somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চেরাগ আলী যেভাবে সার্টিফায়েড এলিট বেগার হইল

০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চেরাগ আলীর নামটা রেখেছিলো তার দাদা। দাদা ভেবেছিলেন চেরাগ আলী বংশে আলো জ্বালবে। তাই নামতো আর মোমবাতি বা টিউবলাইট রাখা যায়না এজন্য চেরাগ আলী রেখেছেন। কিন্তু দাদার হাইপোথিসিস রিজেক্ট হইতে বেশিদিন লাগেনাই। চেরাগ আলী বাতি ঠিকই জ্বালালো কিন্তু সেইটা লাল বাত্তি। বাপদাদার যা সম্পদ ছিল সব সে দেদারসে খরচ করতে করতে ফতুর হয়ে গেল। ফতুর হওয়ার পর তার পাড়াতো ভাই বেরাদাররা তাকে ঢাকায় গিয়ে "বেগারি" করার জন্য গিয়ার দিতে লাগল। প্রথমে মেজাজ খারাপ হলেও শেষে গিয়ারে কাজ হল। সন্ধ্যা ৬ টার আন্ত:নগর ট্রেনে চেরাগকে বাপদাদার শেষ সম্পদ একটা মাটির চেরাগ হাতে ঢাকায় যেতে দেখা গেল।

"বেগারি" করা সহজ কাজ না। ঢাকার সব এলাকার নির্দষ্ট বেগার থাকে। সব সার্টিফায়েড এলিট বেগার। বেগারে বেগারে নেটওয়ার্ক অনেক শক্তিশালী। এদের মাঝে আবার পরিবারতন্ত্র প্রথা বিদ্যমান। এদের সাথে পারা যাবেনা। আবার এলাকাভিত্তিক চেয়ারপারসন বেগারও থাকে.....তাদেরকে মাসিক চাঁদাও দেওয়া লাগে। চেরাগ আলী সাথে করে আনা ফুটা থালা নিয়ে তার বিজনেস শুরু করে কিন্তু এলিট বেগাররা তার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে চাপা ধমক দেয়। আল্লাহর অশেষ রহমতে চেরাগ আলীর চেহারা মাশাল্লাহ্‌ ভালোই তাই অনেকেই আবেগে বশবর্তী হয়ে তাকে স্কচটেপ মারা দুই টাকা দেয়। তাও চেয়ারপারসন নিয়ে যায়।
মনের দুঃখে চেরাগ আলী একদিন পার্কে শুয়ে আছে। মাথার নিচে ফুটা থালা। হাতে বাপের শেষ সম্পদ মাটির চেরাগ। হাতের ঘষায় হঠাৎ সেখান থেকে হালকা ধোঁয়া বের হতে দেখা গেল। চেরাগ আলী বিস্ময় নিয়ে চেয়ে আছে। সে আরেকটু ঘষা দিল। এবার আরও ধোঁয়া বের হল। একসময় ধোঁয়ার কুন্ডলী পাক খেতে খেতে একটা বিশাল আকৃতি নিল। চেরাগ আলী দেখার সাথে সাথেই বুঝে ফেলল এই আলাদীনের চেরাগের দৈত্য। কিন্তু এইটা এইখানে আসলো কেমনে?
দৈত্য বলল, "হুকুম করুন জাহাপনা। তিনটি বর চান। আমি পূরন করবার ক্ষমতা রাখি।"
চেরাগ আলী বলল, "বর দিয়া কি হইব আমার। আমার দরকার বউ। তার আগে বল তুমি এরাবিয়ান নাইটস্‌ হইতে এইখানে ঢুকলা কেমনে?"
"সে এক বিশাল ইতিহাস। আমি তখন ছিলাম তেহরানে। তখন গালফ ওয়ার শুরু হইল। সেইখানে যুদ্ধের মাঝে এক বাঙ্গালী ভাই আমারে বাঁচাইয়া এই দেশে নিয়া আসল। তার থেকে আবার এইটা চুরি হইল। আপনার দাদা কি চোর ছিলেন?"
চেরাগ আলী কথা ঘুরিয়ে বলল, "এতদিন ধইরা ঘষা খাইলা বাইর হইলানা। আজকে কেন বাইর হইলা?"
"গরম হুযুর....গরম। আর কত বছর এই গরমে শুইয়া থাকব। তার উপর চেরাগের ভিতর এক তেলাপোকা ফ্যামিলি তাদের ডিম ফুটাইয়া দুর্গন্ধ করে রাখছে। টিকতে না পাইরা বাইর হইছি।"
"খুব ভালো করছ। তো তুমি কি বর বউ ছাড়া কিছু দাওনা?"
"দেই বর মানে হইল আপনি যা চান সেইটা, ইংরেজীতে যারে কয় “wish”....বর বউ সাপ্লাই দেওয়া আমার কাম না। ঐটা পাখি ভাইয়ের কাম। অন্য কিছু চান?"
"তয় আমারে বেগার চেয়ারপারসন বানায় দাও"
"এক মুহুর্তের চেয়ারপারসনের চেয়ার সরতে এক মুহুর্তই লাগে। সো ঐটা আমি গোলাম হইয়া করতে পারিনা।"
"তাইলে পারবাটা কি? দেশের পর্ধানমন্ত্রী বানায়া দাও।"
"ভেজাল কামে আমি নাই। এখনতো তাও ঘুমাইতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী হইলে সেইটাও পারবেননা। টয়লেটও করতে হইব হিসাব কইরা।"
"তাইলে তোমারে দিয়া কাম কি?!"
"আমি আপনারে ঢাকার আকাশে ঘুরাইতে পারুম।"
"ঢাকার আকাশে ঘুইরা কি হইব! তুমি আমারে এম্রিকা নিয়া যাও। শুনছি ঐখানে নাকি এখন চাকরি হারাইয়া অনেকে বেগারি করে।"
"সর্বনাশ! আমি ঐখানে নিতে পারুমনা। পাসপোর্ট ভিসা ছাড়া গেলে ধরা পড়লে জেল হাজত।"
"তাইলে তুমি আবার চেরাগে ঢুইকা থাক। আমার তোমারে টাইম দেওনের সময় নাই।"
"হুযুর মনে হয় মাইন্ড খাইছেন.....হুযুর.....গোলাম হইয়া একটা সত্য কথা কই। আগের দিনে আলাদীন টাইপ বেকুব মানুষদের বোকা বানানো সহজ ছিল। এখন মানুষ অনেক চালাক। এখনকার মানুষরে ধোঁকা দেওয়া যায়না।"
"তো তুমি আমারে ভরি ভরি স্বর্ণ বা বস্তা বস্তা টেকা আইনা দেও।"
"এখন স্বর্ণের ভরি কত শুনলে আপনার বিবি হার্টফেল না করলেও আপনি করবেন। তাছাড়া মানুষ আপনার কাছে এত স্বর্ন বা টাকা দেখলে শেষে বনের রাজা ওসমান গণীর মত ফেঁসে যাবেন। সব কিছুর একটা নীতি আছে না!"
"তো তুমি পারবাটা কি? বক বক করা বন্ধ কইরা বইসা পা টিপ!"
"আপনার জীবনের লক্ষ্য বলেন। আমি আপনারে পথ দেখাব। আপনার সাথে থাকব।"
"ঠিক আছে। আমি এই এলাকার সার্টিফায়েড এলিট বেগার হইতে চাই। অনেক ইনকাম করতে চাই।"
"এইটা কোন কাম হইল! শুনেন কানে কানে......"

