somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রজাপতিটা! যখন তখন উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে.. রাঙা মেঘের মতন...

২৯ শে জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ৮:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আচ্ছা আমি কি প্রতিদিন একটাই একটা শালিক দেখি? মানে যাকে দেখি তিনি কে একই ব্যক্তি? অফিস যাবার পথে বাসস্টপে বসে ছিলাম, রোজ যেমন থাকি। আর প্রথমেই এই কথা মনে হলো। এখন যদিও গরমকাল চলছে, আজ ঠান্ডা ছিল। সকালে আমার বিছানার পাশের জানালাটা খোলা ছিল আর ঠিক তার বাইরে ক্যাবেজ ট্রির মাথা দেখছিলাম। কেমন হালকা কুয়াশার গন্ধ ছিল, বেশ শীতের বাতাস ঢুকে পড়ছিল ঘরে। সাথে একটু একটু রোদ।

যদিও অলস লাগছিল, তবুও উঠলাম। বিড়ালকে খুঁজলাম চারপাশে, সে অনেক আগেই ঘর ছেড়ে পালিয়েছে। মনে হয় সজারুর গর্তের কাছে। সেই গর্তে যে তার কি আকর্ষণ কে জানে! ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকে।

বাসস্টপে বেশীদূর হেঁটে আসতে হয়না। এক মিনিট লাগে বাসা থেকে। আমার বাড়ীটা কয়েকটা বাড়ীর পেছনে একটাই ব্লকে। অনেক পাখি ডাকছিল আর ডেক এর উপরে সূর্যের আলো। খুব ইচ্ছা হচ্ছিল বসে বসে চা খেতে খেতে বই পড়ি, অথবা কিছুই না করি, বসে থাকি শুধু। আরো বসে থাকলে হয়তো কিছুক্ষণ পর ওই হাঁস পরিবারটা - একটা মা হাঁস আর পেছন পেছন পাঁচটা পিচ্চি হাঁস চলে এসেছে বাগানে। একটা পাম ট্রি আছে আমার বাগানটায়, হাঁসেরা মাঝেমাঝেই সেখানে বসে ঝিমায়। আমার বিড়ালটা বেশ ভদ্র ব্যবহারই করে তাদের সাথে। মানে সাধারণত তো পাখি দেখলেই খেয়ে ফেলার মতলবে থাকে, হাস গুলাকে কোনই পাত্তা দেয়না। হাঁসেরা গাছের তলায় আর সে ডেকের উপরে শান্তিময় সহাবস্থান। আমার আজ আফসোস হচ্ছিল যে এসব কিছুই দেখা হবে না!

রাস্তায় গাছের ছায়া আর রোদ মিলেমিশে বেশ চিকরিমিকরি ধরণের ছিল, দেখতে ভালো লাগে। ওই দেখতে দেখতেই পৌঁছালাম বাসস্টপে, প্রথমে একা ছিলাম, তারপরে শালিকটা। সেই ছোটবেলার থেকেই আমি একটা শালিক দেখলেই সারা দুনিয়া দুইনাম্বার শালিক খুঁজতে থাকি। সেই one for sorrow, two for joy মনে পড়ে যে! কিন্তু মনে হলো এই শালিকটাকে আমি গতকালও দেখেছি, তার আগেও। একটু গুন্ডা টাইপ পাখি। রাস্তায় লাফায়ে বেড়াচ্ছে। অন্য শালিকের চেয়ে লম্বা লাগছে দেখতে। গাড়ি টাড়ি তেমন একটা পাত্তা দিতেছে না। এর কি সঙ্গী সাথী নাই নাকি? মনে হয় শালিক রাজ্যের কবি, অথবা দার্শনিক, বা পাগল। অথবা তার সঙ্গী হয়তো অলস খুব, আরামে ঘুম দিতেছে আর এই ব্যাটাকে পাঠাইছে কাজকর্ম সামলাতে। হতেই তো পারে।

পাশে সেই আজব মহিলা এসে বসলো। ইনি থাকেন বাসস্টপের ঠিক সামনের বাসায়। বাসাটা মহা জংলা (ছিল, এখন নাই, তবে সেই বিষয়ে পরে আসছি) । এর সাথে প্রথম কথা বলার ঘটনা অদ্ভুত। সেইদিন আমি অন্য একটা বাসস্টপে অপেক্ষা করছিলাম বাসায় ফেরার সময়। মানে সাধারণত সেখানে আমার যেতে হয়না, সেইদিন বাস বদল করতে হচ্ছিল। কয়েক বছর আগের ঘটনা এটা।

তো আমি বসে বসে Da Vinci Code পড়ছি, এমন সময় মহিলার আবির্ভাব। আমার মুখের উপর থেকে বই সরিয়ে দিয়ে বলে যে
- খবরদার! এই বই পড়বা না, একদম রাবিশ!

