somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযুদ্ধ: একটি বিপ্রতীপ প্রস্তাবনা

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৯:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

০.০ সূচনা
১.০ লক্ষ্য ও পদ্ধতি
১.১ প্রভাবক নির্ণায়ক হেতু ও ঊপহেতু
২.০ প্রস্তাবনা
২.১ প্রথম বিশ্লেষণঃ বাঙালী মুসলমান মানস
২.২ দ্বিতীয় বিশ্লেষণঃ মধ্যবিত্ত শ্রেণীস্বার্থ
৩.০ সংহার

০.০
মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে আজ প্রায় ৩৮ বছর , এখন আমরা অনেক নির্মোহ দৃষ্টিতে আমাদের জাতীয় জীবনের এ ঘটনাটি কে পর্যালোচনা করতে পারি বলে আমি মনে করি। আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্লেষণ, আবেগ বর্জিত অবধারণ করতে পারি আমাদের জাতি রাষ্ট্র উদ্ভবের এ ক্রান্তিলগ্নের। এ বিশ্লেষণ আমাদের বিকাশে সহায়ক হবে, নিজের অবস্থান সম্পর্কে পক্ষপাত থাকলে, নিরপেক্ষ তথা সঠিক ধারণা না থাকলে লক্ষ্য খুঁজে নেয়া দূষ্কর হয়।জানিই না কোথায় আছি, কোথায় যাব কিভাবে বুঝব? প্রশ্ন রয়ে যে ব্যক্তির পক্ষে চুড়ান্ত নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব কি না? না, আমি মনে করি সম্ভব নয়। তবে আমাদের শিক্ষা দীক্ষা সুচেতনা, মনন, জ্ঞান প্রভৃতির সাহায্যে আমরা আপেক্ষিক নিরপেক্ষতার চেষ্টা করতে পারি। জাতীয়তাবাদ বা জাতীয়তাবোধ, ব্যক্তিগত আবেগ আনুভুতি ,পাওয়া হারানোর সমীকরণ , দুঃখ বেদনা, স্বার্থ এসবের উর্ধ্বে উঠে একজন নির্মোহ অবলোকনকারীর দৃষ্টিতে ১৯৭১ কে দেখার প্রয়াস পাওয়া যাক।

১.০
এ-লেখাটা আমি কতদূর পর্যন্ত লিখতে পারব আমার কোন ধারণা নেই, আমি কিছু প্রস্তাবনা(Hypothesis) আকারে কিছু
ধারনা বিবৃত করে যাব, পরবর্তি অনুচ্ছেদসমূহে কেবল একটি প্রস্তাবনা ও তার বিশ্লেষণ থাকবে। লক্ষ্য থাকবে আমার মুক্তিযুদ্ধকে নতুন আলোর রেখায় বোঝার চেষ্টা।'মুক্তিযুদ্ধ' শব্দটি বাঙ্গালীর জন্য প্রযোজ্য- এটি তার মুক্তিযুদ্ধ, পকিস্তানের দৃষ্টিতে এটি পাকিস্তানের গৃহযুদ্ধ, ভারতের কাছে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ।সারা জগতের প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবিরা একে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বলে অভিহিত করে, মধ্যপ্রাচ্য, আমেরিকা, চীনের সরকারী দলিলে এর নাম পাকিস্তানের গৃহযুদ্ধ বা ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ।

