somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙ্গালিদের রসনাভোজঃ নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি

১৫ ই জুন, ২০১২ বিকাল ৩:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘‘জাম, রসগোল্লা পেয়ে শ্বশুর
করলেন চটে নালিশ
আশা ছিল আনবে জামাই
গয়ানাথের বালিশ”।


এই প্রজন্মের কোন শিশু যদি এই ছড়া শুনে তাহলে ভাববে শ্বশুরমশাই কত বোকা। বালিশ আনে নাই দেখে শ্বশুর চটে গেছে। এরপর যদি বলি বালিশ খাওয়ার কথা তখন অনেকে চক্ষু বড় করে কৌতূহলী হয়ে তাকাবেন। বালিশ আবার খায় নাকি? আপনার যদি নেত্রকোনায় বিয়ে হয় এবং শ্বশুর বাড়ি যদি বালিশ না নিয়ে যান তাহলে শ্বশুর মশাই কিন্তু চটে যেতে পারে। আচ্ছা এবার ঝেড়ে কাশি।


যারা হুমায়ূন আহমেদের ভক্ত তাঁরা নিশ্চয়ই ‘বালিশ’ এর অন্য ব্যবহার জানেন। এই বালিশ তুলার কোন বালিশ নয়। এই বালিশ দুধ, ছানা, ময়দা, চিনির সিরা এবং উপরে দুধের ক্ষীরের প্রলেপ দিয়ে তৈরি বালিশ আকৃতির একটি মিষ্টি। এই বালিশ খাওয়া হয়। এক একটি বালিশ মিষ্টি বিশাল সাইজের হয়। একটি খেতেই আপনার ঢেঁকুর উঠে যাবে। তাই এই মিষ্টি খাওয়া নিয়ে ভোজনরসিকদের মধ্যে বাজি হয় কে সম্পূর্ণ মিষ্টি খেতে পারবে? তখন জটলা বেঁধে যায় এই বালিশ শেষ করার খেলা দেখতে। একসময় এমন লোকও ছিল যারা একবসাতে দুইকেজি ওজনের বালিশ মিষ্টি সাবাড় করতে পারতেন। এখন অবশ্য একবসাতে দুই কেজি সবাড় করা সেই ধরনের ভোজনরসিকদের চোখে পড়ে না। সাধারণত একটা মিষ্টি কিনে সবাই ভাগ করে খায়। নেত্রকোনা সহ সারা দেশের বড় মিষ্টির দোকানে এই বালিশ মিষ্টি পাবেন। নেত্রকোনায় বিয়েসহ প্রায় সকল অনুষ্ঠানে বালিশ মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। আপনার তদবির করা লাগবে? বালিশ মিষ্টি নিয়ে যান তদবির এর সময় কাজ হয়ে যাবে।


এবার এই মিষ্টির জনক যিনি তাঁর কথা বলি। বালিশ মিষ্টির জনক গোয়ানাথ ঘোষাল। হিন্দুদের মধ্যে ঘোষ পরিবার মিষ্টি তৈরিতে বিখ্যাত। গোয়ানাথের স্বপ্ন ছিল নতুন কোন ধরনের মিষ্টি আবিষ্কার করে অমর হয়ে থাকা। একদিন তিনি বিশাল সাইজের একটি মিষ্টি তৈরি করলেন এবং ক্রেতাদের খেতে দিলেন এবং ক্রেতারা খুব প্রশংসা করলো। মিষ্টিটি দেখতে বালিশের মত দেখতে বিধায় ক্রেতাদের অনুরোধে এর নাম বালিশ মিষ্টি রাখেন। এগুলো সব ৪৭ এর দেশভাগের আগের ঘটনা। ৪৭ এর দেশভাগের সময় ঘোষ পরিবারের অনেকেই ভারতে চলে যায়। তিনি শুধু পড়েছিলেন এই মিষ্টি নিয়ে। এই মিষ্টির গোপন রহস্য তিনি কাউকে শিখিয়ে যাননি। কিন্তু পরিবারের টানে ১৯৬৯ সালে যখন ভারতে চলে যান তখন তাঁর দোকানের কর্মচারী নিখিল মোদককে বালিশ মিষ্টির গোপন রহস্য শিখিয়ে যান। এরপর থেকে নিখিল মোদক বালিশ মিষ্টি তৈরি করত। নিখিল মোদক মারা গেলে তাঁর তিন ছেলে এই দোকানের ভার নেন। নেত্রকোনার তিন জায়গায় তাদের শাখা আছে। এই তিন জায়গা থেকে সারা দেশে বালিশ মিষ্টি সরবরাহ করা হয়।


নেত্রকোনায় গেলে বালিশ মিষ্টি খাওয়ার কথা ভুলবেন না। এগুলো পিস হিসেবে বিক্রি হয়। ৫, ১০, ২০ টাকা দামের বিভিন্ন সাইজের বালিশ মিষ্টি পাওয়া যায়। তবে কেউ অর্ডার দিলে ৫০ ও ১০০ টাকা দামের বালিশ মিষ্টি বানিয়ে দেয়া হয়। সেগুলোর সাইজ হয় ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি এবং ওজনে ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়।


নেত্রকোনায় জন্ম নেয়া জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ এই মিষ্টির নাম দিয়েছিলেন ‘বালক পছন্দ’। ছোট ছেলে মেয়েদের কান্না থামাতে বালিশ মিষ্টি দেয়া হয়। তাই হয়ত এই নাম।


শেষ করার সময় একটু দুঃখের কথা বলি। বাঙ্গালিদের উদ্ভাবিত ‘মিষ্টি’ জগৎখ্যাত। এই মিষ্টির ঘ্রাণ ভীনদেশি যারাই পেয়েছে তারাই সবাই ব্যাকুল হয়েছে এটা আরো খাবার জন্য। কিন্তু আমরা এই মিষ্টিগুলোকে সেই ব্যাকুল লোকদের কাছে পৌঁছাতে পারছি না। পৌঁছাতে পারলে আর্থিকভাবে লাভবানসহ অনেক সুনাম কুড়ানো যেত।

লেখকঃ
মোহাম্মদ আলামিন
সভাপতি
লোকসংস্কৃতি রক্ষা করি (লোরক) সোসাইটি
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×