
কিছু কথা:
প্রত্যেকে তার নিজের মত করে লিখবে এটাই স্বাভাবিক। যখন লেখায় কারো ছায়া পড়ে তখন তা অশুদ্ধ হয়ে যায়। সৃষ্টি হিসেবে মৌলিকতার বিকল্প নেই। কি লিখছি নিজেই জানিনা। ক'দিন অত্যাধিক হুমায়ুন পড়ে মাথা আউলা হয়ে গেছে। সেই ভার সহনীয় করতেই কলম টেনে নিয়েছিলাম । তার ফল হল এই যে লেখার মধ্যে ছায়া পড়ে গেল।
কুছ পরোয়া নেহি টাইপ ভাব নিয়ে তাই ব্লগে শেয়ার করলাম। বিনয় করেই বলছি বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত!
নাম নিয়ে কিছু বলার নেই। কারন নাম টা ভেবে চিন্তে দেয়া না। একটা দিতে হয় বলেই দিলাম। নিয়তির হাতে ছেড়ে দিলাম নিজেকে!
*******
শোবার ঘরে জলচৌকির উপর শীতল পাটি বিছিয়ে দুপুরের খানা খেতে বসেছেন শেখ হাসানুর রহমান। খাবার জন্য তার আয়োজন দেখার মত। বড় কাঁসার গোল থালায় ছোট ছোট বাটিতে তরকারি সাজানো। জুঁই ফুলের মত ঝরঝরে ভাত। খাওয়া শেষে ঘরে পাতা দই খান তিনি। আজ তার যে কোনো কারনে মন বিক্ষিপ্ত। তাঁর স্ত্রী হাসিনা খাতুন কিছু একটা বলতে চাচ্ছেন অনেকক্ষন ধরেই। স্বামীর মেজাজের উপর ভরসা করতে পারছেন না দেখেই বলতে পারছেন না। তিনি মুখ খুলতেই হাসান সাহেব ধমকে উঠলেন।
- তুমি কথা বেশি বল। এখন থেকে কথা কম বলবা। মুখ নাড়ানো বন্ধ করো। খবরদার মুখ নাড়াবানা। আমার সামনে যখন থাকবা তোমারে যেন পান খাইতে না দেখি। কথা কওনের সময় যে পানের টুকরা ছিটকা বাইরায়া আসতেসে সে খেয়াল আছে? ভাতের নলার সাথে কি তোমার পানের টুকরা চাবামু? তাইলে ভাত মিষ্টি হইবো? হুঁশ কম তো তোমার পান খাওনের কি কাম!
আবার পাখা বন করলা কেন? হাওয়া দাও। কথা বলতেসি মন লাগায়া শুনবা। দেইখা তো মনে হয় হাত দিয়া কথা গিলতেসো।তোমার মত মেয়ে মানুষরে ঘরের বান্দী বানানোর কাম ছিল। বৌ বানায়া হইছে এক জ্বালা। খাওন শেষ হইলে কি বলবা গুছায়া রাখো!
- জি আচ্ছা!
- তোমারে যে বলছিলাম করল্লা মোটা মোটা করে কাইটা ডুবা তেলে ভাইজা দিতে। কথা কি কানের মধ্যে ঢুকে নাই? থাবড়ায়া কইলে ঢুকতো? ঢুকব আর কেমনে কানে তো সোনা বোঝাই কইরা রাখছো।
সপ্তাহে একদিন তিতা খাওনের দরকার! তাইলে শরীরের কলকব্জা ঠিক থাকে।
- করল্লা ভাজা করসিলাম। তিতা বেশি তাই আপনেরে দেই নাই।জমিলা করল্লা কাটার পরে ভুল করে ধুয়ে ফেলেছে।
- তাতো ভুল করবোই। স্বামীর জন্য এক পদ নিজের হাতে রানবা তাও তোমার বান্দি লাগে। আরে করল্লাতো খামু তিতার লাইগাই। যাও নিয়া আসো যাও!
আচ্ছা থাউক। আইজ আর খাওনের ইচ্ছা নাই। তিতা খাইতে হয় খাওন শুরুর আগে।
তোমার পুত্রধন কই? খাওনের সময় তারে সামনে না দেখলে আমার মেজাজ ঠিক থাকেনা।
- সে এখনো ফেরে নাই।
- কি বলছো? মিনমিন কইরা কথা বলবানা।স্পষ্ট কইরা বল। কথায় আছে,
'' মিনমিনে নারী
তাহার মুখে জুতার বাড়ি ''
যা বলবা স্পষ্ট কইরা বলবা। পান খাইয়া খাইয়া তোমার জিব মোটা হয়া গেছে। কথা কইতে গেলে নড়েনা। শরীর তো মাশাল্লাহ চর্বির গুদাম বানাইসো।
কি হইলো? কথা কওনা কেন?
- আপনার পোলা স্কুল থাইকা এখনো ফিরে নাই। স্কুল সকাল দশটা হইতে বৈকাল চার ঘটিকা পর্যন্ত। দুপুরের খানা সবুরের হাতে কইরা দিয়া পাঠাইসি। সামনে বসায়া খাওয়াইয়া তারপর বাটি নিয়া ফিরবে।
- এইতো ঠিকমত শোনা যায়। এখন তো বলতে শুরু করলা, শেষ করতে আর চাইবানা। কথার ডালপালা মেলতে থাকবা। দইয়ের মালসা আগায়া দাও।
রাইতে এই মাছ আমি খামুনা। মবিন রে বলবা ছোট তেলাপিয়া ছিপ ফেইলা ধরতে। রাইতে কড়া কইরা ভাইজা দিবা।
হাত ঠিকমত না ধুইয়া দই পাততে দিসো কেন? দইয়ের মধ্যে তোমার গায়ের রসুনের গন্ধ। থু.. এই দই মানুষ কেমনে খাইবো?
এক্ষুনি এসব নিয়া আমার সামনে থাইকা দূর হও।
রাগ করে উঠতে গিয়ে হাসান সাহেব জলচৌকির পায়ায় পা বাধিয়ে ফেললেন। তিনি তাল সামলাতে পারলেন না। মালসা ভর্তি দইয়ের উপর চোখ বন্ধ করে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন।
- তাকায়া হা কইরা কি দেখিস বান্দীর বাচ্চা। আমারে ওঠা। খবরদার মানুষ জন ডাকবিনা। মূর্খ মাইয়া, তর স্বামীর ইজ্জতের দাম লাখ টাকা।
হাসিনা খাতুন দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাঁকে ধরতে গেলেন। দুদিন থেকে মানুষটার মাথা প্রায় খারাপের দিকে। সুযোগ পাইলেই উল্টাপাল্টা বকছে।
কি হয়েছে তা তিনি বলার প্রয়োজন বোধ করছেন না। হাসিনা খাতুন কোন একটা সমস্যা বুঝছেন কিন্তু জানার কোনো উপায় নেই।
গায়ে রসুনের গন্ধের কথা এ কদিন ধরে শুরু করেছেন হাসান সাহেব। একটু আগে গোসল সেরে গোলাপ রঙের পাটভাঙা শাড়ি পরেছেন তিনি। ন্যাপথলিনের গন্ধ থাকতে পারে তার গায়ে কিন্তু রসুন হতেই পারেনা! তার মন দ্রুত খারাপ হয়ে যাচ্ছে। চোখে পানি এসে পড়ছে। একবার তিনি ভাবলেন কিছুটা তোলার পর ছেড়ে দেবেন,বলবেন হাত ফস্কে গেছে ! রসুন দইয়ের সাথে মাখামাখি যখন হয়েছে ভালমত হোক।
চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:১৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