আমি বললাম - কেন, কি সমস্যা?

- অনেক ভুল ভাল লিখছে বইয়ে, এগুলি কিছুই সত্যি না ।

- সত্যি তা তো দাবি করে নাই, এটা তো গল্প!

- যাই হোক, তুমি পড়বা না এই বই!

আচ্ছা ফ্যাসাদে পড়লাম দেখি । কোথাকার কে, আমাকে এসে বই পড়তে মানা করতেসে!

- ঠিক আছে আপাতত পড়বো না, কিন্তু আপনি তাহলে আমাকে এখন বইয়ের চেয়েও ইন্টারেস্টিং কিছু শোনান!

সে তারপরে বিড়বিড় করে কি বলছিল আমার কিছু মনে নাই। তার কারণ হলো অর্ধেক কথাই বুঝি নাই। এত আস্তে কথা বলে যে ধরে ঝাঁকি দিতে ইচ্ছা হয়! তারপরেও হাসিমুখে তার দিকে তাকায়ে ছিলাম অনেকক্ষণ! তো এই হলো পরিচয় কাহিনী।

তারপরে বাসস্টপে প্রায়ই দেখা হতো, হয়।

একদিন ভোর পাঁচটার সময় আমি যাচ্ছিলাম। দেখি মহিলাও আছে। সামনেই তার বাড়ি (যদিও তখনও জানতাম না এই বাড়িই তার। ) আমি বাড়িটার দিকে অনেকক্ষন চেয়ে দেখছিলাম।

বাড়ির সামনে সাধারণ বেড়ার বদলে একটা বাঁশঝাড়। ঝাড় বললে অবশ্য বাগান বাগান একটা ভাব আসে মনে, ওইরকম কিছু না, একদমই জঙ্গল। আর তার ফাঁকে ফাঁকে ভিতরের ঘাস দেখা যাচ্ছে, বিশাল গাছ সাইজের ঘাস। আল্লাহ জানে কতদিন কাটা হয় নাই। বাড়িতে টিনের চাল, রং চটা আর ঘরের কাঠের রং ও জায়গায় জায়গায় উঠে গেছে। কেমন একটা পোড়ো বাড়ির মত ভাব। আমি কখনোই ওই বাড়িতে আলো জ্বলতে দেখি নাই। জানলাগুলিও একদম ছোট ছোট। চারপাশের অন্ধকার মনে হচ্ছিল বাড়িটার সামনে এসে আরো গাঢ় হয়েছে। আমি হঠাৎ নিজের মনেই বললাম -

- কে জানে ওখানে কেউ থাকে কিনা!

মহিলা বললো, কি বলো? আমি থাকি ওইখানে!
আমার দিকে একটা রাগ রাগ, অবাক অবাক চোখে তাকালো।

আল্লাহর দরবারে হাজার শুকরিয়া যে এরচেয়ে বেশী কিছু বলি নাই। একটু হলেই বলতে যাচ্ছিলাম যে ওই বাড়িতে ভূত থাকা বিচিত্র কিছু না। তারপরে সেই বাড়ি, বাড়ির বাঁশ, ঘাস, এই সবকিছুর অনেক প্রশংসা করলো । তার বাগানে কত রকমের পাখি আসে সব ফিরিস্তি দিল, আমি শুনলাম।

আর আজকে আবার দেখা হলো। লক্ষ্য করলাম আর বাঁশের জঙ্গল নাই। জানতে চাইলে যা বললো সে এক বিরাট রোমহর্ষক রোমাঞ্চকর ইতিহাস। আজকের লেখাটা এমনিই বড় হয়ে গেল। বাকিটুকু কাল বলবো!
১৭টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×