somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় রাসূলুল্লাহর অবদান

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) এর অবদান।
সৃষ্টি জগতে আল্লাহ পাকের শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি হচ্ছে মানবজাতি। আর সব সৃষ্টির উপর রয়েছে মানবজাতির অধিকার। মানুষ কতগুলো স্বতঃসিদ্ধ অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। দেশ-কাল, বর্ণ-ভাষা ও জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের বেলায় সে অধিকার সমানভাবে প্রযোজ্য। এ অধিকারগুলোকে একত্রে বলা হয় মৌলিক মানবিক অধিকার বা মানবাধিকার। এ অধিকার হরণ করার ক্ষমতা কাউকে দেয়া হয়নি। অথচ সংবাদপত্রের পাতা খুললেই মানবাধিকার লংঘনের হাজারো ঘটনা আমাদের হৃদয়কে ব্যথিত করে দেয়। ফিলিস্তিন, ইরাক, আফগানিস্তান সহ অন্যান্য দেশ সমূহে যা ঘটছে তাকি মানবাধিকার লংঘন নয়? এর পরেও আন্তর্জাতিক বিশ্ব, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও সংবাদপত্রগুলো মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার গলাবাজিতে চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু দুনিয়াবাসির নিকট সর্বপ্রথম মানবাধিকারের পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা ঘোষণা করেন বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সঃ)। ইসলাম প্রচারের প্রাথমিক অবস্থায় নবদীক্ষিত মুসলিমদের জীবনে যে, অমানবিক অত্যাচার, নির্যাতন নেমে এসেছিল, এতে মানবাধিকার চরমভাবে লংঘিত হয়েছিল। আরবের কাফের মুশরিকদের অসহনীয় জুলুম ও নির্যতনে অতিষ্ঠ হয়ে মানব দরদী মুহাম্মদ (সঃ) মদীনায় হিজরত করেন। এত অত্যাচারের পরেও মক্কা বিজয়ের পর রাসূল (সঃ) সবাইকে ক্ষমা করে দিলেন। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় এর চেয়ে উজ্জ¦ল দৃষ্টান্ত জগতে মানবজাতির নিকট আর কি হতে পারে?
জন্মগতভাবে মানুষ, মানুষ হিসাবে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য যে অধিকারসমূহ লাভ করে, তাই মানবাধিকার। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জীবনের নিরাপত্তা, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি।
ব্যক্তিগত জীবনে নিরাপত্তার অধিকারঃ ইসলামে মৌলিক অধিকার হিসাবে প্রত্যেক ব্যক্তিরই তার ব্যক্তিগত জীবনের নিরাপত্তা সংরক্ষণের গ্যারান্টি রয়েছে। পবিত্র কুরআনে এ প্রসঙ্গে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছেঃ “তোমরা নিজেদের ঘর ব্যতীত অন্য কারো ঘরে বিনা অনুমতিতে এবং তাদেরকে সালাম না করে প্রবেশ করবেনা ; যদি ঘরে কাউকে না পাও, তবে অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত তাতে প্রবেশ করবে না। আর যদি তোমাদেরকে চলে যেতে বলা হয়, তবে ফিরে যাও। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম”। (সূরা: নূর ২৭.২৮)। পরস্পরের ইজ্জত ও সম্ভ্রমের উপর হস্তক্ষেপ করার মত উপায় ও পন্থা চিরতরে নিষিদ্ধ করেছে ইসলাম। ইসলামে ইজ্জত-সম্মান রক্ষা করাও মৌলিক অধিকারের অন্তর্ভূক্ত।
খাদ্যের অধিকারঃ বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের প্রয়োজন। তাই খাদ্যের অভাবে যাতে কেউ কষ্ট না পায় সে জন্যে ইসলামে রয়েছে কঠোর হুঁশিয়ারী। কোন মানুষকে ক্ষুধার্ত দেখার পর সামর্থ থাকা সত্ত্বেও খাবার না দেয়া ইসলামের দৃষ্টিতে কত বড় গুনাহ যে, মানুষের দোযখে যাওয়ার কারণসমূহের মধ্যে এটাকেও একটা কারণ হিসাবে উলে−খ করা হয়েছে, সূরাঃ আল মুদ্দাস্সিরের ৪৪ নং আয়াতে। এজন্যই রাসূল (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা ক্ষুধার্তকে খাবার দাও, রোগীর সেবা করো এবং বন্দীদেরকে মুক্ত করো”। বুখারী, আধুনিক প্রঃ হা/৪৯৭৩। ভুখা, নাংগা ও বিপদগ্রস্ত প্রতিটি মানুষকেই সাধ্যমত সাহায্য করা মানুষের কর্তব্য। ইসলাম এটাকে ইবাদত হিসাবে উলে−খ করেছে সূরা আদ্ দাহ্রের ৮ ও ৯ আয়াতে।
