পূর্বেই কয়েকটি প্রবন্ধে আপনাদেরকে আমি বার বার একথাই বলেছি যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের হুকুম মেনে চলার নামই ইসলাম এবং মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের খাহেশ, বাপ-দাদার কুসংস্কার, দুনিয়ার রাজা-বাদশাহ ও লোকেদের আদেশ অনুযায়ী চলা ছেড়ে দিয়ে কেবলমাত্র আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউই মুসলমান হতে পারবে না।
কিন্তু আল্লাহ ও রাসূলের হুকুম পালন করার ওপর এত জোর কেন দেয়া হয়, এখানে আমি সেই কথারই বিস্তারিত আলোচনা করবো। একজন মানুষ জিজ্ঞেস করতে পারে যে, আল্লাহর আনুগত্য করার দরকারটা কি, তিনি কি আমাদের আনুগত্য পাবার মুখাপেক্ষী ? আর সে জন্যই কি আল্লাহ আমাদের কাছে তাঁর নিজের এবং তাঁর রাসূলের হুকুম পালন করে চলার দাবী করছেন ? দুনিয়ার রাজা-বাদশাহরা যে রকম নিজেদের হুকুমাত চালারবার জন্য লালায়িত, আল্লাহ কি তেমন লালায়িত ? দুনিয়ার জনগণ যেমন বলে যে, আমার প্রভুত্ব স্বীকার করো আল্লাহও কি তেমনি বলেন? এখন একথারই আমি জবাব দিতে চাই।
আসল কথা এই যে, আল্লাহ তা‘আলা মানুষের কাছে তার আনুগত্য দাবী করেন তাঁর নিজের স্বার্থের জন্য নয়। বরং এ মানুষেরই কল্যাণের জন্য তিনি তা চাচ্ছেন। আল্লাহ দুনিয়ার রাজা-বাদশাহর মত নন, দুনিয়ার রাজার ও রাজকর্মচারীগণ তো শুধু নিজেদেরই স্বার্থের জন্য লোকেদের ওপর তাদের হুকুমাত চালায়-লোকদেরকে নিজেদের মর্জীর গোলাম বানাতে চেষ্টা করে। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার কোনো স্বার্থ নেই, তিনি সকল রকম স্বার্থের নীচতা হতে পবিত্র। আপনার কাছ থেকে টাকা আদায় করার কোনো দরকার আল্লাহর নেই। প্রাসাদ তৈরি করা, মোটর গাড়ী ক্রয় করা কিংবা আপনাদের টাকা-পয়সা, বিলাস-ব্যসন বা আরাম-আয়েশের সামগ্রী সংগ্রহ করার কোনো প্রয়োজনই তাঁর নেই। তিনি পাক, তিনি কারো মোহতাজ বা মুখাপেক্ষী নন। দুনিয়ার সবকিছুই তাঁর, সমস্ত ধন-সম্পদের তিনিই একমাত্র মালিক। তিনি আপনাদেরই মঙ্গলের জন্য-আপনাদেরই কল্যাণ করতে চান। তিনি মানুষকে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ করে সৃষ্টি করেছেন, তাঁর এ শ্রেষ্ঠ মাখুলুক বা বিরাট সৃষ্টি মানুষেরা শয়তানের গোলামী করুক, কিংবা অন্য মানুষের দাস হোক অথবা দুনিয়ার সামান্য ও হীন জিনিসের সামনে মাথা নত করুক এটা তিনি মাত্রই পছন্দ করেন না। তিনি যে মানুষকে দুনিয়ায় তাঁর প্রতিনিধি বানিয়েছেন, তারা মূর্খতার অন্ধকারে ঘুরে মরুক এবং পশুর মতো নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী চলে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট প্রাণীতে পরিণত হোক-এটাও তাঁর মনপুত নয়। এজন্যই তিনি মানুষকে বলেছেনঃ “হে মানুষ ! তোমরা আমারাই হুকুম মেনে চল-কেবল আমারই নির্দেশ মত চল-কেবল আমারই আনুগত্য কর। আমি আমার নবীর মারফতে তোমাদের কাছে যে জ্ঞানের আলো পাঠিয়েছি, তা গ্রহণ কর ; তবে তোমরা সরল ও সোজা পথের সন্ধান পেতে পারবে। আর এ সোজা পথে চলে তোমরা দুনিয়া ও আখেরাতে সর্বত্রই সম্মান লাভ করতে পারবে ।”

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



