somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আত্মকথন - মাসুদ রানা ও কুয়াশা বিষয়ক কথামালা

০২ রা মে, ২০১৪ বিকাল ৫:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




তখন ভাইয়া বাসায় নেই । উনার বালিশের তলায় '' আমিই রানা '' নামের একটা বই ।তখন ক্লাস সিক্সে ।এর আগেই অবশ্য বন্ধু মারফত ''রানা টানে কিন্তু বাধনে জড়ায় না ''জানা হয়ে গেছে । গোগ্রাসে গিলতে লাগলাম । পড়তে পড়তে জুলি যখন .......... কান লাল হয়ে গেল !
আর সেই মুহূর্তেই ভাইয়া কিনা বাসায় ...

আমি ভাইয়ার বালিশের তলায় বই চালান দিতে ব্যর্থ হলাম । ফলে হাতেনাতে কট । ভাইয়া বলল - আর যদি তোর হাতে এই বই দেখি তোর কান আমি ...........

পরাজয়ে ডরে না বীর । কয়েকদিন পর আমার হাতে '' শকুনের ছায়া'' !! আর ও কিছুদিন পর এমন একটা বই হাতে এল যেটা আমার পুরো বালকবেলা বিস্মিত করে রেখেছিল ।
যার আঁচ এখনো গায়ে লাগা । কুয়াশা সিরিজের কথা বলছি । ভলিউম -১৭ প্রফেসর ওয়াই এর কাহিনী । এবারো ভাইয়া মারফত । এবারো চুরি । এবারো ধরা । কিন্তু কানমলা
নেই । বুঝলাম কয়াশা হালাল !! নেশায় পেয়ে গেল আমাকে । নুপুর মার্কেটে ৩০ টাকা দিয়ে কিনলাম ১৭-১৮ নাম্বার ভলিউম ।পাঠ্য বইয়ের পেটের ভেতর জম্পেশ উত্তেজনায় কুয়াশা পড়া ।
এদিকে আসল পড়া বাসি হয়ে যাচ্ছে । হলে হবে । মার খেলে খাব । এমন একটা ভাব। কুয়াশা হজম করা চাই ই চাই ।

আমার শুধু বিস্ময় । একেক বই একেক রকম । শেষ না করে উঠা যায় না । আমি বিমুগ্ধ । মাদকতায় আচ্ছন্ন । তারপর কুয়াশা হয়ে গেল আমার নায়ক । কাজিদা হল আমার লেখক । ভাবতাম ইস ! সেগুনবাগিচায় গিয়ে যদি লেখক কে ছুয়ে দিতে পারতাম ! কুয়াশা কুয়াশা !! কোথায় পড়তে বাকি রেখেছি !
বাসায় - বাসে - ক্লাসে সব জায়গায় । একদিন ''ছুটির দিনে'' পড়লাম - গায়ক কুমার বিশ্বজিৎ এর ছোটবেলায় কুয়াশা হবার স্বপ্ন ছিল ! পড়ে কি যে ভাল লাগল ! একটা বই কত প্রজন্ম ধরে মানুষ টানছে - কি অসাধারণ !

মাসুদ রানা সবচেয়ে বেশি পড়েছি এইচ . এস সি দেবার পর।
অবশ্য মাসুদ রানার সবচেয়ে ভাল লাগার বইগুলো আগেই পড়া হয়ে গেছে । যেমন - আই লাভ ইউ ম্যান ।ল্যাম্পনির বোহেমিয়ানা , রডরিকের সেই কথাটা এখনো মনে ভাসে। কতবার ঐ লাইন টা পড়েছি !

আই লাভ ইউ ম্যান , রানা ! আপন ভাইয়ের চেয়েও বেশি ভালবাসি তোমাকে !!

কিংবা ''মুক্তবিহঙ্গ'' তে মাইকেলের বলা -আমি বোধ হয় এতটা খারাপ নই এনি , কি ?