শিক্ষার অধিকারঃ অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত মানব জাতিকে অন্ধকার থেকে মুক্ত করার জন্যই ইসলামের আগমন হয়েছে। রাসূল (সঃ) কে আল−াহর পক্ষ থেকে প্রথমেই বলা হয়েছে, ইক্রা বা পড়। আর রাসূল (সঃ) অন্ধকারের ঘোর অমানিশা থেকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হওয়ার জন্য ঘোষণা করেছেন, “ প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির জন্য জ্ঞান অর্জন করা ফরজ।” মুসনাদে আবু ইয়ালা হাদীস নং ৪০৩৫/ ২৮৩৭
ধর্মীয় স্বাধীনতাঃ ইসলাম, ধর্মের ব্যাপারে কোনরূপ হস্তক্ষেপ কিংবা বল প্রয়োগের অধিকার দেয় না। এ ব্যাপারে আল-কুরআনের ঘোষণা হচ্ছে, “দ্বীনের ক্ষেত্রে কোন বল প্রয়োগ নেই; নিশ্চয় গোমরাহী থেকে সুপথ স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে ” । (বাকারা - ২৫৬)। শুধু তাই নয়, ইসলামে কোন স¤প্রদায়ের ধর্মানুভূতিতেও আঘাত দেওয়ার অধিকার নেই। আল্লাহ পাকের বাণী, “এরা আল−াহ্কে বাদ দিয়ে যাদের ইবাদত করে তোমরা তাদেরকে গালাগালি করো না ”। ( আন’আম : ১০৮)।
নারীর অধিকারঃ ইসলামই সর্বপ্রথম নারী জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। জাহিলিয়াতের যুগে যখন জীবন্ত কন্যা-সন্তানকে মাটির নীচে পুঁতে ফেলা হতো, তখন মহানবী (সঃ) ঘোষণা করেন, “তোমরা কন্যা-সন্তানকে হত্যা করো না।” ইসলাম নারীকে পুরুষের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার দান করেছে। কুরআনের ঘোষণা হচ্ছে, “পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীদের অংশ আছে; অল্প হোক কিংবা বেশি। এ অংশ নির্ধারিত ”। (সূরাঃ নিসা:৭)। পৃথিবীর অন্য যে কোন ধর্মের চেয়ে ইসলাম দ্বারা নারীগণ অনেক বেশি সুরক্ষিত। নারী জাতি সম্পর্কে কুরআনের ঘোষণা অনেক বেশি সঠিক ও উদার।
শ্রমের অধিকারঃ শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকার যাতে খর্ব না হয়, সে জন্য ইসলামে প্রতিটি মানুষকেই আদমের সন্তান বলে উলে−খ করা হয়েছে। কুরআনের ঘোষণা হচ্ছে, “তোমরা নামাযের পরে রিযেকের সন্ধানে জমিনে ছড়িয়ে পড়।” (সূরাঃ জুমুআ’হ্: ১০)। শ্রমিকের মজুরী আদায়ে মানবতার দরদী নবী (সঃ) কঠোর আদেশ প্রদান করেছেন, “তোমরা শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকানোর পূর্বেই তার মজুরী পরিশোধ কর।” বায়হাকী হাদীস নং ১১৪৩৪ ইবনে মাজা হাদীস নং ২৪৪৩ আবু ইয়ালা হাদীস নং ৬৬৮২
অন্যান্য অধিকার সমূহঃ উপরোক্ত অধিকারই নয় বরং মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রে, ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সব ধরণের অধিকার ইসলাম নিশ্চিত করেছে। সন্তানের উপর পিত-মাতার অধিকার এবং পিতা-মাতার উপর সন্তানের অধিকার, শিক্ষকের উপর ছাত্রের অধিকার, ছাত্রের উপর শিক্ষকের অধিকার, রাজার উপর প্রজার অধিকার, রাষ্ট্রীয় কাজে জনসাধারণের অধিকার, ইসলাম দিয়েছে। শুধু তাই নয়, সবার অধিকার যাতে প্রতিষ্ঠিত হয় সে জন্য পরামর্শের ভিত্তিতে পার¯পারিক কর্ম স¤পাদন করার কথা বলা হয়েছে সূরাঃ শূরার ৩৮ নং আয়াতে।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, বিশ্বের একজন শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় রাসূল (সঃ)-এর অবদান ছিল সফল এবং সার্থক।
আজ যারা মানবাধিকারের মূল এজেন্ট সেজে বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে আকাশ-বাতাস মুখরিত করছেন, পৃথিবীতে তাদের সংখ্যা বেশি হলেও আল−াহর নিকট তাদের জবাবদিহিতার ভয় না থাকায় বাস্তবক্ষেত্রে তারা কোন অবদান রাখতে পারেনি, পারছে না; বরং তাদের অমানবিক ক্রিয়া কলাপের দ্বারা মানবাধিকার ক্ষুণ হচ্ছে ব্যাপক হারে। আজ পৃথিবীতে মুসলমানদের রক্ত নিয়ে যে, হোলি খেলা খেলছে, মানবাধিকারের প্রবক্তাদের গলার স্বর এখানে অতি ক্ষীণ। অতএব দেখা যায়, অশান্তিও বিশৃঙ্খলায় পরিপূর্ণ বর্তমান বিশ্ব সমাজে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সকল অন্যায় অনিয়ম দূরীকরণে প্রয়োজন রাসূল (সঃ)-এর আদর্শের প্রতিফলন। তাতেই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, বিশ্ব সমাজের শান্তি ও কল্যাণ নিহিত।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার বাকস্বাধীনতা সব সময়ই ছিলো, এখনো আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৯



