?"
"কেন আমাদের মাইকেল মধু।"
শানুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সে বেরিয়ে পড়ে......

ধীরে ধীরে দিন যায়....মাস যায়....মধুর ফাইনাল পরীক্ষা এসে যায়। সারাবছর পড়ালেখার সাথে জড়িত না থাকার কারনে সবকিছু উলটাপালটা লাগে তার। শেষ পরীক্ষায় কোনরকম পাশ করার মত উত্তর করে সে খাতার শেষ পৃষ্ঠায় লিখল.....

"প্রশ্নকর্তা তুমি কি চেয়েছ আকাশপানে
যেখানে উড়ে যায় কালো কালো কাক
মাঝে মাঝে উড়োজাহাজ
এই প্রশ্নপত্রকে আমি ফুঁ দিয়ে
উড়িয়ে নিয়ে যাব সেখানে
সেখানে ধবল মেঘের সাথে তারা এক হয়ে ভেসে যাবে...."

হ্যাঁচকা টান দিয়ে স্যার খাতা টেনে নেন....

মধু তার বন্ধুদের দিকে চেয়ে থাকে। এরা এখন তার চেয়ে এক ক্লাস উপরে পড়ে। কিছুদিন পর চাকরি করবে। মধু মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে সে এদেরকে একদিন দেখিয়ে দিবে। বাঙালি আসলেই খারাপ জাত। এরা কবিদের যথাযোগ্য সম্মান দেয়না।

"আমাদের দেশে সবচেয়ে সস্তা জিনিস কি জানো মধু?"
শানুর প্রশ্নে মধু চোখ তুলে তাকায়....."কি? রাজনীতি?"
"সেটাও আছে.....তবে আরেকটা সস্তা জিনিস আছে।"
"কি সেটা?'
"কবি।"
মধুর মনটা ভীষন খারাপ হয়ে যায়।
মানুষগুলো কত খারাপ। তারা কবিদের সস্তা বলে। কবি সস্তা হতে পারেন কিন্তু তার কবিতা নয়।

মধুর বাবা হুঙ্কার দিয়ে বলেন, "মধু! গাধা! তুই যেখানটায় দাঁড়াবি ঐখানটা যেন হারপিক দিয়ে পরিষ্কার করা হয়!"
"কেন বাবা? আমি কি এতটাই অবাঞ্চিত?"
"চুপ গাধা! বাঙালির চাঁদে যাওয়া আর তোর কবিতা লিখতে পারা সমান কথা। তুইও কবিতা লিখিস্‌! আগে কবিতা বুঝবি তারপর লিখবি।"

বাবার কথাকে অমান্য করেনা মধু। এখন সে কবিতা বুঝার চেষ্টা করে।
বুঝতে পারলে সে অবাক হয়ে যায়। নিউটনের মধ্যাকর্যন শক্তির ধারনা পাওয়ার মতই অবাক হয় সে। অবাক হয়েই লিখতে বসে....

"আজ বহুকাল বাদে তোমায় পেলাম
হে কবিতা
এতদিন কেন আমায় রেখেছিলে পর করে?
কেন টাননি তোমার ঐ গগন বিস্তারি অন্তরে
যেখানে বহে কাব্যের ফল্গুধারা
সেখানে আজ লিখে রেখ যতনে
তোমাদের মধুও কবিতা লিখতে পারে...."

মধুটা আর মানুষ হলোনা। কবিই রয়ে গেলো।


(বি:দ্র: কবিদের ভালোবেসেই লেখাটা পোস্ট করেছি)

































সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১২:২৩
৯টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×