somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তথ্যঃ বাংলাদেশের কিছু মেলা যা অনেকেরই অজানা

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নানা রকম মেলা, পার্বনের দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। প্রতিবছর বাংলাদেশে বৈশাখি মেলা,বইমেলার পাশাপাশি কিছু মেলা অনুষ্ঠিত হয় যা স্বীয় বৈশিষ্ট্যে অন্যমেলা থেকে একটু আলাদা। আসুন সেরকম কিছু মেলা সম্পর্কে জেনে নেই।

||--- ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মাছের মেলা ---||



মাছের মেলা বলতেই বোঝা যায় হরেক রকম মাছের এক বিশাল সমারোহ। মজার ব্যাপার হলো মাছের এরকম একটা মেলা বহুকাল ধরে হয়ে আসছে। এটা বগুড়া জেলা শহর হতে ১১ কিলোমিটার পূর্বদিকে ইছামতি নদীর তীরে পোড়াদহ নামক স্থানে প্রতিবছর বসে। এই মেলার পেছনে একটা প্রচলিত কাহিনী রয়েছে।

প্রচলিত কাহিনীঃ
মেলা শুরুর সঠিক সময় কেউই জানে না বা এ নিয়ে মতভেদ আছে। তবে জানা যায় প্রায় চারশত বছর পূর্বে মরা বাঙালি নদীর জলে প্রতি বছর মাঘের শেষ বুধবারে অলৌকিক ভাবে এক বিশাল কাতলমাছ(মতান্তরে অন্য কোন মাছ) জেগে ওঠে এবং তার পিঠে সোনার ঝুড়ির মত দেখতে পাওয়া যায়। এরপর থেকে প্রতিবছর ঠিক এই সময়টায় এই দৃশ্য দেখার জন্য গ্রামবাসীরা জড়ো হতে থাকে। এসময় এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব ঘটে এই মেলা সংগঠনের স্থানে প্রাচীন এক বটগাছের নিচে। যিনি এই মাছের নিকট অর্ঘ্য নিবেদন করেন এবং একসময় এখানে আশ্রম গড়ে ওঠে এবং সন্ন্যাসী পূজার আবির্ভাব হয়। এসময় ধীরে ধীরে লোক সমাগম বাড়তে থাকে যার ফলে একসময় এই মেলার গোড়াপত্তন হয়। সেই থেকে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মেলায় মানুষ জন জড়ো হয়ে বেচাবিক্রির মাধ্যমে মেলাটি আজকের অবস্থায় আসে।

কখন মেলা বসেঃ
প্রতি বছর মাঘ মাসের শেষ তিন দিনের মধ্যকার বুধবার অথবা ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার মেলা বসে। তবে মেলা চলে এই বুধবারের আগের তিনদিন থেকে শুরু করে পরের দুইদিন পর্যন্ত।

মেলার প্রধান আকর্ষণঃ

মেলার অন্যতম আকর্ষণ বিভিন্ন প্রজাতির বৃহদাকৃতির মাছ। নানা প্রজাতির বড় বড় মাছ এখানে পাওয়া যায়; বিশেষ করে নদীর বড় বড় বাঘাইর, আইড়, বোয়াল, কাতলা, পাঙ্গাস, সামুদ্রিক টুনা, ম্যাকরেল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেচা-কেনা হয়। তবে চাষকৃত বিভিন্ন ছোট বড় আকারের মাছও পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়। এছাড়াও মাছ সম্পর্কিত বিভিন্ন দ্রব্য,ঘরবাড়ির জিনিসপত্র, আসবাবপত্র, বাঁশ ও বেতের জিনিস, নানা জাতের মাছের আকৃতির বিশাল আকৃতির মিষ্টি বিক্রি হয়। এছাড়াও সার্কাস, নাগরদোলা ও পালাগানের ব্যবস্থা করা হয়।

||--- বউ শাশুড়ি মেলা ---||



আমার দেখা এ যাবৎ অদ্ভুত মেলার মধ্যে বউ শাশুড়ি মেলা অন্যতম। এই বছর ৮ ও ৯ মার্চ লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার সিংগীমারী ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ অদ্ভুত এই মেলার আয়োজন করে। ইউপি চেয়ারম্যান এম জি মোস্তফা কিছুটা নতুনত্ব আনার জন্য এরকম একটা আয়োজন করেন বলে জানান।

