somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাকশালীরা ওসমানীকে অপমাণিত করেছিল

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকের যুগে, সামাজিক, পারিবারিক ও রাজনৈতিক মূল্যবোধের নিদারুণ অবক্ষয়ের দিনে দেশপ্রেমিক বীর জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী ছিলেন সত্যাদর্শে এক বিরাট মহীরূহ, একটি মহান আদর্শ। দেশপ্রেমে, স্বার্থত্যাগে, নিপীড়িত মানুষের অধিকার অর্জনের কঠোর সংগ্রাম হিমালয় সদৃশ এক জ্বলন্ত উদাহরণ।
জেনারেল ওসমানী দেশপ্রেমিক, তিনি সাহসী, তিনি নির্লোভ। নিজের বসতবাড়ী পর্যন্ত দান করেছেন দেশের সেবায়। তিনি কিন্তু ধর্মান্ধ নন। তাঁর আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা বিতর্কের ঊর্ধ্বে। মানুষের প্রতি তাঁর ভালবাসা সীমাহীন। নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলা নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের মতই তাঁর কাজে সহজ।
বাংলাদেশে ওসমানীই একমাত্র ব্যক্তি যিনি সেনাবাহিনী, বাকশাল এবং স্বাধীনতা বিরোধী মহলকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার ক্ষমতা রাখেন। ওসমানীর সততা যার অভাব বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিশেষভাবে অনুভূত। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশী যেটার প্রয়োজন, তা হলো সৎ নেতৃত্ব। ওসমানীর সাহস, সততা, স্বদেশ প্রেম, ন্যায়পরায়ণতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ পরীক্ষিত ও প্রশ্নাতীত। এ সত্য বাংলাদেশের সব দলই জানে এবং মনে মনে মানে।
মুক্তিযুদ্ধকালে তাঁকে সবাই বিশ্বাস করেছিল, তাঁর উপর নির্ভর করেছিল, কারণ তিনি যা বলেন তা বিশ্বাস করেন, যা বিশ্বাস করেন না তা বলেন না। মুখে এক মনে আরেক, এই চানক্যনীতি অন্য রাজনীতিবিদ সম্পর্কে প্রযোজ্য হতে পারে ওসমানী সম্পর্কে নয়।
ক্ষমতার অধিকারী উচ্চ ব্যক্তিগণ, যথা রাষ্ট্রপ্রধান, মন্ত্রী মেম্বার থেকে শুরু করে সুরমা, মেঘনা, যমুনা, পদ্মার সবুজ তটবাসী দরিদ্রতম মানুষটিও তাঁর কাছে ছিল সমান বরণীয় সমভাবে আদরণীয় াছল।
তিনি ছিলেন স্পষ্ট বক্তা। নিজের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা প্রসূত মতটি নির্ভয়ে উচ্চারণ করতেন, কারো ব্যক্তিগত খুশি অখুশির খাতের মত পরিবর্তন করতে তাঁকে দেখা যায়নি। মন্ত্রী সভায় তিনি বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাব বা অভিমতের প্রয়োজনবোধে সমালোচনা করতে কুণ্ঠিত হতেন না।
একটি জাতির শুধু টিকে থাকার নয়, অগ্রগতি সমৃদ্ধির জন্যও ঐক্য অপরিহার্য। প্রায় ১ লাখ ৪৮ হাজার বর্গকিলোটিার আয়তন নিয়ে ১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছিল বিশ্বের মানুষ তখন এ দেশটিকে স্বাগত জানিয়েছিল। তাদের ধারণা ছিল, এক ভাষাভাষী, একই নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর উত্তরাধিকার, ৮৫ শতাংশ জনগণের একটি ধর্মীয় আদর্শ এবং ঐতিহ্য, অভিন্ন অভ্যাস ও আচরণ সম্পন্ন এই দেশটি ঐক্যের দৃষ্টিকোণ থেকে সারা দুনিয়ায় একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে এবং তার এই ঐক্য উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকেও ত্বরান্বিত করবে। কিন্তু কার্যতঃ তা হয়নি, জন্মলগ্ন থেকেই আমরা ঐক্যের পরিবর্তে বিভেদের শিকার, এর ফলে রাজনৈতিক হানাহানি, সন্ত্রাস, খুন, রাহাজানি আমাদের জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছিল।
