একদিন ছুটির দিনে ঝুম বরষা নেমেছে, সকাল থেকে মুষল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে তুমি গান শুনছো অনেক ক্ষণ। সময় পেরিয়ে কখন দুপুর হতে চলেছে, টেরই পাওনি। পেটের ভিতরের ক্ষুধার রাক্ষসটাও আড়মোড়া ভাঙতে শুরু করেছে। কী খাওয়া যায় এখন? ভাবনাটা মাথায় আসতেই একদম অজান্তে মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো "ভুনা খিচুড়ি"। কিন্তু তুমি তো নিজে সেভাবে রান্না করতে জানো না। তোমরা কয়েক বন্ধু মিলে একটা বাড়ি ভাড়া করে থাকো। রাস্তার পাশের ভাতের দোকানে কাজ করে একটা ছেলে। সে এসে প্রতিদিন তোমাদের রান্না করে দেয়। কিন্তু সেই ছেলেটা আবার সাধারণ ভাত-তরকারী ছাড়া অন্য তেমন কিছু নিজে থেকে রান্না করতে পারে না। তুমি ভেবে দেখলে recipe (রান্নালি) আর উপকরণ দিলে ভুনা খিচুড়িও তার রান্না করতে পারার কথা। যে মাংসের তরকারী রাঁধতে পারে, সে ভুনা খিচুড়ি রান্না করতে পারবে না, সে কী করে হয়! যেমন ভাবনা তেমন কাজ। তুমি তড়াক করে লাফ দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে পড়লে। কাগজ-কলম হাতে নিয়ে ফোন দিলে তোমার মাকে। তোমার মা একে একে তোমার প্রিয় ভুনা খিচুড়ি রান্নার উপকরণ বলতে শুরু করলেন। সাথে ধাপে ধাপে কখন কী করতে হবে সব সহ বিস্তারিত রান্নার প্রণালিও বলে দিলেন।
০১ পোলাওয়ের চাল: ৭৫০ গ্রাম
০২ মসুর ডাল: ৫০০ গ্রাম
০৩ মুগ ডাল: ৫০০ গ্রাম
০৪ গরুর মাংস: ১ কিলোগ্রাম
০৫ পেঁয়াজ কুঁচি: এক পেয়ালা
০৬ আদা বাটা: দুই টেবিল চামচ
০৭ রসুন বাটা: দুই টেবিল চামচ
০৮ জিরা গুঁড়া: এক চা চামচ
০৯ মরিচ গুঁড়া: এক চা চামচ
১০ ধনে গুঁড়া: এক চা চাম
১১ হলুদ গুঁড়া: দুই চা চামচ
১২ গরম মশলা গুঁড়া: এক চা চামচ
১৩ লবণ: পরিমাণ মত
১৪ লেবুর রস: দুই চা চামচ
কাঁচা মরিচ: কয়েকটা আস্ত
তেল: কম-বেশি দেড় কাপ
উপরের উপকরণগুলো ঘরে আছে কিনা তোমাকে এখন তা দেখতে হবে। না থাকলে রান্নার ছেলেটাকে পাঠিয়েই আনাতে হবে। কেবল টাকা দিলেই হলো। তারপর নীচের মতো করে ধাপে ধাপে রান্না করতে হবে। কখন কী করতে হবে, কখন চুলা বাড়াতে হবে, কখন কমাতে হবে, পেয়াজ কতটা বাদামী হলে আদা-রসুন দিতে হবে, ইত্যাদি হাজারো ছোট-ছোট বিষয় মা বলে দিয়েছেন কয়েক বার করে, যাতে কোন ভুল না হয়। এই না হলে মা! ছেলেটা কাছে থাকে না, এমনিতেই মন পোড়ে, তার ওপর ছেলে খেতে চেয়েছে মায়ের হাতের ভুনা খিচুড়ি!
০১ মাংস কেটে ছোট ছোট টুকরা করো।
০২ টুকরা মাংস ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নাও।
০৩ পিয়াঁজ কেটে নাও কুচি কুচি করে।
০৪ আদা ও রসুন ভালো করে বেটে নাও।
০৫ পাতিলে তেল ঢেলে গরম করে নাও।
০৬ পেঁয়াজ কুচি ও কাঁচা মরিচ দিয়ে দাও।
০৭ মাংস অনুযায়ী লবণ যোগ করে দাও।
০৮ আদা বাটা, রসুন বাটা দিয়ে দাও।
০৯ একটু পরে হলুদ, মরিচের গুঁড়া দাও।
১০ জিরা, ধনে, গরম মসলা গুঁড়া দাও
১১ এক পেয়ালা পানি দিয়ে নেড়ে দাও।
১২ কষতে কষতে মশলার ঝোল হবে।
১৩ তেল উঠে এলে মাংস দিয়ে দাও।
১৪ ভালো করে মাংসে ঝোলে মিশাও।
১৫ কিছুক্ষণ মাঝামাঝি আঁচে রাখো।
১৬ দুই কাপ পানি ও লেবুর রস দাও।
১৭ ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রান্না করো।
১৮ মাঝে মাঝে মাংস নেড়ে দাও।
১৯ মাংস নরম হলো কিনা দেখো।
২০ মাংস সুস্বাদু হলো কিনা দেখো।
২১ চাল ও ডাল যোগ করে দাও।
২২ কিছুক্ষণ সব মিলিয়ে ভাজো।
২৩ চালের ওপর দুই-ইঞ্চি পানি দাও।
২৪ পানিতে লবণ কেমন হলো দেখো।
২৫ লবণ একটু কটা কটা হতে হবে।
২৬ ঢাকনা দিয়ে ২০ মিনিট আঁচে রাখো।
রান্নার প্রণালি তো মায়ের কাছে থেকে পেলে, তারপর উপকরণও সব যোগাড় হয়ে গেলো। কিন্তু ছোট একটা সমস্যা বাঁধলো। রান্নার ছেলেটা ঠিক পড়তে জানে না। কাজেই recipe (রান্নালি) ধরিয়ে দিয়ে তুমি চলে যাবে তা হবে না। তোমাকে বরং ওর সাথে থেকে recipe পড়ে পড়ে কখন কী করতে হবে সেটা বলে দিতে হবে, আর সেটা করতে হবে বেশ খানিকটা ওর আঞ্চলিক ভাষায়। ভাগ্যক্রমে ছেলেটা তোমার একই জেলার। কাজেই সেটা তেমন সমস্যার না। তোমরা তাহলে ভুনা খিচুড়ি রান্না করতে থাকো, আমরা চলি programming শিখতে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৮