ভাববেন না এখানে বউ- শাশুড়ি ক্রয় বিক্রয় হয়। এখানে আগত শাশুড়ি বউয়ের মধ্য থেকে আদর্শ শাশুড়ি বউ নির্বাচন করা হয়। আশেপাশের গ্রাম থেকে অনেক শাশুড়ি বউ অংশগ্রহন করে। এবছর অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে উপজেলার সিংগীমারী গ্রামের আবু বরকতের স্ত্রী আঞ্জুমান আরাকে আদর্শ শাশুড়ি ও একই গ্রামের আমির হোসেনের স্ত্রী বিউটি বেগমকে আদর্শ বউ ঘোষণা করা হয়।

অন্যান্য আয়োজনঃ
মেলায় খেলনাসামগ্রী ও মণ্ডা-মিঠাইয়ের স্টলের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অন্যরকম মেলা বেশ কৌতুহলের জন্ম দিয়েছে ইতিমধ্যে।

এছাড়াও এরকম আরও একটা মেলার খবর পাওয়া যায় যা এ বছর সেপ্টেম্বর মাসে হয় এই জেলারই কালীগঞ্জ উপজেলার ২নং মদাতি ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে। মেলাটির আয়োজন করা হয় প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় বাস্তবায়িত এইচআর এইচ প্রকল্পের অধীনে। মেলার উদ্দেশ্য ছিল, উপজেলার ৯টি ওয়ার্ডের বউ-শাশুড়ির মধ্যে নিরাপদ প্রসব ও সচেতনতা বাড়ানো। কোন বেচাকেনা না থাকা সত্ত্বেও বেশ ভীড় ছিল দর্শনার্থীদের।

||--- জামাই মেলা ---||


বউ-শাশুড়ির মেলা থাকবে আর জামাই মেলা থাকবে না তা কি হয়। জামাই মেলা নাম হলেও এখানেও জামাই বেচাকেনা হয় না। এই মেলার উদ্দেশ্য সাধারণত মেয়ে জামাইকে আপ্যায়ন করা শ্বশুরবাড়ি কর্তৃক। বছরের অন্যান্য সময় গ্রামবাসীরা অপেক্ষা করে এই ব্যতিক্রমধর্মী মেলার জন্য।

স্থান এবং প্রচলিত ইতিহাসঃ
"জামাইমেলা" এ সম্পর্কে একটু ঘাটাঘাটি করে জানতে পারলাম যে দেশের কয়েক জায়গায় বিভিন্ন সময়ে প্রায় একই নামে মেলা হয়ে থাকে। যেমনঃ

জামালপুরের জামাইমেলাঃ
ভারত বিভক্তির আগ পর্যন্ত বারুনি স্নান উপলক্ষে চৈত্র মেলা বসত যাকে কেন্দ্র করে হিন্দু মুসলমান সবাই উৎসবে মেতে উঠত। ভারত বিভক্তির পর এই মেলা 'জামাইমেলা' নাম ধারণ করে।

বগুড়ার জামাইমেলাঃ
চৈত্রসংক্রান্তি আর পয়লা বৈশাখে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার থালতা মাজগ্রাম ইউনিয়নের পাঠান গ্রামে এ মেলা বসছে আনুমানিক ২০০বছর ধরে। প্রাচীন এ মেলায় লোকসমাগম বেড়ে যাওয়ায় পাশের নিমাইদীঘিতেও আরেকটি মেলা বসছে এক দশক ধরে। এটা "জামাইমেলা" নামেই পরিচিত।

টাঙ্গাইলের শতবর্ষের জামাইমেলাঃ
প্রতিবছর ১২ বৈশাখ টাঙ্গাইলের সদর উপজেলার রসুলপুরে অনুষ্ঠিত হয় জামাই মেলা। রসুলপুরের বাছিরন নেছা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজন করা হয় মেলার। রসুলপুরসহ আশপাশের ৩০টি গ্রামের হাজার হাজার লোকের সমাগম ঘটে মেলায়। দ্বিতীয়দিন বসে বউমেলা আর প্রথমদিন জামাইমেলা।