১.১
১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের পূর্বাংশে হওয়া এযুদ্ধে ভারত তার আপন স্বার্থ হাসিলের জন্য জড়িয়ে পড়েছিল। এই যুদ্ধের ফলাফল পাকিস্তান রাষ্ট্রের দ্বিধাবিভক্তি ও বাঙালীর জন্য একটি স্বতন্ত্র জাতি রাষ্ট্রের উদ্ভব। এই যুদ্ধের ফলে কেবল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙ্গালীই কেবল মাত্র একটিজাতিরাষ্ট্র গঠন করেছে, বাঙ্গালী হিন্দুর কোন জাতি রাষ্ট্র নেই। বাঙ্গালী হিন্দু সমগ্র বাঙ্গালীর প্রায় অর্ধেক এবং ঐতিহাসিকভাবে তারা শিক্ষা দীক্ষাঅর্থনীতি শিল্প সাহিত্য রাজনীতি ইত্যাকার সব দিক থেকেই বাঙালী মুসলমান থেকে সব দিক থেকে এগিয়ে, এরাই সর্বদা বাঙালীকে সর্ববিষয়ে নেতৃত্ব দিয়েছে। তাদের এ ব্যর্থতাও ঐতিহাসিক এবং বাংলাদেশ যে সর্ববাঙালীর রাষ্ট্র নয় এটিও ঐতিহাসিক ও বিদ্যমান সত্য।আরও লক্ষ্যনীয় এটি কেবল সে সব বাঙলীর রাষ্ট্র যারা ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগ করে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করার জন্য ১৯৪৬ সালে গণভোট দিয়েছিল। তাদের চাওয়া পাওয়ার হিসেব মেলেনি বলেই তারা আবার এ পাকিস্তানের প্রতি অসমর্থন জ্ঞাপন করে নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। এখন প্রশ্ন থেকে যায় কার চাওয়া পাওয়ার হিসেব মেলেনি?
এই চাওয়া পাওয়ার হিসেব কি? কার স্বার্থ হাসিল হয় নি? সর্ববাঙালী মুসলমানের? না, বরং বাঙলী মুসলামানের নতুন উত্থিত ক্ষুদ্রসংখ্যারমধ্যবিত্ত শ্রেণির স্বার্থের সংঘাতই ৭১ এর জনয়িতা। ৮০ ভাগ দরিদ্র মানুষ -দরিদ্র বাঙলী মুসলমানের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন বৃটিশ ভারতে হয়নি, পাকিস্তানে হয় নি, মুক্তিযুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বর্তমান বাংলাদেশেও হয় নি। তবে কার জন্য মুক্তিযুদ্ধ? এই যুদ্ধের সুবিধা ভোগী কারা? ভারত?কংগ্রেস? আমেরিকা? রাশিয়া? বাংলাদেশের নিখিল জনতা? কালোবাজারীরা? নাকে ক্ষমতালিপ্সু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা?

২.০
ব্রিটিশ উত্তর যুগে নবসৃষ্ট বাঙালী মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণীর শ্রেনীগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য তাদের অপরিণত মানসের পরিকল্পনাহীন অপরিণতরাজনৈতিক বিকাশের ফলাফল মুক্তিযুদ্ধ ও অপরিণত ও অরাষ্ট্রবৈজ্ঞানিক রাষ্ট্র
পরিকল্পনার নাম বাংলাদেশ। উপরোক্ত বাক্যটি আমার লেখার thesis Sentence হিসেবে বিবেচ্য হবে।