তারপর কিছুদিন যাবৎ চেরাগকে দেখা গেল সকালে বিকালে চেয়ারপার্সনের পা টিপতে। এবং অন্যান্য সার্টিফায়েড বেগারদের সকল সেমিনার মিছিল সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে এবং সকলের সকল মতামতে সহমত হইতে। চাপাবাজি , চামচামি এবং বিশেষ করে অভিনয়ে পারদর্শী হওয়ার কারণে বেশ অল্প কিছুদিনের মধ্যে তাকে গোল্ডেন ফার্স্টক্লাস বেগার সার্টিফিকেট প্রদান করা হলো.........তারপর শুধু সামনে এগিয়ে চলা।

শোনা যাচ্ছে ইতিমধ্যেই হাভার্ড ইউনিভার্সিটি চেরাগকে "ডি-লিট" ডিগ্রী প্রদানের জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছে এবং "ওয়ার্ল্ড এলিট বেগার অ্যাসোসিয়েশন" তাকে লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদান করতে ইচ্ছুক।


(বি:দ্র:- এই গল্পের মাঝে কেউ কোন যুক্তি খোঁজার চেষ্টা করলে বা যুক্তি উপস্থাপন করলে সেটা তার একান্ত নিজস্ব কৌতুহল বলে গণ্য করা হবে।) :)




সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ২:৩৯
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×