দারুণ একটা সকাল। মেঘে ঢাকা আকাশ। যেকোন সময় বৃষ্টি নামবে। সকাল থেকেই জনাব সুর্যের কোন দেখা নেই। লনে বসে আছি। গার্ডেন সেটের চেয়ারগুলো নতুন আনানো হয়েছে। বেশ আরামদায়ক। সামনে টেবিলে রাখা গরম পাকোড়া’র প্লেট। মাঝে মাঝে একটা দুটো করে মুখে চালান দিচ্ছি। পা ছুয়ে আছে লনের ঘাস। ভাল লাগছে। গরমের ছুটির দিনগুলো ভালই কাটবে মনে হচ্ছে। ফেলে আসা দিনগুলোর কথা মনে পড়ছে। এমন সময় অনিক এল। স্বভাবসুলভ পিঠে বিশাল একটা থাবা বসিয়ে দিল! দেখে মনে হয়না ওই শরীরে সে এত ওজনদার থাবা দিতে পারে! অভ্যাস থাকায় পড়ে গেলাম না। কিরে, এই সকালে? জিজ্ঞেস করলাম আমি।
চলে এলাম! ভাল লাগছিল না বাসায় একা।
একা কেন? শিমু কই?
ও তুই জানিস না?
কি জানব?
না কিছুনা থাক। তোর কি খবর বল!
আমার খবর নেয়ার এত ইচ্ছা থাকলে ফোনেই নিতে পারতি। কি বলে চাইছিস বলতো! কি আবার ঝগড়া হয়েছে না?
হুম!
এই দুটোকে নিয়ে আর পারিনা। শিমু আমার কাজিন। নিজের বোনের মত। আর এই গাধাটা আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। কোন কিছু হলে আমাকেই এরা বিচারক বানায়! আমি কিভাবে নিরপেক্ষ আচরণ করবো এটা কেউ ভাবে না!
আসলে, আমরা একটুও বদলাই নি! সাত বছর আগে যা ছিলাম, এখনো তাই আছি। বদলে গ্যাছে শুধু পরিস্থিতি আর সময়।
সাত বছর আগের একটা সন্ধ্যা। থার্ড ইয়ারে পড়ি তখন। আমাদের জাতীয় আড্ডাস্থান তফাজ্জল মামার চায়ের দোকানে বসে আছি। ইভান ভাই তুড়ি মেরে বলে উঠলঃ এবারে স্কুলটা খুলেই ফেলব! ইভান ভাই ফাইন আর্টস থেকে পাস করেছে কেবল। বেকার বসে আছে। একটা ছবি আঁকা শেখানোর স্কুল খোলার প্ল্যান তার অনেক দিনের। সমস্যা টিচার নিয়ে। নামী কাউকে আনতে গেলে তো অনেক টাকার ব্যাপার। আর স্কুলটা যে নাম পাবে কিনা তারও ঠিক নেই। এই কারণেই রিস্ক নিতে চাচ্ছিল না ইভান ভাই। আজ হঠাত কি হল কে জানে!
শোন, টিচার পাইসি বুঝলি? রাজু আছে না, চারুকলার? আমার ফ্রেন্ড, চিনিসতো? মাথা ঝাকিয়ে সায় দিলাম, চিনি। ও পারবে বলসে। ওর একটা ফ্রেন্ড আছে মৌ নাম, সেও রাজী হইসে!
আমি দুকান বিস্তৃত হাসি দিয়ে বললামঃ তাহলে তো হয়েই গেল! জায়গার কথা কি ফাইনাল করেছ? ইভান ভাই বললঃ অফকোর্স! আপাতত ভাড়া নেব বাড়িটা। পরে অন্য চিন্তা করা যাবে।
অনিক কিছু একটা বলার জন্য উশখুশ করছিল। আমি বুঝতে পেরে বললামঃ কিছু বলবি? অনিক কিছুটা দিধাগ্রস্তভাবে বললঃ আমিও একটা টিচার ম্যানেজ করে ফেলেছি। ইভান ভাই বলল আরে বেটা আগে বলবিনা!! দেখ কত কাজের ছেলে! কিছু শিখ এর কাছে! তা টিচারটা কে?