চাই সম্রাজ্যের ভিলেন আল দাউদ যখন বলল - আমার আর কোন আশা নেই । আল দাউদের জন্য তখন খুব খারাপ লাগছিল ।

দারুণ একটা স্বাদ পেয়েছি '' সংকেত পড়ে । আমার খুব পছন্দের বই । প্রতিটা চরিত্রের আকর্ষণীয়তা , আলেকের হিউমার বুদ্ধিমত্তা , রোমাঞ্চকর ঘটনাপ্রবাহ , সেক্স সব মিলিয়ে বইটা দুর্দান্ত এক ককটেল।আলেকের ঐ সাইকোলজিটাও ভাল লেগেছিল ।
আলেক মরতে রাজি কিন্তু জেল খাটতে নয় ! আলেক এক হিসেবে বলতে গেলে আরেক মাসুদ রানা । আমার নির্বাচিত মাসুদ রানার সেরা তিনে তাই সঙ্কেত আছে ।
আর হ্যা অগ্নিপুরুষটাও ভাল লেগেছিল ।

মাসুদ রানার প্রথম বই '' ধ্বংসপাহাড় '' এর কাহিনি চট্টগ্রাম বেইজড । এই জন্য আমার গর্ব আর অহঙ্কারের সীমা নাই !!:P:P এই বইটা মাসুদ রানার ৫ টা মৌলিক বইয়ের মধ্যে একটা ।
এখানে ষ্টেশন রোডে অবস্থিত হোটেল মিশকার কথা লেখা আছে । বিখ্যাত মাসুদ ভাই এই হোটেলেই উঠেছিলেন !! :Dএখনও হোটেল মিশকার পাশ দিয়ে গেলে অন্যরকম একটা ভাল লাগার
পরশ ছুঁয়ে যায় । ওদের রিসিপশনে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে -হেই তোরা কি জানিস তোরা কত বিখ্যাত !! কতজনকে বলেছি এই হোটেল মিশকার কথা !

অনেকদিন পর মুগ্ধ আমি গেলাম কাজিদার সাথে দেখা করতে । সংগে আমার বন্ধু । উনার বাসার দারোয়ান বলল - আপ্নারা বিকালে আসেন ।কিন্তু বিকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা সম্ভব ছিল না । ঠিক করলাম পরের দিন আবার আসব ।
হঠাৎ আমার বন্ধু বলল - দোস্ত একটা কথা বলি !
- বল !
- তুই দেখা করিস না ।
- কেন ? আমি অবাক ।
- প্রিয় লেখকের সাথে দেখা করতে নেই । দেখবি দেখা করার পর কষ্ট পাবি ।
কথাটা মনে লাগল । তাই পরে আর ও অনেক বার সেগুনবাগিচা মাড়ালেও তীব্র ইচ্ছেটা নির্মমভাবে পিষে দিতাম । বন্ধুর কথা সেদিন পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারিনি। এখন পারি। বাস্তবতার করাত ঘাড়টা কাটার পর ।

আমার প্রিয় লেখক কি জানে একদিন আমি ভাবির সাথে তর্ক জুড়েছিলাম- মাসুদ রানার চেয়ে কুয়াশাই বেস্ট । এর উপরে কিছু নাই !! তখন এস এস সি দিয়ে ফেলেছি ।
পরে ভাইয়া বলল - কুয়াশা হল সুপারম্যান তাই তোর ভাল লাগে । আর কুয়াশার ব্যাপারটা মাসুদ রানাতেও আছে । কবির চৌধুরী ই হল কুয়াশা ।
এখানে নায়ক - ওখানে ভিলেন ।