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চের বিতর্কিত নির্বাচনের পর থেকেই দেশে অধিকার হরনের প্রক্রিয়া একটু একটু করে শুরু হতে থাকে। এই প্রক্রিয়া যে একেবারে ‘খামোখা’-ই শুরু হয়েছিল সে কথা সত্যি নয়। দেশের সংবাদপত্র এবং রাজনৈতিক দলগুলোর জনসভায় শাসকদের নিকট ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের দুর্নীতি ও দুঃশাসন নিয়ে এমনভাবে আলোচনা শুরু করেছিল যে, কারো ঘরের মেয়ে খুঁজে পাওয়া না গেলে বিশেষ বিশেষ যুবকদের নাম উঠে আসতো। বেইলী রোড, গুলিস্তানের কোন অফিসের সামনে দিয়ে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াত পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফুল ও ফসলের যে রাজনৈতিক লড়াই শুরু হয়েছিল, দেখা গেল, তা বর্গী দস্যুরা লুটে নিয়ে গেল। বিদেশে বাংলাদেশকে চিহ্নিত করা হলো একটি দুর্নীতিপরায়ণ তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের জনগণের ত্রাণ-সাহায্য বিক্রির জন্য পাওয়া গেল ভারতের পশ্চিম বাংলার ফুটপাত।
১৯৭২ সালের ১২ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী গণপরিষদ সদস্য বলেই তথ্যমন্ত্রী হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন। ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ স্বাধীন দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ১৬ মার্চ নতুন মন্ত্রীসভা গঠিত হলে মিজান চৌধুরীকে তথ্য ও বেতার দফতর থেকে সরিয়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী করা হয়। কিšু——ু মাত্র দুই মাসের মাথায় তাকে পদত্যাগ করানো হয়।
সরকারের ভ্রান্ত অর্থনীতির ফলে দেশ দিনে দিনে রসাতলে যাচ্ছে’Ñঅর্থমন্ত্রীর পদে থেকে এমন মন্তব্য করতে গিয়ে চরম খেসারত দেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ। ১৯৭৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু গণভবনে ডেকে পাঠিয়ে মন্ত্রিসভা থেকে সরে দাঁড়াতে বললে অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ পদত্যাগ করেন। বিভিন্ন মহল থেকে বিশেষ করে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ মন্ত্রীদের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করলে ১৯৭৪ সালের ৬ জুলাই মন্ত্রিসভার ছয়জন সদস্যকে সরাসরি বরখাস্ত এবং একজনকে পদত্যাগ করতে বলা হয়।
নৌ ও জাহাজ চলাচল মন্ত্রী জেনারেল (অবঃ) মুহম্মদ আতাউল গনি ওসমানী প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দেন। মন্ত্রিসভা হতে বরখাস্ত হওয়া ছয় সদস্য হলেন তথ্যমন্ত্রী শেখ আব্দুল আজিজ, বিজ্ঞানমন্ত্রী ড. মফিজ চৌধুরী, ভূমিমন্ত্রী মোল্লা জালালউদ্দিন আহমদ, পাটমন্ত্রী শামসুল হক, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরজাহান মুরশেদ, ক্ষুদ্রশিল্প প্রতিমন্ত্রী শাহজাদা আব্দুল মালেক খান ও খাদ্য উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্দেশ্যে লিখিত পদত্যাপত্রে তিনি উল্লেখ করেন-