মেঘলা আপু। আমাদের পাড়ায় বাসা। অনিক বলল।
ও মেঘলা! ওকে তো চিনি! তাইতো আগে কেন মাথায় আসেনি? ওতো দারুণ আঁকে! তো ওকে বলেছিস কিছু? হন্তদন্ত হয়ে ইভান ভাই বলে।
হুম বলেছিলাম তো। আপু বলেছিল চেষ্টা করবে।
তাহলে কাল সকালে আমার বাসায় নিয়ে আয়। রাজু আর মৌও থাকবে।
ইভান ভাই মাত্রাতিরিক্ত খুতখুতে। যে বাড়িটা আমরা ভাড়া নিয়েছি স্কুলের জন্য, গিয়ে দেখি সেটার করুন দশা। ঝুল কালি ময়লা দিয়ে ভর্তি। কতদিন খোলা হয়নি কে জানে! প্রথমে লোক ভাড়া করে পরিষ্কার করা হল। ইভান ভাইয়ের পছন্দ হল না। অগত্যা নিজেই নেমে পড়ল! বলাই বাহুল্য আমাকে আর অনিক কেও হাত লাগাতে হয়েছিল। পরের দুদিন আমরা কেউই বিছানা থেকে নড়তে পারিনি!
শেষমেষ অনেক ঝক্কিঝামেলা পার হয়ে স্কুলটা খুললাম আমরা! নাম দেয়া হল রংতুলি একাডেমী। নামটা যদিও আমার বিশেষ পছন্দ হয়নাই! কিন্তু কি আর করা। প্রাথমিকভাবে তিনজন ইন্সট্রাকটর দিয়েই শুরু করা হল। আমি, অনিক আর ইভান ভাই ম্যানেজমেন্টে। ভালই সাড়া পেলাম আমরা। অনেকেই নিজ সন্তান কে ছবি আঁকা শেখাতে রংতুলি তে নিয়ে আসত। আর সাড়া পাব নাই বা কেন? গোটা শহরে এরকম স্কুল আর একটাও ছিল না। টাকাপয়সাও হাতে আসছিল ভালই!
ইন্সট্রাকটরদের ভেতর রাজু ভাইয়ার সাথে আমার খুব খাতির হয়ে গেল। দারুণ মজার মানুষ। মৌ আপুর সাথে আস্তে আস্তে সম্পর্ক ভাল হল। খুব একরোখা প্রকৃতির মেয়ে। কারো সাথে সহজে মেশে না। কিন্তু আমার সাথে খুব ভাব হয়ে গেল। আমার থেকে ৩ বছরের সিনিয়র হবার পরও আমি আপুকে তুই করে ডাকতাম। আপুও তাই। মেঘলা আপুর সাথে তেমন কথা হতনা। হয়ত উনিই আগ বাড়িয়ে কথা বলেলনি সেজন্য। আমি নিজে থেকে কারো সাথে কথা বলতে পারি না!
প্রথম বছর ভালই কাটল রংতুলির। সবাই প্রশংসা করত আমাদের। বাবা-মাও এমনকি কখনো এত প্রশংসা করেনি! ভালোই কাটছিল দিনগুলো। ফোর্থ ইয়ারের ক্লাসও শেষ হয়ে গেল। কনভোকেশনের দিন গুনছিলাম। এমন সময় হঠাত একদিন মেঘলা আপু আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলঃ মৌ এর সাথে তোমার এত খাতির কেন? বেশ অবাক হলাম। কেন জিজ্ঞেস করছ? মেঘলা আপু বললঃ তুমি ওকে তুই তুই করে বল দেখি। ও এই ব্যপার। মৌপি’র সাথে আমার জমে ভাল। তাই। হাসলাম আমি। মেঘলা আপু বলল, আমাকে তুই করে বল না কেন? আমার সাথে জমে না? সেরকম কিছু না। মানে... কি বলব ভাবছিলাম আমি। মেঘলা আপু বলল, হয়েছে। মানে মানে করতে হবে না, যাও!
