ওরা পাঁচ জন। বদমাইসের বটগাছ একেকটা। এমন কোন বাঁদরামী নেই যা ওরা করে না। অন্যের গাছের ফল চুরি এটা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। রাতের বেলা কুকুরের লেজে সুতা দিয়ে তারাবাতি বেঁধে জ্বালানোর মত অসংখ্য মনোরঞ্জনের মত কাজ করে এই পঞ্চ পান্ডব। এদের মধ্যে যে নিজেকে সাহসী দাবী করে তার নাম পাভেল। সবচেয়ে ভীতু সজল, আর যে চালাক তার নাম জাকির। সব কাজে আগ বাড়িয়ে যায় কবির। বদ বুদ্ধির কারখানা হলো মিলন।
অমাবশ্যার রাতে পঞ্চ পান্ডব এক হয়েছে ডাব চুরির আশায়। তখন রাত ১১ টা। পাশের এলাকা থেকে কয়েক বাধা ডাব নিয়ে এসে খোলা মাঠের মাঝখানে বসে কাটছে আর খাচ্ছে। এমন সময় বদ বুদ্ধির মিলন বলছে, কার সাহস আছে এই রাতে একলা শ্মশানে যেতে পারবে ?
কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পাভেল বলে, কি দিবি বল।
মিলন বলে, যে যেতে পারবে তাকে আগামীকাল সিনেমা দেখাবো।
তাই শুনে সবাই একসাথে হৈ হৈ করে উঠলো।
ঠিক হলো রাত সাড়ে বারটার পর পাভেল যাবে এবং শ্মশানে গিয়ে একটি বাঁশের খুঁটি গেড়ে আসবে। এটা প্রমাণ করতে যে সে শ্মশানে এসেছিল। আর আজ কাজ শেষে ফিরে এই মাঠেই দেখা হবে। তবে কথা হলো চার বন্ধু থাকবে এতটা দুরে যেন চাঁদের আলোয় রান্না করতে না পারে।
পাভেল শার্ট গেঞ্জি খুলে সজলে হাতে দিল। শুধু লুঙ্গি পড়ে খালি গায়ে চললো শ্মশানের দিকে। পাভেল কিছুদুর যেতেই মিলন বললো চল পিছু পিছু যাই।
মাঠ থেকে শ্মশান একটু দুরে। ঘন বাঁশ ঝাড়ের মধ্যে দিয়ে পার হতে হয়। আশেপাশে রয়েছে নতুন পুরাতন কবর। অন্ধকারে মধ্যে বাঁশ ঝাড়ের মধ্যে ঢুকলেই গা ছমছম করে। বাতাসে বাঁশের ঘর্ষনে নানা রকম বিচিত্র শব্দ শোনা যায়। কোন সময় প্যাঁচা ডাকে আবার থেকে থেকে শেয়ালও। মাঝে মধ্যে বেজী যখন বাঁশের শুকনা পাতার উপর দিয়ে যায় তখন সর সর করে শব্দ হয়।
মিলনরা দুর থেকে দেখলো পাভেল গান গাইতে গাইতে; বাঁশ ঝাড়ের কিছুদুর পর্যন্ত হেঁটেই পার হলো কিন্তু অর্ধেক যাওয়ার পর গান বন্ধ করে দিল দৌড় সামনের দিকে।
পাভেল যখন শ্মশানে পৌঁছাবে তার আগেই কিছুটা দুরে হাঁটা থামিয়ে এক জায়গায় চুপ করে বসে দেখোর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো চারজন। পাভেল পৌঁছানোর পরেই মন্দিরের মধ্যে থাকা কিছু বাদুর বা পাখী জাতীয় কিছু একসাথে উড়ে উঠলো। পাভেল ভয় পেলেও ভয় না পাওয়ার ভান করতে হাত-পা এদিক সেদিক ছোড়াছুড়ি করে। অবশেষে বিশাল বট গাছের নিচে বাঁশের খুঁটি গাড়ার জন্য বসে পড়লো। রাতের নিঃস্তব্ধতায় দুর থেকে শোনা যাচ্ছে বাড়ি দিয়ে খুঁটি গাড়ার শব্দ। পাভেল খুব ভালভাবে কাজটা শেষ করে উঠে ফিরে আসতে গিয়ে থেমে গেল। তারপর আবার হাঁটতে গিয়ে কি যেন দেখে বা বুঝে, “ও বাবা রে, ও মারে” বলে চিৎকার দিয়ে পড়ে গেল।
পাভেলের অবস্থা দেখে ভীতু সজলও চিৎকার দিয়ে বাড়ীর দিকে দৌড়। ভয়টা সংক্রমিত হয়ে বাকি তিনজন একসাথে চিৎকার দিয়ে দৌড়াতে লাগলো। মাঠে এসে চারজন একত্রিত হলো। এখন কি করা হবে এই নিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা। পাভেলের যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে তো ভয়ঙ্কর বিপদের কথা। অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো হ্যাজাক বাতি সংগ্রহ করে চারজন আবার যাবে। এবার লাঠি, হ্যাজাক নিয়ে ওরা শ্মশানের কাছে গিয়ে দেখে পাভেল ওভাবেই পড়ে আছে। নদী থেকে পানি নিয়ে ওর মুখে ঝাপটা দিলে জ্ঞান ফেরে। জ্ঞান ফিরে ভয়ে দৌড়াতে গিয়ে আবার “ও বাবারে” বলে চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেল।
{বিঃদ্রঃ শ্মশানে নিয়ে গিয়ে এত চেষ্টার পরও কেউ যদি ভয় না পেয়ে থাকেন তাহলে লেখক দায়ী নহে। তবে বিকল্প ব্যবস্থাও আছে, চোখ বাদ দিয়ে নিজের মুখে কালি মেখে আয়নায় দেখতে পারেন।}
উত্তরটা এখানেঃ পাভেল লুঙ্গিসহ খুঁটি গেড়েছিল। ফিরে আসার সময় লুঙ্গিতে টান পড়ায় ভেবেছে পিছন থেকে কেউ টেনে ধরেছে।
ছবিঃ গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৩৭