somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রদ্ধাবোধ

২৯ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সবসময় আমার বাবা বলেন, "যদি অর্থ নষ্ট হয়, তবে মনে কর কিছুই হয়নি। যদি স্বাস্থ্য নষ্ট হয়, তবে কিছুটা ক্ষতি হল। কিন্তু যেদিন চরিত্র নষ্ট হবে, মনে কর তুমি সেদিন থেকে ধ্বংস হবে"। এখানে চরিত্র বলতে বিবেক, আত্মমর্যাদা কিংবা চরিত্র সবকিছুকেই বোঝায়। আমার বাবা ও কিছু শিক্ষক আরেকটা কথা বলেন, " ভাল ছাত্র নয় বরং ভাল মানুষ হও"। আমি সেজন্যই কিছুটা ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকি। অনেক কাজ করতে পারিনা। শুধু বাবার কথা মনে পড়ে।

স্কুল জীবনে দেখেছি অনেক ছাত্র ইংরেজি শিক্ষকের কাছে পড়ে পরীক্ষার প্রশ্ন পাওয়া যায় বলে। জানিনা কথাটা কতটা সত্য। কারন আমার ইংরেজি শিক্ষকের কাছে পড়া হয়নি।

কলেজ জীবনে নটরডেম কলেজে পড়েছি বিধায় শান্তিতে ছিলাম। কোনদিন ক্লাস করার সময় মনে হয়নি ক্লাস করছি। সব শিক্ষকদের ক্লাস মনে হয়েছে গল্প শুনছি। কখন যে পড়া হয়েছে বুঝতেই পারিনি। নটরডেম কলেজে কাউকে প্রতিযোগিতা করতে দেখিনি। কারন সবাই ভাল। তবে আমাদের প্রতিযোগিতা হত ক্লাবগুলোর মধ্যে। কোন ক্লাব কত অনুষ্ঠান করতে পারে।

আমি সবসময় আমার শিক্ষকদের সম্মান করি। একবার স্কুলে আমাদের বিজ্ঞান শিক্ষক বোর্ডে একটা শব্দ ভুল লিখলেন। আমি তৎক্ষণাৎ দাড়িয়ে বললাম, "স্যার, বানান ভুল হইছে"। আমার শিক্ষক বানান ঠিক করে বললেন, " শিক্ষকদের কখনও সরাসরি ভুল ধরতে নেই। এতে তারা কষ্ট পান। যেখানে তিনি ভুল করছেন সেই লাইনটি শিক্ষকের কাছে জানতে চাও তাহলে তিনি নিজে ঠিক করে দেবেন। আর কোন নতুন বিষয়ে জানার থাকলে তাকে সময় দাও। তিনি যে সব বিষয় জানবেন তা ঠিক নয়। " সেদিন আমার সেই শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বেড়ে গেল।

ছাত্র ছাত্রীদের সাথে শিক্ষকদের সম্পর্ক ভাল থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সব শিক্ষকদের সাথেই আমার সম্পর্ক ভাল।

প্রথম সেমিস্টারের ঘটনা, তার আগে বলে রাখা ভাল আমরা পড়ছি বাংলা মিডিয়ামে। কিছু অতি উৎসাহী ছাত্র ছাত্রী ইংরেজিতে একটা বিষয় লেখার জন্য আমাদের এক শিক্ষকের কাছে গেল। ঐ শিক্ষক বললেন হয় ক্লাসের সবাই ইংরেজিতে দাও না হলে সবাই বাংলায় দাও। খুবই যুক্তিযুক্ত কথা। এক ক্লাসে দুই মিডিয়ামে শিক্ষকদের যেমন পড়াতে কষ্ট হয়, তেমন আমাদের পড়তেও কষ্ট হয়। যাই হোক, তখন ওরা শিক্ষকের নামে উল্টা পাল্টা কথা বলতে লাগল। আমি শুধু একটা কথাই তখন বলেছি, " তোমরা যদি এত বেসি জান তাহলে তোমরা আমাদের পাঠদান করতা, আর যেন কোন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কথা না শুনি।"

কিছুদিন পরের ঘটনা, একটা মেয়ে ক্লাসে এসে হঠাৎ বলল সে নাকি অন্য বিভাগের এক স্যার এর সাথে প্রেম করে। স্যার এর নাম ধরে আরও অনেক কথা বলল। মনটাই খারাপ হয়ে গেল আমার। ঐ স্যার এর সাথে মেয়েটির এত ভাল সম্পর্ক যে আমরাও ধন্ধে পড়ে গেলাম। ঘটনা সত্যি কিনা মিথ্যা তাই আর যাচাইয়ের প্রয়োজন মনে করিনি। কয়েকমাস পরেই মেয়েটি অন্য একটি ছেলেকে বিয়ে করল। মজার বেপার হল ঐ মেয়েটা তেমন ভাল ফলাফল করেনি। কিন্তু ঐ বিষয়ে এ প্লাস পেল।

কিন্তু খুব কষ্ট পাই যখন দেখি শ্রদ্ধাবোধ নাম্বার কেন্দ্রিক। যে কোন কারনে হোক শিক্ষকরা কিছু ছাত্রদের পছন্দ করেন। এক্ষেত্রে কিছু ছাত্র ছাত্রীরা শিক্ষকদের এই দুর্বলতাকে ভাল নাম্বার পাওয়ার জন্য কাজে লাগায়। ঐ শিক্ষক যতদিন ক্লাস নেবেন ততদিন সেই শিক্ষকের জন্য নাম্বারপ্রেমিরা সবই করতে পারে। ক্লাসের মধ্যে যাদের পছন্দ নয় তাদের বিরুদ্ধেও শিক্ষকদের কাছে কুটনামী করে। তবে অধিকাংশ শিক্ষক তাদের কথা বিশ্বাস করেনা বলে আমার মনে হয়। কিন্ত ঐ নাম্বারপ্রেমিদের আসল চরিত্র প্রকাশ পায় যখন শিক্ষকের ক্লাস না থাকে তখন। বিশেষ করে কোন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয় চলে গেলে তাদের নামে এরাই কটু কথা ছড়ায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর আমি আমার কয়েকজন শিক্ষকের কাছে কৃতজ্ঞ। তাদের ক্লাসে আমি কথার প্রেক্ষিতে যুক্তি দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অনেক কথাই বলেছি। তারা আমার কথা শুনেছেন, ভুল হলে শুধরে দিয়েছেন। কিন্তু কখনও রাগ হন না বা হন নি। আমাদের তো ভুল হবেই। সেটা শোধরানোর সময়তো এখন।

আমার বাবার একটা ঘটনা দিয়ে লেখা শেষ করব। গ্রামের বাড়িতে গেছি বাবার সাথে। কোন এক কাজে বাবাসহ বাজারে গেছি। সেখানে গিয়ে তিনি তার শিক্ষকের খোঁজ করতে লাগলেন। হঠাৎ তার শিক্ষকের সাথে দেখা হতেই সালাম দিলেন। তিনি ওখানে এমন আচরন করলেন যে উনি তার শৈশবের ছাত্র হয়ে গেছেন। স্যার বুঝি বেত নিয়ে দাড়িয়ে আছেন। স্যার বাবাকে দেখতেই হাত ধরে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। এতটা আবেগঘন মুহূর্ত ছিল কখন যেন মনের অজান্তেই আমার চোখের কোনায় জল এসে পড়েছে টের পেলাম না।

শিক্ষকের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধ হোক ভালবাসাপূর্ণ, নির্মল আর অনাবিল। কোন স্বার্থ যাতে ঘেঁষতে না পারে এই সম্পর্কে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×