২.১
প্রথমে লক্ষ্য করা যাক বাঙালী মুসলমান মানসগঠন- যে যে কারণে আমি তাদের অপরিণত বলছি, তাদের সৃষ্ট মুক্তিযুদ্ধ
ও রাষ্ট্রকে অপরিণত বিকাশের ফলাফল বলছি। বাঙালী মুসলামানের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসটি খুবই দৈন্যদশায় পূর্ণ। এরা ৭১ এর আগে মাত্র দু'টি আন্দোলোনে সাড়া দিয়েছিলেন, একটি তিতুমীরের অনুসারীদের দ্বারা পরচালিত ওহাবী আন্দোলন অপরটি দুদুমিয়ার ফরায়েজি আন্দোলন।এছাড়া কোন আন্দোলনে বাঙালী মুসলিম নেতৃত্ব ও স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ নেই । তাও উঁচুশ্রণীর মুসলিম এসব আন্দোলনে অংশ নিয়েছে এমন কোন প্রমাণ নেই, কৃষক জনতাই এ আন্দোলনের হোতা। আধুনিক কোন রাষ্ট্র ও সমাজ দর্শন এ আন্দোলন দুটিকে চালনা করেনি, ধর্মই ছিল এ আন্দোলন দুটির চালিকা শক্তি। বাঙালী মুসলমানের মন এখনো আদিমাবস্থায় আছে, আদিম অবস্থার মানস থেকে পরিণত কিছু আশা করা যায় না। বাঙালীর সামগ্রীক শিল্প সাহিত্য দর্শন বিজ্ঞান রাজনীতি অর্থনীতি সমাজনীতি সংস্কৃতি রুচি জীবনদৃষ্টি কোন ক্ষেত্রেই বাঙালী মুসলমানের কোন উল্লেখযোগ্য অবদান নেই কেবল জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া।এটিই তার সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান-এবং এ কাজটিও সে যথেষ্ট দুর্বল ভাবে সমাধা করেছে। দেখতে পাচ্ছি বাংলাদশ একটি দুর্বল রাষ্ট্র।এমনি যখন অবস্থা তখন সেখানে কী পরিপ্রেক্ষিতে ৭১ সালে কোন দর্শনের আলোকে কী ধরণের রাষ্ট্রচিন্তার উদ্ভব হল?এই পরিপ্রেক্ষিতের নাম মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বিকাশ, দর্শনের নাম বাঙালী জাতীয়তাবাদ। যে রাষ্ট্র আমরা গঠন করেছি তার সাফল্য ও দিগন্ত প্রসারীব্যার্থতা আমাদের সামনে পরিফুষ্ট, তার নাম ২০০৯ সালের বাংলাদেশ।
ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র একটি বিজ্ঞানসম্মত রাষ্ট্র- জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক রাষ্ট্র অন্তত বাংলার ক্ষেত্র প্রযোজ্য বৈজ্ঞানিক রাষ্ট্র নয়। কারণ বাংলাদেশ সৃষ্ট হয়েছে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের উপর নয় বাঙ্গালী মুসলিম জাতীয়তাবাদের উপর। সে কারণেই ইতিহাসের পরিক্রমায় এ-রাষ্ট্র তার রাষ্ট্রধর্ম নির্ধারণ করে এবং সেটি ধোপে টিকে যায়, কেউ প্রতিবাদও করেনা। শেখ মুজিব সে বাঙালী মুসলিম জাতীয়তাবাদের নেতা(অনেকে ভুল করে মনে করেন তিনি বাঙালী জাতীয়তাবাদের মহান নেতা, আমি তাদের সাথে ভিন্নমত পোষণ করি); অপরিণত বাঙ্গালী মুসলমান মানসের অধিকারী এ নেতা (তার সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে তাঁর আবেগ ছিল প্রচন্ড কিন্তু সে আবেগ যুক্তির ধার ধারত না) একটি অপরিণত রাষ্ট্র দর্শন -জাতীয়তাবাদের সাহায্যে অপরিণত রাজনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে একটি অপরিণত রাষ্ট্র ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্ম দিয়েছে । এ-অপরিণত বিকাশের গুরূত্বপূর্ণ পর্যায় মুক্তিযুদ্ধ।
