somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"আমার তিন কন্যার গল্প, তিন ডব্লিউ"- হুমায়ুন আহমেদ । একটি বিশ্লেষন ।

২৫ শে জুলাই, ২০১২ বিকাল ৩:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুর পর যে মাতামাতি, তাতে তাঁর সাহিত্যের চেয়ে পারিবারিক টানপোড়নই বেশি চোখে পড়েছে । আসলে হুমায়ুন জনপ্রিয়তার এমন একটা চূঁড়ায় উঠেছিলেন, যেখানে তাঁর ব্যক্তিগত আর পারিবারিক ব্যাপার গুলো পাঠক-ভক্তদের কাছে সাহিত্যের চেয়ে কম আকর্ষনীয় ছিলনা । তাঁর লেখার ধরনটাই এমন ছিল.. ছোট ছোট ব্যাপার, পর্যবেক্ষন, ঘটনা বা বিশ্লেষন যা তার পারিবারিক বা বাইরের যাই হোক, তাঁর লেখার যাদুতে পাঠক বিমোহিত হয়ে যেত । তাঁর লেখায় পাঠক একধরনের স্বস্তি, দরদ বা ইল্যুশনের দেখা পেত, তাতে ঐ লেখা সাহিত্যের মানদন্ড কতটুকু পেরুল পাঠকের কিছুই এসে যেতনা । এভাবেই হুমায়ুন নিজস্ব লেখনি কৌশল দিয়ে তাঁর সাহিত্য এবং পরিবারকে পাঠকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন ।

হুমায়ুনের বেশিরভাগ লেখায় তাঁর প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন এবং সন্তান নোভা-শীলা-বিপাশা-নুহাশদের প্রতি অদ্ভুত ভালবাসা দেখতে পাই । আবার দ্বিতীয় বিয়ের পর তাঁর সাহিত্যে অভিনেত্রী শাওন ও তার দুই ছেলে নিষাদ-নিনিত'র নিয়মিত আসা যাওয়া হয় । কিন্তু প্রথম পক্ষের স্ত্রী-সন্তানরা ক্রমশ তাঁর জীবন ও সাহিত্য থেকে আড়াল হয়ে যায় ।

হুমায়ুনের মত স্পর্শকাতর মানুষ কী করে তাঁর প্রতি তার প্রিয় সন্তানদের উপেক্ষা সহ্য করেছিলেন কিংবা এই সময়ে তাঁর মনোজগতে কী খেলা করছিল, আমরা তার খুব কমই জানতে পারি । অবশেষে আমাদের কৌতুহল কিছুটা হলেও মিটিয়ে গেছেন হুমায়ুন নিজেই, ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে আমেরিকায় থাকার সময় মাত্র চার পৃস্টার একটা লেখা 'তিন ডব্লিউ'তে । তিন ডব্লিউ- হুমায়ুনের তিন কন্যার গল্প ।

"এভরি ক্লাউড হ্যাজ এ সিলভার লা্ইনিং..

আমার কর্কট রোগের সিলভার লাইনিং হলো, এই রোগের কারনে প্রথমবারের মত আমার তিন কন্যা আমাকে দেখতে দখিন হাওয়ায় পা রাখল । ঘর ভর্তি মানুষ, মেয়েদের দেখে হঠাৎ যদি আবেগের কাছে আত্মসমর্পন করে কেঁদে ফেলি, সেটা ভাল হবে না" ।

এই দিয়ে শুরু হুমায়ুনের তিন কন্যার গল্প, তিন ডব্লিউ ।

প্রথম ডব্লিউ, তাঁর বড় মেয়ে নোভা ।

নোভা কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছে, আমেরিকা থেকে পিএইচডি করেছে । নোভা সম্পর্কে বলতে গিয়ে হুমায়ুন চলে যান তার নর্থ ডাকোটার প্রবাস জীবনে । ইউনিভার্সিটি তাকে বাগান করার জন্য এক টুকরো জমি দিয়েছিল । মহা উৎসাহে হুমায়ুন কাজে লেগে গেলেন, তার সর্বক্ষনিক সংগী কন্যা নোভা । যেদিন নোভা বাগানের গাছ থেকে ছিড়ে টকটকে লাল টমেটো বালতিতে ভরছে এবং বলছে 'আই মেইড ইট', মেয়ের আনন্দ দেখে হুমায়ুন চোখ মুছলেন ।