কিশোরগঞ্জ এর জামাই-বউ-মাছমেলাঃ
কিশোরগঞ্জের সর্ববৃহৎ কটিয়াদী উপজেলার কুড়িখাঁই বার আউলিয়ার অন্যতম হযরত শাহ্ শামসুদ্দিন বুখারী (র.) ওরস উপলক্ষে ৮০০ বছর ধরে চলে আসছে এই মেলা। এটা "জামাই-বউ-মাছমেলা"। জানা যায়, ১২২৫ খ্রিস্টাব্দে বার আউলিয়ার সাথে হযরত শাহ্ সামসুদ্দিন আউলিয়া (র.) তিনজন সহচর শাহ্ নাছির, শাহ্ কবির ও শাহ কলন্দরকে সঙ্গে নিয়ে ধর্ম প্রচারের জন্য কটিয়াদী উপজেলার কুড়িখাঁই আস্তানা স্থাপন করেন।

শেরপুর( বগুড়া) এর কেল্লাপোষী অথবা জামাইবরণ মেলাঃ
বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় গত পাঁচ শতাব্দী ধরে প্রতিবছরের জৈষ্ঠ্যের মাঝামাঝি সময়ে উৎসবে মেতে উঠে এই অঞ্চলের মানুষ। আর এই উৎসবের উপলক্ষ্য ৪৫৯ বছর ধরে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী কেল্লা পোষী মেলা। স্থানীয়দের ভাষায়, যাকে ‘জামাইবরণ’ মেলাও বলা হয়ে থাকে। কেল্লাপোষী মেলা সম্পর্কে তেমনি একটি লোকগাঁথার কথা জানা যায়। ১৫৫৬খ্রিষ্টাব্দ থেকে এ মেলা হয়ে আসছে বলে কথিত আছে। এ সম্পর্কে জানা যায়, বৈরাগ নগরের বাদশা সেকেন্দারের একজন ঔরসজাত এবং একজন দত্তক ছেলে ছিলেন। ঔরসজাত ছেলের নাম ছিল গাজী মিয়া আর দত্তক ছেলের নাম কালু মিয়া। গাজী মিয়া দেখতে খুবই সুদর্শন ছিলেন। তারা রাজ্যের মায়া ত্যাগ করে ফকির সন্ন্যাসীর বেশ ধারণ করে ঘুরতে ঘুরতে ব্রাহ্মণ নগরে আসেন। সেখানে ব্রাহ্মণ রাজমুকুটের একমাত্র কন্যা চম্পা গাজীকে দেখে মুগ্ধ হন। একপর্যায়ে তারা দু’জন দু’জনকে ভালবেসে ফেলেন। পালিত ভাই কালু মিয়া বিষয়টি জানতে পেরে গাজীর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে মুকুট রাজার নিকট যান। মুকুট রাজা ফকির বেশী যুবকের এরূপ স্পর্ধা দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বন্দী করেন। এতে গাজী মিয়া কঠিন আঘাত পান। তিনি মুকুট রাজার নিকট থেকে ভাই কালু মিয়াকে উদ্ধারের জন্য কেল্লাপোষী নামক একটি দূর্গ নির্মাণ করেন। পরে রাজার সঙ্গে যুদ্ধ করে ভাইকে উদ্ধার এবং তার কন্যাকে বিয়ে করেন। আর তিথি অনুযায়ি ওই দিনটি ছিল জৈষ্ঠের দ্বিতীয় রোববার। ওই সময় গাজীর বিয়ে উপলক্ষে কেল্লাপোষী দূর্গে নিশান উড়িয়ে তিন দিনব্যাপি আনন্দ উৎসব চলে এবং সেখানে মাজার গড়ে তোলা হয়। মেলা চলাকালে সেখানে ভক্তরা আসর বসায়। ওই দিনগুলোকে অম্লান করে রাখতে প্রতি বছর তিন দিনব্যাপি এ মেলা বসে।

নানা আয়োজনঃ
প্রায় সব জামাইমেলার ক্ষেত্রে একইরকম আয়োজনের ব্যবস্থা রাখা হয়। গ্রামের গেরস্থরা মেলা উপলক্ষে মেয়ে-জামাইকে দাওয়াত করে। মেলার কয়দিন মেয়ে-জামাইকে নানা উপহার, সেলামি দেয়া ছাড়াও সব ধরণের মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করা হবে। এই উৎসব আনন্দে শরিক হতে দূরে বিয়ে দেয়া মেয়ে আর জামাইরা অপেক্ষায় থাকে সারা বছর। মেলা উপলক্ষে শশুড়বাড়ি এসে সবকিছুকে ছাড়িয়ে জামাইরা মন ভরে উপভোগ করে শ্বশুড়বাড়ির আদর-আপ্যায়ন।