অবিভক্ত ভারতে পাকিস্তান দাবীর একটি রাষ্ট্র দর্শন ছিল-সেটি দ্বিজাতিতত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত - অমুসলিম ঐক্যের উপর প্রতিষ্ঠিত-সাম্প্রদায়িক ধর্মভিত্তিক। এ দর্শনেই এর ধ্বংশের বীজ নিহীত ছিল, জিন্নাহ সেটি বেশ তাড়াতাড়িই বুঝতে পেরেছিলেন তাই একটি একক ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সর্ববাঙালীর উপর উর্দু চাপিয়ে দিতে
চেয়েছিলেন। ভুল হলেও এ পাকিস্তান দাবীর একটি রাষ্ট্র দর্শন ছিল। মুসলিম লীগ যেমন তাদের পাকিস্তান রাষ্ট্রের দাবী এ অঞ্চলের মুস্লিম জনগণের কাছে "সব পেয়েছির দেশ" হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল, তেমনি আওয়ামিলীগ তার ৬ দফাকে একটি কল্পস্বর্গের মত প্রতিষ্ঠা করেছিল। আওয়ামিলীগ এর পেছনে মধ্যবিত্ত শ্রেণী তার শ্রেণীস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য দাঁড়িয়ে ছিল। তারা ভেবেছিল ৬ দফার ফলে তারা চাকরী ব্যাবসা বাণিয্য কাজ কারবারে উচ্চতর সুবিধাভোগী হবে। এই ৬ দফা কোন রাষ্ট্র পরিকল্পনা থেকে উদ্ভুত নয়, তার পেছনে ছিল মধ্যবিত্ত জনমত, আকাংখা। এটি মূলত একটি রাজনৈতিক ইশ্যুভিত্তিক নৈরাজ্যবাদী প্রস্তাবনা ।এই ৬ দফা মুসলিম জনমতের উপর ভিত্তি করে ইসলাম ধর্মভিত্তিক পাকিস্তান রাষ্ট্রের উপর কুঠারাঘাত করে নতুন রাষ্ট্রের বীজ ধারণ করতে পারে কিন্তু সে রাষ্ট্রের আদর্শিক বিকাশ কাঠামো পরিষ্কার করতে পারেনা। বাঙালী মুসলিম নেতৃত্বের সে বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ নেই, ছিলনা। এমত একটি প্রস্তাবনার ফলাফল (আফটার এফেক্ট) ঐ রাজনীতিবিদ বা মধ্যবিত্তের নিয়ন্ত্রণে ছিলনা( তাদের কেবল একটি আকাংখ্যা আছে তাকে কিভাবে বাস্তবায়িত করতে হবে সে বিষয়ে তাদের কোন ধারণা নেই।)- সে ফলাফল সমূহ হল আগরতলা মামলা, গণঅভ্যুত্থান, নির্বাচন, গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ। অর্থাৎ অপরিণত ও স্বতস্ফুর্ত রাজনৈতিক বিকাশের ফলাফল ৭১ এর যুদ্ধ- ভাগ্যিস আমরা সে যুদ্ধে জিতেছিলাম। কোন কর্মপরিকল্পনা ছাড়া এ যুদ্ধে জড়াবার কোন যৌক্তিক কারণ নেই; আমি জানি না আমার রাষ্ট্র কেমন হবে অথচ আমি নৈরাজ্য সৃষ্টি করে যুদ্ধ বাঁধিয়ে বসে আছি এটি কেমন হল?অপরিণত আওয়ামিলীগ নেতৃত্বও শেষপর্যন্ত বিশ্বাস করতে পারেনি যে তারা সত্য সত্য একটি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রিয় কাঠামো থেকে বের হয়ে আসার জন্য একটি সম্মুখ সমরে লিপ্ত হতে যাচ্ছে। যদি তাদের দৃষ্টি অতটা পরিষ্কার হত তবে তারা পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন, ভারত থেকে অস্ত্র আমদানি করতেন, আন্তর্জাতিক জনমত গঠনের চেষ্টা করতেন- লগি বৈঠা নিয়ে ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুলে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলার বদলে কার্যকর পদ্ধতি গ্রহণ করতেন। পরিকল্পনাহীন দর্শনহীন ভবিষ্যত পরিণতি সম্পর্কে কোন ধারণা ছাড়া এ যুদ্ধ তাই পায়ে হেঁটে ভারত চলে গিয়ে আশ্রয় ভিক্ষা করেছে। এতে কারো কোন পরিকল্পনা ছিল না ঘটনা ঘটেছে ঘটনার নিয়মে।

