somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিনাংকাবাউঃ যেখানে মেয়েরাই সর্বেসর্বা!

০৮ ই জুন, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এ সপ্তাহের অঙ্গনা
ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা থেকে মাত্র দু’ঘন্টার আকাশ ভ্রমন দূরত্বে, পশ্চিম সুমাত্রার কোটো পাঞ্জাং নামক জায়গায় মিনাংকাবাউ গোত্র অবস্থিত, ইতিহাসের মাতৃতান্ত্রিক সভ্যতার প্রায় সর্বশেষ প্রমান হিসেবে এখনো যে গোত্রে মেয়েরাই সর্বেসর্বা। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ চার মিলিয়ন মিনাংকাবাউ মানুষের প্রায় প্রত্যেকেই বর্তমান সময়ের সর্ববৃহৎ মাতৃতান্ত্রিক গোত্রের একজন সদস্য হিসেবে গর্বিত। এ গোত্রের সব কিছুই মেয়েদের অধিকারে। ষাড়ের শিং’র মত করে বানানো ছাদওয়ালা ঘর, নারিকেল গাছ, ঘরের পিছনে জমা করে রাখা ফলের গোদাম এবং ধানের ক্ষেত- সবকিছুর মালিক আক্ষরিক অর্থেই ঘরের মেয়ে।

মিনাংকাবাউ গোত্রের অন্যতম প্রথা অনুযায়ী বিয়ের পর কনে তার বরের সাথে কিছুদিনের জন্যে শ্বশুড়বাড়ি থেকে আসলেও, মূলতঃ বরকেই তার বধূর ঘরে চলে আসতে হয়, শুধুমাত্র নিজের দেহ এবং গায়ের কাপড় নিয়ে। বিয়েতে সাধারনত বর বা কনে উভয়পক্ষ থেকেই কোনো যৌতুক প্রথার প্রচলন নেই। বিয়ের পর কনের পরিবারকে নিজের পরিবারের মত মেনে নেয় বর।


মিনাংকাবাউ গ্রামের মেয়েদের পেশার মধ্যে ক্ষেত-খামারী এবং অন্যান্য বিভিন্ন কাজ থাকলেও, মূলত ইন্দোনেশিয়ার ট্র্যাডিশনাল ‘মুকেনা’ সেলাই করে ঘর চালায় বেশীর ভাগ মেয়েরা। ‘মুকেনা’ হল সাদা রং’র মাথা থেকে কোমড় এবং কোমড় থেকে পা ঢেকে মেয়েদের নামাজ পড়ার পোষাক। মিনাংকাবাউ মেয়েরা মুকেনা বানিয়ে ঘরের ছেলেকে দিয়ে জাকার্তা এবং প্রতিবেশী দেশ মালেশিয়ায় পাঠিয়ে দেয়। ছেলেরা সেখানে ব্যবসা করে টাকা কামিয়ে ঘরে ফিরে ঘরের কর্ত্রীর কাছে জমা দেয়।

মিনাংকাবাউ গোত্রের প্রতিটি বিবাহিতা দম্পত্তির একান্ত কামনা তাদের প্রথম সন্তান যেন মেয়ে হয়। যে দম্পত্তির যত বেশী মেয়ে সে দম্পত্তি তত বেশী সুখী বলে গন্য করা হয়। এর অন্যতম কারন, গোত্রের সমস্ত কিছু মূলতঃ মেয়ের উপরেই নির্ভরশীল। সাধারনত প্রতিবেশীর ছেলের সাথে খেলাধূলা, প্রেম এবং বিয়ে, অবশেষে ঘরের দায়িত্ব বুঝে নেয়া মিনাংকাবাউ গোত্রের মেয়েদের অন্যতম সাধারন প্রথা। সাধারনতঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায়কারী, অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে দায়িত্ববান এবং মেয়েদের মত পরিশ্রমী ছেলেদেরকে মিলাংকাবাউ মেয়েদের পছন্দ বেশী। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে ছেলেরা সাধারনত ভাল রান্না করার দক্ষতার উপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

গোত্রের পুরুষেরাও তাদের মেয়েদের কতৃত্বে মোটেও অসন্তুষ্ট নয়। গোত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পুরুষ সদস্য ‘জুল’র ভাষায়, ‘আমাদের মেয়েরা যদি আমাদের সব কথাই মেনে নিত, তাদের নিজেদের মতামত প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগী না হত, তাহলে আমাদের জীবনে কোনো মজা থাকতোনা। জীবন নিরামিষ হয়ে যেত। আমরা ছেলে এবং মেয়েরা মিলেমিশে কাজ করি, মিলেমিশে থাকি- এতেই আমাদের আনন্দ’।

মিনাংকাবাউ গোত্রের মূল বিশ্বাস ইসলাম হলেও, গোত্রের মেয়েরা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে এবং প্রার্থনার সময় বড় চাদরে নিজেদের সতর ঢেকে রাখলেও, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইসলাম এবং সমাজ এ দুই কে মিলিয়ে নিজেদের মত করে প্রথা তৈরী করে নিতে হয় তাদেরকে। বিশেষ করে ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী সম্পত্তি বন্টনে মেয়েদেরকে ছেলেদের অর্ধেক দেয়ার আইন এ গোত্রে অনুপস্থিত। মিনাংকাবাউ গোত্রের বর্তমান অন্যতম গোত্রপতি যাকে সবাই ‘দাদু’ বলে ডাকে, তিনি বলেন ‘কিছু ক্ষেত্রে প্রথা এবং ইসলাম একে অন্যের সাথে সংঘর্ষ করে থাকে। কিন্তু বৃহৎভাবে দেখলে বুঝা যায় প্রথা এবং ইসলাম- উভয়ের উদ্দেশ্যই হলো মানুষের কল্যান। সমাজের কল্যান। মেয়েদেরকে কর্তৃত্ব দেয়া মূলতঃ সমাজের জন্যেই কল্যানকর। আমরা তাই মেয়েদেরকে সম্পত্তির মূল অংশ দিয়ে থাকি’।

যদিও এ গোত্রের বেশীর ভাগ মেয়েই তাদের পুরো জীবনে নিজেদের গ্রামের বাইরে যায়নি, তারপরও তাদের আত্মবিশ্বাস, অনবরতঃ কাজ করে যাওয়া এবং সমাজ চালানোর দক্ষতা প্রায় অবিশ্বাস্যই বলা যায়, বিশেষ করে মুসলিম এই স্বয়ংসম্পূর্ন গ্রামের আত্মবিশ্বাসী মেয়েরা মাতৃতান্ত্রিক সুন্দর সমাজ ব্যবস্থার জীবন্ত প্রমান।

৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×