১. সকল ধর্মের একই মর্ম
এই বক্তব্যের বক্তারা কথাটির মাধ্যমে অন্যান্য তথাকথিত ধর্মসমূহকে ইসলামের পাশাপাশি সমান উচ্চতায় দাঁড় করাতে চায়। আমরা একাধিক কারণে এই বক্তব্যটি প্রত্যাখ্যান করছি। প্রথমতঃ মর্ম শব্দটি বাংলা ‘তত্ত্ব’ বা ইংরেজী ‘থিওরী’ (ঞযবড়ৎু) এর সমার্থক। ইসলাম এ জাতীয় কোন তত্ত্বীয় বা থিওরীটিক্যাল (ঞযবড়ৎরঃরপধষ) ধর্ম নয়, ইসলাম পুরোপুরী ব্যবহারিক বা প্র্যাকটিক্যাল (চৎধপঃরপধষ) ধর্ম। অর্থাৎ ইসলাম ‘মর্মভিত্তিক’ কোন ধর্ম নয়। সুতরাং মর্ম-এর ভিত্তিতে ইসলামকে অন্য কোন ধর্মের সাথে তুলনা করার প্রশ্নই আসে না। দ্বিতীয়তঃ ইসলামে মর্ম বলে যেটাকে মেনে নেয়া যায় তা হলো তাওহীদ, যার বিপরীত হলো শিরক। পৃথিবীতে একমাত্র ইসলামই হলো তাওহীদভিত্তিক ধর্ম, অপর সকল তথাকথিত ধর্মই কোন না কোনভাবে শিরকের সাথে জড়িত। সুতরাং সেদিক থেকেও ইসলাম স্বাতন্ত্র্য ও স্ব-মহিমায় ভাস্বর।
২. সকল ধর্মই মূলতঃ এক, শুধু উপাসনার পদ্ধতি ভিন্ন
শয়তান পিছু ছাড়ে নাই, থিওরীর লাইন বাদ দিয়ে এবার প্র্যাকটিক্যালের লাইনে প্যাঁচ লাগাতে চাচ্ছে। এই প্রবাদের সমর্থকদের যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, কিভাবে সকল ধর্ম মূলতঃ এক ? তারা উত্তর দেয়, কোন ধর্মই বলে না যে চুরি কর, মদ খাও, পতিতালয়ে যাও, মিথ্যা বল, মা বাবার অবাধ্য হও, কারো ক্ষতি কর ইত্যাদি। বরং এগুলো নিষেধ করে। সুতরাং এতেই প্রমাণিত হয় যে, সকল ধর্মই মূলতঃ এক। ইসলাম চেনাজানা তো দূরের কথা, যে কোন ধর্মের নূন্যতম গ্রহণযোগ্যতার জন্য তার কি কি বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার সেটুকু জ্ঞান থাকলেও কেউ এমন মন্তব্য করতে পারে না। নূন্যতম গ্রহণযোগ্যতার দাবীদার যে কোন ধর্মের নিুোক্ত তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত।
১. জগতের সৃষ্টি ও লালনকর্তার পরিচয়, স্বনাম, স্বরূপ ও স্ববৈশিষ্ট্য প্রকাশ করা। ২. মানব জীবনের উদ্দেশ্য ও পরিণতি কি তা প্রকাশ করা। ৩. মানব জীবনের পরিণতিতে কোন ঝুঁকি বা বিপদের আশঙ্কা থাকলে তা থেকে মুক্তি লাভের জন্য করণীয় কি তা প্রকাশ করা।
এসব করণীয় আবার তিন ধরনের হতে পারে।
(ক) বিশেষ পদ্ধতিতে স্রষ্টার উপাসনা করা। (খ) ব্যক্তিগত চরিত্র উন্নত করা। (গ) অপর তথা সমাজের কল্যাণ সাধন করা।
