ভারতীয় সেনা মোতায়েনের পাঁয়তারা!
ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী
ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প, কলকারখানা, রফতানি, জনশক্তি, সব কিছু ভারতের হাতে তুলে দেয়ার পর এবার ভারতীয় সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশে ডেকে আনা হচ্ছে। ভারতীয় বিমান ও দূতাবাসের নিরাপত্তার নামে বাংলাদেশের জনপদ থেকে শুরু করে বিমানবন্দরগুলো পর্যন্ত এখন ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। সে রকম প্রস্তাবই ভারত দিয়েছে। এ ধরনের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান না করে বাংলাদেশ আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছে কিভাবে ভারতকে ওই সুবিধা দেওয়া যায়। সে বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা করতে আসা তিন সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদলও যোগ দিয়েছে। আলামত এমনি ভয়াবহ ও বিপজ্জনক। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় সেনা মোতায়েনের এই খায়েশ ভারতীয়দের আজকের নয়। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই ভারত এখানে দীর্ঘস্থায়ীভাবে সেনা মোতায়েন রাখতে চেয়েছিল। এবং বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র পরিচালনার সিদ্ধান্তও নিয়েছিল ভারতীয় আমলাদের দ্বারা। সে লক্ষ্যে ভারতীয় আমলারা বাংলাদেশে আসতেও শুরু করেছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অস্থায়ী মুজিবনগর সরকারের সাথে ভারত সরকার যে চুক্তি করেছিল তাতে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র প্রভৃতির দায়িত্ব ভারত সরকার নিজ হাতে তুলে নিয়েছিল। লক্ষ্য ছিল, বাংলাদেশকে একটি ভারত-অনুগামী রাষ্ট্রে পরিণত করা। ওই চুক্তি স্বাক্ষরের পর মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। হয়তো ভারত স্বাধীন বাংলাদেশে সে পথেই অগ্রসর হতো। কিন্তু মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশ থেকে সব ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের জন্য বুলন্দ আওয়াজ তোলেন। শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ থেকে সব ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেন। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে ভারত তার সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়।
ভারত স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় থেকেই বাংলাদেশের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সে উদ্দেশ্যে ভারতীয় অনুগতদের নিয়ে ইস্টার্ন কমান্ডের অধীনে গড়ে তোলা হয়েছিল বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ) বা মুজিব বাহিনী। এই বাহিনীকে মুক্তিযুদ্ধের সময় উচ্চতর প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরী রাখা হয়েছিল; তারা কোথায়ও কোনো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। ভারতীয় জেনারেলরা শিকার করেছেন, ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে তারা যে এগারো দিনের যুদ্ধ চালিয়েছিল তাতে বিএলএফ তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিল। আর সে কারণেই অত দ্রুততম সময়ে পাকিস্তান বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়েছিল। এই বিএলএফ গড়ে তোলার পেছনে ভারতীয়দের যে এক সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র ছিল, সেটি এখন আর অস্পষ্ট নেই। এই বিএলএফ’র ব্যাপারে রণকৌশল, তথ্যের আদান-প্রদানসহ যাবতীয় নথি কলকাতার ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দফতরে সংরক্ষিত ছিল। স্বাধীনতাযুদ্ধের পর ভারত যখন তার নীলনকশা অনুযায়ী সব কাজ সম্পাদন করতে পারল না, তখন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত ওই সব দলিল তারা কুচিকুচি করে কেটে ধ্বংস করে ফেলে। উদ্দেশ্য সম্ভবত এই ছিল যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের প্রক্রিয়ার মধ্যেই ভারত যে বিশাল ষড়যন্ত্র করেছিল তা যেন ফাঁস হয়ে না যায়। সে ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে গেলে উভয় দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি হতে পারে।
অর্থাৎ বাংলাদেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার এবং বাংলাদেশের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভারতের হাতে নিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র তাদের স্বাধীনতার ঊষালগ্ন থেকেই। কিন্তু ৩৯ বছরের এই দীর্ঘ সময়ে নানা টানাপড়েনের কারণে ভারত সে ধরনের মওকা করে উঠতে পারেনি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতের জন্য এখন সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় আনার পরপরই ভারত এখন সে সুযোগের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করে ছাড়ছে।
বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের ট্রানজিট দাবি উত্থাপিত হয়েছিল সেই পাকিস্তান আমল থেকেই। কিন্তু কোনো সরকারের আমলেই ভারতের এই ট্রানজিট দাবিকে আমলে নেয়া হয়নি। এমনকি শেখ মুজিবুর রহমানও বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী এই ট্রানজিট প্রস্তাব ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। এখন শেখ মুজিবের ‘যোগ্য উত্তরসূরিরা’ বলতে শুরু করেছেন, বাংলাদেশ জন্মগতভাবেই একটি ট্রানজিট রাষ্ট্র। যেন ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার জন্য বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। এমন মধুর কথা ভারত গত ৬০ বছরে বাংলাদেশী কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে শোনেনি। এখন করিডোর পাওয়ার জন্য ভারত যতটা না মরিয়া, তার চেয়েও অধিক মরিয়া বাংলাদেশের বর্তমান সরকার। কিন্তু কেন? কিসের বিনিময়ে তার কোনো সুনির্দিষ্ট জবাব সরকারি মহলের কেউ-ই দিচ্ছেন না। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরকালে ভারতের সাথে যে তিনটি চুক্তি করেছিলেন, তা এখন পর্যন্ত দেশবাসীর সামনে প্রকাশ করা হয়নি। সেই চুক্তিতে কী দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে যাওয়ার মতো কোনো ধারা সংযোজিত আছে যা জনগণ জানলে সরকারকে জনরোষের শিকার হতে হবে? তা না হলে আজ দুই মাস হতে চলল, সেই চুক্তি জনগণের জানার জন্য না উন্মোচন করা হলো, না অনুমোদনের জন্য সংসদে উপস্থাপন করা হলো। ফলে এ নিয়ে সংশয় ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। অথচ সংসদের অনুমোদন ছাড়া এ ধরনের রাষ্ট্রীয় চুক্তি বৈধতাই পাবে না।
এখন এত বছর পর বাংলাদেশে নতুন করে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের পাঁয়তারা করছে ভারত-তোষক এই সরকার। বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাস ও এখানে চলাচলকারী ভারতীয় বিমানের নিরাপত্তা বিধানের জন্য ভারত সেনা মোতায়েনের অনুমোদন চেয়েছে। ভারতীয় দূতাবাসের নিরাপত্তায় ভারতীয় সেনা মোতায়েনের দাবি তাদের অনেক দিনের। সে দাবি ইতোমধ্যে গোপনে পূরণ করা হয়ে গেছে কি না, জানা যায়নি। তবে পত্রিকায় ছবি ছাপা হয়েছে যে, ভারতীয় দূতাবাসে তাদের নিরাপত্তা কর্মীরা নিজেরাই শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিযুক্ত হয়েছে। ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লেখা এক চিঠিতে বলা হয়েছে, গোয়েন্দা সূত্রে তারা জানতে পেরেছে যে, ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন ও বাংলাদেশে থাকা অন্যান্য ভারতীয় স্থাপনা মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে। ওই হামলা-হুমকির গুরুত্ব বিবেচনা করে ভারত সরকার বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনের পাহারায় ৩৬ সদস্যের একটি নিরাপত্তা দল মোতায়েনের প্রস্তাব করছে। এই দলের সব সদস্যই কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনীর সশস্ত্র সেনাদল (এসএসবি) থেকে মোতায়েন করা হবে। এসএসবি’র থাকার ব্যবস্থা হাইকমিশনারের অবস্থান এলাকার ভেতরেই করা হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ এসএসবি সদস্যদের মোতায়েনের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন প্রদানের বিষয়টি হাইকমিশনকে অবহিত করার জন্য মিশনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। বিষয়টি সম্পর্কে সরকার কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা এখনো জানা না গেলেও এই প্রস্তাবের পক্ষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাফাই জনসাধারণকে বিস্মিত করেছে।
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার মুরদ বা কর্মদক্ষতা সম্পর্কে আমাদের জানা আছে। শুধু আমরা নই, সারা পৃথিবীই জানে। তারা আগাম সতর্কতা উচ্চারণ করতে পারে যে, শেখ মুজিব কিংবা শেখ হাসিনার জীবনের প্রতি হুমকি আছে। বাংলাদেশে তথাকথিত আলকায়েদা বা হুজি তাদের দূতাবাস বা নিরাপত্তার প্রতি হুমকি সৃষ্টি করছে। কিন্তু তারা নিজের দেশে এ কথা আগাম জানতে পারে না যে, ইন্দিরা গান্ধী বা রাজীব গান্ধী খুন হবেন কিংবা মুম্বাই হোটেলে ওই রকম ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হবে অথবা মাওবাদী হামলায় ৭৮ জন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য প্রাণ হারাবে এর কোনোটাই ভারতীয় গোয়েন্দারা আগাম জানতে পারে না। শুধু বাংলাদেশের ব্যাপারেই আগাম জানার ফুটানি দেখায় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এটা বাংলাদেশকে চাপ প্রয়োগ কিংবা বাংলাদেশ থেকে অন্যায় সুবিধা আদায়ের একটি অপকৌশল মাত্র।
