কুয়ালালামপুরের অদূরে ছিমছাম নিরবিলি শহড় নিলাই, এয়ারপোর্টের অদূরে হওয়ায় KLIA-1 ও KLIA-2 দুটি এয়ারপোর্টের ও বিমানের বেশীর ভাগ ষ্টাফরাই এই এলাকাতেই থাকে। বলে রাখা ভালো মালয়েশিয়ার এয়ারপোর্ট গুলাতে ক্লিনার, ট্রলি সার্ভিস থেকে শুরু করে বিমানের খাবার প্রস্তুত সহ বেশীর ভাগ কাজেই প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রাধান্য। সুতরাং কাজের সুবাদেই এই নিলাই এলাকাতে প্রচুর বাংলাদেশীদের বসবাস, এছাড়া ও এখানে মালয়েশিয়ার নামকরা বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ রয়েছে। সেগুলোতেও বাংলাদেশী ষ্টুডেন্ট রয়েছে।
এবার মূল কথায় আসি,ব্যবসার সুবাদে বছর খানেক আগে যখন আমি এই শহড়ে প্রথম আসি, তার দু-এক দিন পরেই রাষ্তায় এক বাংলাদেশি মৌলভীর সাথে দেখা হল। সালাম বিনিময়ের পর তিনি জানালেন,সে নাকি চাদপুরের এক বড় মাদ্রাসার মোহতামিম (প্রিন্সিপাল)।
শুনে ভাল লাগল, ভাবলাম এত বড় মাপের এক ব্যক্তির সাথে পরিচয় স্বভাবতই তাকে বাসায় দুপুর খাবারের জন্য নিমন্ত্রন করলাম। কিন্তু সে বাসায় যেতে মোটেই রাজি নয়, তার নাকি অনেক ব্যস্থ্যতা, কোনমতেই সে বাসায় যাবে না। তাই তাকে নিয়ে পাশের রেষ্টুরেন্টেই বসলাম। খাবার খেতে খেতে সে বলল, সে নাকি কালেকশনে এসেছে...
আমি বললাম কিসের কালেকশন?
পরক্ষনেই সে রিসিট বুক বের করে দেখাল, কোন এক অখ্যাত মাদ্রাসা ও লিল্লাহ বোডিং লেখা ছিল তাতে।
তাকে জিজ্ঞাসা করলাম কোথায় কোথায় যাবেন কালেকশনের জন্য?
সে বলল নিলাইর মত আরো যে সব এলাকাতে একত্রে অনেক বাংলাদেশী বসবাস করে সে এলাকা গুলোতেই মুলত তিনি যাবেন।
(মনে মনে ভাবলাম আমাদের দেশে বাসে ট্রেনে একদল লোক নামে বেনামে মসজিদ মাদ্রাসার নামে বছরের পর বছর টাকা উঠায়,অথচ মসজিদ মাদ্রাসা লিল্লাহ বোডিং এর নামের টাকা কোথায় যায় তাতো কোন এক টিভির অনুসন্ধানী রিপোর্টে আগেই দেখেছিলাম)
জিজ্ঞাসা করেছিলাম , এ দেশি অর্থাৎ মালয়েশিয়ান কোন ডোনারের সাথে কথা বলে এসেছেন কিনা?
তিনি বললেন, এদেশিরা নাকি সাহায্য করে না।বাংলাদেশীরাই নাকি তার প্রধান ডোনার
তো সাহায্যর জন্য এত টাকা খরচ করে মালয়েশিয়া এলেন?
তার উত্তর ছিল এর পূর্বে্ও নাকি সাত বার মালয়েশিয়া এসেছিলেন, কালেকশনের জন্য
কেমন টাকা কালেকশন হয় সে ব্যপারে পরিষ্কার কিছু জানান নি, এর পর কিছু টাকা দিয়ে আমি বিদায় নিয়ে চলে যাই ।
খোজ নিয়ে যানতে পারি তিন দিন ছিলেন তিনি এই এলাকাতে, যেখানে শুধু মাত্র আমার পরিচিত লোকজনই তাকে প্রায় RM ৩৫০০ দান করেছে,যা বাংলাদেশী ৭০০০০( সত্তর হাজার) টাকার সমান।
এক বছরের মধ্যে এমন আরো কিছু মোল্লাদের দেখেছিলাম এই এলাকায় কালেকশন করতে আসতে।
কিছুদিন আগের একটা ঘটনা আমকে হতবাগ করে দেয়। সেদিন আমি আমার বন্ধুর বাসায় গেলাম,যেখানে আমি প্রায়ই যাই। সেখানে ওরা প্রায় ছ' সাত জন এক ফ্লাটে থাকে। সেদিন একজন নতুন হুজুরকে সেখানে দেখতে পেলাম, আমার বন্ধুর রুমমেট আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল সে তার কাজিন। এখানে মাদ্রাসার জন্য ডোনেশন কালেকশন করতে এসেছে। সে নিজেকে পুরান ঢাকার একটি মসজিদের খতিব ও মাদ্রাসার মোহতামিম (প্রিন্সিপাল) পরিচয় দিল।
ঘটনা চক্রে, সে মসজিদটি আমার বাংলাদেশের বাড়ীর পাশের মসজিদটি যার ইমাম সাহেবকে আমি ভালভাবেই চিনি।
ভাবলাম ইমাম কাম খতিব সাহেব পরিবর্তন হলো কি না...
দেশে খোজ নিয়ে জানতে পারলাম, আগের খতিব সাহেব এখনো বহাল তবিয়তেই আছেন।
খোজ নিয়ে জানতে পারলাম ডোনেশন কালেকটর মৌলভী সাহেবের কোটি কোটি টাকার মালিক।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৫৫