somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ সেই ষড়যন্ত্রের ওয়ান-ইলেভেন

১১ ই জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১০:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ওয়ান-ইলেভেনের ষড়যন্ত্রের কালো দিন আজ। তিন বছর আগে নবম সংসদ নির্বাচনের মাত্র ১১ দিন আগে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি আজকের দিনে দেশের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে, দেশের অর্থনীতির বিরুদ্ধে এক গভীর ষড়যন্ত্রের জাল বোনা হয়েছিল। তত্কালীন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তার অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গভবনে গিয়ে বন্দুকের নলের মুখে রাষ্ট্রপতি প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে জিম্মি করে সরকারপ্রধান তথা প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে তার পদত্যাগপত্র আদায় করেন এবং দেশে জুররি অবস্থা জারির ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে রাষ্ট্রপতিকে চাপ প্রয়োগের পর এক পর্যায়ে জেনারেল মইন তত্কালীন নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে দিয়ে সামরিক যান ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বঙ্গভবন ঘেরাও করে ফেলেন। এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপতি জেনারেল মইনের কথামত কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেন। ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে সেনাসমর্থিত একটি পুতুল সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওয়ান-ইলেভেনের পর সেনাসমর্থিত সরকার দুর্নীতি উচ্ছেদের নামে দেশে বিরাজনীতিকরণ শুরু করে। রাজনীতিবিদদের ঢালাওভাবে দুর্নীতিবাজ আখ্যায়িত করে এক একে তাদের কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। নবম পদাতিক ডিভিশনের তত্কালীন জিওসি মেজর জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে গুরুতর অপরাধ দমন জাতীয় সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী নিয়োগ করে তার নির্দেশে সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে টাস্কফোর্স গঠন করে রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীসহ পেশাজীবীদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। ডিজিএফআইয়ের তত্কালীন দুই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফজলুল বারী ও ড. এটিএম আমিনের নেতৃত্বে ন্যক্কারজনকভাবে রাজনীতিবিদদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে দল ভাঙার চেষ্টা চালানো হয়। ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনকেও দল ভাঙার ষড়যন্ত্রে জড়ানো হয়। সংস্কারের নামে দুই নেত্রীকে রাজনীতির বাইরে পাঠাতে ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ কার্যকরের চেষ্টা চলে। ওয়ান-ইলেভেন সরকারকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাদের আন্দোলনের ফসল আখ্যায়িত করে তাদের সব কাজের বৈধতা দেয়ার ঘোষণা শুরুতেই দিয়েছিলেন। তারই ধারবাহিকতায় এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে ওয়ান-ইলেভেনের সরকার নিজেদের জন্য সেফ প্যাসেজ বের করে নেয়। বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট কখনই ওয়ান-ইলেভেনের সরকারকে মেনে নিতে পারেনি। বঙ্গভবনের শপথ অনুষ্ঠানও তারা বর্জন করেছিল। বিএনপি আজ ১১ জানুয়ারি দিনটিকে কালোদিবস হিসেবে পালন করছে।
ওয়ান-ইলেভেনের ‘শক্তিধর’ জেনারেলরা এখন নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচন-পূর্ব সমঝোতায় সংবিধান লংঘন, জোর করে রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে রাখা কিংবা দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বা অর্থনীতি ধ্বংস করার জন্য তারা এখনও বিচারের মুখোমুখি হওয়ার হাত থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। তবে কেউ কেউ বিদেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অনেকের ঠিকানা হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ্প্রভাবশালী উপদেষ্টাদের ক’জন এখন নিজেরাই দুর্নীতি-অনিয়মের মামলা মোকাবিলা করছেন। ষড়যন্ত্রের অংশীদার বিদেশি কূটনীতিকদের অধিকাংশই নতুন অ্যাসাইমেন্টে দেশ ছেড়েছেন।