গোপালপুরের মেলা বিশাল এলাকা জুড়ে বসে। এই মেলায় গ্রামীণ ঐতিহ্যের সবকিছুর সাথে গেরস্থের প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র, ফার্নিচার ছাড়াও ঐতিহ্যবাহী গোপালপুরের বিখ্যাত নানা রকমের মিষ্টির পসরা নিয়ে বসে দোকানিরা। বিশেষ করে মেলার বালিশ মিষ্টি দৃষ্টি আকর্ষণ করে আগত দর্শনার্থীদের।



অন্যান্য সব মেলার ক্ষেত্রে শ্বশুরবাড়ি থেকে তাদের জামাইদের হাজার হাজার টাকা দেওয়া হয়। সেই টাকার সাথে কিছু টাকা যোগ করে শ্বশুর বাড়ির জন্য এই মেলা থেকে বড় বড় মাছ, মিষ্টি কিনে নিয়ে যায়। কোন কোন গ্রামে মেলা থেকে মাছ না কিনলে সেই মাছ বাড়িতে নেওয়া যায় না। বড় বড় মাছ নিয়ে তাই এখানে আগমন ঘটে মাছ বিক্রেতাদের। কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় শ্যালক শ্যালিকার দাবী অনুযায়ী জামাইকে অনেক কিছু কিনে দিতে হয়।




শেরপুরের জামাইবরণ মেলায় জামাইদের মোটা অংকের সেলামী দেওয়া হয়। সেই টাকায় খাসী কিনে আনেন জামাইরা। এছাড়া মাটির হাড়ি পাতিল ভরে মিষ্টান্ন, চিড়া মুড়ি অন্যান্য সামগ্রী কিনে আনেন এবং শ্যালক শ্যালিকা নিয়ে ঘুরে বেড়ান। সার্কাস, নাগোরদোলা, হুন্ডা, যাদু, পতুল নাচ খেলা দেখিয়ে দিনব্যাপি আনন্দ শেষে ছাতা, ছোটদের কাঠের ও ঝিনুকের তৈরি খেলনা সামগ্রী নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়িতে ফেরেন। এছাড়া মাদার খেলা, লাঠিখেলা, যাত্রা, পুতুলনাচ এসব অনুষ্ঠানও হয়ে থাকে। "মাদার খেলা"র "মাদার" নামের উৎপত্তি সম্পর্কে প্রচলিত আছে যে বহু আগে কিছু জটাধারিণী মহিলা ছিলেন যারা অন্যান্য সাধু সন্যাসীর সাথে মিলে মানুষের রোগমুক্তি করতেন। এদেরকে "মাদার" বলা হত। এভাবেই উৎসব উৎসাহের মধ্য দিয়ে জামাইমেলা বসে প্রতিবছর।

||--- বউ মেলা ---||



প্রতি বছর সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোরের মিলনস্থল তাড়াশের নওগাঁর শাহ শরীফ জিন্দানী (রহ.)-এর মাজারে তিন দিনব্যাপী বার্ষিক ওরশের শেষ দিন এ মেলা বসে। এটা "জামাই-বউ" মেলা নামেও পরিচিত বলে জানা যায়।

নানা ধরণের ঘর গৃহস্থালির জিনিসপত্র, মিষ্টান্ন, কসমেটিক আরও বহু জিনিস্পত্র কিনতে ভীড় জমান বউ শাশুড়িরা। মেলার নাম "জামাই-বউ" মেলা হলেও সব বয়সের সব ধর্মের মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকে মেলা প্রাঙ্গণ।

||--- জসীম মেলা ---||



এটি পল্লিকবি জসীমউদ্দীন স্মরণোৎসব মেলা। ফরিদপুর শহরের কাছেই কবির জন্মভিটা অম্বিকাপুরে প্রতিবছর এ মেলা বসে থাকে।
এ মেলার প্রধান আকর্ষণ থাকে পল্লিগীতি ও বিচারগানের আসর।


