বড় মামা এসেছে আমেরিকা থেকে।
খবর পাঠিয়েছেন, আমাকে অনেকদিন দেখেন না।
মামার বাড়িতে বেড়াতে গেলাম।
আমার ছোট মামীর সাথে গল্প করছিলাম।
এক ফাঁকে উনি পিকআপ(এক ধরনের যানবাহন) দিয়ে কোথায় যেন বেড়াতে
গিয়েছিলেন বললেন। আমি শুনছিলাম, ঐ বেড়াতে যাওয়ার গল্প নয়।
পিকআপের মুহুর্তটুকু, আমার কান সে কথা গুলোতেই আটকে গেল।
পরে কি ঘটল তা আর শুনলামনা কিছুই।
“ আমি- আজ যখন আসছিলাম অটোতে করে তখন একটা হিজড়া উঠল
আমাদের সাথে। আচ্ছা মামী, পুরুষ লোকগুলো কেন এমন হয়!! হিজড়াটার দিকে
এমন ভাবে তাকাচ্ছিল যে কি বলব!!
হিজড়াটা মাথাটা নুইয়ে আমার সামনে এমন ভাবে বসেছিল
যেন চোখ তুলে তাকানোর সাহস পাচ্ছিল না!!
কোন কোন পুরুষ হিজড়াটাকে দেখে কি যেন বাজে মন্তব্যও করছিল।
আমি ঠিক বুঝতে পারিনি। আমি আড় চোখে বার বার উনাকে দেখছিলাম।
কি সুন্দর চোখ দুটো!! মায়ায় ভরা। সুন্দর করে সেজেছে। ক্লিন শেইভ করেছে।
হয়ত আমিও এত সুন্দর করে সাজতে জানিনা।
মনের অজান্তে চোখ দুটো জলে ভরে উঠল।
কেন সৃষ্টিকর্তা তোমার এই লীলাখেলা!!
মামী- ওমা তাই!! আমি আর তোমার মামা ঐদিন বেড়াতে গেলাম।
পিকআপে একটা হিজড়া উঠল আমাদের সাথে।
ও আমার সামনে বসেছিল। জান সোমা, আমার দেখি বমি চলে আসছিল প্রায়।
তোমার মামাকে বললাম- ওকে এখান থেকে সরাও।
আমার বমি আসছে।
মনের অজান্তেই এই লেখা লিখার সময় চোখে পানি চলে আসল আমার।
গল্পটা শুনেও তাই হয়েছিল। আমি কি বললাম আর মামী একি শুনালেন আমাকে!!
তবে ঐ নোংরা পুরুষগুলোর সাথে এরকম নারীদের কি তফাত!!
সব থেকে নিচু, সব থেকে ঘৃনার কাজ হিসেবে হয়ত
টয়লেট ও ড্রেন পরিস্কারক, রাস্তার ঝাড়ুদারদের কাজটাকে
আমরা মনে করি। মানে আমি বলতে চাচ্ছি মূলত হরিজনদের কথা।
ঠিক কতটা ঘৃনা করি আমরা ওদের বা ওদের কাজকে?
কখনও ভেবে দেখেছেন?
একটি পৌরসভায় চাকরী করার বদৌলতে খুব কাছ থেকে প্রতিদিন
হরিজনদের দেখি আমি।
সাধারনত খুব কালো গায়ের রঙ এদের।
দেখলেই ধারনা করা যায় হরিজন।
চোখের দিকে তাকালে বোঝা যায় কত কষ্ট লেখা সেখানে!!
নিজের পরিচয় দেয়ার সময় আর নিজেদের ঠিকানা হরিজন পল্লী অথবা
কলোনী বলার সময় কুকড়ে উঠেন অনেকে।
“আমার বাংলা ভাষাটা মুখ ফোটে বেরুতে চায় না ওদের।
যেন লজ্জা পেয়ে থমকে দাড়ায়, গলায় আটকে যায়।
তাই বোধ হয় কি একটা ভাষায় যেন ওরা কথা বলে” (
আপনার এবং আমার বাড়ির টয়লেটের বর্জ্য
যখন এরা পরিস্কার করে
ঠিক কতটুকু কষ্ট হয় তখন তাঁদের ???
আমি খুব ভালবাসি এই নোংরা ছোট লোক গুলোকে।
তবে আমাকে যদি বলা হয় ওদের হাতটা ধর কিছু সময়ের জন্য।
সত্যিই আমি কি পারব!! নিঃসংকোচে হাতটা বাড়িয়ে দিতে??
আসলেই কতটা ভালবাসি বা ভালবাসতে পেরেছি মানুষকে!!
আমিও কি সোমা হরিজন হতে পারতাম না??
তবে আমার কিসের এত অহংকার!!
মাঝে মাঝে শপিং করতে গেলে চোখে পড়ে পতিতাদের।
কিছু টাকার বিনিময়ে যারা নিজের দেহটাকে নিয়ে ব্যবসা করে।
দোকান গুলোতে যখন উনারা ঢোকেন তখন দোকানীদের চাহনীই
বলে দেয় কি বলতে চায় ওদের মন!! কি নির্মম কি নিষ্ঠুর সে কুদৃষ্টি।
অথচ অধিকাংশ পতিতারাই কোন না কোন সামাজিক বৈষম্য অথবা
দুর্ঘটনার স্বীকার হয়ে এই পথে এসেছেন।
বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে খুব লেখা লেখি হয় তাঁদের নিয়ে।
সবাই বড় বড় কথার মালা গাঁথেন।
সত্যিই কি এতটা মহান আমাদের ভাবনা??
আমার ভাই কি পারবে কোন এক পতিতাকে স্বসম্মানে তার বউ করে ঘরে তুলতে?
বা আমি কি আমার সন্তানের বউ হিসেবে এমন একজন মেয়েকে মেনে নিতে পারব,
যে একবার ধর্ষনের স্বীকার। তবে কিভাবে আমি বড় মনের, বড় মাপের মানুষ হব?
একেকটা লাইনে শুধু চন্দ্র বিন্দু ব্যবহার করার ক্ষমতাই আমার আছে।
আর কি ই বা করতে পারি আমি!!
আমি কিছুই পারিনা, তবে আমি আমার মনের কথা আর চেতনা গুলোকে ছড়িয়ে দিতে পারি,
আমার লেখার মাধ্যমে।
আর একটু মনটাকে বড় করার চেষ্টা করতে পারি। আপনারা পারবেন??
কিছু নাই বা পারলাম আসুন না একটু ভাল ব্যবহার করি ওদের সাথে।
আর কিছু নয় শুধু মানুষ ভাবি ওদের।
“হ্যাঁ আমি ওদের কথা বলছি, যারা হিজড়া, হরিজন, পতিতা।
বিবেক তুমি কি শুনবে”?