somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাবাশ কম্বোডিয়া!! বাংলাদেশেও শুরু হোক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
ছবির লোকটি একজন যুদ্ধাপরাধী, কম্বোডিয়ার খেমর-রুজ বাহিনীর কুখ্যাত কমরেড ডাচ।
আজ তার যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর খবর শেয়ার করতে চাই সবার সাথে। হ্যাঁ, আমাদের পরে সংঘটিত হলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে দিয়েছে কম্বোডিয়া। অভিনন্দন কম্বোডিয়া

১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯। টানা চার বছরের গণহত্যা আর নির্যাতনে ২০ লক্ষ মানুষ হত্যা করেছিলো খেমর-রুজ বাহিনী, ধর্ষন, নির্যাতনসহ অন্যান্য অত্যাচার কত করেছিলো তার ইয়ত্তা নেই! এই নারকীয় বাহিনীরই একজন এই কমরেড ডাচ, "সিআইএ'র এজেন্ট" অভিযোগের ধুয়া তুলে ধরে নিয়ে যেতো তার বাহিনী নমপেনের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাকে। তারপর জেলে চলতো অত্যাচার, নির্মম অত্যাচার। প্লায়ার্স দিয়ে হাতের নখ উপড়ে ফেলা আর কানের ভেতর বৈদ্যুতিক শকপ্রদানের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন হাজার হাজার নির্যাতিতের মধ্যে একজন, যিনি সেই কমরেড ডাচের কারাগার থেকে পালিয়ে আসতে পেরেছিলেন। তবে সবাইতো পালাতে পারেননি, তাই পনেরো থেকে বিশ হাজার মানুষ নির্দয়ভাবে খুন হয়েছিলো কমরেড ডাচের অধীনস্থ সেই জেলখানায়।

আজ ১৭ই ফেব্রুয়ারী বিচার শুরু হয়েছে কম্বোডিয়ার নম পেনে, কুখ্যাত কমরেড ডাচকে দিয়েই শুরু হলো। বহুদিন ধরে সেখানে ক্যাম্পেইন চলে আসছিলো এই ওয়ার ক্রাইমের বিচার নিয়ে, কম্বোডিয়ার ডকুমেন্টেশন সেন্টারের উদ্যোগে। আজ সেই পবিত্র কাজের শুরু, লম্বা পথ পাড়ি দেয়া বাকী, কিন্তু শুরু তো হলো!


২.
আমার কম্বোডিয়ান বন্ধু মালিন, একই ডর্মে থেকে একবছর পড়াশোনা করেছি। খেমর-রুজদের অত্যাচারে যখন মালিনের বাবা মারা যায়, তখন তার দুবছর বয়েস। চোয়ালশক্ত করে চোখে আগুন ধরে রেখে আমাকে একদিন বলেছিলো, "কতদিন শুধু কচুসেদ্ধ খেয়ে থেকেছি!" এরবেশী কিছু বলেনি, বাকীটা শুনেছি অন্য বন্ধুদের মুখে। কতবার মালিনকে বলেছিলাম ওদের যুদ্ধের গল্প শোনাতে, ফিরিয়ে দিয়েছে, শোনায়নি, বুঝেছিলাম, তার বুকের আগুন নেভেনি।

আজ থেকে নেভা শুরু হোক সেই আগুন, বুকের মাঝে সবকিছু দুমড়ে-মুচড়ে চেপে রাখা মালিনের মতো অসংখ্য মানুষেরা দুনিয়াজুড়ে শোনাক তাদের গল্প, সেই গল্পের জোয়ারে ভেসে যাক সবকিছু। এইদিনে খুব মনে পড়ছে মালিনের সেই অশ্রুবিহীন কান্না, আজ তোর মন জুড়ে অশ্রুবিসর্জন দে, মালিন।


৩.
কম্বোডিয়া তো শুরু করে দিলো! আমরাই বা বসে থাকছি কেন? ৭১ এর রাজাকার-আলাবদর-আলশামস-শান্তিকমিটিসহ যাবতীয় যুদ্ধাপরাধীদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর এটাই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। ন্যায়ের আগুন কম্বোডিয়ায় লেগেছে, সে আগুনে জ্বলেপুড়ে ধ্বংস হয়ে যাক সব অশুভ নরপশুর দল, আর সে আগুন ছড়িয়ে পড়ুক আমাদের এই বাংলায় -- এখনই। আর শুধু মুখে নয়, শুধু স্লোগানে নয়, এবার শুরু হয়ে যাক কাজে!

আর কম্বোডিয়ার এই শুরুর পর, এতদিন যারা বলতো "আজ এত বছর পর এসব বলার মানে হয়না", তারা এখন কি নতুন কান্না জুড়ে দেবে, সেটা দেখাও একটা আগ্রহের বিষয়।

তবে সরকারকে আরো সিরিয়াস হতে হবে এবিষয়ে। তাদের মনে রাখতে হবে এবারের ১ কোটি নতুন তরুন ভোটার কমমূল্যে ভাত খাবার জন্য শুধু তাদের ভোট দেয়নি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও তাদের প্রত্যাশার বিশাল অংশ জুড়ে আছে। সেই প্রত্যাশা নিয়ে সরকার যদি গড়িমসি করে, তবে সেটা শুধু জাতির জন্য লজ্জাজনক আরেকটা উপাখ্যানই হবে।

গতকাল যখন পাকিস্তানী প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত এসে এদেশে নির্লজ্জের মতো ফতোয়া জারি করে, "যুদ্ধাপরাধের বিচারের সময় এখন নয়", আমরা কিভাবে সহ্য করি! আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, যিনি নতজানু হতে হতে এতটাই নুয়ে পড়েছেন যে, "পাকিস্তানের বাফার স্টেট" গালি হজম করার পর পাকি দূতের কথায়ও তিনি যখন কিছু বলটে পারেননা, তখন আমার ভয় হয়, কম্বোডিয়ায় যে বসন্ত আসা শুরু করেছে, সে বসন্তে, সেই পলাশের আগুন কি এদেশে এবার আসবেনা! কোনভাবেই যেন এই সম্ভাবনার নাশ না হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:০১
২৬টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×