এছাড়াও এ মেলাতে থাকে ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটি, মাটির হাড়ি, মাটির পুতুল, লোহার সামগ্রী ও বাঁশ-বেতের গৃহসামগ্রী। আর খাদ্যবস্ত্তর মধ্যে থাকে বৈচিত্র্যময় মিষ্টির সমাহার ও ঝালযুক্ত পিয়াজু, মোগলাই, সিঙাড়া, পুরি আরও কত কি!
অন্যদিকে বিচিত্র রকমের দর্শক রুচির দিকে মেলা কমিটির লোকদের থাকে সতর্কচোখ, তাই তারা সার্কাস, পুতুলনাচ ও মৃত্যুকূপ সার্কাসের আয়োজন মেলা প্রাঙ্গণে রেখে থাকেন।

||--- বিষুব সংক্রান্তির মেলা ---||



বাংলা বছরের শেষ দুদিন এবং পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ধুমধামের সঙ্গে সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের যে উৎসব উদযাপিত হয় তারমধ্যে সবচেয়ে বড় উৎসব ও মেলার নাম হচ্ছে-"বৈসাবি"। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন মুখ্য আদিবাসীগোষ্ঠী- চাকমা, ত্রিপুরা ও মারমাদের মধ্যে এ উৎসব পরিচিত যথাক্রমে বৈসুক, সাংগ্রাইন ও বিজু নামে, যাদের আদ্যক্ষর নিয়ে ইদানীং এ অঞ্চলের সকল আদিবাসীগোষ্ঠীর জন্য এ উৎসবকে অভিহিত করা হয়েছে ‘বৈ-সা-বি’ নামে।

'ফুল বিজু’, ‘মূল বিজু’ এবং ‘গোর্য্যাপর্য্যার দিন’ মিলে মোট তিন দিন চলে চাকমাদের বিজু উৎসব ও মেলা।

ছেলেমেয়েরা সবাই মিলে প্রতিবেশীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ঘুরে ঘুরে বিজু খেয়ে থাকে। প্রতিবেশীদের বাড়িতে ঘুরতে এদিন কোনো দাওয়াতের প্রয়োজন হয় না। প্রতি বাড়িতে পাজনসহ খাবারের বিভিন্ন আয়োজন থাকে। সম্ভবত পাঁচ অণ্ণ (পাঁচন) শব্দ থেকেই পাজন শব্দের উৎপত্তি। ন্যূনতম পাঁচ পদের সবজির সংমিশ্রণে রান্না করা তরকারিকে পাজন বলা হয়। অনেক ক্ষেত্রে একশ পদেরও বেশি সবজি দিয়ে পাজন রান্না করা হয়। এ পাজন ছাড়াও থাকে পিঠা, পায়েস, সেমাই, শরবত ইত্যাদি নানা ধরণের খাবার ও পানীয়। পাজনের সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্কদের আপ্যায়ন করা হয় ঘরে তৈরি মদ দিয়ে। সাধারণত মূল বিজুর দিনে ভাত এবং মাছ-মাংস দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় না।

||--- রথের মেলা ---||



সাধারণত বাংলা বছরের আষাঢ় মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রথের মেলা বসে থাকে। তবে বাংলাদেশের মধ্যে সাভারের ধামারাইয়ের রথের মেলা সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ। এছাড়াও বাংলাদেশের কুষ্টিয়া শহরের রথখোলার মেলা, রাজশাহী জেলার পুঠিয়ার রথের মেলা, সিলেটের জৈন্তপুরের লামাপাড়া রথযাত্রার মেলা, গোপালগঞ্জের মোকশেদপুরের রথযাত্রার মেলা, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের রথযাত্রার মেলা, ঢাকা তাঁতীবাজার ও রাধাগোবিন্দ মন্দিরের উল্টোরথ মেলা, কুমিল্লার জাহাপুর মুরাদনগরের উল্টোরথ মেলা, ফেনীর ট্রাঙ্করোডের উল্টোরথ মেলা এবং গাইবান্ধার কালিবাড়ির উল্টোরথ মেলাও বেশ প্রসিদ্ধ।

হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রাকে স্মরণ করে প্রতিবছর এদেশের সনাতনধর্মাবলম্বীরা বহু স্থানে এ ধরণের রথযাত্রার মেলা করে থাকে।