ছোটকালে ক্লাশে অপ্র‌য়োজনীয় কথা বলে, অকারণ অভিযোগ করে, অন্যকে কটু কথা বলে শিক্ষকের মার খেয়েছিলেন নাকি? আমি অপ্রয়োজনীয় কথা বলে ক্লাশে কিংবা সহপাঠিদের বিরক্তির কারণ হইনি; ইহার পেছনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিডলাইফ ক্রাইসিস: বাঁচতে হলে জানতেই হবে

লিখেছেন মন থেকে বলি, ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০০



"ধুর ছাই!
কিচ্ছু ভাল্লাগে না।
বা**, কী করলাম এতোদিন।
সব ফালতু।"


ক্যালেন্ডার কী বলছে? চল্লিশ পেরিয়েছে?

তাহলে দশটা মিনিট দিন। কারণ ব্যাপক সম্ভাবনা ৯৯% যে এই মুহূর্তে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের বাড়ির কাজের বুয়া যদি ব্লগে আসত ! :D

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:২৩

কয়েক বছর আগের কথা। আমাদের বাড়ির দীর্ঘদিন এক মহিলা কাজ করেছেন । তারপর তার ছেলেদের অবস্থা একটু ভাল হয়ে গেলে আর তাকে কাজ করতে দেয় নি। তবে অভ্যাসের কারণে বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি ১১ বছর ১ সপ্তাহ

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:৪২


গত কয়েকমাস যাবত চাকরিগত ঝামেলায় ব্লগে তেমন সময় দিতে পারিনি। দেশের পরিস্থিতির মতো আমার পরিস্থিতিও ছিল টালমাটাল। আগের চাকরি ছেড়ে নতুন চাকরি টিকিয়ে রাখতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় চলেছি। অফিসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ এবং কিছু কথা......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৩০

আমাদের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ এবং কিছু কথা.........

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমাদের সফলতার চেয়ে ব্যর্থতার বিষাদময় গ্লানির সঙ্গেই বোধকরি বেশি সম্পর্ক। কদাচিৎ কোনো বড় দলকে পরাজিত করার পর আমরা পুরো বাংলাদেশ এখনো আবেগে আপ্লুত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×