জেনারেল মুহম্মদ আতাউল গনি ওসমানী, পিএসসি (অবসরপ্রাপ্ত)
জাহাজ চলাচল, আভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন এবং বেসামরিক বিমান দপ্তরের মন্ত্রী
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, ঢাকা।
ডি ও নং-০০১৪জি
১ মে ’৭৪
আমার প্রিয় বঙ্গবন্ধু,
অনুগ্রহ করে স্মরণ করবেন যে, উপমহাদেশের রাজনীতি চর্চায় ‘কপটতার’ প্রকোপ ডিজরাইলীর ভাষায় ‘ডিসসিমুলেশন’ আরো স্পষ্ট বলতে গেলে প্রতিশ্র“তি ও বাস্তবের মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান থাকার কারণেই ১৯৭০ সনে আমি রাজনীতিতে যোগদানের ব্যাপারে ঘোরতর অনিচ্ছুক ছিলাম। জাতীয় চাহিদা এবং আশা-আকাঙ্খা অনুযায়ী আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বার্থে আমার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজনীয়তার উপরে আপনি জোর দিয়েছিলেন। বিশেষ করে সামরিক ক্ষেত্রে সৈনিকদের অধিনায়কত্ব এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিকল্পনায় আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার ফলে পার্টি একজন সামরিক উপদেষ্টা লাভ করবে বলে জাতির সেবায় আমাকে আপনার সঙ্গে যোগদানের জন্য চাপ দিয়েছিলেন। বাঙ্গালীদের স্বার্থ ও আশা-আকাঙ্খার প্রশ্নে আপনি কখনও আপস করেননি। তাই আপনি এবং আওয়ামী লীগ সমাজতন্ত্র ও সংসদীয় গণতন্ত্রের মাধ্যমে ব্যক্ত জনগণের সার্বভৌমত্ব, দেশ রক্ষা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের জন্য সংগ্রাম করবেন এমন নিশ্চয়তা প্রদানের পরই আমি রাজনীতিতে যোগদান করি। এটাও নিশ্চয়ই আপনার স্মরণ আছে যে, আমি বলেছিলাম ইংরেজী ‘পলিটিকস’ শব্দ বলতে আমি রাজনীতির পরিবর্তে গণনীতি বুঝে থাকি।
(২) তখন থেকে আমার অতীত জীবনের মতোই নিঃস্বার্থভাবে পূর্বোল্লিখিত আদর্শ বাস্তবায়নে আত্মনিয়োগ করি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গণপ্রতিনিধি, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ও পরবর্তীকালে সংসদ সদস্য এবং জাহাজ ও বেসামরিক বিমান পরিবহনকে কার্যকরী, সাংগঠনিক ও অর্থনৈতিক ভিত্তিতে গড়ে তোলা এবং দেশের প্রধান প্রধান নৌ-পথগুলোর নাব্যতা রক্ষা ও নৌ-পথ পুনরুদ্ধার করার মহান দায়িত্বে নিযুক্ত মন্ত্রী হিসেবে আমি দেশ ও জাতির সেবা করেছি। এসব ক্ষেত্রে উৎসর্গীকৃত অফিসার কর্মচারীদের সহায়তায় আমি দেড় বছরের মধ্যে আপ্রাণ চেষ্টা করেছি এবং অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়েছি। তবে আমার বলার উদ্দেশ্য এটা নয়, আমার উদ্দেশ্যে হলো-এ সময় আমি লক্ষ্য করেছি যে, কতিপয় মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে না হলে এ ক্ষেত্রে আরো অধিক সাফল্য অর্জন সম্ভব ছিল।
(৩) মন্ত্রিসভা ও সরকারের সদস্যরূপে আপনার প্রতি-আপনি মন্ত্রিসভার নেতা ও সরকার প্রধান-আন্তরিকতা ও আনুগত্য আমার একান্ত কর্তব্য। তদনুযায়ী আমি মৌখিকভাবে আপনাকে জানিয়েছিলাম যে, নিম্নলিখিত দুঃখজনক পরিস্থিতিতে যে আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি দলে যোগ দিয়েছিলাম তার কার্যকরী ও বলিষ্ঠ বাস্তবায়ন করতে অক্ষম বোধ করছি।