এদিকে ইভান ভাই মৌপি’র প্রেমে পড়ে গেল। এটা যে অবধারিত সেটা সবাই জানত! ইভান ভাই এপর্যন্ত মাত্র... থাক সংখ্যাটা জেনে কি হবে! প্রেমে পড়া হচ্ছে ইভান ভাইয়ের কাছে চা খাওয়ার মত। সুন্দরী মেয়ে হলেই কাত। সেখানে এতদিন একসাথে কাজ করছে। যেহেতু আমার সাথে মৌপি’র খাতির বেশি, অতএব, এবারো বলির খাশি আমিই! ইভান ভাই তখনো বেকার। মৌপি আজ আমার নাম ভুলিয়ে দেয় নাকি দৌড়ানি দিয়ে! ভয়ে ভয়ে ওকে বললাম। মৌপি শুনে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর বললঃ গাধাটা তোকে দিয়ে বলে পাঠিয়েছে? ওর নিজের মুখ নাই? স্টুপিড! আমি বুঝে নিলাম গ্রীন সিগনাল! ওইদিন ইভান ভাইয়ের কাছে ব্যপক একটা খানাদানা মেরে দিলাম। হুমকিও দিয়েছিলাম। আমার বোনকে যদি ছেড়ে চলে যাও তাহলে লাইফ হেল করে দিব!!
রংতুলি’র প্রথম বর্ষপূর্তিতে আমরা ছোটখাট একটা অনুষ্ঠান করে ফেললাম। মৌপি যে এত ভাল নাচতে পারে এটা হয়ত কখনোই আমাদের জানা হত না অনুষ্ঠানটা না হলে। আমরা নিজেরাই এক একটা আইটেম করেছিলাম। উপস্থাপনা করেছিল রাজু ভাইয়া। অনিক আবৃত্তি করেছিল রবীন্দ্রনাথ। আর আমি একটা গান করেছিলাম। ছোট্ট অনুষ্ঠান হলেও ভালই প্রশংসিত হয়েছিল। সব শেষে ছিল একটা নাটক। লিখেছিল ইভান ভাইয়া। মূল চরিত্রে ইভান ভাইয়া, মৌপি, রাজু ভাইয়া আর মেঘলাপু। মেঘলাপু ওইদিন সেজেগুজে এসেছিল। বেশ সুন্দর লাগছিল তাকে লাল পাড় শাড়িতে। নাটকে আরেকজন ছিল। আনিকা। আনিকার কথা বোধহয় বলা হয়নি না? আজকাল বেশ ভুলো মনা হয়ে যাচ্ছি! বেশ, বলা যখন হয়নি তখন না হয় পরেই বলি।
অনুষ্ঠান শেষে আমি মেঘলাপু কে বললামঃ আজ দারুণ সুন্দর লাগছে তোমাকে শাড়িতে!
আজ লাগছে শুধু? প্রতিদিন লাগেনা? ফোড়ন কাটল আপু।
আরে আমি কি তাই বলেছি নাকি! প্রতিদিনই লাগে, তবে আজ একটু বেশি লাগছে।
থ্যাংকস!
মাই প্লেজার। শাড়ি তোমাকে দারুণ মানায়। অন্যসময় তুমি শাড়ি পরনা কেন?
আচ্ছা এখন থেকে রোজ পড়ব কেমন? মেঘলাপু হাসতে লাগল।
এই কাজটা কোরোনা!
কেন?
এভাবে সেজেগুজে শাড়ি পড়ে যদি প্রতিদিন আসো তাহলে ঠিক তোমার প্রেমে পড়ে যাব! চোখ মটকে বললাম আমি।
তাই না? আচ্ছা ভাল দুষ্টু তো তুমি। এত ভাল গাও আগে তো কখনো!
তুমি জানতে চেয়েছ নাকি যে বলব? আর বলেই বা কি হত?
মেঘলাপু হাসল শুধু। কিছু বলল না।
বেশ কিছুদিন পর একদিন ক্লাস শেষে মেঘলাপু কে দেখলাম চুপ করে বসে আছে সিঁড়িতে। কি আপু, মন খারাপ নাকি? জিজ্ঞেস করলাম। না। খুব একটা না।
আপুর পাশের সিঁড়িতে উঠে বসলাম। কি হয়েছে তোমার?
অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পর মেঘলাপু বললঃ আব্বু বলছে বিয়েটা করে ফেলতে।
তো এতে মন খারাপের কি আছে! করে ফেল বিয়ে! আমাকে বললে তো আমি এক লাফে রাজি হয়ে যেতাম। হি হি করে হাসতে লাগলাম আমি।
মেঘলাপু কিছু বলল না।
কি ব্যপার? কাউকে পছন্দ কর নাকি তুমি?
