গার্মেন্টস শ্রমিকেরা তো মানুষ নয় ।
তা না হলে শত শত মানুষ পুড়িয়ে মারার পরও তাজরিনের মালিক কেন গ্রেফতার হয় না। কেন উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পায়না শ্রমিক। ২ দিন পর পর এক একটা গার্মেন্টসে আগুন লাগতে থাকবে, ধ্বসে পড়তে থাকবে ভবন গুলো।
আর বার বার শুধু ট্রাজেডি ঘটতেই থাকবে| এত দ্রুত ট্রাজেডিগুলো ঘটতে থাকে যে সিকোয়েন্স অনুসারে ট্রাজেডিগুলার নাম ও কারো মনে থাকেনা; আর মৃত মানুষ!!
আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রকৃত মৃতের সংখ্যাও জানা হয় না আমাদের। আর আমরাও ট্রাজেডি উপন্যাসের বাইরে যেতে পারিনা, ট্র্যাজিক ঘটনা, উপন্যাস পড়ে আমরা যেমন একটু কাঁদি, একটু ভাবি, মন কিছুক্ষণের জন্য বিষিয়ে আসে। তারপর আবার স্বাভাবিক!
স্বাভাবিকভাবেই এক একটি হত্যাযজ্ঞের পর ২-৩ দিন কিংবা ১ সপ্তাহ ধরে হয়ত শোক থাকবে। কিন্তু সেই পোড়া লাশের গন্ধ কিংবা থেঁতলে যাওয়া শরীরের উপর আবার নির্মাণ করবে নতুন তাযরিন কিংবা রানা প্লাজা।খুব অল্প কিছু টাকা বাঁচানোর জন্য ঠিকাদার নতুন করে সরবরাহ করবে ২ নম্বর ইট , সিমেন্ট কিংবা লোহা। পাইলিং ছাড়া ভবন উঠতেই থাকবে। শ্রমজীবী মানুষগুলার রক্ত দিয়ে প্রাসাদ হবে, কিছু ব্যক্তির ব্যাঙ্ক একাউন্ট গুলো ভারী হতে থাকবে। ধীরে ধীরে লাশ বাড়বে কিন্তু ভাবিনা, যার ঘরে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি হারিয়ে গেল চিরতরে তারা সারাজীবনের জন্য ট্রাজেডি বয়ে বেড়াবে। দাসপ্রথা নাকি বিলোপ হয়েছে বহু আগে কিন্তু আমরা তো দেখি দাস প্রথা নতুন ভাবে ফিরে এসেছে
খুব ভয়ালভাবে , প্রকট কর্পোরেট ভাবে, তা না হলে মৃত্যু নিশ্চিত-জেনেও শ্রমিকদেরকে পিটিয়ে পিটিয়ে কেন মৃত্যুকূপে পাঠানো হল? কেন মিথ্যা বেতনের আশ্বাস দিয়ে শ্রমিকদেরকে কারখানায় আনা হল?কেন এরকম ইচ্ছাকৃত হত্যাযজ্ঞ চালানো হল?প্রতি বছর গার্মেন্টস শিল্পের রপ্তানি আয় বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে শ্রমিকের লাশ।শ্রমিকের রক্ত দিয়ে কেনা বৈদেশিক মুদ্রার প্রতিদান হিসাবে শ্রমিক পায় তার মৃত্যু পরোয়ানা কিংবা স্বজনের লাশ।আমরা লাশগুলো দেখে চমকে উঠি কিছুক্ষণের জন্য।তারপর আবার সব ওকে। জীবন যাত্রা স্বাভাবিক।ম্লান হয়ে আসতে থাকে আমাদের ট্রাজেডিগুলা।৩০০০-৫০০০ টাকায় শ্রমিক তার সংসার কিভাবে চালায়,সে ৩ বেলা খেতে পায় কিনা, তার সন্তান স্কুলে পড়তে পারে কিনা এই সব প্রশ্ন আড়ালে রয়ে যায়।শ্রমিক শোষণ পুঁজিবাদের টিকে থাকার অবলম্বন। নিজেরর প্রয়োজনে শোষণ করতে থাকে শ্রমিকদের নির্বিচারে। আর আমরা খেলা দেখি আর ভুলি।এত এত খেলা আর এত এত উইকেট।আমরা তালগোল পাকিয়ে ফেলি।সমাধান কোথায়? সমাধান একটাই প্রতিবাদ।
ভয়ঙ্কর প্রতিবাদ করতে হবে। শুধু রক্ত দিয়েই নয়, যারা বছরের পর বছর ধরে এ সকল ট্রাজেডির সৃষ্টির পেছনে দায়ী তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে। শ্রমিক যেন তার ন্যায্য মজুরি পায়, তার কাজের ক্ষেত্র যেন নিরাপদ হয় তার দাবিতে শক্তিশালী গণআন্দোলন গড়ে তোলা জরুরি।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:২৭