ভাইয়া হঠাৎ বলল - আমি প্রথম কুয়াশা/ মাসুদ রানা পড়েছি আব্বার সুটকেস থেকে চুরি করে । আব্বা যখন ট্রিপে যেত তখন এসব বই উনার সুটকেসে থাকত ।
ট্রেনে বসে বসে উনি পড়তেন। বাসায় আসায় পর আমি সুযোগমত চুরি করতাম । পড়ে আবার রেখে দিতাম ।

তখন কোন ক্লাসে ছিলেন ? - জিজ্ঞেস করলাম ।
ক্লাস ফোর । ভাইয়ার জবাব ।


হতবাক হয়ে গেলাম । কল্পনাও করিনি -বাবা এসব পড়েছেন !! কি অবস্থা ! সবসময় বাবাকে দেখেছি ইমাম গাজ্জালি , হাফিয , রুমি , গালিব এদের বই পড়তে ।
দুজন একই পিতার সন্তান - অথচ দুইভাইয়ের দেখার কি পার্থক্য !

উড়ে যায় দিনলিপি । মাতাল হাওয়ায় কত উলটপালট । অনেকদিন হল - তিন গোয়েন্দা , মাসুদ রানা , কুয়াশা পড়া হয় না । কুয়াশা সিরিজের সব বই আমি প্লাস্টিক কাভারে মুড়িয়ে ড্রয়ারে রেখেছিলাম । মাঝে মাঝে বইগুলা নিয়ে নাড়তাম - চাড়তাম ।
এবার অনেকদিন ধরা হয়নি । বছরখানেক পর মাস তিনেক আগে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে দেখি সব বই বিস্কিটের গুড়ো হয়ে গেছে । জায়গায় জায়গায় প্লাস্টিক ছেঁড়া। কোন ফাকে ইঁদুর সব নাশ করে দিল ।চোখ ফেটে পানি বেরোল।
হায় ! কতবার ভাইয়া বলেছিল - এখন এসব রেখে কি লাভ ! বেচে দে ।
আমি বিক্রি করিনি । কৈশোর বিক্রি করা যায় না । মুখ বুজে থাকতাম - ভাইয়াকে মুখ ফুটে এই কথাটা কখনো বলা হয়নি । খুব হৈ - চৈ করলাম ইঁদুর কিভাবে ঢুঁকে !
তারপর বারান্দায় গিয়ে নীল আকাশের দিকে ......... কিছুক্ষণ পর মা পিঠে হাত রাখলেন ।

- কিরে কিনে নিতে পারবিনা ?
কেনাটা বড় কথা নয় , মা ! - কেবল এটুকু বললাম ।

প্রতিটা বইয়ের পাতায় কভারে আমার কত শত স্মৃতি আঁকড়ে ছিল । সব শেষ । কারেন্ট বুক সেন্টারে কুয়াশা নেই , নুপুর মার্কেটে কুয়াশা নেই । সব শেষ । সব শেষ । একটা সময় পর
কেন সব শেষ হয়ে যায় ! সময়ের চেয়ে বড় নিষ্ঠুর খাদক আর নেই । কারেন্ট বুক সেন্টারের যেখানটায় সেবা প্রকাশনীর বই রাখা হত - সেখানে একটাও সেবার বই নেই । এখন ।
নিষ্ঠুর সময় সব স্মৃতি করে দেয় । স্মৃতিরাও একসময় বাসি হয় । তার উপর ধুলো পড়ে । ধুলো সরালে দেখা যায় কিছু অংশ একদম শুন্য হয়ে গেছে । ফাঁকা ।

ওরা বোধ অচিন পাখি হয়ে উড়াল দেয় ।অসীমে চলে যায় । থেকে যায় দীর্ঘশ্বাস , হাহাকার । তুমি আর উড়ে উড়ে কেঁদো নাকো .......

যেমন- বাবার কথা মনে পড়লে একটা সাদা দেয়াল দেখি । সফেদ দেয়ালে মিশে বাবা আমার একলা বাবা ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৪ বিকাল ৫:০১
৭৬টি মন্তব্য ৭৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×