দিন যত যাচ্ছে ততই স্পষ্ট হচ্ছে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের ফসল ছিল ওয়ান-ইলেভেন। তত্কালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী ঘটনার দু’দিন আগে সেনাপ্রধান জেনারেল মইনের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের বিবৃতিতে পরিবর্তন এনে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রেনাটা লক ডেসালিয়ান ‘সেনাবাহিনী ২২ জানুয়ারির নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে তাদের অংশগ্রহণ অনিশ্চয়তায় পড়বে’ বলে হুমকি দেন। শুধু তাই নয়, জরুরি অবস্থা জারির আগেই ওই দিন বিকালে পশ্চিমা কূটনীতিকদের সংগঠন ‘ট্যুইসডে গ্রুপ’-এর বৈঠক বসে তত্কালীন কানাডীয় হাইকমিশনার বারবারা রিচার্ডসনের বাসায়। আওয়ামী লীগের তত্কালীন সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল ও বিএনপির তত্কালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে দুটি প্রতিনিধি দলকে কানাডীয় হাইকমিশনারের বাসায় বিকালেই ডেকে নিয়ে বলে দেয়া হয়, দেশে জরুরি অবস্থা জারি হচ্ছে, এতে কূটনীতিকদের সমর্থন রয়েছে। এছাড়া তত্কালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রেসিয়া এ বিউটেনিস, ভারতীয় হাইকমিশনার বীণা সিক্রিও ওয়ান-ইলেভেন সৃষ্টিতে নেপথ্যে থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়া কিছু ব্যবসায়ী নেতারও এর পেছনে ইন্ধন ছিল। এফবিসিসিআই’র সভাপতি আনিসুল হক, তত্কালীন সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলীসহ অনেক নেতা সমর্থন জানিয়েছিলেন ওয়ান-ইলেভেন সরকারকে। বিশেষ করে তেল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী প্রকাশ্য টিভি অনুষ্ঠানে ওয়ান-ইলেভেন সরকার প্রতিষ্ঠার আগেই দেশে জরুরি অবস্থা জারির পক্ষে জোরালো বক্তব্য রেখেছিলেন। গতকালও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী ‘রিহ্যাব’-এর সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে কিছু অতিউত্সাহী ব্যবসায়ী ওয়ান-ইলেভেনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বলে যথার্থই উল্লেখ করেছেন।
তথাকথিত ওয়ান-ইলেভেনকে প্রখ্যাত আইনজীবী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেছেন, তথাকথিত ওয়ান-ইলেভেনের পট পরিবর্তন ছিল স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা ও সুশাসনের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত এক গভীর ষড়যন্ত্র। ওয়ান-ইলেভেনের মাধ্যমে তত্কালীন ডিজিএফআইসহ গোয়েন্দা সংস্থার লোকরা দেশে এক নারকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও ওই সময় রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ডিজিএফআইকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছেন। তাদের হাত থেকে যদি দেশ উদ্ধার হয়ে থাকে তবে বর্তমান সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে তাদের বিচার করা। তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের নায়ক, কুশীলব ও তাদের সহযোগীদের বিচার একদিন না একদিন হবেই।
ওয়ান-ইলেভেনের সরকারকে বঙ্গভবনে গিয়ে অভিনন্দন এবং তাদের সব কর্মকাণ্ডের বৈধতা দেয়ার ‘ব্ল্যাঙ্ক চেক’ শুরুতেই দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দেশের মানুষের মনোভাব, দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এক পর্যায়ে আন্তর্জাতিক সমর্থনও পাল্টে যায়। এ অবস্থায় ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবরা যখন দেখেন তাদের পক্ষে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করা দুরূহ হয়ে উঠছে, তখন তারা সেফ প্যাসেজ খুঁজতে থাকেন। দেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক ভিত্তিক ধারণা এবং আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের লন্ডনে গিয়ে দেয়া বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে, জেনারেল মইন গংকে সেফ প্যাসেজ দিতে আওয়ামী লীগ নির্বাচনের আগে তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে। পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তি রচিত হয়। এর ফলেই নির্বাচনপূর্ব সমঝোতা হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ব্যাপক বিজয় আসে। ফলে ওয়ান-ইলেভেনে সংবিধান লংঘনকারী ড. ইয়াজউদ্দিন, ড. ফখরুদ্দীন ও জেনারেল মইনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করছে না বর্তমান সরকার।
ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরসহ সরকারি দলের বেশ কিছু নেতা সংবিধান লংঘনকারী, দেশে বিরাজনীতিকরণের নেতৃত্বদানকারী ওয়ান-ইলেভেনের ‘উদ্দিনদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে সোচ্চার হলেও দলের হাইকমান্ডের সায় না থাকায় তারার এখন চুপসে গেছেন। যদিও দিন যত যাচ্ছে ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবদের সংবিধানবিরোধী, রাজনীতিবিরোধী কর্মকাণ্ড, দুর্নীতি, অনিয়মও বেরিয়ে আসছে। সেনাসমর্থিত সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদ যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট নিয়ে সেদেশের নাগরিক হয়েও সংবিধান লংঘন করে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। জেনারেল মইনের বিরুদ্ধে একশ’ কোটি টাকার মানহানি মামলা খারিজের আবেদন নামঞ্জুর করে গতকালই জেনারেল মইনকে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের জবাব দেয়ার জন্য ৩১ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছে।
সংবিধান বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় তত্কালীন সরকারপ্রধান ও প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনকারী রাষ্ট্রপতি প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে সরকারপ্রধানের পদ থেকে জোর করে পদত্যাগ করানোর পর উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য বিচারপতি ফজলুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টা করার কথা রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করা হলেও সংবিধান অনুযায়ী তাকে কোনো শপথ করানো হয়নি। ১২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ড. ফখরুদ্দীন আহমদ প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় ২৪ ঘণ্টা দেশে কোনো সরকার ছিল না। তত্কালীন নির্বাচন কমিশনের ওপর সেনাসমর্থিত সরকার চাপ প্রয়োগ করে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় ব্যত্যয় ঘটাতে বাধ্য করেছিল। এছাড়া সংবিধান লঙ্ঘন করে বিভিন্ন আইন জারি করে অবৈধভাবে প্রায় দু’বছর সেনাসমর্থিক সরকার ক্ষমতায় ছিল।
জোর করে জরুরি অবস্থা জারি ও ড. ফখরুদ্দীনের পুতুল সরকার গঠনের তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে সেনাপ্রধান জেনারেল মইন তার সহযোগীদের মাধ্যমে রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতির সম্মেলনের নামে তার রাজনৈতিক দর্শন জাতির সামনে তুলে ধরেছিলেন। ‘নিউ ব্র্যান্ড অব ডেমোক্র্যাসির’ কথা বলে নিজস্বধারার রাজনীতি সূচনার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। তার রাজনৈতিক অভিলাষ চরিতার্থ করতে দেশের সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের প্রধান বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক নির্বাসনে পাঠানোর জন্য সংস্কারের নামে ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ কার্যকর করতে চেয়েছিলেন। ডিজিএফআই’র তত্ত্বাবধানে গঠন করা হয়েছিল নতুন নতুন ‘কিংস পার্টি’। অনেককে তারা তাদের দলে ভিড়িয়েও ছিলেন। প্রধান দু’দলেরই কেন্দ্রীয় বহু নেতাকে জেনারেল মইন তার ও তার কিংস পার্টির সঙ্গে ভিড়াতে পারলেও দু’দলেই তৃণমূল নেতাকর্মীরা জেনারেল মইনের অভিলাষের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। দেশের বাইরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ মইনের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তৃণমূল নেতারা নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করেও তাদের নেত্রীর প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখেন। একপর্যায়ে চিকিত্সার জন্য বিদেশে অবস্থানরত শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে বাধা দেয়া হয় এবং খালেদা জিয়াকে জোর করে সৌদি আরবে পাঠিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলে। কিন্তু খালেদা জিয়ার অনড় মনোভাব তাদের সে ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেয়। এরপরই চাপ প্রয়োগের জন্য খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির তত্কালীন সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব তারেক রহমানকে জেলে নেয়া হয়। একপর্যায়ে সেনা সমর্থিত সরকার আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিক্ষেপ করে। খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে জেলে নেয়া হয়। নির্যাতন চালিয়ে দু’ছেলেকে প্রায় পঙ্গু করে দেয়া হলেও খালেদা জিয়া সেনাসমর্থিত সরকারের সঙ্গে কোনো আপস করেননি। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় একে একে তিনি সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন পান। সরকারও দেশি-বিদেশি চাপের কাছে মাথানত করে তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। অবশ্য সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে আগেই চিকিত্সার কথা বলে শেখ হাসিনা সরকারের নির্বাহী আদেশে কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বিদেশে পাড়ি জমান। জরুরি অবস্থার মধ্যে নির্বাচনে রাজি হলেও খালেদা জিয়ার অনড় মনোভাবের কারণে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের আগে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করা হয়।
