ছবির লোকটি একজন যুদ্ধাপরাধী, কম্বোডিয়ার খেমর-রুজ বাহিনীর কুখ্যাত কমরেড ডাচ।
আজ তার যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর খবর শেয়ার করতে চাই সবার সাথে। হ্যাঁ, আমাদের পরে সংঘটিত হলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে দিয়েছে কম্বোডিয়া। অভিনন্দন কম্বোডিয়া
১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯। টানা চার বছরের গণহত্যা আর নির্যাতনে ২০ লক্ষ মানুষ হত্যা করেছিলো খেমর-রুজ বাহিনী, ধর্ষন, নির্যাতনসহ অন্যান্য অত্যাচার কত করেছিলো তার ইয়ত্তা নেই! এই নারকীয় বাহিনীরই একজন এই কমরেড ডাচ, "সিআইএ'র এজেন্ট" অভিযোগের ধুয়া তুলে ধরে নিয়ে যেতো তার বাহিনী নমপেনের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাকে। তারপর জেলে চলতো অত্যাচার, নির্মম অত্যাচার। প্লায়ার্স দিয়ে হাতের নখ উপড়ে ফেলা আর কানের ভেতর বৈদ্যুতিক শকপ্রদানের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন হাজার হাজার নির্যাতিতের মধ্যে একজন, যিনি সেই কমরেড ডাচের কারাগার থেকে পালিয়ে আসতে পেরেছিলেন। তবে সবাইতো পালাতে পারেননি, তাই পনেরো থেকে বিশ হাজার মানুষ নির্দয়ভাবে খুন হয়েছিলো কমরেড ডাচের অধীনস্থ সেই জেলখানায়।
আজ ১৭ই ফেব্রুয়ারী বিচার শুরু হয়েছে কম্বোডিয়ার নম পেনে, কুখ্যাত কমরেড ডাচকে দিয়েই শুরু হলো। বহুদিন ধরে সেখানে ক্যাম্পেইন চলে আসছিলো এই ওয়ার ক্রাইমের বিচার নিয়ে, কম্বোডিয়ার ডকুমেন্টেশন সেন্টারের উদ্যোগে। আজ সেই পবিত্র কাজের শুরু, লম্বা পথ পাড়ি দেয়া বাকী, কিন্তু শুরু তো হলো!
২.
আমার কম্বোডিয়ান বন্ধু মালিন, একই ডর্মে থেকে একবছর পড়াশোনা করেছি। খেমর-রুজদের অত্যাচারে যখন মালিনের বাবা মারা যায়, তখন তার দুবছর বয়েস। চোয়ালশক্ত করে চোখে আগুন ধরে রেখে আমাকে একদিন বলেছিলো, "কতদিন শুধু কচুসেদ্ধ খেয়ে থেকেছি!" এরবেশী কিছু বলেনি, বাকীটা শুনেছি অন্য বন্ধুদের মুখে। কতবার মালিনকে বলেছিলাম ওদের যুদ্ধের গল্প শোনাতে, ফিরিয়ে দিয়েছে, শোনায়নি, বুঝেছিলাম, তার বুকের আগুন নেভেনি।
আজ থেকে নেভা শুরু হোক সেই আগুন, বুকের মাঝে সবকিছু দুমড়ে-মুচড়ে চেপে রাখা মালিনের মতো অসংখ্য মানুষেরা দুনিয়াজুড়ে শোনাক তাদের গল্প, সেই গল্পের জোয়ারে ভেসে যাক সবকিছু। এইদিনে খুব মনে পড়ছে মালিনের সেই অশ্রুবিহীন কান্না, আজ তোর মন জুড়ে অশ্রুবিসর্জন দে, মালিন।
৩.
কম্বোডিয়া তো শুরু করে দিলো! আমরাই বা বসে থাকছি কেন? ৭১ এর রাজাকার-আলাবদর-আলশামস-শান্তিকমিটিসহ যাবতীয় যুদ্ধাপরাধীদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর এটাই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। ন্যায়ের আগুন কম্বোডিয়ায় লেগেছে, সে আগুনে জ্বলেপুড়ে ধ্বংস হয়ে যাক সব অশুভ নরপশুর দল, আর সে আগুন ছড়িয়ে পড়ুক আমাদের এই বাংলায় -- এখনই। আর শুধু মুখে নয়, শুধু স্লোগানে নয়, এবার শুরু হয়ে যাক কাজে!
আর কম্বোডিয়ার এই শুরুর পর, এতদিন যারা বলতো "আজ এত বছর পর এসব বলার মানে হয়না", তারা এখন কি নতুন কান্না জুড়ে দেবে, সেটা দেখাও একটা আগ্রহের বিষয়।
তবে সরকারকে আরো সিরিয়াস হতে হবে এবিষয়ে। তাদের মনে রাখতে হবে এবারের ১ কোটি নতুন তরুন ভোটার কমমূল্যে ভাত খাবার জন্য শুধু তাদের ভোট দেয়নি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও তাদের প্রত্যাশার বিশাল অংশ জুড়ে আছে। সেই প্রত্যাশা নিয়ে সরকার যদি গড়িমসি করে, তবে সেটা শুধু জাতির জন্য লজ্জাজনক আরেকটা উপাখ্যানই হবে।
গতকাল যখন পাকিস্তানী প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত এসে এদেশে নির্লজ্জের মতো ফতোয়া জারি করে, "যুদ্ধাপরাধের বিচারের সময় এখন নয়", আমরা কিভাবে সহ্য করি! আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, যিনি নতজানু হতে হতে এতটাই নুয়ে পড়েছেন যে, "পাকিস্তানের বাফার স্টেট" গালি হজম করার পর পাকি দূতের কথায়ও তিনি যখন কিছু বলটে পারেননা, তখন আমার ভয় হয়, কম্বোডিয়ায় যে বসন্ত আসা শুরু করেছে, সে বসন্তে, সেই পলাশের আগুন কি এদেশে এবার আসবেনা! কোনভাবেই যেন এই সম্ভাবনার নাশ না হয়।