somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রূপকথা নয়

০৯ ই মে, ২০০৭ সকাল ১০:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক অনেক বছর আগে একটা ছোট্ট মেয়ে ছিল। সাধারন মেয়ে, রাজকুমারি নয় কিন্ত। খুব অদ্ভুত লাগবে শুনতে কিন্তু সে থাকত একটা কেল্লার ভেতরে। এক্কেবারে সাত সমুদ্র তেরো নদী পারে। সমুদ্দুর ঘেরা সেই কেল্লা। উঁচু তার পাঁচিল। কেল্লার চার দিকে তো সমুদ্দুর। তার গায় এসে ঢেউ ভাঙ্গে। সামুদ্রিক পাখিদের ডাক শোনা যায়। দেখাও যায়। এছাড়া চারিদিকে শুধু জল। কেল্লার কোন দরজা নেই। অনেক উঁচুতে আছে শুধু একটা জানলা। তাই দিয়ে মেয়ে সমুদ্রের ঢেউ দেখে। পাখি দেখে। তবে কেল্লাটা ভারি আরামের। সেখানে কত খাবার। কি সুন্দর করা সাজানো। খাওয়া পরার কোন অভাব নেই। কিন্তু সেই আরামের কেল্লাতে আমাদের মেয়ের মনে কন সুখ নেই। তার খালি দেখতে ইচ্ছে করে নিচে পৃথিবীতে কি আছে। আর খালি ভাবে যদি তার একজন বন্ধু থাকত যার সঙ্গে সে খেলতে পারে কথা কইতে পারে। ও হ্যাঁ, মেয়ের নামটাই তো বলা হয়নি। ছোট্ট মেয়ে নাম ফুটকি। যেমন ফুটফুটে মেয়ে তার তেমনি নাম। কিন্তু ওই যে বললাম। আমাদের ছোট্ট ফুটকির মনে ভারি কষ্ট। সে জানালার ধারে বসে থাকে আর ভাবে কবে সে নিচে পৃথিবীতে নেমে দেখবে, কথা বলবে।

ভীষণ মনের দুঃখে সে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিল সেদিন। রাত তখন অনেক। হঠাত ঘুম ভেঙ্গে গেল তার। মনে হল কে যেন তাকে ডাকছে। গালে কার একটা হাত এসে লাগল কি? কিন্তু তা কি করে হবে?! কেল্লার কোন দরজাই তো নেই। ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসল ফুটকি। কি আশ্চর্য! সে দেখল একটা ছোট মেয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে। কোথা দিয়ে এল এই মেয়েটা? সেসব ভেবে পেল না ফুটকি। তবু এতো খুশি হল। এত কাছ থেকে সে তো এর আগে কখন কোন মানুষ দেখেনি। মেয়েটি ফুটকির হাত ধরল। কত কথা বলল। আদর করল। তারপর তাকে নিয়ে জানলা দিয়ে বেরিয়ে এল। ভয় পাওয়ার আগেই বুঝি এসব ঘটে গেল। ফুটকি দেখল তারা মেঘের রাজ্যে এসে পরেছে। আর মেঘের ওপর খেলা করছে আরো অনেক ছেলে মেয়ে। তারা খেলছে। কথা বলছে। গান গাইছে। তাদের সঙ্গে কথা বলতে ভীষণ ইচ্ছে গেল ফুটকির। কিন্তু এত ভয় করল! এদিকে দেখে সেই অন্য মেয়েটা কোথায় উধাও হয়ে গেছে। এবার আর পারল না ফুটকি। কেঁদে ফেলল।

হঠাত মনে হল যেন মেঘগুলো এসে তার চোখের জল মুছিয়ে দিচ্ছে। ভারি অবাক হল। মেঘ তার সঙ্গে কথাও বলল। সে ভারি মজার কথা। ফুটকি হেসে ফেলল। আর অমনি মেঘের ফাঁক দিয়ে এক চিলতে রোদ্দুর দেখা দিল। আর সেই আশ্চর্য দেশে রোদ্দুরও এসে কথা বলল ফুটকির সঙ্গে। আর এল রাত্রি। তারা বসান তার জামা। সেও ত কত কথা বলল। সবাই মিলে কত খেলা। কত কথা। প্রজাপতির কথা। ঘাস ফরিঙ্গের কথা। শিশিরের কথা। শেষে ফুটকি ক্লান্ত হয়ে পরল। তখন সে মেঘের ওপর শুয়ে পরল। ঘুমিইয়ে পরল ফুটকি।

পরের দিন ঘুম থেকে উঠে দেখে সে তার পুরোন কেল্লার ভেতরে। ভারি কষ্ট হল তার। আগের রাতের সবই কি তবে সপ্ন ছিল?! এমন সময় দেখল তার কাছেই পড়ে আছে রোদ্দুরের দেওয়া একটা আংটি আর রাত্রির একটা তারা। ভীষণ আনন্দে নেচে গেয়ে সারাটা দিন কাটাল ফুটকি। এরপর থেকে রোজই তার কাটতে লাগ্ল এক ভাবে। সারাদিন সে অপেক্ষা করে কখন রাত হবে আর তার বন্ধুদের সঙ্গে তার দেখা হবে। তার ইচ্ছে করে যেন দিনটা আর না আসে। সারা সময় ঘুমিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। কিন্তু তাই কি আর হয়। দিনের আলো ফোটে। ঘুম থেকে উঠতে হয়। বন্ধুরা সব মিলিয়ে যায়। আবার সে একা হয়ে যায়।

একদিন জানলার ধারে বসে এসবই ভাবছিল সে। এমন সময় দেখল একটা লোক জানলা দিয়ে ঢুকে আসছে। ভীষণ ভয় পেল সে। অবাকও হল। ভাবল সপ্ন দেখছে না তো? তারপর ভাবল হয়ত কোন রাজকুমার। পক্ষিরাজ এ চড়ে তাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে। কিন্তু কই পক্ষিরাজ তো দেখতে পাচ্ছে না। লোকটা তার পাশে এসে বসল। কথা বলে ভয় ভাঙ্গাল। সে কত ভাল ভাল কথা। বলল তার সঙ্গে যেতে। নিচে পৃথিবীতে। বলল লোকটা সঙ্গে থাকবে। ভয়ের কিচ্ছু নেই। এর মধ্যে জানাল যে রাজকুমার নয়। সাধারণ লোক। পক্ষিরাজ ঘোড়া নেই তার। তবে কি ভাবে নিচে যাবে? জিজ্ঞেস করল ফুটকি। লোকটা কি বলল জানো? বলল ওই জানালা দিয়ে নিচে নেবে যাবে। ফুটকি ভাবল লোকটা নিশ্চয়ই পাগল। কিন্তু লোকটাও সহজে হার মানল না। অনেক অনেক করে বোঝাতে ফুটকি রাজি হল। ভয়ে ভাবনায় তার হাত ধরে জানলার ধারে এসে দাঁড়াল। কি আশ্চর্য্য ! জানলাটা এত নিচে এল কি করে। সমুদ্দুর সরে গেল নাকি?! নিচে নেমে এল ফুটকি। সুখ দুঃখের মাঝে। যেখানে ঘৃণা ভালোবাসা দুই থাকে। আমাদের সাদা কালো পৃথিবীতে। লোকটার সঙ্গে।

এরপর কি হল? হয়ত ওরা একসঙ্গে অনেক অনেক দিন সুখে ছিল। হয়ত ছিল না। ওদেরই জিজ্ঞেস কর না কেন?
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০০৭ সকাল ১০:০৩
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×