॥ক॥ অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নতির ধারা অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে একান্ত প্রয়োজনীয় ও জরুরী বিষয় যথা ঃ নীতি, নিয়োগ, অপসারণ ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্তের অনুমোদন স্থগিত রাখা এসব বিষয়ে অগ্রগতির জন্যে আমাদের সমগ্র প্রচেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে।
॥খ॥ আমাদের প্রতিশ্র“ত নীতির পরিপন্থী ব্যক্তিবিশেষ বা কায়েমী স্বার্থের প্রবক্তাদের দ্বারা সহজে বিভ্রান্ত হয়ে আমরা দলগতভাবে এবং সরকার হিসেবে দুর্নামের ভাগী হচ্ছি।
॥গ॥ আপাতঃ দৃষ্টিতে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের নির্দিষ্ট নীতির অভাবে বিশেষ করে অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা বিষয়ে আমরা আমাদের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়েছি। শহীদদের পরিবার ও প্রাক্তন সামরিক ব্যক্তিদের উপেক্ষা প্রদর্শন করা হয়েছে-যদিও এসব উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ ও নিবেদিত প্রাণ অফিসার এবং সামরিক ব্যক্তিদের ব্যতিরেকে বাংলাদেশের উদ্দীপ্ত সামরিক শৌর্যবীর্য ও ঐতিহ্য ফিল্ড মার্শাল আইয়ূব ও তার পাঞ্জাবী জেনারেলদের প্রবল বিরোধীতার মুখে পঁচিশ বছরে গড়ে উঠতো না। এমনকি আপনার আহবানে মুক্তিযুদ্ধের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রারম্ভকাল হতে তাদের দৃঢ় সংকল্প ও শৌর্য বীর্যময় যুদ্ধছাড়া মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করা সম্ভব হতো না। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় বাঙ্গালী প্রতিরক্ষা বাহিনী নির্জীব ও হতাশ হয়ে পড়েছে।
॥ঘ॥ জনগণের শ্রদ্ধা নেই এমন বিতর্কিত ব্যক্তিদের দলে স্থান দেয়া।
॥ঙ॥ দেশের জন্য সংসদীয় গণতন্ত্রের ব্যবস্থাপনারই একটি সুষ্ঠু সংবিধান যা ১৯৭৩ সালের মার্চ মাসের নির্বাচনে জনগণ কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে, তার বিধান ও তাৎপর্য বাস্তবায়িত হোক-এটা কাম্য হওয়া সত্ত্বেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে, নীতি ও সিদ্ধান্ত প্রণয়নে তার কোনো অংশ নেই।
(৪) এই দুঃখজনক পরিস্থিতিতে আমি আপনাকে অনুরোধ করছি যে, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য ও সেই সঙ্গে সংসদ সদস্য পদ থেকে আমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করুন এবং তা গ্রহণের জন্য প্রেসিডেন্টের প্রতি সুপারিশ জানান।
(৫) এবং এরই সঙ্গে আপনার ও মন্ত্রিসভার অন্যান্য বিশিষ্ট সদস্যদের কাছ থেকে যে সম্মান ও সৌজন্য আমি পেয়েছি সেজন্য আমাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে দিন। কারণ, আপনার অনুপস্থিতিতে তারাই আমাদের ইতিহাসের অগ্নিপরীক্ষায় মুহূর্তে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে রাজনৈতিক উপদেশ ও সমর্থন দিয়ে আমাকে সর্বাধিনায়কের দুর্বহ কর্তব্য পালনে সক্ষম করেছিলেন। আমি জাতীয় সংসদের মাননীয় সদস্যদের নিকটও কতজ্ঞ তাঁরা আমাকে বিশেষ বিবেচনা ও সম্মান প্রদর্শন করেছেন।
প্রতি স্বাক্ষর
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুহম্মদ ওসমানী
প্রধানমন্ত্রী