দ্বিতীয় ডব্লিউ, মেজো মেয়ে শীলা ।

শীলা ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে অনার্স ও এমএতে ইকোনমিকসে প্রথম শ্রেনী পেয়েছে । এখানেও হুমায়ুন চলে যান অতীতে, যখন শীলার বয়স ১২ কিংবা ১৩ । একবার হুমায়ুন প্রচন্ড শীতে লস অ্যান্জেলেস এর জংগলে তাবু খাটিয়ে ক্যাম্পিং করতে গেছেন পুরো পরিবার নিয়ে । গভীর রাতে শীলার কান্নার শব্দে তার ঘুম ভেংগে যায়, শীলার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল । তারপর সারারাত হুমায়ুন শীলাকে নিয়ে বাইরে বসে ছিলেন, শীলা তার কাঁধে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছিল ।
"সকালে ঘুম থেকে উঠে শীলা বলল, বাবা, তুমি একজন ভাল মানুষ ।
আমি বললাম, মা ! পৃথিবীতে অসংখ্য খারাপ মানুষ আছে, একজনও খারাপ বাবা নেই ।
এখন মনে হয় শীলা বুঝে গেছে- পৃথিবীতে খারাপ বাবাও আছে । যেমন তার বাবা ।"


তৃতীয় ডব্লিউ অর্থাৎ ছোট কন্যা বিপাশা'র কথা বলতে গিয়ে প্রথমেই হুমায়ুন একটু মজা করে নেন ।
"বিপাশা কি বাবার জিন পেয়েছে ? হা হা হা । আমাকে পছন্দ না হলেও আমার জিন কিন্ত মেয়েকে আজীবন বহন করতে হবে!"
তারপর তিনি যথারীতি অতীতে ফিরে গিয়ে তার ছোট মেয়ে বিপাশার স্মৃতি রোমন্থন করেন । হুমায়ুন কোথাও বাইরে গেলে বিপাশা তাকে একটা হোমিওপ্যাথিক শিশি দিয়ে দিত, শিশিতে নাকি তার গায়ের গন্ধ ভরা থাকত । তার গায়ের গন্ধ ছাড়া হুমায়ুন ঘুমুতে পারতেন না ।

বিপাশা আমেরিকা থেকে সেদিনই অসুস্থ বাবাকে দেখতে এসেছে । হুমায়ুন লিখেছেন, "একবার ভাবলাম, বলি- মা, অনেক দিনের জন্য বাইরে যাচ্ছি । ফিরব কি না তা-ও জানি না । এক শিশি গায়ের গন্ধ দিয়ে দাও । বলা হলো না ।"

তারপরই হুমায়ুন বলছেন,
"আমার তিন কন্যাই দূর দ্বীপবাসিনী । ওরা এখন আমাকে চেনে না, হয়ত আমিও তাদের চিনি না ।
কী আর করা ?
কে সারা সারা ।"

তিন কন্যা আর তার বড় ছেলে নুহাশ সম্পর্কে হুমায়ুনের কাছ থেকে আমরা আরও অনেক কিছুই শুনার আশা করেছি । হয়ত তিনি বলেন নি, কিন্তু কে জানে তার মনোজগতে হয়ত সবসময়ই ছিল তাঁর প্রিয় পূত্র-কন্যাদের আসা-যাওয়া ।

তাইতো শেষে আমরা দেখতে পাই, 'তিন ডব্লিউ'র পাদটীকায় তিনি আবৃত্তি করছেন 'এডগার অ্যালান পো'র এই কবিতাটি..

ফ্রম এভরি ডেপ্থ অব গুড এ্যান্ড ইল
দ্য মিষ্ট্রি হুইচ বাইন্ডস মি স্টিল
ফ্রম দ্য টরেন্ট অব দ্য ফাউন্টেন
ফ্রম দ্য রেড ক্লিফ অব দ্য মাউন্টেন
মাই হার্ট টু জয় অ্যাট দ্য সেইম টোন
অ্যান্ড অল আই লাভড, আই লাভড, আ্যালোন ।


সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:২৫
১৮টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×