somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৪২০ (four twenty) এর মর্মকথা

২৮ শে মে, ২০১৪ রাত ২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ গরিব রাষ্ট্র হিসাবেই বিশ্ববাসির নিকট পরিচিত একটি দেশের নাম। আসলে কি আমরা গরিব? এই প্রশ্ন নিয়ে হয়ত বিতর্ক হতে পারে, কিন্তু আমার মতে; আমাদেরকে কৌশলে গরিব বানিয়ে রাখা হয়েছে। কি নাই আমার দেশে? আমার দেশের জনসংখ্যা আমাদের বিশাল সম্পদ। এ দেশের মত সস্তা শ্রমিক আর কোথাও পাওয়া যাবেনা তা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি। তাছাড়া রুপালি ইলিশ, মৎস্য, খনিজ ও বনজ প্রভৃতি সম্পদ তো আছেই। এখন প্রশ্ন হল আমার দেশে এত সস্তা শ্রমিক থাকা শর্তেও এ দেশের প্রচুর সংখ্যক লোক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশকে প্রাধান্য দেয় কেন। এর জন্য কে দায়ি? অনেকের কোটি কোটি টাকার স্থায়ি সম্পদ রয়েছে কিন্তু সে কিছু অংশ বিক্রি করে বিনিয়োগে ঝুকি নিতে ছায়না কেন? আবার তাকেই আপনি ইউরুপ/আমেরিকার ভিষা টিকেট ধরিয়েদিন, দেখবেন সে তার সকল স্থাবর সম্পত্তি বিক্রির ঝুকি নিতে কোন দ্বিধাই করবে না। এ প্রবনতা আমার দেশের নিম্ন পর্যায়ের লোক থেকে শুরু করে সর্ব উচ্চ পর্যায়ের সকলের মাঝেই কাজ করে। কারন আজকে যারা এমপি- মন্ত্রী তারা মনে করেন ক্ষমতার পরিবর্তন হলে পরবর্তি সরকার আমাদের (দুই হাতে উপার্জিত) সম্পদের উপর হাত বাড়াবে। এবং অতিতে যারা ছিলেন তারাও একই চিন্তা করেছিলেন। আর আমাদের মত সাধারন লোক হলেতো কথাই নাই, এই চাদা সেই চাদা দিতে দিতে বছরও শেষ, ব্যবসাও শেষ পুঁঝিও শেষ। তাই লোকজন দেশের ভিতরের চাইতে বাহিরে বিনিয়োগ করাটাকেই নিরাপদ মনে করে।
সুতরাং গরিব রাষ্ট্র উপাধিটা যতদিন এ দেশের নামের সাথে ঝুলবে ততদিন এদেশের রাজনিতিবিদদের দিনও মহাসূখে কাটবে এইটাই তাদের ভাবনা। তাই তারা চাইবেন না এই পরম অন্নদাতা! লকবটি বাদ পড়ে যাক। আর রাজনিতিবিদরা এই হেন চিন্তা থেকে বের হয়ে না আসলে আমার সোনার বাংলা অদূর ভবিশ্যতে অনেক অন্ধকারে প্রবেশ করবে।
এইবার শিরনামে আসি, মাঝে মাঝে মনে হয় আমার দেশটির এমন কেন হল? এত রাজনিতিবিদের মাঝে আমার দেশে এক জনও কি মাহাতির মুহাম্মদ নাই? সন্দানে বের হলাম, টিভি টকশোতে যাদেরকে সৃজনশীল, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ও সৎ মনে হল তাদের কয়েক জনের সাথে দেখা করে যোগাযোগ করলাম, তার সারসংক্ষেপ বর্ননা করছি।
১. বর্তমান সময়ের দুই জোটের মধ্যে যে কোন এক জোটের ১টি দলের মহাসচিবের সাথে দেখা করতে তার অফিসে গেলাম, মহাসচিবের রুমে প্রবেশ করে দেখি আগথেকে তিনি তার দলের কয়েকজন নেতার (ঐ দলের অবশ্য কোন কর্মি নাই) সাথে কথা বলছেন, তাদের আলোচ্য বিষয় ছিল জোট ক্ষমতায় আসলে তারা কি সুযোগ সুবিধা পাবেন তা নিয়ে, আমার প্রবেশের পরও পূর্বালোচনা চলছিল, মহাসচিবের বক্তব্যে পরম তৃপ্তির সুর। আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই দল গঠন করার সুবাদে ম্যাডামের (জোট নেত্রী) সাথে একই মঞ্চে উঠতে পারি, মাঝে মাঝে বকতিতা করার সুযোগও দেয় আর আমাদের চেয়ারম্যান সাহেবকে হয়ত একটা ব্যাংকের পরিচালক বানিয়ে দিবেন বাস আর কি চাই। মহামান্য! মহাসচিবের মহাসভায়! মহাপরিকল্পানা! শুনে আমি অন্য প্রসংগে কিছুক্ষন গল্প করে আমার প্রসঙ্গ না উঠিয়েই মহাসভাস্থল! ত্যাগ করলাম।