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, ঢাকা।
১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংবিধান চতুর্থ সংশোধনীর অধীনে ১৮ ফেব্র“য়ারি বাকশাল কাঠামো গঠিত হলে ওই দিনই মন্ত্রিসভার বৈঠকে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু তাঁর মন্ত্রিসভার সব সদস্যদের সম্পদের হিসাব দাখিলের নির্দেশ দেন। বরখাস্তকৃত ও পদত্যাগী কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীই বাকশাল মন্ত্রিসভায় ঠাই পাননি।
১৯৭৫ সালের ১৮ জানুয়ারী বসে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক। এই বৈঠকেই শেখ মুজিব সংসদ সদস্যদের কাছে তুলে ধরেন তার ভবিষ্যত রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং অর্থনৈতিক নতুন পরিকল্পনার কথা। এই বৈঠকে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘শতাব্দীর জীর্ণ ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থা পাল্টে দিয়ে প্রশাসন যন্ত্রের বিকেন্দ্রীকরণ ও গণতন্ত্রীকরণ এবং একটি মাত্র রাজনৈতিক প্ল্যাটফরমের পতাকাতলে সমগ্র জাতিকে সমবেত করে সুসংসত ও সংঘবদ্ধ জাতীয় প্রয়াস ছাড়া সংকট থেকে পরিত্রাণের কোন পথ নেই। খন্ডিত, বিক্ষিপ্ত এবং অসংলগ্ন পরস্পর বিরোধী কর্মতৎপরতা বন্ধের জন্য আজ যা প্রয়োজন তা হচ্ছে সকল দেশপ্রেমিক শক্তির নিবিড় একাত্মতা এবং ঐক্যবদ্ধ ও গঠনমূলক সর্বাধিক কর্ম-প্রয়াস। কেবলমাত্র একটি শক্তিশালী ও বৈপ্লবিক ব্যবস্থার অধীনেই তা সম্ভবপর।’
এরপর ২০ জানুয়ারী বসে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। এই অধিবেশনেও দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচী পেশ করা হয়। কিন্তু শেখ মুজিবের এই নতুন পদ্ধতির বিষয়টি অনেকেই সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি। অন্যদল বা ব্যক্তিতো দূরে থাক আওয়ামী লীগের ভেতর থেকেও একটি অংশ শেখ মুজিবের এই নতুন নীতির প্রতিবাদ করেন। এদের মধ্যে ছিলেন খন্দকার মোশতাক আহমদ, জেনারেল এম.এ.জি. ওসমানী, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, ওবায়দুর রহমান, নূরুল ইসলাম মঞ্জুর, নূরে আলম সিদ্দিকী, ব্যারিষ্টার মঈনুল ইসলাম প্রমুখ। জেনারেল ওসমানী ১৮ তারিখের বৈঠকেই এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমরা আইয়ূব খানকে দেখেছি, ইয়াহিয়া খানকে দেখেছি। আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে খান হিসেবে দেখতে চাই না।’
বিরোধীতা সত্ত্বেও ২১ জানুয়ারী আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে শেখ মুজিবকে সর্বময় ক্ষমতা প্রদান করা হয়। এরপরই শেখ মুজিব তার নতুন পদ্ধতি প্রয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
২৫ জানুয়ারী শেখ মুজিব সকল রাজনৈতিক দল, সরকার বিরোধী আন্দোলন ও কার্যক্রম প্রভৃতি নিষিদ্ধ করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েমের ইচ্ছা ২১ জানুয়ারী সংসদীয় দলের সভায় ব্যক্ত করলে জেনারেল ওসমানী তৎক্ষণাৎ এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সভাস্থল ত্যাগ করেন এবং পরের দিন শেখ মুজিবের প্রতি এক পত্রের মাধ্যমে জাতীয় সংসদের সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি পদত্যাগ পত্রে বলেন ঃ
