ভালো থেকো
========
সকাল নয়টা ছুই ছুই, তবে চাকুরী নামের সোনার হরিণ পাওয়ার পর থেকেই একটা গোলাপ কাটা বিধে যাওয়ায় নিজেকে নয়টায় অফিসে পৌছানোর জন্য অসহনীয় এক নিয়মের সাথে মানিয়ে নিয়েছি সুবোধ বালকের মত।
এমন অবস্থা ঘরের সুন্দরী প্রিয়তমা স্ত্রী তার মায়াবী আঁচল দিয়ে বেধে রাখতে পারে না, যার জন্য ছাত্র জীবনে প্রাইভেট আর ক্লাস ফাঁকি দিতে হয়েছে শুধুমাত্র নিজেকে তার আপনজন প্রমাণ করার দুরন্ত অভিলাসে। সেও এখন অফিসে আসার সময় তারাহুড়া দেখে মাঝে মাঝে নয় প্রায় প্রতিদিনই বলে অফিসে যেতেই যত তারাহুড়া ফেরার সময় দেরি, অফিসে কি সুন্দরী কারও খোঁজ পেয়েছো নাকি রাস্তায় কারও সাথে প্রেম কর।আসলে তার ভাবনাটা যে ভুল একথা বিশ্বাস করাতে হলে প্রতিদিন তাকে সাথে নিয়ে অফিসে যেতে হবে অথবা আমার যাতায়াতের রাস্তা ও অফিসে সিসি ক্যামেরা সেট করে বাসায় সিসি টিভি বসাতে হবে। অবশ্য সরকার আগামী প্রজন্মের কথা চিন্তা করে এরকম একটি পাইলট প্রকল্প “স্বামী সুরক্ষা প্রকল্প” নাম দিয়ে আমাদের উপর প্রয়োগ করে তাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকার হিসেবে আমাদের সুখী দাম্পত্য উপহার দিতে পারে। এতে তারা আগামী নির্বাচনে সুন্দর স্লোগান পাবে-
“ঘরে বসে একুশ শতকের নারী,
স্বামী উপর রাখো নজরদারী;
স্বামীর জন্য ভয় নাই,
বোন তোমার ভোট চাই।”
“আমরা করব ডিজিটাল,
তোমরা বানাও সরকার;
স্বামীর ভোট চাই না,
তোমার ভোটই দরকার।”
দেখা যাবে দেশের সকল নারী তাদের ভোট দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে যাবে আর ক্ষমতা তাদের জন্য মোটামুটি চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে। কারন অর্ধেক ভোটার যদি ভোট ব্যাংক হয়ে যায় তাহলে আল্লাহ ছাড়া পৃথিবীর এমন কোন শক্তি নাই তাদের ক্ষমতা থেকে নামায়।
সময় গড়িয়ে যাচ্ছে তাই সময়মতো অফিস যাওয়ার চিন্তায় আজ আর হেঁটে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে রিকসায় উঠে বসলাম, রিক্সা টিএসসির দিকে ঢুকতেই রিক্সাওয়ালা তার মোবাইলের চলা গানের সাউন্ড বাড়িয়ে দিল, গান চলছে “চিঠি লিখেছে বউ আমার ভাঙা ভাঙা হাতে” মনে হয় সে বউকে খুব ভালবাসে। তবে “স্বামী সুরক্ষা” প্রকল্পটি চলমান থাকলে তার গান অটো বন্ধ হয়ে যেতো।
অফিসের সামনে এসে মানিব্যাগ খুলতেই দেখি রিকসা ভাড়া দেওয়ার জন্য ত্রিশ টাকাতো দুরের কথা ত্রিশ পয়সাও নেই, আছে দুটি এক হাজার টাকার নোট। মনে মনে ভাবলাম বউ আমার পকেট কাটতে কাটতে খুচরা টাকা সব সাবার করেছে, ভুলেই গিয়েছিল যে আমার আজ অফিস আছে। সাত সকালে অফিসে গিয়ে কার কাছে খুচরা টাকা চাইব তাই রিক্সাওয়ালাকেই বললাম, ভাই টাকাটা কাল নিও আমিতো রোজই অফিসে আসতে তোমাকে দেখি, কাল দিয়ে দিব।
জবাবে সে বলল, ভাই বাকীর নাম ফাঁকি, দিন বদলাইছে বিকাশ-ডাচ বাংলা আছে না নম্বর দেই মাইরা দেন। দেশে যাইতে হবো, আমি আলগা টেকা রাহিনা মোবাইলে ভরতেই হবো, খুচরা টেকা নিয়া গেলে বউ মাইরা দেয়।
নয়টা বেজে গেছে তাই কোন কিছু না ভেবেই রিক্সাওয়ালার ডাচ বাংলা নম্বরে ত্রিশ টাকা সেন্ড মানি করে দিলাম ফি হিসেবে গুনলাম অতিরিক্ত পাঁচ টাকা।
অফিসের লিফেটে উঠে আয়নায় বউয়ের দেয়া নতুন শার্টটি পড়ে আমায় কেমন লাগছে দেখতে লাগলাম হঠাৎ নজর গেল শার্টের পকেটের দিকে দেখি ছয়টি নতুন দশ টাকার নোট সাথে একটি কাগজ তাতে লেখা-
শুভ জন্মদিন,
তোমার সব খুচরা টাকা গুলো নিয়ে নিলাম, আমি গত ঈদে তোমার দেয়া নতুন টাকাগুলো রেখে দিয়েছিলাম সেখান থেকেই তোমাকে ছয়টি দশ টাকার নোট দিয়ে দিলাম রিক্সা ভাড়ার জন্য আমি জানি তোমার অফিস যাওয়া-আসায় রিক্সা ব্যতীত কোন যানবাহনের প্রয়োজন নেই আর তাতে ভাড়া ত্রিশ-ত্রিশ ষাট টাকার বেশী নয়, তুমি বিকেলে ফেরার পথে হেঁটে বাসায় আস, আজ অবশ্যই রিক্সায় আসবে, রিক্সায় আসলে পাঁচ মিনিট হলেও আগে ফিরতে পারবে। আমি তোমার জন্য অপেক্ষায় থাকব। আমার নিজস্ব কোন টাকা নেই তাই তোমার টাকাই তোমাকে জন্মদিনের উপহার হিসেবে দিলাম, কিছু মনে করো না। মনযোগ দিয়ে অফিসে কাজ কর, আজ আমরা বাহিরে খাব, তোমার পকেটে দেখলাম দুই হাজার টা্কাই আছে মাসের বাকী দশ দিন চলতে টাকাটা লাগবে। তাই আমি তোমার পকেট থেকে মাঝে মাঝে যা রাখি সে টাকা জমে প্রায় তিনশ হয়েছে, এটা দিয়ে যেখানে খাওয়া যায় সেখানেই খাব আর না হয় আসার সময় এক কেজি গরুর মাংস নিয়ে এসো বাসায় এলে তোমাকে টাকা দিয়ে দিবো। এ মাসে তো গরুর মাংস খাওয়াই হয় নি। তুমি তো গরুর মাংস খেতে খুব পচ্ছন্দ কর আর আমি তোমার মাংস খাওয়া দেখতে পচ্ছন্দ করি।
ভালো থেকো
আবারও শুভ জন্মদিন।