somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার সহজ সরল মা

১০ ই মে, ২০০৯ রাত ১১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কবি শামসুর রাহ্‌মানের “কখনো আমার মা কে” কবিতাটি শোনার পর থেকেই মনে হয় কবিতাটি আমার মায়ের জন্যই। আমার মা ঠিক যেন এই কবিতাটির মায়ের মত। কবিতাটি শোনার পর থেকেই ভীষন প্রিয় হয়ে গেছে আমার। এখনকার মায়েরা অনেক সচেতন। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া, স্বাস্থ্য-পুষ্টি ইত্যাদি নিয়ে কত চিন্তা তাদের। স্বভাবতই এখনকার মায়েরা শিক্ষিত। কিন্তু আমার মায়েদের শৈশবের সময়টা ছিল ভিন্ন। লেখা পড়ায় বেশীদূর এগোয় নি। আমার মা গ্রাম্য সহজ সরল একজন মা।

খুব ছোট বেলায় মা আমাকে কেমন আদর যত্ন করত তা মনে নেই। মা আমাকে স্নান করানোর পর তাঁর আঁচল দিয়ে গায়ের জল মুছে দিত কিনা, মাথায় তেল দিয়ে চুলগুলো আঁচড়ে দিত কিনা, কিংবা ঘুম পাড়ানোর সময় গল্প বলতো কি না এসব মনে পড়ে না। তবে বাড়ি গেলে যখন দেখি আমার মা আমার ছোট্ট ভাইপো কে কলে স্নান করিয়ে তাঁর আঁচল দিয়ে গায়ের জল মুছে দিচ্ছে, এরপর মাথায় তেল দিয়ে চিরুনী দিয়ে মাথা আঁচড়ে দিচ্ছে আর ও ছটফট করছে এগুলো থেকে নিস্তার পাবার জন্য তখন আমার ও খুব ইচ্ছে করে আমার মা যখন আমাকে এমন করতো আর আমিও হয়ত এমন ছটফট করতাম স্নান না করার জন্য, গায়ে সাবান না মাখার জন্য কিংবা তেল না মাখার জন্য এই দৃশ্যটি কল্পনা করতে। স্কুলে ভর্তির দু এক বছর পর থেকে মোটামুটি অনেক কিছুই মনে করতে পারি মায়ের স্মৃতি।

মায়ের কথা বলে কি শেষ করা যায়? মায়েদের কাজের ও বোধ হয় শেষ হয় না কোনদিন। একটা ছবি দেখেছিলাম সম্ভবতঃ এঞ্জেলা গোমেজের আঁকা(ঠিক মনে নেই)। একজন মহিলার দশ হাত, আর সেই দশ হাত দিয়ে দশ রকম কাজ করছে। আমার মনে হয় প্রত্যেক মা ই এমন। ছোট বেলায় ভাত হতে দেরী হলে, কিংবা তরকারি ভাল না হলে সে কি ঝাড়ি। কিন্তু মা কে কখনো রাগতে দেখিনি। মাঝে মাঝে ক্ষোভের সাথে বলত, মুরগীর পায়ে বিরাম আছে কিন্তু আমার পায়ে নেই। মা এখনো সমানে কাজ করে চলেছে , সামলিয়ে চলেছে আমাদের সংসার। কোন চাওয়া নেই। আমার এখনো মনে হয় মুরগীর পায়ে বিরাম আছে কিন্তু আমার মায়ের পায়ে নেই।

এক বছর হলো বাড়ির থেকে কিছুটা দূরে এসেছি। দুই থেকে তিন মাস পর পর বাড়ি যাই। কিন্তু বাইরে থাকলেও মার সাথে আমার কথা খুব বেশী হয়না। মোবাইল যন্ত্রটায় কথা বলতে গেলে মা যে আনইজি ফিল করে সেটা বুঝতে পারি (মা মোবাইল অপারেট করতে পারে না, আগ্রহ ও নেই)। আমার সাথে কথা বলার জন্য বাড়ির কাউকে কখনো রিং দিতে বলে না। আমি ফোন করে মাকে দিতে বললে তখন কথা বলে। তাঁর ছোট্ট দু’একটা প্রশ্ন। তোমার শরীর কেমন আছে? তোমার কোন সমস্যা হচ্ছে না তো? সাবধানে চলো। কত সংক্ষিপ্ত আলাপ! কিন্তু আমার কখনো মনে হয়না, আমি মার থেকে দূরে আছি। হয়ত মার ও মনে হয়না।

চাকরিতে ঢোকার পর মাকে ভাল কোন গিফ্টদিতে পারিনি আজও। সামনের ঈদের বোনাস পেয়ে এস.এল.আর কেনার প্লান ছিল। সেটা পিছিয়ে দিয়েছি। ভাবছি ওই টাকা দিয়ে মাকে একটা গিফ্ট দিব। এবং সেটা আগে থেকে না বলেই। দেখি কি বলে মা। কিন্তু এও জানি, গিফ্ট পেলে মাকে উৎফুল্ল হতে দেখব না। হয়ত বলবে এর জন্য এত টাকা খরচ করতে গেলে কেন?

ছোট বেলায় মাকে কোন কাজ করে দিলে বলতাম চার আনা, আট আনা, কিংবা এক টাকা (কাজের ধরন সাপেক্ষে) দিতে হবে। মা হয়ত কখনো দিত অথবা বলত আচ্ছা পরে দিব। এর পর অন্য একদিন হয়ত আবার একটি কাজ করে দিতে বললে বলতাম তোমার কাছে আগের ১ টাকা পাই। কি মধুর স্মৃতি তাই না? মাকে নিয়ে ঠিক তেমনই একটি গান। আমি নিশ্চিত আমার লেখা ভাল না লাগলেও গানটি ভাল লাগবে।

চাইনি কোন দাম....................

(শিল্পী শ্রাবন্তী মুখোপাধ্যায়, শিশু শিল্পীর নাম জানা নেই)।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০০৯ রাত ১১:১৩
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×