somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিংবদন্তি নেতা যাযাবর সন্তান সুলতান সুবক্তগীন ।

২০ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাজার বছর পেরিয়ে গেছে,এরই মধ্যে পৃথিবীতে ঘটে গেছে কতইনা ঘটনা.কত বিবর্তন । কতো রাজা মহা রাজার দুঃশাসন সুশাসন দেখেছে প্রাচ্য এশিয়ার জমিন । এখান কার মাটিতে কত বনি আদমের খুন মিসে আছে তার কোনো ইয়াত্তা নেই । কত আদম সন্তান এক আল্লাহর ইবাদতকারী বহু দেবপূজারী মূর্তিপূজকের নির্যাতনে নিপিষ্ট হয়েছে তার নেই কোনো সঠিক পরিসংখ্যান । কিন্তু একটি কথা ইতিহাসে চিরসমুজ্জল…..মূর্তি ভাঙ্গার ইতিহাস ।
পৌত্তলিকদের মনগড়া ইতিহাস,মিথ্যা স্বর্গ ভেঙ্গেচুরে মহাজগতে সত্য ও প্রকৃত স্রষ্টা মহান আল্লাহর প্র্রভুত্ব প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ।
আর এই ইতিহাসের অন্যতম এক কিংবদন্তি নায়ক “সুবক্তগীন”

আমরা কজনই বা জানি এই মহান মানুষটির কথা ? যিনি ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য মৃত্যুর আগ প্রযন্ত লড়াই করে গেছেন ।
তিনি ৯৪২ খ্রিঃ (সম্ভবত) জন্মগ্রহন করেন ।তার পিতার নাম “আল-হাকাম” ।

সত্য কে সত্য আর মিখ্যা কে মিথ্যা এবং সমাজের সাধারন মানুষের শান্তি প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন অনড় ।মহৎ এই ব্যক্তিটি কোনো রাজার পুত্র ছিলেন না । ছিন্নমূল যাযবর পরিবারে জন্ম তাঁর । যাযবর হলেও তাঁর বাবা-মা ছিলেন ইসলামের প্রতি প্রবল আত্ববিশ্বাসি ও জ্ঞানী । শিশু বেলায় বাবা মায়ের কাছেই সে কুরআন পড়া শিখেছেন ।

সুবক্তগীন ছোট বেলা থেকেই ছিলেন খুব মেধাবী এবং ভবিষৎ নিয়ে চিন্তাধারী । তাঁর বুদ্ধিমত্তা দেখে তাঁর উস্তাদরা ও খব মুগ্ধ হতেন ।যখন তার বয়স ১০-১১ ,তখন একদিন তার উস্তাদকে সুবক্তগীন প্রশ্ন করল
“উস্তাদজী,আমল ছাড়া এলেম কি পূর্নতা পায় ?তরবারীর জোরে আল্লাহর রাসুল (স.) এর পয়গামের প্রসার ঘটানো কি জায়েয” ?
তখন তার বাবা কে ডেকে উস্তাদ পরমর্শ দিলেন,যেনো তাকে নিয়ে সে বুখারা যায় । এবং এক বিজ্ঞ আলেমের কাছে সে একটি চিঠি লিখে দিলো । কিন্তু যাওয়ার পথে ডাকাতের আক্রমনে তার বাবা মারা গেলেন এবং তাকে ডাকাত দল তুলে নিয়ে গেলেন ।

বুখারার এক জমিদার হাজী নসর তার কাছে বিক্রি করা হলো সুবক্তগীন কে । শুরু হলো তার গোলামির জিবন ।
সুবক্তগীন কে ঘরে আনার পরে চুপচাপ থাকতে দেখে নসর জিজ্ঞাসা করলো সবাই কাঁদছে,তুমি কাঁদছো না কেনো ?
তথন সুবক্তগীন বলল,আগে বলুন আপনি কে ? আপনার ধর্ম কি ?
আমি হাজী নসর, ইসলাম আমার ধর্ম ।
তাহলে তো আমার নয় আপনার রোদন করার উচিত ।আপনার হজ্জ অর্থহীন । কুরআনের নির্দেশ হলো “মানুষ মানুষকে গোলাম বানাতে পারে না।

