সাইকেলের নেশা আমার আগের থেকে। নানুর একটা ফনিক্স সাইকেল ছিল। নানু বাড়িতে বেড়াতে এলে ঐ সাইকেলই আমার সব। সারাদিন খাওয়া নাই, গোসল নাই শুধু সাইকেল চালানো।
একদিন বিকাল বেলা। কালো মেঘে চারিদিকে অন্ধকার। নানা বাড়ি থেকে কিলো সাতেক দূরে আমাদের বাসায় যেতে হবে একটা মোবাইলের সকেট আনার জন্য। কে যাবে এমন আবহাওয়ায় অত দূর। সাইকেল চালানোর নেশায় কাউকে না জানিয়ে আমিই রওনা হলাম।
হালকা বাতাস হচ্ছে। মিনিট কয়েক পরেই বাতাসের সাথে হালকা বৃষ্টি। আমি সাইকেল চালাচ্ছি। মনে হচ্ছে আমি বৃষ্টির আগেই পৌঁছে যাব। জীবনের প্রথম প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই। নিজেকে খুব নায়ক মনে হচ্ছিলো। রাস্তা পুরোপুরি ফাঁকা। খুব দ্রুত সাইকেল চালাচ্ছি।
বাতাসের বেগ বেড়ে গিয়ে ঝড় শুরু হয়েছে। আগে ঝড় হলে বাসার জানালা দিয়ে ঝড় দেখতাম। আজকে ঝড় আমার সামনে। গাছগুলো বাতাসের সাথে নাচ্ছে। বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা পড়ছে। গাঁয়ে এসে পাথরের মত বিঁধছে। সারা শরীর পুরোপুরি ভিজে কাঁপুনি শুরু হয়েছে। হঠাৎ রাস্তার উপর একটা গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়তেই আমার চৈতন্য হল। এভাবে সাইকেল চালালে কখন গায়ের উপর গাছ ভেঙ্গে পড়ে তার ঠিক নেই। যত দ্রুত সম্ভব কোথাও আশ্রয় নেয়া দরকার। রাস্তার পাশে একটা বাড়ি। ঢুকে পড়লাম সেই বাড়িতেই।
“কে?” এক বৃদ্ধা মহিলা জিজ্ঞাসা করলো। আমি আমার পরিচয় দিলাম। আর এই ঝড়ের মধ্যে একটু আশ্রয় চাইলাম। মহিলা আমাকে বসতে দিলেন। একটা পুরনো লুঙ্গি পরতে দিলেন। আমি লুঙ্গি পরে খাটে বসলাম। একটা হারিকেন আমার ঘরে রেখে গেলেন। ঝড় এখনও কমেনি। ঘণ্টা খানেক পর বৃদ্ধার ছেলে এল। সে ভ্যান চালায়।
এরিমধ্যে আমার প্রচণ্ড জ্বর চলে এসেছে। তাই বসে থাকতে কষ্ট হচ্ছিল। শুয়ে পড়লাম।
কিছুক্ষন পর রাতের খাবার তৈরি করে আমাকে আমাকে খেতে দিল। খাবার আয়োজন তেমন কিছু না ভাত, ডাল, করল্লা আর ডিম। কিন্তু তাদের ব্যবহার আর ভালবাসায় এই খাবারটুকু আমার কাছে অনেক দামী। জ্বরের কারণে তেমন খেতে পারলাম না।
সারারাত জ্বরের মধ্যে দেখলাম ঐ ভ্যান চালক আমার পাশে বসে আছে। বারংবার আমার কপালে হাত দিয়ে জ্বর মাপছে। মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছে।
কয়েক ঘণ্টার পরিচয়ে আমাকে যেভাবে আপন করে নিয়ে যত্ন করলো তা হয়ত লিখে প্রকাশ করা অসম্ভব। তবুও তাদের ঐ দিনের আতিথেয়তা আমি আজো ভুলতে পারিনা।