করি তো।
আরিব্বাস! তলে তলে এতদূর! এতদিন কিছুই বলনি! তো সে কে?
তুমি। কোনরকম ভনিতা না করে স্পষ্ট গলায় বলল আপু।
আমি বড়সড় একটা ধাক্কা খেলাম। একথা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না!
কি বলছ আপু এটা! তুমি জানো...
মেঘলাপু আমার কথা কেড়ে নিয়ে বললঃ জানি। আমি তোমার চেয়ে দুই বছরের বড়। তা ছাড়া...
ইতস্তত করছিলাম আমি। তা ছাড়া... তুমি ক্রিশ্চিয়ান! এটা কিভাবে সম্ভব?
আমি কি বলেছি সম্ভব হতেই হবে? মেঘলাপুর চোখে জলের ধারা। আমি একেবারেই অপ্রতিভ হয়ে গেলাম।
মেঘলাপু বেশ কিছুক্ষণ পর উঠে চলে গেল। আমি বজ্রাহতের মত বসে থাকলাম আরো অনেকটা সময়।
পরদিন থেকে মেঘলাপু রংতুলিতে আসা বন্ধ করে দিল। আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। ফোন করে কথাবলার চেষ্টা করতাম, কিন্তু মেঘলাপু আমার সাথে কথাই বলত না। এরিমধ্যে কনভোকেশন হল। গ্রাজুয়েশনের আনন্দে কিছুদিনের জন্য সব ভুলে গেলাম। রংতুলিও স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার জন্য ছুটি ছিল কিছুদিন। ছুটির পর শুরু হল বিপত্তি। ইভান ভাই ভাল একটা জব পেয়ে গিয়েছিল বেশ ভাল বেতনে। ওনার সিরিয়াসনেস নিয়ে নতুন করে আর কিছু বলার নেই। ক্রমশ তার রংতুলি চালানোর ইচ্ছা হারিয়ে গেল। মৌপি ও আগে থেকেই ছোটখাট একটা জব করত। ওদের বিয়ের কথাও হচ্ছিল পারিবারিক ভাবে। রাজু ভাইয়া ফ্যামিলি বিজনেসে জড়িয়ে পড়ছিল আস্তে আস্তে। অনিক কেও ম্যানেজমেন্টে আগের মত পাচ্ছিলাম না! এই এক বছরে রংতুলির সাথে আমি অনেক জড়িয়ে গিয়েছিলাম। আমার জীবনের অংশ হয়ে গিয়েছিল এটা। একে ঘিরে আমার আরো অনেক স্বপ্নও ছিল। কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল এ যাত্রা রংতুলি কে বাচানো যাবে না।
সেই সময় একমুঠো আলোর ঝলকানি হয়ে এল “সে”। আনিকা। আমার অনেক পুরোনো বন্ধু। খুব, খুউব কাছের বন্ধু! ও আমাকে যতটা সাহায্য করেছিল, তার একরত্তিও আমি ওর জন্য করতে পারিনি। পুরোটা সময় ধরে আমাকে মানসিক শক্তি জুগিয়েছে ও। রংতুলি কে একা হাতে টেনেছি আমরা দুজন। এভাবে দুজন দুজনার খুব কাছাকাছি চলে আসা। রাতের পর রাত জেগে আকাশে সপ্তর্ষি দেখা। কিংবা ভোর রাতে ছাদে বসে ওর গলায় রবীন্দ্রনাথ। দিন গুলো তখন যেন পাখির ডানায় উড়ে যেত। মাঝে মাঝে রিকশায় করে ঝুম বৃষ্টিতে বেরিয়ে পড়তাম আমরা। নিজেকে তখন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষের একজন মনে হত!