একই কায়দায় এখন ভারতীয় যাত্রীবাহী বিমানের নিরাপত্তা বিধানের জন্য বাংলাদেশে তারা ভারতীয় ‘সশস্ত্র স্কাই মার্শাল’ নিয়োগের আবদার তুলেছে। এই বাহিনী শুধু ভারতীয় বিমানেই অবস্থান করবে না, তারা ঢাকার হযরত শাহজালাল রহঃ (সাবেক জিয়া) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও তাদের নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করবে। বাংলাদেশের বর্তমান তাঁবেদার সরকার সম্ভবত বিষয়টি অনুমোদন করতে যাচ্ছে। আর সে কারণেই তারা এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের আয়োজন করেছিল ১৯ মে। তাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ছাড়াও উপস্থিত থাকার কথা ছিল বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর এবং বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের। সভায় যোগ দেয়ার কথা ছিল ভারতের নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট তিন প্রতিনিধির। শেষ পর্যন্ত ওই তিনজন ঢাকায় এসে পৌঁছেননি বলে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়নি।
বাংলাদেশে যাতায়াতকারী ভারতীয় বিমান ও বাংলাদেশের বিমানবন্দরে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করতে ভারত বেশ কিছু দিন ধরে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছিল। আর এর আগে বিডিআর বিদ্রোহের পর ঢাকা-কলকাতা রুটে চলাচলকারী যাত্রীশূন্য মৈত্রী ট্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ট্রেনে ও রেললাইনে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু সে প্রস্তাবে তখন বাংলাদেশ সরকার সাড়া দেয়নি। এখন আবার ভারতীয় বিমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের বিমানবন্দরে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব দিয়েছে। কারণ তাদের বিবেচনায়, বাংলাদেশে আলকায়েদাসহ অন্যান্য জঙ্গিসংগঠন তৎপর রয়েছে। অগ্র-পশ্চাৎ বিবেচনা না করে সরকারও সম্ভবত ভারতীয় সৈন্য মোতায়েনে উদগ্রীব। ভারতীয় বিমানের নিরাপত্তায় তাদের সশস্ত্র বাহিনীকে বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকতে দিলে তারা তাদের মতলব অনুযায়ী যেকোনো ব্যক্তিকে তাদের বিমানের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বর্ণনা করে আটক বা খুন করার অধিকারও থাকবে। ফলে ভারতীয় বাহিনীই বাংলাদেশী নাগরিক ও অন্যান্য দেশের নাগরিক ও বিমানের জন্য সুষ্ঠু চলাচলের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দেবে। ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ভারতীয় দখলে চলে যাবে এবং একপর্যায়ে ওই বিমানবন্দরকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হবে।
তা ছাড়া ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ ও উড্ডয়নকারী সব দেশের বিমানকে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা সুচারুরূপে নিরাপত্তা দিয়ে আসছে। ভারতীয় বিমানগুলোকেও সে নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। ভারতীয় এয়ারলাইন্সের কখনো কোনো নিরাপত্তা সমস্যা হয়নি। যদি ঢাকায় চলাচলকারী বিমানগুলোর সব দেশই নিজস্ব সেনা মোতায়েন করতে চায়, তাহলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে? এ ছাড়া দূতাবাস পাহারা দেয়ায় যদি সব দেশ তাদের সেনা মোতায়েন করতে চায়, তাহলেই বা কী হবে? ভারত এ ধরনের অন্যায় চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসেবেই বাংলাদেশে কাল্পনিক আল কায়েদা ও হুজি আবিষ্কার করে যাচ্ছে। সরকার না বুঝে সেই কোরাসে যোগ দিয়ে ভারতকে এই আবদারের পথ করে দিয়েছে।
এ থেকে করিডোরের বিপদ সম্পর্কেও আঁচ করা যেতে পারে। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছিলাম যে, কোনো অবস্থাতেই ভারতকে করিডোর দেয়া সঙ্গত হবে না। সেটি হবে বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি। আর তার ফলে বাংলাদেশ হবে ভারতীয় সৈন্যদের এক অবাধ চারণভূমি। ভারতীয় দূতাবাসও তাদের নিরাপত্তার জন্য ভারত বাংলাদেশের দূতাবাস ও বিমানবন্দরে তাদের সশস্ত্র বাহিনীর উপস্থিতি দাবি করছে। সে ক্ষেত্রে অন্তত চারটি রুটে যদি ভারতকে করিডোর দেওয়া হয়, তাহলে সে পথে ভারত শত সহস্র কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য যানবাহন ও সমরাস্ত্র আনা-নেয়া করবে। সঙ্গত কারণেই ভারত বলবে যে, বাংলাদেশের তথাকথিত আলকায়েদা বা অন্যান্য জঙ্গি সংগঠন তাদের ওই পণ্য ও পণ্যবাহী যানবাহনের ওপর আক্রমণ চালাতে পারে। একইভাবে সাত রাজ্যের মুক্তিযোদ্ধারা ও ভারতীয় মাওবাদীরাও এসব পণ্যবাহী যানবাহনের ওপর হামলা করতে পারে। এগুলোর নিরাপত্তা দরকার। আর সে নিরাপত্তার জন্য এই শত শত কিলোমিটার পথে ভারতীয় সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। তার সংখ্যা লক্ষাধিকও হতে পারে। আর নিরাপত্তা রক্ষার অজুহাতে এই বিশাল বাহিনীর বাংলাদেশের জনগণের ওপর যখন-তখন হামলা করতেও কসুর করবে না। অর্থাৎ গোটা বাংলাদেশই এক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হবে।
সেই ভয়াবহ অবস্থা এ দেশের জনগণ কিছুতেই মেনে নেবে না। এর বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে জনগণের প্রতিরোধ গড়ে তোলা এখন অপরিহার্য।
লেখকঃ সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
Source: Click This Link