29 Oct 2011 03:58:00 PM Saturday BdST
তদন্তের মুখোমুখি রাষ্ট্রদূত নিমচন্দ্র: হয়রানি করা হচ্ছে, দাবি স্ত্রীর
--------------------------------------------------------------------------------
ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ঢাকা: নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিমচন্দ্র ভৌমিকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত ১ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এ কথা জানিয়েছে।
নারী কেলেঙ্কারি, জাতীয় সঙ্গীত বাজানো বিষয়ক জটিলতা, স্কলারশিপ বিষয়ক অনিয়ম ও ভারতীয় পতাকাসম্বলিত গাড়িতে চড়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে নিমচন্দ্র ভৌমিকের বিরুদ্ধে।
তবে সব অভিযোগই অস্বীকার করছেন নিমচন্দ্র ভৌমিক। নিজে কথা না বললেও তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নিতান্তই হয়রানির জন্য এসব অভিযোগ আনা হয়েছে।
নিমচন্দ্র ভৌমিকের স্ত্রী মনিকা ভৌমিক বাংলানিউজকে বলেছেন, ‘মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমার স্বামীকে হয়রানি করা হচ্ছে।’
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে শনিবার দুপুরে টেলিফোনে তদন্তের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বাংলানিউজকে মনিকা ভৌমিক বলেন, ‘একটি তদন্ত দল কাঠমান্ডু আসবে বলে শুনেছি।’
চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমদের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত দলে জনপ্রশাসনের একজন যুগ্ম-সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন পরিচালক রয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় তদন্ত দলটি কাঠমান্ডু গিয়ে ১ নভেম্বর থেকে তদন্ত শুরু করবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর।
মুন্সী ফয়েজ আহমেদ শনিবার দুপুরে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি ঢাকায় অবস্থান করছি। কাঠমান্ডু যাওয়ার কথা রয়েছে।’
তবে তদন্ত প্রক্রিয়া বা নিমচন্দ্রের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে মুন্সী ফয়েজ কোনও মন্তব্য করবে রাজি হননি।
মুন্সী ফয়েজ জানান, তার বাবার মৃত্যুর কারণে তিনি কয়েকদিন আগে বেইজিং থেকে বাংলাদেশে এসেছেন।
তদন্ত দলের কাঠমান্ডু যাওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে নিমচন্দ্রের স্ত্রী মনিকা ভৌমিক বাংলানিউজকে বলেন, ‘কেউ যদি মিথ্যা কথা বলে ওনার তান নষ্ট করতে চায়, তবে কী আর করা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা শুনেছি, ঢাকা থেকে নাকি কারা আসবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে মনিকা ভৌমিক বলেন, ‘কে আসবে আসুক, সত্য-মিথ্যা যাচাই হয়ে যাবে।’
‘তবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমার স্বামীকে হয়রানি করা হচ্ছে’- অভিযোগ মনিকা ভৌমিকের।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মনিকা ভৌমিক বলেন, ‘এসব অভিযোগ শুনে তো কষ্ট হয়ই, কিন্তু কী আর করবো।’
নিমচন্দ্রের স্ত্রী জানান, ‘ঢাকা থেকে ওনার ছাত্রদের কেউ কেউ ফোন করে বিষয়গুলো জানতে চাইছেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক ২০০৯ সালে নেপালে রাষ্ট্রদূত হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান।
কাঠমান্ডুতে তার দায়িত্বকালের একবছরের মধ্যেই বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ উঠতে থাকে। নারী কেলেঙ্কারি, শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ দিতে ঘুষ, ভিনদেশী অতিথিকে নিয়ে সেদেশের পতাকা উড়িয়ে গাড়িতে ভ্রমণের মতো অভিযোগ উঠেছে এই বর্ষীয়ান শিক্ষাবিদের বিরুদ্ধে।
নিমচন্দ্র ভৌমিক অবশ্য দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগ পন্থী ‘নীল দল’ ফোরামের একজন বিশিষ্ট নেতা। তিনি আবার কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠনেরও পরিচিত ও অপরিহার্য মুখ।
নিমচন্দ্রের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে গত মে মাসেও একটি তদন্ত দল কাঠমান্ডু গিয়েছিল বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর। যদিও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ওই তদন্তের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করা হয়নি।