জেনারেল মইন যখন ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে পরিচালিত তার বিভিন্ন পদক্ষেপে একের পর এক হোঁচট খেতে থাকেন, তখন তিনি সেফ প্যাসেজ খুঁজতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করেন। পরবর্তী পর্যায়ে আওয়ামী লীগের তত্কালীন সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল লল্ডনে গিয়ে তাদের এ আঁতাতের কথা ফাঁসও করে দেন। এ নিয়ে দলে ব্যাপক তোলপাড় হয়। সংসদীয় কমিটির সভাপতির পদ হারান আবদুল জলিল। তার বিরুদ্ধে নিজের দলের সরকারই ট্যাক্স ফাঁকির মামলা দায়ের করে। এই মামলায় তিনি এখনও লড়ছেন।
বিএনপির এমপিদের দ্বারা সংসদ থেকে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ওয়ান ইলেভেনে চাপের মুখে দেশে জরুরি অবস্থা জারি ও প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করলেও পরবর্তীতে জেনারেল মইন ও ফখরুদ্দীনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আরও দুই বছর রাষ্ট্রপতি পদে আসীন ছিলেন। ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ডের আনুষ্ঠানিকতা তার হাত দিয়েই সারা হয়। রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরে যাওয়ার পর বেসরকারি টিভি চ্যানেল বাংলাভিশনের এক অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো হাজির হয়ে রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ওয়ান-ইলেভেন নিয়ে কিছু অপ্রিয় কথা তুলে ধরলেও তার স্ত্রী পরে বিবৃতি দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে মন্তব্য করেন। ওয়ান-ইলেভেন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদ দায়িত্ব থেকে বিদায় নেয়ার পর বেশিরভাগ সময়ই যুক্তরাষ্ট্রে কাটাচ্ছেন। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়ে দেশে ফিরলেও বেশ চুপচাপ সময় পার করছেন। বিভিন্ন মহল থেকে সংবিধান লঙ্ঘন ও দু’বছরে দেশের অর্থনীতিকে ২০ বছর পিছিয়ে দেয়া ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগ এনে তার বিচারের দাবি উঠলেও সরকারের সর্বোচ্চ মহলের অদৃশ্য এক আশীর্বাদে তিনি এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরেই আছেন। তার বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা সাবেক বিদুত্ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর একটি মানহানি মামলা চলছে। তার স্ত্রীর বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে মৌলভীবাজার জেলায় জোর করে চাঁদা আদায়ের একটি মামলা হয়েছে। তার অপর সহযোগী লে. জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী অস্ট্রেলিয়ায় হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ওয়ান-ইলেভেনের প্রতাপশালী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বারী জরুরি সরকার থাকাবস্থায়ই আমেরিকায় মিলিটারি অ্যাটাশের চাকরি নিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ব্রিগেডিয়ার বারীকে দেশে তলব করা হলে তিনি পালিয়ে যান। সরকার থেকে জানানো হয়েছে, সরকারের খাতায় তিনি এখন পলাতক। ডিজিএফআই’র অপর প্রভাবশালী ব্রিগেডিয়ার জেনরেল ড. এটিএম আমিনকে সেনাবাহিনীর চাকুরি থেকে অবসরে পাঠানো হয়েছে। কিছুদিন আগে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের মামলায় সিআইডি ড. আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তিনি দেশের বাইরে চলে যান। ওয়ান-ইলেভেনের সময় সেনাবাহিনীর পিএসও’র দায়িত্ব পালনকারী লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর চাকরি আড়াই মাস আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে। ওয়ান ইলেভেনের আরেক ক্ষমতাধর জেনারেল সিনা ইবনে জামালীর চাকরিও এখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত।

জাহেদ চৌধুরী

Click This Link
১১টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট: বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন

লিখেছেন করুণাধারা, ২১ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন! view this link

সামহোয়্যারইনব্লগ থেকে কয়েকজন ব্লগার আলাদা হয়ে শুরু করেছিলেন সচলায়তন বা সংক্ষেপে সচল ব্লগ। এটি বন্ধ হবার মূল কারণ উল্লেখ করা হয়েছে দুটি:

১)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×