২. বর্নিত প্রথম ব্যক্তির সাথে দেখা করার কয়েক দিন পর ২য় সারির একজন সাংবাদিকের সাথে দেখা করলাম। আমি তাকে বল্লাম আপনি ত গটনমূলক তথ্য সমৃদ্ধ দূরধৃষ্ট সম্পন্ন বক্তব্য প্রদান করে থাকেন, কিন্তু এই ভাবে তো পরিবর্তন আসবেনা এইটাও আপনার বুঝার কথা, সুতরাং পরিবর্তনের জন্য কার্যকরি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় কিনা? তিনি কিছু সময় লাগিয়ে পাণ্ডত্তের সুরে প্রধান কয়েকটি দলের ভূল ত্রুটি নিয়ে আলোচনা করলেন। এবং সর্বশেষ আমাকে এই বলে আশ্সস্ত করলেন যে টিক আছে আমি আপনার প্রস্তাবটি study করব। কয়েক দিন প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করে আমিই ফোন করলাম, তিনি ব্যস্থতার কারণে বিষয়টি নিয়ে ভাবভার সময় পাননি বলে জানালেন, এবং প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য আরও কিছু সময় চাইলেন। আরো কিছুদিন পর ফোন করলে তিনি জানালেন যে, আসলে ভাই আমরাতো সাংবাদিক মানুষ, আর এই বিষয়টি দেখার জন্য রাজনীতিবিদরা আছেনই।

৩. সাবেক এক এম,পির সাথে এই বার দেখা করলাম, যিনি নিজ দল সহ সকল দলের প্রকৃত ভূল গুলোর সমালোচনা করেন। আমার হিসাবে উনাকে প্রকৃত প্রতিবাদি বলা যেতে পারে। তিনি আমাকে যথেষ্ট আন্তরিকতা দেখিয়েছেন, তিনি এই বলে আমাকে উপদেশ দিয়েছেন যে ভাই এই দেশের সাধারন মানুসের কোন পরিবর্তন হবেনা, কারন হিসাবে তাঁর ব্যক্তিগত কিছু উন্নয়ন মূলক কাজ কর্ম এবং তার বিপরিতে সুবিধা ভূগিদের নাফারমানির কথা উল্লেক করেছেন। কিছু ছ্যাচড়া চোর ডাকাতের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন যে দেশে এসব চোর ডাকাতরা এম,পি নমিনেশন পায় এবং ঐদেশের লোকজন তাদেরকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে সে দেশের কি ইতিবিচক পরিবর্তন আশা করতে পারেন আপনি? সুতরাং খামাকা এটার পেচনে গুরাঘুরি কইরেন না, টার্গেটে পড়লে মারা পড়বেন।

৪. এর কিছুদিন পর ১৯ দলীয় জোটের একটি দলের চেয়ারম্যানের সাথে সময় নিয়ে দেখা করলম। তাঁকে বল্লাম জনাব আপনি ত কথায় কথায় বলে থাকেন দেশকে উন্নত করতে হলে আমাদেরকে দুই পরিবারের বলয় থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কিন্তু আপনিই তো একটি পরিবারের সাথে জড়িয়ে আছেন। তাহলে লোকজন আপনাদেরকে কিভাবে মুল্যায়ন করবে? তিনি একধম কমন জবাবটিই দিলেন, আসলে একান্তই কৌশলগত কারনে আমরা জোটবদ্ধ হয়েছি, এটা সাময়িক। আমি বল্লাম আপনি ত উন্নয়নের জন্য রাজনিতি করেন এবং আপনি আপনার দলের প্রধান, আপনারা যে ভাবে রাজনিতি করতেছেন সেভাবে কি দেশের কোন উপকার হবে? জনাব এ কে ফজলুলহক, মাওলানা ভাসানি, বঙ্গবন্ধুরা কি এই ভাবে রাজনিতি করেছেন? শুধু মাত্র বাসবভন, দলিয় কার্যালয় ও প্রেসক্লাবে যাতায়াত সিমাবদ্ধ থাকলে কি দেশে পরিবর্তন এসে যাবে? তিনি বল্লেন ভাল উদ্দেশ্য নিয়েই নেমেছিলাম, কিন্তু এই দেশের ব্যাপারে লর্ড মেকলের বক্তব্যটিই সঠিক। লর্ড মেকলে হল ভারতবর্ষের বৃটিশ সংবিধান প্রনেতা। নবাব সিরাজুদ্দৌলার পতনের অনেক বছর পর ইংরেজরা ভারতবর্ষে তাদের নিজস্ব আইন প্রনয়নের জন্য আইনবিদ লর্ড মেকলেকে ভারতবর্ষে আমন্ত্রন করে নিয়ে আনেন। লর্ড মেকলে এই দেশের লোকজনকে তিন মাস পর্যবেক্ষন করে এই মন্তব্য করেন " ভোঁমরের যেমন হুলের প্রয়োজনিয়তা আছে, মহিষের যেমন শিং এর প্রয়োজনিয়তা আছে, রোম উপাক্ষানে যেমন সুন্দরি নারির প্রয়োজনিয়তা আছে ভারতউপমহাদেশের মানুষের তেমনি প্রতারনার প্রয়োজনিয়তা রয়েছে" প্রিয় পাঠক বুঝতেই পারছেন যে দেশের নেতেদের মনে বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়ে আছে যে আমার দেশের সাধারন মানুষ প্রতারক সুতরাং নেতাগিরি করা মানে প্রতারকদের সরধারি করা সুতরাং আগে আমাকে দক্ষ প্রতারক হতেহবে, সে দেশের প্রজাদের কপালে যা ঘঠার প্রতিনিয়ত তাই ঘঠছে।
বন্ধুগন কেউ কথা দিয়ে কথা না রাখলে আমরা তাকে Four twenty বলে গালি দেই। আসলে লর্ড মেকলে ভারতউপমহাদেশে যে আইন প্রনয়ন করেন ৪২০ ধারাটি হল প্রতারনার বিষয়ে। অর্থাৎ কেউ কারো সাথে প্রতারনা করলে যে ধারায় মামলা হবে তার নাম্বার হল ৪২০ বা Four twenty মূলত এই জন্যই সংখ্যাটি গালি হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×