আশা করি এতক্ষণে পাঠক মহলের কাছে পরিস্কার হয়েছে যে, ইতিপূর্বে বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে কতই না ক্ষুদ্র একটা অংশ অথচ সেই ক্ষুদ্র অংশের সাদৃশ্যের কারণে সামগ্রিকভাবে মন্তব্য করা হলো ‘সকল ধর্মই মূলতঃ এক’। সবচেয়ে বড় কথা, ইসলামের সঠিক ঈমান (যা ১ ও ২ নং শ্রেণীভূক্ত) এবং স্রষ্টার উপাসনা (যা ৩-ক উপশ্রেণীভূক্ত) ব্যতীত পূর্বোক্ত সদৃশ কার্যাবলীর (যা ৩-খ ও গ উপশ্রেণীভূক্ত) কোন মূল্যই নেই- তা দুনিয়াতে ব্যক্তি বা সমাজের যতই কল্যাণ বয়ে আনুক না কেন। তার ভিত্তিতে আবার ইসলামের সাথে অন্য ধর্মের সমতা! প্রশ্নই উঠে না! এরশাদ হচ্ছে;
(ক) ‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য একমাত্র ধর্ম হচ্ছে ইসলাম।’ (আল ইমরান: ১৯) (খ) ‘আমি ইসলামকেই তোমাদের ধর্ম হিসেবে মনোনীত করলাম।’ (আল মায়েদাহ: ৩) (গ) ধর্মের একটিই মাত্র সরল পথ যা দ্রুত আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছায় বাকীগুলো বাঁকা। (সূরা আন্ নাহল: ৯) (ঘ) যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম সন্ধান করবে, আল্লাহর নিকট তার (আবিস্কৃত) সেই ধর্ম কখনই গ্রাহ্য হবে না। আর সেই ব্যক্তি পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে। (সূরা আল ইমরান: ৮৫)
(৩) যিনি আল্লাহ তিনিই ভগবান, তিনিই গড।
এই কথাটির প্রচলন পূর্বোক্ত দুটির চেয়ে অনেক বেশী। কথাটির সারমর্ম হচ্ছে এই যে, মুসলিম, হিন্দু ও খৃস্টান ভিন্ন ভিন্ন নামে একইজনকে ডাকে। নাউজুবিল্লাহ। আল্লাহ তা’আলা নিজের ৯৯টি নাম জাহির করেছেন। এতগুলো নাম প্রকাশ করতে পারলেন, তিনি ভগবান বা গড তার নাম হলে তিনি সে ২টি কেন প্রকাশ করবেন না? নিজের নাম বলতে তো আর কেউ লজ্জা পায় না, তাই না! এর বিপক্ষে কুরআন কি বলছে শুনুন- (ক) হে রাসূল! আপনি বলে দিন, হে কাফিরবৃন্দ! আমি তার ইবাদত করি না তোমরা যার ইবাদত কর, এবং তোমরাও তাঁর ইবাদতকারী নও যাঁর ইবাদত আমি করি, এবং আমি ইবাদতকারী নই তার, যার ইবাদত তোমরা করে আসছো। (সূরা কাফিরূন: ১-৪) (খ) মহান আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম, সুতরাং তোমরা তাঁর সেইসব নাম ধরেই ডাকতে থাক। (সূরা আ’রাফ: ১০৮)
তাছাড়া এসব দলীলে না গিয়ে উপরোক্ত বাণীর তথাকথিত উদারপন্থী প্রস্তাবগণকে একটা পাল্টা প্রস্তাবও দেয়া যায়, আর তিনটাই যদি একজনের নাম হয়, তবে হিন্দু আর খৃস্টানদেরকেই বলুন না, তাদের দেবতাকে আল্লাহ নামে ডাকতে- শুধু মুসলমানদেরকে বিরক্ত করছেন কেন?
আলোচিত ব্লগ
হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!
হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন
মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ



ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন
মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন
তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।