২.২

বাঙালী মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উদ্ভব পাকিস্তান আমলে, তার আগে এর অস্তিত্ব ছিল না,রাজনৈতিক নেত্রিত্ব আসত উচ্চবত্ত-নবাব-নায়েব দের কাছ থেকে।পাকিস্তান প্রতষ্ঠা এ দেশে চাকুরিজীবি-ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্মদেয়।শিক্ষক,বুদ্ধিজীবি,ছাত্র,রাজনীতিবিদ নানা পেশাজীবি-ডাক্তারএঞ্জিনিয়ার,আইনজীবি দের নিতে এ শ্রেণী
গঠিত।মৌলিক উৎপাদনের সাথে এদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। এদের সামাজিক অবস্থান খুবই সংকটময়। এদের সামনে থাকে উচ্চবিত্ত হবার আকাংখ্যা -যা এদের সুবিধাবাদী, পদলেহনকারী উচ্চাভিলাষী করে তোলে এদের আশংকা থাকে নিম্নবিত্তে অবতরণের যা এদের দূর্নীতি প্রবণ করে তোলে। আবার এরাই সমাজের সাংস্কৃতিক বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব
দেয়।সাধারণতঃ সে নেতৃত্ব হয় কায়েমী স্বার্থবাদী। বাংলায় এ মধ্যবিত্তের পরিমান মোটামুতি ১৫ ভাগ, ৮০ ভাগ নিম্নবিত্ত বাকিরা উচ্চবিত্ত। এ মধ্যবিত্ত নেত্রিত্ব সে ৮০ ভাগের কথা বলবে না বলে নি সেটাই স্বাভাবিক। তাদের রাজনৈতিক সামাজিক আকংখ্যা সারা বাংলার ৮০ ভাগের আকাংখ্যার সাথে সংগতীপূর্ণ নয়। এই শ্রেণীর আকংখ্যাই পাকিস্তান আমলে আমাদের রাজনৈতিক গতীশীলতার নির্ণায়ক। তারা শিক্ষিত -তাই উৎপাদন সংশ্লিষ্ট কৃষক জনতা তাদের মতামতকে গ্রহণ করে একটি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তাদের আশা ছিল এ যুদ্ধ তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন আনবে, আনেনি- তা আমরা দেখতে পাচ্ছি, তারা তাদের স্বার্থেই পাকিস্তান ভেঙ্গেছিল, আমার দেশের চাষা এখনো শোষিত, তদানিন্তন মধ্যবিত্ত বর্তমান শাসকদের দ্বারা। আমি খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, মুক্তিযুদ্ধ মধ্যডানপন্থি মধ্যবিত্ত সমাজের স্বার্থে সংঘটিত একটি বুর্জোয়া বিপ্লব, দেশের বৃহত্তর জনতার স্বার্থ এখানে একিভূত হয়নি। কেবল ক্ষমতার পালাবদল ঘটেছে মাত্র- পুরোন শোষকের বদেলে এসেছে নতুন শোষক। আগে এরা ব্রিটিশ ছিল, পরে পাকিস্তানি,এখন বাংলাদেশি। মুক্তিযুদ্ধ এ শোষোক পরিবর্তনের উপাচারমাত্র। যুদ্ধের পর রাষ্ট্র গঠনের সময় ও তারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখে। পরবর্তি সামরিক শাসনসমুহ এর ভিত্তিকে আরও সবল করে। আসলে বুর্জোয়া বিপ্লবের চেহারা ও ফলাফলই এরকম বিধীবদ্ধ। সেখানে মাৎস্যন্যায় চলবে,ক্ষমতার দ্বন্ধ চলবে,নিত্য নতুন পদ্ধতিতে নিত্যনতুন শোষক আসবে। বেশিরভাগ জনতার ভাগ্যের কোন পরিবর্তন আসবে না। এটি মার্ক্সেরঐতিহাসিক বিবর্তনের ত্বত্তকে সিদ্ধ করে।

৩.০
বাঙ্গালীর সবচে গর্বের ধন এই মুক্তিযুদ্ধ। এটি বাস করে তার আবেগের কেন্দ্রস্থলে। একে সে রক্ষা করে, তার অস্তিত্বের সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত এযুদ্ধ। আমি সে সুকুমার অংশকে আহত করতে চাইনা, তার প্রতি আমার সর্বান্তকরণে সহমর্মিতা ও ঐক্য আছে, আমি কেবল একটু নিরাবেগ দৃষ্টিতে মুক্তি্যুদ্ধকে দেখার চেষ্টা করেছি,তাতে আখেরে আমাদেরই লাভ। এ ধরণের লেখার একটি আত্মঘাতি দিক আছে, নিজের সত্বার বিরুদ্ধে কথা বলতে হয়। আবার প্রতিক্রিয়াশীলেরা এ ধরণের লেখাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। আমি এ সম্পর্কে সচেতন। কিন্তু
তাদের ভয়ে গুটিয়ে থাকলেত চলবে না, পথ বহুদূর, পথ বন্ধুর, এগিয়ে চলা ছাড়া উপায় নেই।