রথের মেলাতে মৃৎশিল্প, বাঁশ-বেত-কাঠ শিল্পসহ মেয়েদের বিবিধ প্রসাধন সামগ্রী, মন্ডা-মিঠাই, মৌসুমী ফলমূল বেচকেনার পাশাপাশি থাকে সার্কাস, পুতুল নাচের আয়োজন। এছাড়া শিশুদের আনন্দ-বিনোদনের জন্যে থাকে নাগরদোলা, ইয়ারগান দিয়ে বেলুন ফোটানো বা শূটিংয়ের ব্যবস্থা।


ব্লগার কাণ্ডারি অথর্ব ভাই আরও দুটো মেলার কথা বললেন কমেন্ট এ। ধন্যবাদ ভাইকে। তার ব্যাপারে কিছু তুলে ধরলাম।

||-- রাস মেলা --||

সুন্দরবনে দুবলার চরে প্রতি বছর কার্তিক মাসের পূর্ণিমা রাতে অনুষ্ঠিত হয় রাস মেলা। অসংখ্য সনাতন ধর্মাবলম্বী অংশ নেন এ মেলায়।

এছাড়াও দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার কান্তনগরে কান্তজিউ মন্দির প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী রাস মেলা হওয়ার কথাও শোনা যায়।

প্রচলিত ইতিহাসঃ
ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায়, ১৯২৩ সালে হরিচাঁদ ঠাকুরের বনবাসী ভক্ত হরিভজন এ মেলা শুরু করেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দেবতা শ্রীকৃষ্ণ শত বছর আগে কার্তিকের পূর্ণিমা রাতে পাপমোচন ও পুণ্যলাভের আশায় গঙ্গাস্নানের জন্য স্বপ্নে আদেশ পান। তখন থেকেই এ মেলার শুরু। আবার অনেকে মনে করেন, শ্রীকৃষ্ণ বনবাসী গোপীদের সঙ্গে রাসলীলা করেছিলেন এ কার্তিকের পূর্ণিমা রাতে। সে উপলক্ষেই এ মেলা বসে। এজন্যই এর নাম হয় "রাসমেলা"।

এদিন যা যা হয়ঃ

সনাতনধর্মীরা সূর্যোদয়ের আগেই সাগরপাড়ে বসে থেকে প্রার্থনা করে। যখন সূর্যোদয়ের পর জোয়ার আসে তখন সেই পানি স্পর্শ করার সাথে সাথে পুন্যার্থীরা সাগরে স্নান করেন। তাদের মতে এতে তাদের পাপ মুছে সাগরে মিশে যায় এবং তারা পুণ্যবান হন।

সকালে পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে সারাদিন মেলা ও নানা অনুষ্ঠান চলে। রাতে ওড়ানো হয় ফানুস। পরদিন স্নানের মধ্য দিয়ে এই মেলার ইতি টানা হয় অথবা তিনদিন যাবত এ মেলা চলতে পারে।


||-- বউ মেলা --||

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ পৌরসভার জয়রামপুর গ্রামে শত বছরের পুরোনো বটগাছের নিচে বসে বউ মেলা। হিন্দুধর্মাবলম্বী লোকজন এ মেলার আয়োজন করে থাকেন। এ মেলায় সাধারণত নববধূ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের নারীরা আসেন। পুরোনো বছরের ঝগড়া বিবাদকে দূরে ঠেলে দিয়ে একজন বাঙালি বধূ যাতে নতুন বছরে স্বামীর সংসারকে ধনসম্পদে ভরিয়ে তুলতে পারেন, সে আশা নিয়ে নারীরা এ মেলায় আসেন।


[ সূত্রঃ ইন্টারনেট|| বিভিন্ন ব্লগ,নিউজ, লোকাল ইনফো, ইভেন্ট ঘেটে একটা নিউজ পোর্টালের জন্য বানাতে হয়েছিল। ভাবলাম দিয়ে দেই। আমি শুধু এখানে একত্র করে রাখার চেষ্টা করেছি ]

আপনারা যদি আপনাদের আশেপাশে এরকম কোন মেলার সন্ধান পান তবে অবশ্যই কমেন্ট করবেন। আমি যোগ করে নিব। ধন্যবাদ।





সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৯
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×