এসব কথা শুনে নসর অবাক হয়ে গেলেন ।এবং তাকে গোলাম হিসেবে না রেখে ছেলের মত করে রাখলেন । তার গৃহ শিক্ষকের দারা সে শিক্ষা নিতে লাগলেন ।মাত্র তিন বছরে সে পরিপূর্ন যোদ্ধায় পরিনতো হলেন ।

বুখারার গভর্ণর আলপ্তগীন তার শিক্ষা,দিক্ষা এবং দক্ষতা দেখে তাকে নসরের কাছ থেকে উচ্চ দামে কিনে নিলেন । এবং তার সহচর্চায় রাখলেন । এই আলপ্তগীন ও অমুসলীম ছিলেন । ইসলামের কথা শুনে শুনে মুসলমান হয়েছেন ।
তিনি সুবক্তগীন কে বললেন, ইসলাম বলে “মানুষে মানুষে ভেদাভেদ নাই,কে্উ কারো প্রভু অথবা গোলাম নয়, টাকায় বিক্রি হওয়ার পণ্য মানুষ নয় ।আল্লাহর জমিনে আল্লাহর প্রতিনধিত্ব করবে মানুষ ।নিজের মর্জিমত মানুষের উপার প্রভুত্ব করার অধিকার কোনো শাসকের নেই ।’’

তাই তুমি আমাকে তোমার প্রভু মনে করবে না । আস্তে আস্তে সুবক্তগীন গভর্ণারের খুব কাছের মানুষ হয়ে ওঠেন ।
গজনির শাসক আব্দুল মালেক মৃত্যু বরন করলে অনেক চেষ্টা করেও তার কনিষ্ট পুত্রকে গদিনশীন করতে পারেনী তারা । যার জন্য দুদিন পরে তারা তিনশত সন্যৈর একটি দল নিয়ে তারা গজনী গেলো এবং নতুন গদিনশীন মনসুর কে গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করল ।
এবং ৯৬২ খ্রিঃ আলপ্তগীন ক্ষমতা দখল করেন ।
এবং সুবক্তগীন প্রধান উজির নিজুক্ত হন । পরের বছর তিনি ইন্তেকাল করলে তার ছেলে ইসহাক স্থলাভিষিক্ত হন ।কিন্তু তার শাসন ব্যবস্থায় রাজ্যে অশান্তি দেখা দেয় ।তাই বাধ্য হয়ে সুবক্তগীন তাকে বন্দিকরে এবং ক্ষমতা দখল করে । এতে আবার রাজ্যে শান্তি ফিরে আসে । প্রতিষ্ঠা করেন ইসলামের বিধান অনুযায়ী শাসন ব্যবস্থা ।

একবার পাঞ্জাবের রাজা জয়পাল গজনী আক্রমন করতে এলে সুবক্তগীনের বাহিন তাকে শহরের বাইরেই মোকাবেলা করতে বাধ্য করে । এবং ডজন ডজন হতি, হাজার হাজার অশ্বারোহী-যোদ্ধা ও তোপ কামান নিয়েও সুবক্তগীনের কাছে হেরে যায় ।

কিন্তু এই অপমানের প্রতিশোধ নিতে জয়পাল আবার আক্রমনের ছক আকা শুরু করলো ।

আবার এদিকে সুবক্গীন কে পরাজিত করে ক্ষমতা দখল করার জন্য একজোট হলো ছোট ছোট রাজ্যের মুসলিম রাজারা । যার কারনে, তাকে একদিকে যেমন হিন্দুদের আক্রমন তাকে ঠেকাতে হতো তেমনী সার্থঅন্নেসী মুসলমানদের ও কুচক্র ও তাকে ঠেক দিতে হতো ।

সুবক্তগীন সব সময় ঐসব মুসলসান রাজাদের আহব্বান করতো ,যাতে করে তারা একবদ্ধ হয়ে ইসলাম প্রচার করে । কিন্তু তারা তার কথা কেউ শুনতো না । একবার তো তারা যুদ্ধের মুখোমুকি ও হয়েছিলো ।

তখন দুঃখ ভরা ক্রান্ত হৃদয় আর চোখে পানি দেখে ছেলে মাহমুদ প্রশ্ন করলো “আব্বা আপনার চোখে পানি”?