জেনারেল এম.এ.জি ওসমানী, পিএসসি (অবসরপ্রাপ্ত)
১৯ ডি.ও.এইচএস
ঢাকা সেনানিবাস।
ডি ও নং-০০১৪
২২ জানুয়ারী ১৯৭৫
আমার প্রিয় বঙ্গবন্ধু
১৯৭৫ সনের ২১ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারী পার্টির সভার পর আপনার নিকট আমার মৌখিক বক্তব্যের সমর্থনে এই চিঠি লিখছি। আপনি অবগত আছেন যে, উক্ত সভায় নিন্মলিখিত কারণে সংবিধানের আমূল পরিবর্তনের জন্য গৃহীত সংশোধনীর পক্ষে আমি ভোট প্রদান করিনি।
॥ক॥ তা করলে আমি আমার বিশ্বাস ও বিবেকের বিরুদ্ধে কাজ করতাম।
॥খ॥ এই সংশোধনীর অর্থ হলো জনগণের কাছে প্রদত্ত আমাদের দীর্ঘদিনের প্রতিশ্র“তি এবং বস্তুুত জনগণ ১৯৭৩ সনের সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে যে শাসনতন্ত্রের বিষয়বস্তুু অনুমোদন করেছে, তার সাথে প্রতারণা করা
(২) উপরোক্ত কারণসমূহের জন্য আগামী ২৫ জানুয়ারী ১৯৭৫ সালে এই সংশোধনী প্রস্তাব জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হলে আমি তাতে সম্মতি প্রদানে অক্ষম। সংসদের দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে একটা অপ্রীতিকর দৃশ্যের অবতারণা এড়ানোর জন্যই আমি বিনয়ের সঙ্গে একযোগে সংসদ সদস্যপদ ও দলীয় সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
(৩) পরিশেষে আমি এটাই কামনা করছি যে, বঙ্গবন্ধু আপনি এবং আওয়ামী লীগ জাতির সেবায় সাফল্য লাভ করুন। আল্লাহ আপনাকে দেশ ও জনগণের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিধানে পথ প্রদর্শন ও সাহায্য করুন। যে দেশ ও জনগণের স্বার্থকেই আমি বারবার সবার ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছি এবং আনুগত্য সহকারে নিঃস্বার্থভাবে সেবা করেছি।
প্রতি স্বাক্ষর
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুহম্মদ ওসমানী
প্রধানমন্ত্রী
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, ঢাকা।
দৃষ্টান্ত-বিরল এই সৎ মানুষটির অটল লক্ষ ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ, যে কারণে তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, যে কারণে তিিন জীবনের শেষ দিন অবধি গণতন্ত্র ও বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের জন্য নিজের সর্বস্ব উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন।
ধ্র“বতারার মত স্থিল, এক সৎ সত্যনিষ্ঠ মহৎ ব্যক্তিত্বের তিরোধানে জাতীয় জীবনে যে শূন্যতার সৃষ্টি হলো, বহু বর্ষ ধরেও তা পূরণ সম্ভব হবে না। মহাপুরুষগণ, মহান মানুষের যুগ যুগ কদাচিৎ আবির্ভূত হন
জিবলু রহমান
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:২৩
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

সততা হলে প্রতারণার ফাঁদ হতে পারে

লিখেছেন মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম নাদিম, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৯

বিষয়টি আমার ভালো লেগেছে। ক্রেতাদের মনে যে প্রশ্নগুলো থাকা উচিত:

(১) ওজন মাপার যন্ত্র কী ঠিক আছে?
(২) মিষ্টির মান কেমন?
(৩) মিষ্টি পূর্বের দামের সাথে এখনের দামের পার্থক্য কত?
(৪) এই দোকানে এতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×