একাডেমী ততদিনে শুধু আমিই চালাই। দু জন নতুন ইন্সট্রাকটর এনেছি। রংতুলি নামটা আমার পছন্দ না, বোধহয় আগেই বলেছি। আনিকা আমাকে বলেছিল নাম পালটে অ্যানজেলফায়ার রাখতে। আমার নামটা দারুণ মনে ধরেছিল।
কিছুদিনের ভেতর একটা ভাল জব অফার পেলাম। চাকরীটা আমার দরকার ছিল। আমরা রংতুলি নিয়ে আরো বড় স্বপ্ন দেখতাম। সেজন্য দরকার ছিল পর্যাপ্ত অর্থের।
জবে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। কখনো কখনো সারাদিনে আনিকার সাথে কথাই হত না। একদিন সামান্য একটা বিষয় নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হল ওর সাথে। অভিমানী মেয়েটা আমার ওপর এতই অভিমান করল যে, একদিন কোন কিছু না জানিয়ে জার্মানী চলে গ্যালো। আমার সাথে কোন যোগাযোগ রাখেনি।
আমি আশাহত হয়েছিলাম। কিন্তু ভেঙ্গে পড়িনি। আমাদের স্বপ্নগুলো তো পুরণ করতে হবে! “রংতুলি” নাম পালটে রাখলাম অ্যানজেলফায়ার একাডেমী। ছবি আকার সাথে যোগ করলাম মিউজিক ও। ওয়েস্টার্ণ মিউজিক শেখাতাম আমিই। আর ক্লাসিক্যালের জন্য শহরের নামকারা ওস্তাদজি কে নিয়ে এলাম একাডমী তে। আশাতীত সাড়া পেলাম। গত বছর থেকে অ্যানজেলফায়ার একডেমী অ্যানজেলফায়ার স্কুল অফ আর্টস হয়ে গেল। মানে একটা কিন্ডারগার্টেন চালু করলাম।
ঠিক এইসময়ে আমার দরজায় একদিন মেঘলাপু এসে দাড়াল। না, কোন দাবী নিয়ে নয়, আমাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেই এল। আপু যে আমাকে কতটা ভালবাসত আমি বুঝতাম। কিন্তু আমার কিছুই করার ছিল না। আমার সবকিছু তো ওই অভিমানী অ্যানজেলটার জন্য ছিল। আমি কিভাবে অন্য কাউকে এর ভাগ দিতাম? আপু এটা জানত। তাই কোন দিন কিছু চায়নি আমার কাছে। আমি আসলে কতগুলো মানুষের কাছে খুব, খুব ঋণী! আমাকে আরো ঋনী করার জন্যই কিনা জানিনা, মেঘলাপু এখনো বিয়ে করেনি।
আমি এখন স্বপ্ন দেখছি অ্যানজেলফায়ার কে একটা সম্পুর্ণ স্কুল হিসেবে গড়ে তোলার। যে স্কুলে আর দশটা স্কুলের চেয়ে অন্য ভাবে পড়েলেখা শেখানো হবে। যাতে সেটা আনন্দময় হয়। আমাদের প্রচলিত পড়ালেখার মত বোরিং নয়। কোন কিছু আনন্দময় হলে বাচ্চারা সহজে শিখতে পারে। আমি জানিনা পারব কিনা। তবে হাল ছাড়ব না!
আনিকা যদি আমায় ক্ষমা করে কোনদিন ফিরে আসে, তবে দেখতে পাবে ঠিক আমাদের স্বপ্নের মত মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে অ্যানজেলফায়ার।
অ্যাই! কোথায় হারালি?? অনিকের ডাকে তম্নয়তা ভাঙ্গল আমার। ইলশেগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। গার্ডেন সেটের টেবিলের সাথে ছাতাও আছে। এজন্য গায়ে বৃষ্টি পড়ছে না।
পাকোড়া গুলো কে বানিয়েছে রে?
মেঘলাপু। সকালে এসেছিল। তুই আসার একটু আগে চলে গ্যালো।
ও। দারুণ হয়েছে পাকোড়া।
হুম! আর এইজন্যে বুঝি তুমি সব শেষ করে বসে আছো??
সে আর বলতে!
ছাতাটা বন্ধ করতো! বৃষ্টি তে ভিজব। অনেক দিন ভিজি না।
অনিক মুখটাকে করুণ করে বললঃ তার আগে শিমুকে একটা ফোন দে না!! সেই ভোর সকালে রাগ করে কই যে বেরোল!
উফফ! আর পারিনা! এরা কি বড় হবে না নাকি? ২ বছর হল বিয়ে হয়েছে এদের, এখনো বাচ্চাই রয়ে গ্যালো। ম্যাচিওরিটি এল না! সেলফোনটার দিকে হাত বাড়ালাম আমি...
(শেষ)
একই সাথে সামুতেও প্রকাশিত।