তখন সুভক্তগীন বললো ,ইসলামের কফিনের সামনে দারিয়ে চোখের পানি জরানো ছাড়া আর কি করতে পারি ? “মুসলমানরা যখন ঐক্যবদ্ধ ছিলো ইউরোপ-কুফরীস্তানেও তার ইসলামের বিজয়ের কেতন উড়াতে সক্ষম হয়েছিলো ।মুসলমানের অনৈক্যের কারনে ইউরোপ থেকে আজ ইসলাম নির্বাসিত ।হিন্দুস্থানেও ইসলামের ঝন্ডা আজ ভুলন্ঠিত । বহু মুসলিম দেশ খৃস্টানরা দথল করে নিয়েছে,আরো দখলের চেষ্টা করছে ।অপরদিকে হিন্দুরাও আগ্রসন অব্যাহত রেখেছে । তোমাদের দেখে আমার চোখে পানি এসেছে এই ভেবে যে আমরা তো পরস্পর লড়াই করে একদিন শেষ হয়ে যাবো । তোমাদের জন্য কি রেখে যাচ্ছি ।আমরা তো তোমাদের জন্য পতিত এক ইসলামী সালতানাত রেখে যাচ্ছি । ক্ষমতার লোভে,গৃহ বিবাদ আর ঈমান কেনা বেচার বাজার আজ সরগম । ঐসব ঈমান বিক্রেতা,ক্ষমতালিপ্সুর সন্তানেরা ক্ষমতার লোভে ইসলামের শত্রুদের হাতে নিজেদের ঈমান-ইজ্জাত বিক্রি করতে মোটেও দ্বিধা করবে না । কুফরীস্তানের মূর্তি ভাঙ্গা ছিলো আমার দায়িত্ব ।বাতিল বিরোধী সংগ্রামের দায়িত্ব তোমাদের হাতে সোপর্দ করতে চেয়েছিলাম ।কিন্তু আমার মুসলিম ভাইয়েরা- আমরা যারা একই খোদা কা’বা একই কুরইনের আদর্শে চলি- একই রাসূল (স.) এর আনুগত্য করি তারাই আজ আল্লাহর পথ ভুলে বসছি ।বাব !মুসলিস মল্লাতের ভবিষৎ অন্ধকার ।ক্ষমতা আর মসনদের লোভ আর মদ ও ময়েতে ডুবে গিয়ে ওরা মুসলিম জাহান কে টুকরো টুকরো করছে ।তোমরা দেখতে পাচ্ছো, প্রত্যেক মুসলিম রাজ্যে অবিশ্বাস,বিবাদ,প্রতারোনা কিভাবে বিস্তার ঘটছে ।বর্তমান মুসলমানরা দৃশ্যত ঐক্যবদ্ধ হলেও এদের মনে প্রতারোনার বীজ সুপ্ত রয়েছে ।একে অন্যের প্রতি এরা ভীষন অসহিষ্ঞু । এরা মত ভিন্যতাকে ও মনে করে শত্রুতা ।এরা শুভাকাঙ্ক্ষীকেও সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখে । আমাদের উচুমহল থেকে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা নির্বাসিত হয়ে গেছে ।খেলাফত আছে নামে মাত্র ।

কিন্তু সেই যুদ্ধের সেনাপতি “দারা” ন্যয়ের পথিক ছিলো বিধায় সে সুবক্তগীনের কাছে এসে তার তরবারী সুবক্তগীনের পায়ে কাছে রাখে এবং উল্টো ঐসব রাজা দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে । এবং আবার তারা জয়লাভ করে ।
এভাবেই সুভক্তগীন ন্যয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আবার শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলো ।
আস্তে আস্তে সুলতান অসুস্থ হয়ে পরতে থাকে এবং ৯৯৭ সালের আগষ্ট মোতবেক ৩৮৭ হিজরী সনের শ’বান মাসে ৫৬ বছর বয়সে মৃত্যু বরন করেন এই মহা নায়ক ।
তারই পুত্র সুলতান মাহমুদ গাজনবী,,,যিনি ইতিহসের আর এক মহা নায়ক । বাবার আদর্শ নিয়ে বড় হওয়া এই বীর সৃষ্টি করেগেছেন আর এক ইতিহাস । তা হয়তো অনেকেরই জানা আছে ।

ইতিহাস এই ইসলামের বীরকে তার কাজের জন্য শ্রদ্ধা ভরে শ্বরন করবে ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×