দ্রষ্টব্যঃ দায়মোচন
কয়েকটা বিষয় আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, যা ইতোমধ্যেই বিভ্রান্তি তৈরী করেছে এবং পরবর্তি অনুচ্ছেদ সমূহে ও করবে। মুক্তিযুদ্ধে বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথা বলার কোন আগ্রহ আমার নেই, এগুলো আমার সত্বার অংশ। আমি কেবল একজন বহিরিস্থিত পর্যবেক্ষকের দৃষ্টি কোণ থেকে একে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি। স্বাধীনতা বিরোধী-চীনপন্থি বা আওয়ামিলীগ কোন বিশেষ রাজনৈতিক অবস্থানে আমি দাঁড়াব না।
প্লেটো তার রিপাবলিক গ্রন্থে বলেছেন, কোন নাগরিক যদি তার নগর নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে যায় তবে সে নগরের উন্নতীর পথ রহিত হয়ে যায়,নগরকে প্রশাসন কে প্রচলিত বিস্বাশ ব্যবস্থাকে সব সময় প্রশ্নের মুখে রাখা উচিত - তবেই প্রগতীর পথ প্রশস্ত হবে।
আমার মুক্তিযুদ্ধ আমার জাতীরাষ্ট্র গঠনের সোপান তার উৎস, আমার উৎস কে আমি আস্বিকার করতে পারি না, তবে আমি যদি তার ত্রুটি খুঁজে বের করে নেই তবে উত্তরণের পথই এগিয়ে আসবে।
অমুসলিমরা এ দেশের স্বাধীনতা আন্দলনে সামিল হয়নি এধরণের খন্ডিত কোন কথা আমি বলিনি , আমি বলতে চেয়েছি, ৪৭ এ দেশ ভাগের পর পৃথিবীর ইতিহাসে বৃহত্তম দেশত্যাগের ঘটনা ঘটেছিল, হিন্দুরা ভারতে মুসলিমরা পাকিস্তানে স্থানান্তরিত হয়েছিল। এ-ঘটনার প্রভাব বাংলাদেশ সৃষ্টিতে আছে। পূর্ব বাংলা এতে আরো বেশি মুসলিম প্রধান হয়ে পরল-যে মুসলিমরা তুলনামূলক ভাবে অপরিণত। এরা কিছু অপরিণত রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতির জন্ম দিল। এটি কেবল সমালোচনা, দোষ আরোপ নয়, আমার লক্ষ্য এখন বাঙ্গালী মুসলিম পরিণত আচরণ যেন করতে পারে , ভুল সুধরে নেয়।
ভুলটা হল জাতীয়তাবাদের ভিত্তিরে রাষ্ট্র পরিকল্পনা যেটিই প্রগুক্ত কারণে বাঙ্গালী মুসলমান জাতীয়তাবাদে পর্যবাসিত হয়ে পড়েছিল । পাকিস্তানের ধর্ম ভিত্তিক রাষ্ট্রে ফলাফল আমরা দেখছি এটি দশম শ্রেণীর রাষ্টাদর্শ, জাতীয়তাবাদ পঞ্চম শ্রেণীর আর ধর্মীয় শ্রেণী ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ ষষ্ঠ শ্রেণীর নিকৃষ্ট রাষ্ট্র দর্শন। আমাদের এ থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে। এ দেশ মুসলিম প্রধান বলেই, এরশাদ রাষ্ট্র ধর্ম ঘোষণা করল কেউ আজ পর্যন্ত তা পরিবর্তণ করতে পারল না। উৎস মূহূর্তে আমার আদর্শ যা ছিল তা এত ডেফিনিট-রিজিড থাকলে এ ঘটনা ঘটত না। সেকুলারিজমের উপর আমাদের এতটা এমফ্যাসিজ ছিলানা।
এ দন্ডে "ভারতের স্বতস্ফুর্ত মানবিক আবেদনে সাড়া দেয়া" নিয়ে কিছু বলবনা সময় সংকটের কারণে। এনিয়ে বিশদ বলার আশা রাখি।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৯:৪৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×