আপন! মানে নিজ। যা নিজস্ব। আপন কে? সাধারণ চোখে আমরা যাদেরকে আপন বলে ভাবি তারাই কি আপন? এ দুনিয়ায় কে কার? আপন কেউ কাউকে ভাবে না, ভাবার ভাণ করে মাত্র।
আমার হাত, আমার পা, আমার নয়। আমার দেহ? সেও পর। আজ মরে গেলে দুদিন পর পঁচে গলে নিঃশেষ হয়ে যাবে।
আত্মা? সে তো সুদিনের শুকপাখী। সুযোগ পেলেই কলা দেখাবে। মানব জগতে যারা সৌজন্য দেখায় তারা? তারা আপনও নয় আত্মীয়ও নয়। যারা ডালভাতে তুষ্ট তারা আত্মীয় বটে আপন নয়।
জন্মদাতা পিতামাতা? তাঁরা পুত্রের বিপদে দুঃখিত হন মাত্র। অর্ধাঙ্গিনী? সে তো তিন কথায় উঠে বসে। পুত্রদের মধ্যে যারা কর্মক্ষম তারা স্বার্থের আপন, যারা অক্ষম তারা নির্ভরশীলমাত্র- সুযোগের অপেক্ষারত।
বস্তু জগতে নিজের ঘরও নিজের নয়- নিজের মাল-মসলা পরে খাচ্ছে, ডাকাতে লুটছে।
ভোগ্য জগতে কেউ আপন আছে কি? সুখ? সে তো দুধের মাছি- সুসময়ের বন্ধু। দুর্দিনে সারা আত্রাবে তার ছায়াও মিলবে না।
দুঃখ? সেই আপন। সকলের আপন। আপনার চেয়েও আপন। এ পৃথিবীতে যারা জন্ম গ্রহণ করেছিল, করেছে এবং করবে তাদের প্রত্যেকের আপন। তাকে ডাকার প্রয়োজন পড়ে না। সুদিনে দুর্দিনে সে সবার ঘনিষ্ট সাথী- গলার হার, দেহের ভূষণ। কেউ ছাড়তে চাইলেও সে তাকে ছাড়ে না, গলা জড়িয়ে নিবিড় হয়ে থাকে। যাঁরা কোটিপতি, যাঁরা জোতদার, যাঁরা অট্টালিকায় বাস করেন, যাঁদের শ' শ' চাকর-চাকরাণী, দাস-দাসী সে তাঁদেরও অন্তরের মণি কোঠায় জুজুর মত বাস করে দাবানলের মত দহন করে। যাঁরা রাজ্যের মালিক- রাজা-বাদশা তাঁরা তো দুঃখের ডালি মাথায় বেড়ান।
যাঁরা এই অজেয় অচ্ছেদ্য এবং অলঙ্ঘ দুঃখকে পরাভূত করতে পেরেছেন তাঁরা কাঙ্গাল হলেও রাজাধিরাজ-নিঃস্ব হলেও সম্পদশালী। তাঁরা তো সাধারণ মানুষ ননই হয়ত মহাপুরুষ। সে বড় হিংসুক। তৃতীয় কারো বন্ধুত্ব সে পছন্দ করেনা। মানুষকে সহায়হীন, বন্ধুহীন, এবং সঙ্কীর্ণমনা করে তুলতে এবং তিলে তিলে তাকে নিঃশেষ করতে তার জুড়ি নেই। সে সর্ব গ্রাসী সর্বনাশা। তার এই সর্বনাশা গ্রাস থেকে দুনিয়ার কেউই পরিত্রাণ পায়নি এবং পাবেও না।
অতীন্দ্রীয় জগতে অলক্ষ্যে একজন আছেন যিনি সর্ববস্থায়, সর্ব সময়ে সকল মানুষের আপন এবং সাথী। তাঁকে আপন ভাবলেও আপন, না ভাবলেও তিনি আপন। তাঁকে ডাকলেও তিনি সাথে থাকেন, না ডাকলেও তিনি সাথেই থাকেন। বিপদে আপদে দুঃখের করাল গ্রাস থেকে তিনি তাকে রক্ষা করেন। দুঃখ মুখের গ্রাস কেড়ে নেয়, তিনি তা তুলে দেন।
তিনি কে? তিনি আর কেউই নন মহাবিশ্বের স্রষ্টা এবং সর্ব জীবের প্রতিপালক মহা মহিমাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন।
দুঃখকে সর্বগ্রাসী সর্বনাশা বলে যতই দোষ দেইনা কেন, দুঃখের প্রয়োজন আছে। প্রকারান্তরে সে মানুষের সেবা করে থাকে। সে ইহকালে শাস্তি দিয়ে পরকালের পথকে প্রশস্ত করে। মানুষ পৃথিবীতে এসেই স্রষ্টাকে ভুলে তাঁর দিকে পিছন ফিরে পার্থিব ভোগ বিলাসে ব্যপৃত হয়। তাতে ইহজগতের সুখতো হয়ইনা বরং তার জাহান্নামের পথ পরিষ্কার হয় মাত্র। দুঃখ তার সব সম্পদ নিষ্ঠুর হাতে কেড়ে নিয়ে স্রষ্টার দিকে মুখ ফিরিয়ে দেয়। তখন সে দুঃখের দহণে কোন উপায় না দেখে বাধ্য হয়ে স্রষ্টাকে স্মরণ করে। ইহজগত ও পরজগতে তার মত ঘনিষ্ট ও হিতৈষী বন্ধু আর কে আছে? সেই তো পরম আপন।
লেখকঃ প্রাক্তন শিক্ষক, পাবনা
সূত্র

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