নিমচন্দ্র ভৌমিকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠনের পরিকল্পনার কথা গত ১৯ জুলাই জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
গঠিত হওয়া তদন্ত দলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি রয়েছেন।
তদন্ত দলের কার্য পরিধি (টার্মস অব রেফারেন্স) নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে বলেও সূত্রের খবর।
নিমচন্দ্রের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ:
আগের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, কাঠমান্ডুতে ভারতের অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল জ্যাকবের সঙ্গে কয়েকটি বৈঠকে নিমচন্দ্র তার গাড়িতে ভারতের পতাকা লাগিয়ে ঘোরাঘুরি করেন।
২০১০ সালে কাঠমান্ডুর ইয়াক অ্যান্ড ইয়েতি হোটেলে মুজিবনগর দিবসের অনুষ্ঠানে তার নির্দেশে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত ও নেপালের জাতীয় সঙ্গীতও বাজানো হয়।
নিমচন্দ্র ভৌমিকের অসংখ্য নারী কেলেঙ্কারির মধ্যে বলিউড তারকা মনীষা কৈরালার সঙ্গে দেখা করতে মনিষার বাড়ি গিয়ে অকূটনীতিকসুলভ আচরণের কথাও তদন্ত প্রতিবেদনে এসেছে।
কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশি পাঁচ তরুণের একটি চিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন করেছিলেন মনীষা। অনুষ্ঠান উদ্বোধনের পর সন্ধ্যায় মনীষার সঙ্গে দেখা করতে তার বাড়িতেও যান নিমচন্দ্র। বাড়িতে ঢুকতে আধা ঘণ্টা ধরে ফটকে দাঁড়িয়ে দারোয়ানদের সঙ্গে দেনদরবার চালান তিনি।
কাঠমান্ডুর ভারতীয় দূতাবাসের মুখপাত্র মিস অপূর্ব শ্রীবাস্তকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করেছিলেন বলেও তদন্তে অভিযোগ করা হয়।
বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ৪ নারীর সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন নিমচন্দ্র। যা দূতাবাসের একজন বাংলাদেশি নারী কর্মকর্তার সামনে পড়ে যায়। ওই নারী কর্মকর্তা পরে ঢাকায় ফিরে বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ে অবহিত করেন।
এদিকে নেপালি শিক্ষার্থীদের দেওয়া বাংলাদেশি বৃত্তির ক্ষেত্রেও ঘুষ নিয়ে বৃত্তির জন্য মনোনয়ন দেওয়ার অভিযোগ ওঠে নিমচন্দ্রের বিরুদ্ধে।
এছাড়া নেপালের অভ্যন্তরীন রাজনীতি নিয়েও মন্তব্য করেন নিমচন্দ্র। যা দেশটির মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টিকে বিব্রত করে। তারাও এ নিয়ে ক্ষুব্ধতার কথা প্রকাশ করে।
এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে এর আগে গত ১৮ জুলাই টেলিফোনে নিমচন্দ্র ভৌমিক বাংলানিউজের এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘সব মিথ্যা। আমার মর্যাদা নষ্টের জন্য কোনও একটি মহল থেকে এসব করানো হচ্ছে।’
ঢাকায় মনীষার পাশে নিমচন্দ্র:
কাঠমান্ডুতে মনীষার বাড়িতে ঢুকতে না পারার অভিযোগের বাইরেও নিমচন্দ্র অবশ্য খোদ ঢাকাতেই মনীষা কৈরালার পাশে বসেন।
চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১১টায় উত্তরায় শান্তা-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজিতে চিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মনীষার পাশে বসেন নিমচন্দ্র।
বাংলাদেশি শিল্পী মোস্তাফিজুল হক ও নেপালের রাজপরিবারের ব্যক্তিগত চিত্রকর শিল্পী কিরণ মানচিত্রকরের ৬ দিনব্যাপী চিত্রপ্রদর্শনী উদ্বোধন করতে প্রধান অতিথি হিসেবে মনীষা কৈরালা ঢাকায় আসেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিক। সেদিনের অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর জিয়াউল হক চৌধুরী, ঢাকায় নেপাল দূতাবাসের কাউন্সেলর কৃষ্ণচন্দ্র আরিয়ান, শান্তা-মারিয়াম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইমামুল হক কবীর শান্ত প্রমুখ।
ওই অনুষ্ঠানে অবশ্য মনীষার সঙ্গে নিমচন্দ্রের কথা বলতে দেখা গেছে। তবে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১১
লিংক
Click This Link
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।